গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা
৩১ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩৭ পিএম | আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
রাজধানীর অভিজাত এলাকা ও ডিপ্লোম্যাটিক জোন হিসেবে পরিচিত গুলশান-বনানী-বারিধারা এলাকা। এ এলাকার সৌন্দর্য বর্ধন ও পরিবেশগত উন্নয়নের লক্ষ্যে এক যুগের বেশি আগে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ও বাজেট বার বার বাড়ানো হয়েছে বা হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও প্রকল্পের মূল কাজ এখনো শুরুই করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ২০১০ সালে এই উন্নয়ন প্রকল্পে ৪১০ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। ২০১৩ সালের জুনমাস নাগাদ কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সমন্বয়হীনতার কারণে তা হয়নি। বরং ইতোমধ্যে অন্তত পাঁচবার প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রকল্পের বাজেট ধাপে ধাপে বাড়িয়ে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এতকিছুর পরও জমি অধিগ্রহণের টাকা পরিশোধসহ কাজ শুরু করতে না পারার এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। প্রায় একই সময়ে হাতিরঝিল প্রকল্প গ্রহণের পর তা নির্ধারিত সময়ের আগেই সেনাবাহিনী সুচারুরূপে কাজ শেষ করার অনন্য দৃষ্টান্তও আমাদের সামনে রয়েছে। ঠিক একইভাবে গুলশান-বনানী-বারিধারা প্রকল্পটিও সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়নের কথা শোনা গেছে বহুবার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক অস্বচ্ছতা, ধীরগতি এবং দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও কাজ শুরু করতে না পারা এক চরম ব্যর্থতার উদাহরণ তৈরি করা হচ্ছে।
অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতেই ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ বুঝিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের টাকা নিয়ে নানা ধরনের অনিয়ম, অস্বচ্ছতা, দুর্নীতির অনেক অভিযোগের কথা শোনা গেছে। গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের টাকা বুঝিয়ে দিতে ১২ বছর আগেই রাজউক ৩ ও ৬ ধারায় দুইবার নোটিশ পাঠিয়েছে। কিন্তু জেলাপ্রশাসকের এলএ শাখায় রাজউক কোনো অর্থ জমা না দেয়ার কারণে জমি অধিগ্রহণের শিকার কেউই ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি। একাধিক্রমে নোটিশ প্রাপ্ত হওয়ায় জমি মালিকরা ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে না পারাসহ দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে তারা আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছেন। আদালত ইতোমধ্যে রাজউকসহ বিবাদীদের প্রতি রুলও জারি করেছেন। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাতে বলা হয়, শুরুতে প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পটি সেনাবাহিনীকে দিয়ে বাস্তবায়নের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। মূলত রাজউকের অসহযোগিতাই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের অর্থ পরিশোধসহ বাস্তবায়ন শুরু করতে না পারার জন্য দায়ী। মনে হচ্ছে, ইচ্ছাকৃতভাবেই আইনগত জটিলতা সৃষ্টি করে কেউ কেউ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছেন। এদেরকে চিহ্নিত করে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি। বিশেষত বিদ্যমান আইন অনুসারে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য পরিশোধ করার মাধ্যমে মামলা সংক্রান্ত জটিলতা দূর করার উদ্যোগ নিতে হবে।
প্রতিটি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের নির্দিষ্ট মেয়াদ এবং উপকারভোগীদের একটি ডেমোগ্রাফিক ফ্রেমওয়ার্ক থাকে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও পরিবর্তিত বাস্তবতার কারণে উন্নয়ন প্রকল্পের নকশায় পরিবর্তন অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়। তিন বছরের মধ্যে গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা থাকলেও প্রকল্পের জন্য প্রায় ৮০ একর জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সময়মত ক্ষতিপূরণের টাকা না দিয়ে প্রকারান্তরে পুরো প্রকল্পটিকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির বাস্তবতায় ১২ বছর আগে বরাদ্দকৃত জমি অধিগ্রহণের টাকার মূল্য বর্তমানের সমান নয়। জমি অধিগ্রহণের টাকা সময়মত বুঝে পেলে ক্ষতিগ্রস্তরা যথাযথ মূল্যায়ন পেত। একইভাবে এক দশক আগে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শেষ হলে গুলশান-বনানী-বারিধারার অধিবাসীরা প্রকল্পের সম্ভাব্য উপযোগিতার দ্বারা উপকৃত হতে পারত। শহরের সবচেয়ে অভিজাত এলাকার সৌন্দর্য বর্ধন ও পরিবেশগত উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে এমন অপরিণামদর্শিতা, সময়ক্ষেপণ এবং অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় জমি অধিগ্রহণের বাজেট নিয়ে হেলাফেলার দৃষ্টান্ত দৃষ্টিকটু ও অগ্রহণযোগ্য। উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে একযুগেও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ শুরু ও শেষ করতে না পারার জন্য যে বা যারাই দায়ী, তাদেরকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের সমন্বয়হীনতা ও গতিহীনতার কারণ উদঘাটন করে সর্বশেষ বর্ধিত টাইমলাইন অনুসারে ২০২৪ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তদারকির মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ধর্ম-বর্ণ নয়, সমান মর্যাদায় হোক নাগরিক পরিচয়: জোনায়েদ সাকি
এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!
ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে সিটিজেন’স চার্টার অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
মতিঝিলে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি’র
স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?
চাঁদপুর মেঘনায় মালবাহী জাহাজে ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত ১
পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী