ডেঙ্গু চিকিৎসা সাশ্রয়ী করতে হবে
০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১৮ পিএম | আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ লাভ করেছে। মহামারি ঘোষিত না হলেও এটি কোনো অংশে মহামারির চেয়ে কম নয়। প্রতিদিনই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যুবরণ করছে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত আগস্টে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৭১ হাজার এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৩৪২ জন। এখন পর্যন্ত আগস্টেই সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১১ জনের বেশি মারা গেছে। জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬০০-এর মতো। ডেঙ্গু আগে শুধু শহরকেন্দ্রিক হলেও এখন তা গ্রামে-গঞ্জেও ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গুর ধরণও বদলেছে। কেউ আক্রান্ত হলে দ্রুত তার অবনতি ঘটে। হাসপাতালে না গেলে মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়। আগে এমনটা ছিল না। ডেঙ্গুর চিকিৎসা করতে গিয়ে রোগীদের নানা ধরনের সংকট ও সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি হতে না পারা, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পর্যাপ্ত কীট না থাকা, রক্তের প্লাটিলেট সংকট থেকে শুরু করে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে না পারার অক্ষমতাসহ সার্বিক ব্যয় নির্বাহ গিয়ে অনেক পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে। ডেঙ্গু চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অসাধু চক্র। প্রয়োজনীয় ওষুধ বা প্লাটিলেট সংকটকে কাজে লাগিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছে। রোগীর নিরুপায় স্বজনরা বাধ্য হয়ে বেশি দামেই তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ কিনছে।
এ বছর ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারন করতে পারে, এমন আভাস শুরুতেই বিশেষজ্ঞরা দিয়েছিলেন। বিশেষ করে আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতির গুরুতর অবনতির কথা বলেছিলেন। বাস্তবে এখন তাই পরিলক্ষিত হচ্ছে। ডেঙ্গুর ধরণ বদলে যাওয়ার কারণে আক্রান্তদের এখন দ্রুত হাসপাতালমুখী হতে হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু ওয়ার্ডে এখন ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই পরিস্থিতি। তার উপর রয়েছে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণের সংকট। ডেঙ্গু আক্রান্তদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন রক্তের প্লাটিলেট। গুরুতর রোগীর প্লাটিলেট সংগ্রহ করার জন্য তার পবিারকে স্বজন কিংবা পরিচিতজনদের দ্বারস্থ হতে হয়। অনেক সময় তা পাওয়া যায় না। ফলে তাদেরকে ব্লাড ব্যাংকগুলোর কাছে ছুটে যেতে হচ্ছে। গুরুতর রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর ৬টি ব্লাড ব্যাংকে প্লাটিলেট সংকট দেখা দিয়েছে। সেখানে গিয়ে প্লাটিলেট না পেয়ে রোগীর স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছে। কোথাও পাওয়া গেলেও অধিক দামে কিনতে হচ্ছে। শুধু প্লাটিলেট সংকটই নয়, হাসপাতালে ভর্তি হলে প্রথমেই রোগীকে স্যালাইন দিতে হয়। সেই স্যালাইনেও এখন সংকট দেখা গিয়েছে। ফার্মাসিতে গিয়ে স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। স্যালাইনকে কেন্দ্র করে একটি অসাধু চক্রও গড়ে উঠেছে। বেশি দাম দিলে স্যালাইন পাওয়া যায়। বাধ্য হয়ে অনেককে ১০ টাকার স্যালাইন ১০০ টাকার উপরে কিনতে হচ্ছে। অনেকে স্যালাইন না পেয়ে ডাব কিনতে গিয়েও বিপাকে পড়ছে। স্বাভাবিক সময়ে একেকটি ডাবের দাম ৭০-৮০ টাকা হলেও এ সময়ে এসে তা ২০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। কয়েকদিন আগে তা বেড়ে ৪০০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় যে কীট, তার সংকটও দেখা দিয়েছে। বেশি দাম দিলে কীট পাওয়া যাচ্ছে। ওষুধের দামও অত্যধিক। এছাড়া, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে না পেরে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে অস্বাভাবিক ব্যয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে। পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পাওয়া এবং আর্থিক সংকটের কারণে ডেঙ্গু আক্রান্ত পরিবারের স্বজনরা এখন মৃত্যুভয়ে শংকিত হয়ে পড়েছে। একদিকে স্বজন হারানোর ভয়, অন্যদিকে চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছে। তীব্র আর্থিক সংকটের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত দরিদ্রদের পক্ষে চিকিৎসা ব্যয় বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। শুধু দরিদ্রই নয়, নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও চরম আর্থিক সংকটে পড়ে ফতুর হয়ে যাচ্ছে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। একদিকে মশা নিধনে সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতা, অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডেঙ্গু চিকিৎসায় অপর্যাপ্ত বরাদ্দ ডেঙ্গুর বিস্তার অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে। সরকারকে সাধারণ মানুষের এই সংকটকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। ডেঙ্গুতে এখন ধনী-দরিদ্র সকলেই আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে ধনীদের সমস্যা হচ্ছে না। বিপাকে পড়েছে, দরিদ্র, নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী। তারা নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। ডেঙ্গু চিকিৎসাকে কেন্দ্র করে একশ্রেণীর লুটেরা সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। সরকারকে এই সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। কীভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ এবং সাশ্রয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, তার সমন্বিত ও জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে যৌক্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও খরচ নির্ধারণ করা আবশ্যক। সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে সরকারকে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা