মাইগভ : এক ঠিকানায় সকল সরকারি সেবা
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১৩ পিএম | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
‘মাইগভ’ নামক ডিজিটাল সেবা প্রদানকারী একটি কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্ম থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবাসমূহকে একক ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। ধীরে ধীরে সকল মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল সেবাগুলাকে মাইগভ প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা হবে, যাতে জনগণ সরকারের সকল সেবা একটি প্ল্যাটফর্ম থেকে গ্রহণ করতে পারে।
সরকারি সব সেবা এক অ্যাপে আনার অঙ্গীকার নিয়ে ৮ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে ‘আমার সরকার বা মাইগভ’ অ্যাপটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশের অবদান, এক ঠিকানায় সব সমাধান’ স্লোগান নিয়ে অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। অ্যাপটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে চার কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আমার সরকার বা ‘মাইগভ’ অ্যাপ তৈরিতে কারিগরি সহযোগিতা করছে আইটি প্রতিষ্ঠান অরেঞ্জ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (অরেঞ্জবিডিলিমিটেড)।
মাইগভ প্ল্যাটফর্ম পাঁচ ধরনের সার্ভিস এক্সেস চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকদের সর্বোচ্চ এক্সেসিবিলিটি নিশ্চিত করে থাকে। একজন সেবাগ্রহণকারী চাইলে যে কোনো সময় যে কোনো স্থান থেকে এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রয়োজন অনুযায়ী সরকারি সেবার আবেদন করতে পারবে। আবেদনের অগ্রগতি জানতে পারবে এবং সেবা সংশ্লিষ্ট ফি অনলাইনে পরিশোধ করতে পারবে। ফলে সেবা নেওয়ার জন্য সেবাগ্রহীতার একাধিক বার একই স্থানে যাওয়া প্রয়োজন কমে আসবে, অত্যধিক দলিল দস্তাবেজের ব্যবহার কমে আসবে, সনাক্তকরণ সংক্রান্ত জটিলতা কমে আসবে, অতিরিক্ত অর্থের অপচয় কমে আসবে এবং অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ রোধ করা সম্ভব হবে। জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে সেবা গ্রহণকারীর পরিচয় নিশ্চিত করা হবে। সেবা গ্রহণের সময় যে কোনো জটিলতা অথবা মাইগভ ব্যবহারে সক্ষম না হলে অ্যাপ থেকেই ৩৩৩ এ কল করে সেবা নেয়া যাবে। যেকোনো নাম্বার থেকে ৩৩৩ এ যোগাযোগ করে বা নিকটস্থ যেকোনো ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে সরকারি সেবার আবেদন করতে পারবে, আবেদনের অগ্রগতি জানতে পারবে। আবার কেউ বিপদে পড়লে অ্যাপটি খুলে মোবাইল ফোন ঝাঁকালে সরাসরি ৯৯৯ নম্বরে কল চলে যাবে। তাছাড়া শুধুমাত্র ভয়েস ব্যবহার করেও সেবার আবেদন, আপডেটসহ অন্যান্য বিষয় জানা যাবে।
এই বাতায়নে সেবার আবেদন করতে হলে মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের সময় প্রোফাইলে যেসকল তথ্য প্রদান করা হবে পরবর্তীতে সেবার আবেদন ফরমে সেইসব তথ্য পুনরায় দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। সেবার আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ডকুমেন্ট প্রোফাইলে সংরক্ষণ করে রাখা যাবে। সেবার আবেদনের সময় এ সকল তথ্য ও ডকুমেন্ট আপলোড না করেও পুনরায় ব্যবহার করা যাবে। একজন আবেদনকারী বিভিন্ন দপ্তরের কাছে করা সকল আবেদনের তথ্য ও সর্বশেষ অগ্রগতির অবস্থা প্রোফাইলে লগইন করার মাধ্যমে জানতে পারবেন। এছাড়া প্রোফাইলে সংরক্ষিত তথ্য ও ডকুমেন্ট সময়ে সময়ে পরিবর্তন করার মাধ্যমে হালনাগাদ রাখা যাবে। এই প্ল্যাটফরমে সেবার আবেদনের জন্য নির্ধারিত ফিস পরিশোধের সুযোগ রয়েছে। তবে সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সংশ্লিষ্ট সেবার ফিস গ্রহণ করার ব্যবস্থা সক্রিয় করতে হবে। আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা লিঙ্কে ক্লিক করার পর আবেদনের সময় প্রাপ্ত ট্র্যাকিং নম্বর ব্যবহার করে আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানা যাবে। এছাড়া সেবা ব্যবস্থাপনা থেকেও দাখিলকৃত আবেদনসমূহের অবস্থা জানা যাবে। সেবার আবেদন করার পর সেবাপ্রদান প্রতিশ্রুতিতে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে সেবা না পেলে বা সেবার গুণগত মান বা প্রদান পদ্ধতি নিয়ে অসন্তোষ থাকলে ‘অভিযোগ দাখিল করুন’ লিঙ্কে ক্লিক করে অভিযোগ জানানো যাবে। এই সেবাগুলোর সাথে পরিচয় প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সেবা গ্রহীতার আইডেন্টিটি ভেরিফিকেশনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। মাইগভ ওয়েবের মাধ্যমে জনসাধারণ ল্যাপটপ, মোবাইল, ট্যাবলয়েড যে কোনো ডিভাইস ব্যবহার করে সেবার আবেদন, সেবা সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধান করতে পারবে। এখন পর্যন্ত ৩৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের ১৭৮টি দপ্তরের ১৮১০টি সেবা মাইগভে যুক্ত হয়েছে। মাইগভে মোট নিবন্ধিত সদস্য ৪০,২০,৬১৩ জন, মোট আবেদন ২৭,৪২,৫৯৫টি এবং নিষ্পত্তিকৃত আবেদনসংখ্যা ২৬,০৯,১৯৩টি । এই সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
মাইগভ এ প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দের জন্য সকল সরকারি ই-সার্ভিস প্ল্যাটফর্মে একক লগইন এর ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের সকল সিস্টেমের মধ্যে আন্তঃসংযোগ সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে মাইগভ টেকনোলজি হাবের মাধ্যমে। মাইগভ এর মাধ্যমে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নতুন সফটওয়্যার তৈরি ছাড়াই সেবাসমূহকে নাগরিকের জন্য ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। মন্ত্রণালয়/অফিসের প্রয়োজনের ভিত্তিতে মাইগভ ইমপ্লিমেন্টেশন পার্টনারবৃন্দ বিভিন্ন কাস্টমাইজড এক্সেস পয়েন্ট এবং সাপোর্ট সার্ভিসের সুবিধা প্রদানে সক্ষম। নির্দিষ্ট টেকনোলোজি দক্ষতার উপর নির্ভরতা অনেকাংশে হ্রাসের সূচনা ঘটেছে মাইগভ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। সেবা প্রদানকারী সংস্থা সমূহের নিজস্ব ডিজিটাল সিস্টেম সমূহের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাগণ মাইগভ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সেবা গ্রহণ করতে পারবে। মাইগভ সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যা বা জিজ্ঞাসার জন্য ০১৫৫০-০৬০০৬০, ০১৫৭২-০৫১৯৫২ নাম্বারে এবং ই-মেইল:[email protected] এ যোগাযোগ করা যাবে।
এই ওয়েবসাইটটি ব্যবহার করার জন্য অবশ্যই কিছু শর্তাবলি মেনে চলতে হবে,যা এই সাইটে প্রবেশ করা মাত্রই প্রযোজ্য হবে। যেমন: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ মাইগভ প্ল্যাটফর্মে লিংককৃত অন্যান্য সাইটের কোনো তথ্যের জন্য কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে না। এই ওয়েবসাইটের তথ্য এবং লিংককৃত ওয়েবসাইটের তথ্য ব্যবহার করার ফলে প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হলে তার জন্য কোনো দায়দায়িত্ব তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ গ্রহণ করবে না। এই ওয়েবসাইটের কর্মকা-ের কোনো ধরনের অবিচ্ছিন্নতার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ নিশ্চয়তা প্রদান করবে না। এই প্ল্যাটফর্মের সকল ব্যবহারকারী ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত সকল তথ্যের কোনো রকম পরিমার্জন, সংযুক্তিকরণ এবং সংশোধন ব্যতীত প্রিন্ট করতে পারবেন। কিন্তু এই প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত কোনো তথ্য, যা বাংলাদেশ সরকারের নয় এবং যাতে অন্য কোনো সংস্থার কপিরাইট রয়েছে, সেক্ষেত্রে সে সংস্থার অনুমতি গ্রহণ করতে হবে। এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে অন্যান্য যে সকল ওয়েবসাইটের সংযোগ রয়েছে, যা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত নয় কিংবা এর নিয়ন্ত্রণাধীন নয় এই ধরনের সংযোগকৃত ওয়েবসাইটের কনটেন্ট এবং তা সবসময় কার্যকর ও হালনাগাদ রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
বাংলাদেশ সরকারের মূল লক্ষ্য একুশ শতকে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্তরে স্তরে এর অনুন্নত জীবনধারাকে বদলে সমাজকে জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তর করা, যাতে একই জায়গা থেকে অ্যাপের মাধ্যমে জনসাধারণ কম সময়ে, স্বল্প খরচে এবং দ্রুততার সাথে সেবা গ্রহণ করতে পারবে। কার্যত এ দেশের মানুষের জীবনযাপন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবস্থাপনা, কর্মপদ্ধতি, শিল্প-বাণিজ্য ও উৎপাদন, অর্থনীতি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনধারাসহ সকল স্তরের সেবাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করা। সর্বোপরি, মাইগভ প্ল্যাটফর্মটির সেবার আবেদন থেকে শুরু করে অনলাইন পেমেন্ট, সার্ভিস ট্র্যাকিং, সার্ভিস ডেলিভারি, সার্ভিস হিস্ট্রি অনুসন্ধান, সার্ভিস সংক্রান্ত অভিযোগ ইত্যাদি সকল প্রকার সুবিধা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে গ্রাম ও শহর নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করা।
লেখক: তথ্য অফিসার, তথ্য অধিদফতর।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা