আলু নিয়ে সিন্ডিকেটবাজি বন্ধ করতে হবে
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৪ পিএম | আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
রবি মওসুমের প্রধান ফসল আলু নিয়ে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী প্রতিবছরই সিন্ডিকেটবাজিতে লিপ্ত হয়। এ কারণে, বছরের শেষদিকে আলুর দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যেতে দেখা যায়। দেশে সারাবছরের চাহিদার তুলনায় এ বছর আলু উৎপাদন অনেক বেশি হওয়ায় অস্বাভাবিক হারে মূল্য বৃদ্ধির সুযোগ না থাকলেও বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছে একটি ব্যবসায়ী চক্র। গত কয়েক মাসে একের পর এক বেশ কয়েকটি পণ্যে সিন্ডিকেটেড মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে। কিছুদিন আগে পরিকল্পিত উপায়ে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দেড়-দুইশ টাকা থেকে কাঁচা মরিচের দাম হাজার টাকা কেজি বিক্রি করতেও দেখা গেছে। এরপর ডিম নিয়ে শুরু হয় সিন্ডিকেটের লুটপাট। এবার আলুর উপর নজর পড়েছে সিন্ডিকেটের। যে আলু রংপুর-দিানজপুরের কৃষকরা ১১-১২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিল, সেই আলু এখন ৫০টাকা কেজি দরে কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছে। দেশে উৎপাদিত আলুর প্রায় এক চতুর্থাংশ কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। বিপুল পরিমান আলু কৃষকের বাড়ির গোলায়ও সংরক্ষণ করা হয়। বছরের মাঝামাঝিতে এসে কৃষকের আলু শেষ হয়ে যাওয়ার পর পাইকারি ব্যবসায়ী-মজুদদার ও কোল্ড স্টোরেজ মালিকদের হাতে থাকা আলু নিয়ে শুরু হয় সিন্ডিকেটেবাজি। পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও চলছে একই ধরনের অস্থিরতা ও মূল্যবৃদ্ধি।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের দেয়া তথ্য মতে, চলতি বছর দেশে আলুর উৎপাদন ছিল ১ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার টন। বছরে দেশে আলুর চাহিদা প্রায় ৫০ লাখ টনের বেশি নয়। পচনশীল কৃষিপণ্য হিসেবে ২০ ভাগ অপচয় এবং বীজের জন্য সংরক্ষিত আলু বাদ দিলেও কমপক্ষে ২০ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থাকার কথা। সামান্য কিছু আলু বিদেশে রফতানি করার পরও দেশে আলুর কোনো সংকট থাকার কারণ নেই। হিমাগার মালিকরা সরকারি হিসাবের চেয়ে আলুর উৎপাদন কম দেখিয়ে এবং বাজারের চাহিদার তুলনায় হিমাগার থেকে আলু কম ছাড় করে একটি কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মূল্য বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জুলাই মাসেও হঠাৎ করে আলু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে খুচরা বাজারে চল্লিশ টাকা দরের আলু ৫০-৫৫ টাকায় উঠে গেলে ভোক্তা অধিকার ও বাজার নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমান আদালতের তদারকির কারণে তা ৪০ টাকায় নেমে আসে। চলতি সপ্তাহে জাত ও মান ভেদে আলুর দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ কৃষকের উৎপাদন খরচ গড়ে সাড়ে ১০ টাকা এবং বস্তা ও কোল্ড স্টোরেজ খরচসহ কেজিতে ২৫-২৬ টাকার বেশি পড়ে না। এ হিসাবে, খুচরা বাজারে এ সময়ে আলুর দাম হওয়ার কথা কেজিতে সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ টাকা। অথচ বাজারে এখন আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি। চাল এবং গমের পর আলু আমাদের দেশে সবচেয়ে নির্ভরশীল খাদ্যপণ্য। এর ব্যবহার বহুবিধ ও বহুমাত্রিক। দেশে উৎপাদিত ও স্বয়ংসম্পুর্ণ আলু এককভাবে ভাত ও রুটির বিকল্প খাদ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দরিদ্ররা অনেক সময় ভাতের বিকল্প হিসেবে আলু খেয়ে থাকে। বর্তমানে দেশের চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে চাল উৎপাদনে আমাদের কৃষকরা স্বয়ংসম্পুর্ণ হলেও চালের দাম কমেনি। এক্ষেত্রেও মধ্যসত্ত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের কারসাজি থাকে। কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে মজুদদারি করে চালকল মালিকরা চালের মূল্য বাড়িয়ে সাধারণ ভোক্তাদের জিম্মি করে হাজার হাজার কোটি টাকার মুনাফাবাজি করছে। এমনিতে ডলার সংকটসহ নানা কারণে ঘাটতিতে থাকা আমদানিকৃত খাদ্যপণ্য এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। দেশের নি¤œ ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমে দুর্বহ হয়ে উঠেছে।
আলুর মত পণ্যের উপর সিন্ডিকেটেড মুনাফাবাজি বন্ধে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বাণিজ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যেও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীকেও এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। তারপরও সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না। বলা বাহুল্য, সরকার উদ্যোগ নিলে যেকোনো পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা সম্ভব। গত কয়েক মাসে কাঁচামরিচ, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজ ও আলুর মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগ কিছুটা হলেও লাগাম টানতে সক্ষম হয়েছিল। যদিও এসব পণ্যের মূল্য এখনো অস্বাভাবিক। কৃষকরা দেশের চাহিদার চেয়ে বেশি আলু উৎপাদন করছে। এ প্রেক্ষিতে, আলুর দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। অথচ বাজারে আলুর দাম ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আলু নিয়ে যে সিন্ডিকেটের কারসাজি চলছে, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তাহলে, সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? তারা কি সিন্ডিকেটের কাছেই জিম্মি হয়ে থাকবে? জিনিসপত্রের দাম নিয়ে খোদ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও বিব্রত। তারা এ নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে জবাব দিতে পারছে না। শুধুমাত্র সিন্ডিকেটেড ব্যবসায়ীদের জন্য এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এমতাবস্থায়, আলু নিয়ে যে সিন্ডিকেটবাজি চলছে, তা সরকারকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। এর সাথে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা