এইসব মেগা প্রকল্পে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৫০ পিএম | আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
এক্সপ্রেসওয়ে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আমাদের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় নতুন অভিজ্ঞতা। সড়কে যানজট নিরসন, কম সময়ে নির্বিঘেœ কাঙ্খিত দূরত্ব অতিক্রমের স্বাচ্ছন্দ ব্যবস্থা হিসেবে উন্নত বিশ্বের আদলে একপ্রেসওয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মান করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পদ্মাসেতুর সংযোগ সড়ক ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের নয়ানাভিরাম সৌন্দর্য ভ্রমণ পিপাসুদের মুগ্ধ করছে। তবে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এসব মেগা প্রকল্পের সঠিক ও সর্বোচ্চ ব্যবহার, প্রয়োজনীয় শৃঙ্খলা, নজরদারি ও নিরাপত্তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। গত মঙ্গলবার ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে তাৎক্ষণিকভাবে ৩জনের মৃত্যু এবং অন্তত ১২ জন আহত হওয়ার খবর বেরিয়েছে। দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনায় বছরে শত শত মানুষ হতাহত হচ্ছে। বিপুল ব্যয়ে অবকাঠামো নির্মাণ করা হলেও এসব সড়ক ব্যবহারে প্রয়োজনীয় নিয়ম-শৃঙ্খলা, তদারকি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা বেড়ে চলেছে। এ সপ্তাহে উদ্বোধন হওয়া দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত আংশিক যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হলেও এই এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে একশ্রেণীর বাস-মিনিবাস চালকদের মধ্যে অনীহা দেখা যাচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে রাস্তার যানজট এড়াতে বিশ্বের সর্বোচ্চ ব্যয়ে একযুগ ধরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পর তা খুলে দেয়ার পরও গণপরিবহণ চালকদের অনীহা-অনাগ্রহ বিষ্ময়কর।
পিপিপি বা প্রাইভেট-পাবলিক পার্টনারশিপে প্রতি কিলোমিটারে ১৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণব্যয় উঠাতে এটি ব্যবহারের জন্য যানবহনকে উচ্চহারে টোল দিতে হবে। তা ছাড়া এটি এখনো অসম্পুর্ণ। বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত খুলে দেয়া হলেও বেশিরভাগ যাত্রীর গন্তব্য ঢাকার উত্তর দিক থেকে দক্ষিণের মতিঝিল, গুলিস্তান কিংবা সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ীর দিকে। লোকাল বাসের যাত্রীরা স্বল্প আয়ের মানুষ। তাদের পক্ষে মাত্র কয়েক কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ের জন্য অতিরিক্ত বাসভাড়া বহন করা কষ্টকর। উড়াল সড়কের নিচের স্টপেজগুলোতে যাত্রী ওঠা-নামার সুযোগ থাকলেও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে একইভাবে ওঠা-নামার ব্যবস্থা বা র্যাম্প না থাকায় বাসচালক ও যাত্রীরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে আগ্রহী নন বলে জানা গেছে। এ কারণে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েকে বড়লোকদের প্রকল্প বলে অভিহিত করেছেন অনেকে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে, স্বপ্নের এই প্রকল্প থেকে আপাতত শহরের সাধারণ দরিদ্র মানুষের তেমন উপকার হচ্ছে না। সব মানুষের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা ছাড়া জনগুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্পের সাফল্য বা সামাজিক-অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করা যায় না।
একদিকে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চোখ ধাঁধানো ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ে এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, অন্যদিকে তার নিচেই খানাখন্দ-আবর্জনায় ভরা রাস্তায় চিরচেনা যানজটে নাকাল নগরবাসি। এই যানজটের প্রভাব প্রতিটি ফ্লাইওভারের প্রবেশপথেও দেখা যায়। এমনকি ফ্লাই্রভারের উপরেও প্রায়শ: কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট দেখা যায়। হানিফ ফ্লাইওভারের পূর্ব প্রান্তের প্রবেশ পথের দুই পাশে এবং নিচে ভাঙ্গাচোরা, খানাখন্দ এবং নিচে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে অবৈধ দখলবাজদের দৌরাত্ম্যের ভুক্তভোগী সাধারণ পথচারি ও গণপরিবহন যাত্রীরা। গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়, অবৈধ বাস-টেম্পো, রিকশা-ভ্যান স্ট্যান্ড থেকে শুরু করে অবৈধ মাছের বাজার, হাস-মুরগীর আড়ৎ গড়ে ওঠার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়াও অবৈধ দখলে থাকা এসব স্থানে মাদক সেবী ও মাদক কারবারীদের অবাধ বিচরণ রয়েছে বলে জানা যায়। একদিকে ভুল পরিকল্পনা ও ভুল নকশায় নির্মিত মেগা প্রকল্পে সাধারণ মানুষের তেমন উপকার হচ্ছে না, অন্যদিকে ফøাইওভারের নিচের সড়কগুলোতে নিরাপত্তাহীনতা, বিশৃঙ্খলা ও অবৈধ দখলদারদের কাছে সাধারণ মানুষের জিম্মিদশা দেখার যেন কেউ নেই। কিছুদিন আগেই মগবাজার ফ্লাইওভারে অবৈধ সুড়ঙ্গপথ এবং পেশাদার ছিনতাইকারী, অপরাধী ও মাদকসেবীদের সংঘবদ্ধ চক্রের আস্তানা উদঘাটিত হয়েছিল। বছরের পর বছর ধরে চলা এসব অপরাধিচক্রের তৎপরতায় অনেক দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। আর এসবই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিস্ক্রীয়তা, সমন্বয়হীনতা এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নির্লিপ্ততার কারণে ঘটছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে একেকটি স্বপ্নের অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে এর সম্ভাব্য সবদিকে বিবেচনা না করার কারণে উদ্বোধনের পরই নানাবিধ অসঙ্গতি ও সমন্বয়হীনতা ধরা পড়ছে। এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যাত্রীদের নিরাপত্তাসহ সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে অবৈধ তৎপরতা, দখলবাজি ও সমন্বয়হীনতা দূর করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা