আইন ও নিয়ম মানতে বাধ্য করতে হবে
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:১৬ পিএম | আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
রাজধানীসহ দেশের সড়ক-মহাসড়ক ও ফ্লাইওভারে চলাচলের ক্ষেত্রে আইন-কানুন এবং নিয়ম-শৃঙ্খলা থাকলেও তা যথাযথভাবে প্রতিপালিত হয় না। আইন ও নিয়ম-কানুন অমান্যর এক ধরনের প্রবণতা বিদ্যমান। এর ফলে যানজট থেকে শুরু করে ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। উচ্চ আদালত সড়কের অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা নিয়ে অনেক আদেশ-নির্দেশ দিলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যায় না। এ নিয়ে আদালত নানা সময়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছে। গত বুধবার রাজধানীর ফ্লাইওভারের সৌন্দর্য রক্ষা সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিকালে আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেন। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব এবং বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের ডিভিশন বেঞ্চ বলেন, যারাই অনিয়ম করবে, আইন লঙ্ঘন করবে, তাদের ওপর জরিমানা আরোপ করতে হবে। তাহলে, তারা সোজা হয়ে যাবে, যেমনটা বিদেশে হয়। সেখানে কেউ আইন লঙ্ঘন করলে জরিমানার মুখোমুখি হতে হয়। ফলে সবাই আইন মেনে চলে। ‘বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য’ মামলার শুনানিতে আদালত এ মন্তব্য করেন।
সড়ক-মহাসড়কে বছরের পর বছর আইন ও নিয়ম-শৃঙ্খলা অমান্যর ঘটনা ঘটে চলেছে। আইন ও নিয়ম থাকলেও তার অমান্য করার প্রতিযোগিতা চলছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন আইন ও নিয়ম প্রয়োগের ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শন করে, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যে আইন অমান্য করার প্রবণতা রয়েছে। রাজধানী ঢাকা বিশ্বের শীর্ষ অবাসযোগ্য নগরীর খেতাব অনেক আগেই পেয়েছে। তা থেকে উত্তরণের কোনো উদ্যোগ নেই। একটি রাজধানীর সড়কে যে ধরনের নিয়ম-শৃঙ্খলা থাকে, তা নেই। এমনকি পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্য বলেও কিছু নেই। সড়কের পাশে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছ, ভবনের দেয়াল থেকে শুরু করে প্রায় সর্বত্র রাজনৈতিক ব্যানার, ফ্যাস্টুন, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রচারণার পোস্টার ঝুলতে দেখা যায়। মাসের পর মাস এগুলো ঝুলতে থাকে। সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সেগুলো সরানোরও কোনো উদ্যোগ নেয় না। এসব ব্যানার-ফ্যাস্টুন ও পোস্টার রাজধানীকে জঞ্জালের শহরে পরিণত করেছে। ফ্লাইওভারগুলোর পিলারগুলো এমনভাবে ব্যানার ও ফেস্টুন সাঁটানো হয়েছে যে, তার সৌন্দর্য বলতে কিছু নেই। শুধু ব্যানার-ফ্যাস্টুন নয়, ফ্লাইওভারের নিচে চায়ের দোকান, অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা ও গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে অবৈধ দখলে থাকে। বিশ্বের কোনো দেশেই এমন দৃশ্য দেখা যায় না। সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রেও কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলা নেই। যে যেভাবে পারছে চলছে। ট্র্যাফিক সিগন্যালগুলো পুলিশ হাতের ইশারায় নিয়ন্ত্রণ করছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক ট্র্যাফিক সিগন্যাল বসানো হলেও তা অকেজো হয়ে রয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় স্বয়ংক্রিয় ট্র্যাফিক সিগন্যাল থাকলেও তা মানা হয় না। অথচ এই রাজধানীর মধ্যেই ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সড়কের নিয়ম-কানুন ও ট্র্যাফিক সিগন্যাল মানার ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে সড়ক আইন অমান্যর কোনো সুযোগ নেই। লেন পরিবর্তন কিংবা সিগন্যাল অমান্য করলে জরিমানাসহ শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। সেখান থেকে বের হলেই সড়কের আইন বলে কিছু থাকে না। হাইকোর্ট এই বাস্তবতার আলোকেই সড়কে আইন আমান্য করার ক্ষেত্রে জরিমানার কথা বলেছেন। উচ্চ আদালত বহুবার ফুটপাত দখলমুক্ত করা, মহাসড়কে ধীরগতির থ্রি হুইলারসহ নসিমন, করিমন ও ভটভটি চলাচল নিষিদ্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন, সেগুলো প্রতিপালিত হয়নি। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষ এসব নির্দেশ প্রতিপালন করেনি।
সড়ক ও মহাসড়কে আইন ও নিয়ম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর হওয়া জরুরি। যারা আইন আমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বছরের পর বছর ধরে অনিয়ম ও আইনভঙ্গের প্রবণতা চলতে পারে না। সিঙ্গাপুরে সড়কসহ যান ও মানুষের চলাচলের ক্ষেত্রে কঠোর নিয়ম ও আইন রয়েছে। কেউ তা অমান্য করলে সঙ্গে সঙ্গে জরিমানা গুণতে হয়। এমনকি কেউ হাতের টিস্যু ফুটপাতে ফেললে তাকে জরিমানার মুখোমুখি হতে হয়। সড়কে নির্ধারিত স্থানে পার্কিংসহ যান চলাচলে কঠোর নিয়ম পালন করতে হয়। ফলে দেশটি যেমন পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, সুশৃঙ্খল, তেমনি সেখানে নিয়ম-কানুনও সকলে মানতে বাধ্য। আমাদের দেশে কোনো সড়ক-মহাসড়কেই এসবের বালাই নেই। যে যেভাবে পারছে নিয়ম ভঙ্গ এবং চলাচল করছে। সড়কের অনিয়ম নিয়ে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীরা যে কঠোর আন্দোলন করেছে এবং সরকার আইন করতে বাধ্য হয়েছে, তা আজও যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও মানা হয় না। এ ধরনের প্রবণতা অত্যন্ত দুঃখজনক। সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও রাজধানীর সৌন্দর্য রক্ষার কর্তৃপক্ষ থাকলেও তাদের যথাযথ উদ্যোগ নেই। এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। রাজধানীসহ দেশের সকল সড়ক-মহাসড়কে আইন ও নিয়ম প্রয়োগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। যারা নিয়ম ও আইন ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ অইনানুগ শাস্তির বিধান কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। এতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও আইন মানার সংস্কৃতি সৃষ্টি হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পাবনা ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রাক বড়দিন উৎসব অনুষ্ঠিত
পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ
ধর্ম-বর্ণ নয়, সমান মর্যাদায় হোক নাগরিক পরিচয়: জোনায়েদ সাকি
এসবিএসি ব্যাংকের শরিয়াহ্ সুপারভাইজরি কমিটির সভা অনুষ্ঠিত
আ.লীগের হাতেও নির্যাতিত হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু তুলে ধরেনি গণমাধ্যম!
ভারত বাংলাদেশ থেকে বস্তা বস্তা টাকা লুট করেছে : দুদু
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকে সিটিজেন’স চার্টার অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত
মতিঝিলে বিশ্বমানের ডায়াগনস্টিক সেবা প্রদান শুরু আইসিডিডিআর,বি’র
স্বামীর অগোচরে স্ত্রী অন্য কারও সাথে কথা বলা প্রসঙ্গে?
চাঁদপুর মেঘনায় মালবাহী জাহাজে ৭ জনকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত ১
পতিত স্বৈরাচার হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে চিঠি
যাকাত বোর্ডের ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত
১৬ বছরে নির্বাচন ব্যবস্থা নির্বাসনে চলে গিয়েছিল : সংস্কার কমিশন প্রধান
জিনিসের দাম একবার বাড়লে কমানো কঠিন: পরিকল্পনা উপদেষ্টা
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত