ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০ পৌষ ১৪৩১

নিরাপত্তাহীন উন্নয়নে বিপন্ন ও দিকভ্রান্ত সাধারণ মানুষ

Daily Inqilab জামালউদ্দিন বারী

০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৩ পিএম | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম

গত দেড় দশক ধরে দেশের ক্ষমতাসীনদের মুখে উন্নয়নের কথা শুনতে শুনতে দেশের সাধারণ মানুষের কাছে ‘উন্নয়ন’ এখন একটি হাস্যরসের বিষয়ে পরিনত হয়েছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতির মধ্য দিয়ে দেশে যে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন চলছে , তাতে দেশে ক্রমবর্ধমান শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান, দেশের সাধারণ দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন কিংবা জীবনমানের উন্নয়ন না ঘটলেও অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতিসহ নানাবিধ অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত হয়েছে দেশের কোটি কোটি মানুষ। উন্নয়ন প্রকল্পসহ নানাবিধ দুর্নীতির মাধ্যমে কিছুৃ সংখ্যক সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী, সরকারি আমলা ও রাজনীতিবিদ কয়েক বছরের মধ্যে শত শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জন করে আল্ট্রা ধনিক শ্রেণীতে পরিনত হলেও কোভিড মহামারিত্তোর বাস্তবতায় দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কয়েক কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র জনসংখ্যার তালিকায় নেমে যেতে বাধ্য হয়েছে। গত দেড় দশক ধরে দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি শ্রুত হয়েছে, ডিজিটাল বাংলাদেশ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, স্মার্ট বাংলাদেশ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ইত্যাদি শ্লোগান। এসব গালভরা চটকদার রাজনৈতিক এজেন্ডাগুলো সামনে রেখে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষা ও মানবাধিকারের মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোকেও পাশ কাটানোর অপপ্রয়াস দেখা গেছে। ‘অধিক উন্নয়ন, কম গণতন্ত্র’ এমন ধারণাও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার প্রোপাগান্ডা আমরা দেখেছি। মানুষ ও প্রকৃতিকে অগ্রাহ্য করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডাকে পাশ কাটিয়ে ক্ষমতাসীনদের নিরঙ্কুশ দলীয় ক্ষমতায়ণের একপেশে রাজনৈতিক তৎপরতার মাশুল গুনতে হচ্ছে এখন আমাদের পুরো সমাজ, রাষ্ট্র ও সারাবিশ্বের বাংলাদেশি ডায়াসপোরাকে। গুম-খুন ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক দেশের কোনো সংস্থা বা বাহিনী নয়। আইনের শাসন ও মানবাধিকার রক্ষার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘনের দায়ে সরকারের নির্বাহী ক্ষমতার অনুঘটক বাংলাদেশের এলিটফোর্স র‌্যাবের কতিপয় শীর্ষ কর্মকর্তা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন। বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, পুলিশ থেকে বিচারকরা পর্যন্ত এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ বাজেয়াপ্তের হুমকির মধ্যে রয়েছে। সরকারের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে নিজেদের অধীনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের কথিত রূপরেখা যতই স্পষ্ট হচ্ছে, সরকারের উপর পশ্চিমা বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহযোগিদের চাপ ততই জোরালো হয়ে উঠছে। সেই সাথে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থনপুষ্ট অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের রাজনৈতিক কর্মসূচিও ক্রমে জোরালো হয়ে উঠছে। সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে বিএনপি’র কর্মসূচিগুলোতে ঢাকাসহ দেশের যেকোনো স্থানে একদিনের নোটিশে লাখো মানুষের ঢল নেমে আসার মধ্য দিয়ে সরকারকে যে বার্তা দেয়া হচ্ছে, এখনো পুলিশ ও দলীয় ক্যাডার দিয়ে তা মোকাবেলার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

উন্নয়নের গতানুগতিক ধারণা আরো অনেক আগেই অচল হয়ে গেছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও ক্লাইমেট চেঞ্জের বাস্তব প্রতিক্রিয়ায় দেশে দেশে নতুন প্রাকৃতিক বিপর্যয়, নতুন নতুন রোগব্যাধি, জনস্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ঠেকাতে টেকসই উন্নয়ন ধারণার গুরুত্ব বহুগুণ বেড়ে গেছে। সেখানে যেনতেন প্রকারে অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষতিকর দিকগুলো কোটি কোটি মানুষকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়ার চিত্র ক্রমেই প্রকট আকারে ধরা পড়ছে। এ ক্ষেত্রে গতানুগতিক জিডিপি (গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট) প্রবৃদ্ধির অশুভ প্রতিযোগিতার কুফল এড়াতে আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ভূটানের দেখানো জিএনএইচ বা গ্রোস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’ ধারণা বিশ্বের সামনে গতানুগতিক উন্নয়ন ধারণায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা ঘটিয়েছে। ভোগবাদী সমাজের অসুস্থ অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতাকে অগ্রাহ্য করে মানুষের প্রকৃত নিরাপত্তা, সুখ-শান্তি, আত্মিক উন্নয়নের ধারণাকেই এখানে উন্নয়নের অভিষ্ট্য লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। সত্তুরের দশকে ভূটানের রাজা জিগমে সিঙে ওয়াংচুক যখন প্রথম পুঁজিবাদী প্রতিযোগিতার বদলে জিএনএইচ ধারণা প্রকাশ করেছিলেন, তা গ্রহণ করার মত চিন্তা-চেতনা তখন অনেক দেশেরই ছিলনা। গতানুগতিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধারণা ও প্রকৃতি বিনাশী কর্মকা-ের ভয়াবহ বিপর্যয়কর প্রতিক্রিয়া প্রত্যক্ষ করেই বিশ্ব ক্রমে টেকসই উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতার বদলে মানুষের প্রকৃত নিরাপত্তা ও সুখ-শান্তির দিকে মনোনিবেশ করতে বাধ্য হচ্ছে। ভূটানিদের অনুসৃত জিএনএইচ ধারণায় যে চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে, তা হচ্ছে, টেইসই ও সমতাভিত্তিক সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পরিবেশগত সুরক্ষা ও নিরাপত্তা, দেশীয় সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও সুকুমার বৃত্তির বিকাশের সহায়ক ভূমিকা নিশ্চিত করা এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রে ও সমাজে সুশাসন নিশ্চিত করা। সুশাসন, আইনের শাসন, নিরপেক্ষ ও সমতাভিত্তিক অর্থনৈতিক বন্টন ব্যবস্থা ছাড়া মানুষ কিংবা রাষ্ট্রের টেকসই ও প্রকৃত উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। চলমান বিশ্ব ব্যবস্থা পশ্চিমা একটি ইউনিপোলার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হওয়ায় কোনো একক দেশের বিশেষ ব্যবস্থা এখানে খুব বড় ধরণের পরিবর্তন ঘটাতে না পারলেও দেশের সরকার এবং সাধারণ মানুষের চিন্তা-চেতনা ও জীবনবোধের ইতিবাচক পরিবর্তন ধীরে ধীরে সারা বিশ্বে প্রভাবক হয়ে উঠতে পারে। ভূটানের জিএনএইচ ধারণা তারই একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
দেশের মানুষের মধ্যে ২০২১ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নয়নের রূপরেখা হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশ, উন্নত বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এসব উন্নয়ন ধারণা যতটা বাস্তবে দেখা গেছে, তার চেয়ে শতগুণ বেশি দেখা গেছে নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার রাজনৈতিক প্রপাগান্ডায়। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়ন ও বিশ্বময় ছড়িয়ে পরার বাস্তবতা তথ্যপ্রযুক্তির গ্লোবালাইজেশনের সবচেয়ে বড় উদাহরণ। এখানে কোনো একক বা বিশেষ রাষ্ট্র কিংবা সরকারের ভূমিকা মুখ্য নয়। দেশের নব্বইভাগ মানুষের হাতে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কৃতিত্ব ও ভূমিকা রাষ্ট্রের চেয়ে বৈশ্বিক গেটওয়ের বাণিজ্যিক ব্যবস্থা ও কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর অনেক বেশি। ইন্টারনেট ও ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা ও প্রতিযোগিতার মূল বিষয়টি হচ্ছে গতির প্রতিযোগিতা। গত দেড় দশক ধরে আমাদের সরকারের প্রচারযন্ত্র যতটা ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ বলে রেকর্ড বাজাচ্ছিল, প্রতিবেশী বা দূরপ্রাচ্যের আর কোনো দেশকে এমন রেকর্ড বাজাতে দেখা যায়নি। অথচ ইন্টারনেটের গতি নির্ধারক জরিপ প্রতিষ্ঠান ওকলার ২০২২ সালের রিপোর্ট অনুসারে, বিশ্বের ১৪০ দেশের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩০তম। বৃটিশ সংস্থা কেবলডটকোডইউকে’র জরিপে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতির ক্ষেত্রে বিশ্বের ২২০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯৫তম। উপমহাদেশে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভূটান, মালদ্বীপ কিংবা আফ্রিকার সুদান, সোমালিয়া থেকেও ডিজিটাল বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। এই ডিজিটালাইজেশনের গলাবাজি শুনতে শুনতে এক সময় দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফ্ট কোড হ্যাক করে শত শত মিলিয়ন ডলার চুরি হয়ে যাওয়ার কাহিনী বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ডিজিটাল ডাকাতির কাহিনী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরি নিয়ে হলিউডের একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ‘বিলিয়ন ডলার হেইস্ট’ নামের ডক্যুমেন্টারি ফিল্ম নির্মান করেছেন। রাজনৈতিক শ্লোগানবাজির ডিজিটালাইজেশন আমাদের আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকে উচ্চমাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। বাংলাদেশ সরকারের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের ওয়েবসাইট থেকে কোটি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে যাওয়ার তথ্য প্রকাশ করেছে মার্কিন প্রযুক্তি বিষয়ক মিডিয়া টেকক্রাঞ্চ। বিস্ময় ও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি কিংবা সরকারি দফতরের ওয়েবসাইট থেকে কোটি মানুষের তথ্য চুরির মত ঘটনাগুলো আমরা বিদেশি মিডিয়া থেকে প্রথম জানতে পেরেছি। সেসব উৎস থেকে তথ্য জানার পরও আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক কর্তাব্যক্তি কিংবা মিডিয়াগুলো এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারছে না। সাধারণত সংঘবদ্ধ হ্যাকাররা পরিকল্পিতভাবে তথ্য চুরি কিংবা বিভ্রাট সৃষ্টি করে থাকে। কিন্তু আমাদের সরকারি ওয়েবসাইট থেকে তথ্য ফাঁসের ঘটনা তেমন কিছু নয়। আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি বিশারদরা নিজেদের ওয়েব পোর্টালের দরজা বিশ্বের সবার জন্য উন্মুক্ত করে নাগরিকদের ব্যক্তিগত নাম-ঠিকানা, ফোন নাম্বার, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধনসহ ১৭১টি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় তথ্য পাচার করা হয়েছে। নিরাপত্তাহীনতা ও কারিগরী ত্রুটি নাকি এটা সরকারি দফতরের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা কোনো পক্ষের সাবোটাজ, তা জানাও এখন সম্ভব নয়। এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার সঠিক তদন্ত ও স্বচ্ছ চিত্র এখনো পাওয়া যায়নি। এসব নিয়ে দেশের মিডিয়াগুলো নিরব থাকলেও সংশ্লিষ্ট বিদেশিরা সহসাই প্রশ্ন তুলছেন। দেশের মানুষকে অন্ধকারেই রাখা হচ্ছে।

করোনা অতিমারির সময় বিশ্বের দেশগুলো যখন যথাশীঘ্র একটি ভ্যাকসিন পাওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, তখন ভারতের প্রতি অতি নির্ভরশীলতার কারণে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা থেকে অনেকটা ছিটকে পড়েছিল। চীনা কোম্পানি সিনোফার্মার প্রস্তাব নিয়ে সময় ক্ষেপণ ও তথ্যফাঁসের কেলেঙ্কারির পর সাড়ে তিন কোটি ভ্যাকসিনের আগাম মূল্য গ্রহণ করেও সরকারি সিদ্ধান্তে বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন দেয়নি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ কোভেক্সের জরুরি ভ্যাকসিন সহায়তা পাওয়ার কারণে দেরিতে হলেও কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশনে সফল হয়েছে বাংলাদেশ। করোনা অতিমারির পর এ বছর প্রাণঘাতী ডেঙ্গু জ্বর মহামারি আকারে আক্রান্ত করেছে বাংলাদেশকে। আগস্ট পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তির তথ্য জানা যায়। এদের মধ্যে ডেঙ্গুতে হাসপাতালে ৬ শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলা হলেও আক্রান্ত ও মৃতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসেবের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বলেই মনে করেন অনেকে। গত ৪ সেপ্টেম্বর একটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশ্বের ৭০টি দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার তথ্য জানা যায়। প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ডেঙ্গুতে ৭০টি দেশের সম্মিলিত মৃত্যুর হারের শতকরা ২৫ ভাগ বা চারভাগের একাংশের মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে। আক্রান্তদের মধ্যে মুত্যুর হার বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির মধ্য দিয়ে যে ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে এসেছে তার বিপরীতে এডিস মশা নিধন এবং হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসা ব্যবস্থার বেহাল দশা খুবই উদ্বেগজনক। দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পাচারের পাশাপাশি অপরিকল্পিত উন্নয়নের পেছনে লাখ লাখ কোটি টাকা খরচ করে দেশকে দৈন্যদশায় নিক্ষেপ করেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, হাওরাঞ্চলসহ সমগ্র বাংলাদেশ এখন ভুল উন্নয়নের চরম খেসারত দিচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পর এবার গতানুগতিক বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রাম শহরের বিশাল এলাকা পানিতে তলিয়ে বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। ভুল পরিককল্পনায় অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা জটিল আকার ধারণ করেছে। নগরবিদদের কেউ কেউ চট্টগ্রাম নগরী পরিত্যক্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন। এক দশকের বেশি সময় ধরে আমাদের গর্বের নগরী ঢাকা বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য মেগাসিটির তালিকার প্রথম দিকে স্থান পাচ্ছে। মশক নিধনের পেছনে শত শত কোটি টাকা খরচ করার পরও ঢাকা এখন এডিস মশা ও ডেঙ্গু মহামারির মৃত্যু পুরিতে পরিনত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নগর উন্নয়ন, বিদ্যুতায়ণ, ডিজিটালাইজেশনসহ তথাকথিত উন্নয়নের প্রতিটি ধাপে মানুষকে আরো বেশি ঝুঁকি ও দুর্ভোগে নিপতিত করা হয়েছে। ভুল উন্নয়নের পথ ধরে বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ। যতই উন্নয়নের বাজনা বাজানো হয়েছে, সেই ঢামাঢোলের আড়ালে চাপা পড়েছে মানুষের প্রকৃত উন্নয়ন, প্রত্যাশা, নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়নের পথরেখা। মানবিক মর্যাদা, বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মানের আকাক্সক্ষা, মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের হাত ধরে একটি নিরাপদ, আত্মমর্যাদাশীল রাষ্ট্র গঠনের আকাক্সক্ষাই ছিল আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ভুল চেতনা ও ভুল উন্নয়নের চোরাপথে আমাদের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সুশাসনের সেই স্বপ্ন ও চেতনা এখন দু:স্বপ্নের বিভীষিকায় হারিয়ে যেতে বসেছে।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রাষ্ট্র সংস্কারে ইসলামের অনুপম শিক্ষা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে
মাহফুজ আলমের কথায় ভারতের আঁতে ঘা
অপরাধ বাড়ছে কেন?
বিহারীরা কেমন আছে
পিলখানা হত্যাকান্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে
আরও

আরও পড়ুন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ  কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি  বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই  আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭

মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি

মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল

৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল

মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪

মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী

রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি

রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি

উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা

উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা

ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০

ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০

মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান

মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান

গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু

গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু

পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের

পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের

স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা