উন্নয়ন মানুষের কতটা উপকারে আসছে?
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৫০ পিএম | আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
স্বাভাবিকভাবে ধরে নেয়া হয়, যারা রাজনীতি করেন, তাদের আদর্শ ও লক্ষ্য ভিন্ন হলেও তারা জনগণের কল্যাণে নিবেদিত। দেশ ও মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন এবং মৌলিক অধিকার রক্ষা ও সুখে-দুঃখে তাদের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়েই তারা রাজনীতি করেন। জনসাধারণ যদি মনে করে, তাদের এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ তাদের কল্যাণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে, তবেই তাদের সমর্থন এবং ভোট দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসায়। ক্ষমতাসীন হয়ে জনগণের এই আকাক্সক্ষা পূরণে সমর্থ হলে পুনরায় নির্বাচিত করে। ব্যর্থ হলে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেয়। এটা হচ্ছে, জনগণের অধিকার ও রাজনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয় যে সবসময় ঠিক থাকে, তা নয়। জনগণের অধিকার রক্ষিত হয়, তাও নয়। আমাদের দেশে যেখানে গণতন্ত্র পুরোপুরি ভিত্তি লাভ করেনি, গণতান্ত্রিক ধারা বারবার হোঁচট খাচ্ছে, সেখানে কোন একটি দল বা জোট ক্ষমতাসীন হলে, তারা এ কাজগুলোর চেয়ে ক্ষমতায় থাকাকে বেশি প্রাধান্য দেয়। ক্ষমতায় থাকার জন্য নানা রকম ফন্দিফিকির করে। জনগণের রায় পাল্টে দেয়া ও উপেক্ষার চেষ্টা চালায়। ক্ষমতার মেয়াদ শেষের দিকে তারা হাইপারটেনশনে ভুগতে থাকে। নির্বাচন ভীতিতে আক্রান্ত হয়। এর ফলে গণতন্ত্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে না গিয়ে কীভাবে এবং কী করলে পুনরায় জয়লাভ করা যাবে, তা নিয়ে নানা অপকৌশলে বেশি মনোযোগী হয়। বিগত প্রায় দেড় দশক ধরে এ প্রবণতা বেশি ফুটে উঠেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, ক্ষমতাসীনরা জানে, তারা জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ভোট না নিয়ে অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয়েছে। ফলে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে ভয় পায়। ক্ষমতা নিশ্চিতকারী একটি ‘তাল গাছ’ দাঁড় করিয়ে, সেটিকে আঁকড়ে ধরে আছে। কিছুতেই ‘তাল গাছটি’কে ছাড়তে চাচ্ছে না। এটি ছেড়ে দিলে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না, এমন ভীতি তাকে পেয়ে বসেছে। সে মনে করছে, ‘তাল গাছ’ ছেড়ে দিলে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারবে এবং সে ভোটে হেরে যাবে। কোনোভাবেই সে জনগণের উপর ভরসা করতে পারছে না। ফলে পুনরায় ক্ষমতায় আসার জন্য নানা অপকৌশল ও তার ‘তাল গাছে’র গণতন্ত্র যা সর্বজনগ্রহণযোগ্য নয়, তা কিছুতেই ছাড়তে চাচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দল এখন বেশ জোরেসোরে এই ‘তাল গাছে’র গণতন্ত্রের কথা বলছে। সাধারণ মানুষ প্রকৃত গণতন্ত্র কি ও কেমন, তা দেখতে পাচ্ছে না। ক্ষমতাসীনদের কেউ কেউ প্রায়ই উন্নত গণতান্ত্রিক দেশের উদাহরণ দিয়ে থাকেন। এ অনুযায়ী, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেন। তারা এ কথা বলেন না, যেসব গণতান্ত্রিক দেশ আজ উন্নতির শিখরে, তারা উন্নত হয়ে জন্মায়নি। গণতন্ত্রের অবিরাম চর্চার মধ্য দিয়ে উন্নত দেশে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশের জনগণ সেই গণতন্ত্রের অভিজ্ঞতা এখন লাভ করেনি। তাদের কাছে তা ‘সোনার হরিণ’ হয়ে রয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে যে, সকল দল-মতের মধ্যে যে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সহিষ্ণুতা ও সহবস্থান নিশ্চিত করতে হয়, এ চিত্র আমাদের রাজনীতিতে অনুপস্থিত। ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে বিরোধীদল-মতকে শত্রুজ্ঞান করার প্রবণতা সবসময় বিরাজ করে। দমন-পীড়নের মাধ্যমে তাদের নিঃশেষ করে দেয়া তাদের মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে। সে বুঝিয়ে দিচ্ছে, তার সংজ্ঞার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে, কার্যকর বিরোধীদল থাকা চলবে না। শুধু তার সাথে তাল মিলিয়ে সুবিধাবাদী কিছু দল নিয়ে একটি সংসদ হলেই চলবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় থাকার প্রবণতা সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও ভোট দিতে না পারার আক্ষেপ জন্মায়। ক্ষমতাসীনদের এই কীর্তি এবং বিরোধীদলের ব্যর্থতার কারণে সাধারণ মানুষ এখন রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে।
দুই.
ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিদের মুখে গণতন্ত্রের চেয়ে উন্নয়নের ফিরিস্তি বেশি শোনা যায়। ভোটের অধিকার নিশ্চিতের কথা খুব একটা বলে না। উন্নয়নের ধোঁয়া তুলেই মানুষের মন জয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই ধোঁয়া যাতে দূর করা না যায়, সে অপকৌশলও অবলম্বন করছে। ক্ষমতাসীন দল মনে করে, তার এই লক্ষ্য পূরণের পথে মূল বাধা বিরোধীদল। বিশেষ করে বড় বিরোধীদল। কাজেই তাকে নির্মূল করতে হবে। ক্ষমতাসীন দল এ নীতি অবলম্বন করতে গিয়ে যা ঘটাচ্ছে, তা বোধ করি সবাই জানে। ক্ষমতাসীন দল যে উন্নয়নের কথা বলছে, এটা বলার কি প্রয়োজন? সাধারণ মানুষ তো জানেই, সরকারে যে দল থাকবে তার দায়িত্ব হচ্ছে, দেশের ও মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটানো। এ দায়িত্বের কথা এত ঢাকঢোল পিটিয়ে বলার দরকার কি? চরম স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের অধীনেও মানুষ উন্নয়ন দেখেছে। তার উন্নয়নের কথা বলার অর্থ হচ্ছে, গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় না থাকার বিষয়টিকে আড়ালে নিয়ে যাওয়া। মানুষকে বলা তোমাদের উন্নয়ন করছি, কাজেই ভোট দেয়া নিয়ে এত মাথা ঘামানোর দরকার নেই। অথচ ক্ষমতাসীন দলের ভাল করেই জানা, আমাদের দেশের মানুষ গণতন্ত্র বাদ দিয়ে শুধু উন্নয়নে খুশি হয় না। খুশি হলে আইয়ুব খানকে ক্ষমতা ছাড়তে হতো না। আমাদের জনগণের কাছে যে জীবনের চেয়েও গণতন্ত্র, সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, আইনের শাসনের মূল্য অনেক বেশি, তা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। তারা জানে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দৃঢ় হলে উন্নয়ন-অগ্রগতি এমনিতেই হয়। ফলে আগে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা জরুরি। অন্যদিকে, মৌলিক চাহিদা পূরণ হলে মানুষের মধ্যে গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষাও তীব্র হয়ে উঠে। তাদের এই আকাক্সক্ষার কারণেই উন্নত বিশ্বে গণতন্ত্র দৃঢ়তা পেয়েছে। দেশগুলোর সরকার গণতন্ত্রহীন উন্নয়ন করেনি। তারা গণতান্ত্রিক পরিবেশের মধ্য দিয়েই উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে। এই যে শ্রীলঙ্কা একবছর আগে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল, সে যে দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার কারণে। দেশটির রাজাপাকসে সরকার একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করে উন্নয়নের কথা বলেছিল, শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য। শেষ পর্যন্ত দেশটিকে দেউলিয়া করে জনগণের প্রতিরোধের মুখে তাকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা প্রায়ই বলে থাকেন, আমাদের দেশেও শ্রীলঙ্কার রাজাপাকসে সরকারের মতো পরিবেশ-পরিস্থিতির প্রবণতা রয়েছে। এটি অবশ্যই শঙ্কার বিষয়। আমাদের দেশের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির প্রতি সাধারণ মানুষের অনীহা বরাবরই রয়েছে। এ থেকে উত্তরণের পথও তাদের সামনে খোলা নেই। ফলে অসহায় হয়ে বসে থাকা ছাড়া তাদের কিছু করার থাকছে না। তারা এক ধরনের ভলিবল খেলার মধ্যে পড়ে গেছে। ক্ষমতাসীন দল বলছে, জনগণ তাদের সাথে আছে, বিরোধীদলের সাথে নেই। আন্দোলনরত বিরোধীদলগুলোও একই কথা বলছে। জনগণ যে কোন দিকে আছে, তা বোঝার কোন উপায় নেই। একটি উপায়ই হতে পারে, আর তা হচ্ছে, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। যেখানে জনগণ তার মতামত স্বাধীনভাবে দিতে পারবে। তখনই বোঝা যাবে, জনগণ কার পক্ষে রয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এ পথটি এখন রুদ্ধ হয়ে আছে। বিরোধীদল আন্দোলন করলেও, ক্ষমতাসীনরা তা মানতে নারাজ। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য একধরনের জবরদস্তিমূলক পথ অবলম্বন করে চলেছে। যেমনটি করেছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনিও গণতন্ত্রের কথা বলে শাসন করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তার এই কথিত গণতন্ত্র টিকেনি। তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সরকার যদি আত্মবিশ্বাসী ও জনসাধারণের প্রতি আস্থাশীল হয়, তবে তারা নির্বাচনের মাধ্যমে জনরায় নেয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারে। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে যারা সরকার পরিচালনা করে, তারা তাদের প্রতি জনগণের আস্থা অটুট রয়েছে কিনা, তা টেস্ট করার জন্য মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে থাকে। এতে তারা কখনো জয়ী হয়। কখনো পরাজিত হয়। পরাজিত হলে জনরায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিজ থেকেই ক্ষমতা ছেড়ে চলে যায়। আমাদের দেশে গণতন্ত্রের এই চর্চা নেই। ভবিষ্যতে হবে কিনা, তা নিশ্চিত নয়।
তিন.
দেশের মানুষ যে এখন নিদারুণ পেরেশানিতে রয়েছে, তা প্রতিদিনের পত্র-পত্রিকায় তাদের জীবনের টানাপড়েনের চিত্র দেখে বোঝা যায়। তারা বড়ই দুর্দিনের মধ্যে রয়েছে। চরম দুর্ভোগের মধ্যে তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে তাদের জীবনযাপন দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সবকিছু ঠিকঠাক চলছে। দেশ উন্নয়নের স্বর্ণশিখরে অবস্থান করছে। অথচ কী উন্নয়ন হচ্ছে, তার চিত্র পত্র-পত্রিকাগুলোর প্রতিবেদন থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না। সম্প্রতি ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ সরকারের উন্নয়ন নিয়ে মন্তব্য করেন, শুধু অবকাঠামো তৈরি করে কোনো দেশ উন্নতি করতে পারেনি। অবকাঠামো যদি মানবস¤পদের সঙ্গে না মেলে তা হবে কঙ্কাল। অর্থাৎ শুধু বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করলেই হবে না, মানস¤পন্ন শিক্ষা দরকার। তার এ মন্তব্য থেকেই পরিস্কার দেশে কি ধরনের উন্নয়ন হয়েছে। যে উন্নয়ন মানুষের জীবনমানের উন্নতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তা খুব বেশি কাজে আসে না। যেমন সড়ক-মহাসড়ক ও সেতুসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হলো, সেগুলো দিয়ে যানবাহনও স্মুথলি চলছে, তবে মানুষের কাছে যদি যানবাহনে চড়ার মতো ভাড়া বা অর্থ না থাকে, তাহলে সে উন্নয়ন কি খুব বেশি উপকারে আসে? এগুলো তখনই কাজে লাগে যখন মানুষের আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকে। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস-এর হিসাব অনুযায়ী, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৯৩ লাখ। তবে এ সংখ্যা যে এখন বৃদ্ধি পেয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, দেশে দরিদ্র সংখ্যা ৫ থেকে ৬ কোটি হবে। অর্থাৎ দেশের এক তৃতীয়াংশ মানুষ দরিদ্র রয়ে গেছে। তাহলে সরকার যে উন্নয়নের কথা বলছে, তা যে এক ধরনের প্রহেলিকা ছাড়া কিছু নয়, তা সাধারণ মানুষের আর্থিক টানাপড়েন এবং দারিদ্র্যতা থেকেই বোঝা যাচ্ছে। সরকার দেশের উন্নতি দেখছে ধনী শ্রেণীর উন্নতির সূচক দিয়ে। জিডিপির প্রবৃদ্ধিও দেখাচ্ছে ধনীদের আয় ও সম্পদ দিয়ে। এই জিডিপির মধ্যে কোটি কোটি দরিদ্র মানুষগুলো নেই। জিডিপিতে তাদের অংশ মিটিয়ে দিচ্ছে ধনীদের অংশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের সব মানুষের মোট আয়ের ৩৮ শতাংশ বা তার বেশি আয় করে ১০ শতাংশ ধনী মানুষ এবং বেশির ভাগ সম্পদই তাদের অধীনে। অর্থাৎ সরকার দেশের উন্নয়ন দেখাচ্ছে, ধনীদের আয় ও উন্নতির সূচকের মাধ্যমে। পরিসংখ্যানের এই হিসাবে পড়ে সাধারণ মানুষ এখন হাবুডুবু খাচ্ছে। সরকারের উন্নয়নের সূচক দেখানোর দরকার, সে তা তাদের বাদ দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষ চলমান পরিস্থিতিকে যে দুঃস্বপ্ন বলে উড়িয়ে দেবে, তার জো নেই। তারা ঘুমেও দুঃস্বপ্ন দেখছে, বাস্তবেও তার মুখোমুখি হচ্ছে। একটি নি¤œবিত্ত পরিবারকে যখন রাজধানী ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে হয় কিংবা মধ্যবিত্ত পরিবারকে বড় ফ্ল্যাট ছেড়ে ছোট বাসা ভাড়া নিতে হয়, তখন এটা তার কাছে দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কি হতে পারে! পর্যবেক্ষকরা স্পষ্টতই বলছেন, এখন মানুষের কাছে খরচ কমানো অটোমেটিক চয়েস হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষকে বাধ্য হয়ে তাদের খরচ কমাতে হচ্ছে এবং তারাই বেশি কষ্টে আছে। তাদের অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে যে, খেয়েপরে বেঁচে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি মধ্যবিত্ত শ্রেণী। বিশ্বব্যাংকের এক হিসাব অনুযায়ী, দেশে জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশ বা ৩ কোটি মধ্যবিত্ত রয়েছে। এই মধ্যবিত্ত জনসংখ্যা জিডিপিতে ৬ শতাংশের বেশি ভূমিকা রেখে চলেছে। এখন এই সংখ্যাটি কত, তার হিসাব করা দরকার। তবে হিসাব করলে নিশ্চিতই দেখা যাবে, অনেক মধ্যবিত্ত পরিবার নি¤œবিত্তে পরিণত হয়েছে। ধনী শ্রেণী আরও ধনী হয়েছে। জিডিপিতে মধ্যবিত্তের অবদান কমে তার জায়গা পূরণ করছে অল্প সংখ্যক ধনী মানুষ। অর্থাৎ দেশে মানুষের মধ্যে আয়ের বৈষম্য আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। একেই যদি উন্নয়ন বলা হয়, তবে সরকার তা বলতে পারে।
চার.
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মেধাবী তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। কত সংখ্যক দেশ ছাড়ছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান জানা না গেলেও তা যে বছরে কয়েক হাজার হবে, তাতে সন্দেহ নেই। এসব তরুণ অনেকটা স্থায়ীভাবেই দেশ ছাড়ছে। এর মূল কারণ হিসেবে, রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি, সুশাসন এবং অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থানের অভাবের কথা বলা হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, মেধাবীদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা দেশকে মেধাশূন্যতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ প্রক্রিয়া বহু বছর ধরে চললেও ক্রমাগত রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও অস্থিতিশীলতা তা ত্বরান্বিত করেছে। যে মেধাবী তরুণরা দেশের ভবিষ্যত এবং রাজনীতিকে সঠিক ধারায় প্রবাহিত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, তারা যদি দেশ ত্যাগ করে, তবে রাজনৈতিক চলমান অপসংস্কৃতি যে আরও খারাপের দিকে যাবে, তা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। যারা সরকারে রয়েছে বা সরকার পরিচালনা করে তারা এ নিয়ে ভাবে না। কারণ, তাদের ছেলেমেয়েরাও বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বহাল-তবিয়তে আছে। আর বিপদ দেখলে নিজেও কেটে পড়ব। দুঃখের বিষয়, সরকার ও প্রশাসনের মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। তাহলে তারা দেশের সাধারণ মানুষের কষ্ট বুঝবে কি করে? তাদের অনেকে দেশকে বিদেশ, বিদেশকে দেশ মনে করছে। দেশ থেকে অর্থকড়ি বিদেশে নিয়ে পরিবার নিয়ে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করার বাসনা পোষণ করে। সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাদের স্পর্শ করে না। দেশে এখন এমন এক স্বার্থপর গোষ্ঠীর খপ্পরে পড়েছে। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দলের আচরণে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ গল্পটি মনে পড়ার কথা। গল্পটি হচ্ছে, এক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি কর্দমাক্ত পথ পাড়ি দিতে এক গরিব মানুষের পিঠে চড়ে বসেছে। সে গরিব মানুষটির গলা এমনভাবে প্যাঁচিয়ে ধরে যে, তার দম বন্ধ হয়ে আসে। তারপরও সে সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিকে বহন করে চলেছে। সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি আফসোস করে বলছে, আহা, তোমার কী কষ্ট হচ্ছে, আমি খুবই দুঃখিত! আমি নিশ্চয়ই তোমার দুঃখ-কষ্ট দূর করে দেব, শুধু এবারের মতো আমাকে বহন করে নিয়ে যাও, তবে আমাকে তোমার ঘাড় থেকে নামিয়ে দিও না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা