উন্নয়নের জন্য সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:২২ পিএম | আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
সভ্যতার অগ্রযাত্রায় শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যে সমাজ বা জাতি শিক্ষায় যত প্রাধান্য দিয়েছে সে সমাজ তথা জাতির তত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত শিক্ষা। শিক্ষা মানুষের মনকে প্রশস্ত করে এবং জ্ঞানকে বৃদ্ধি করে। শিক্ষিত মানুষই পেরেছে সকল উন্নয়নে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে এবং নতুন কিছু সৃষ্টি করতে। তারাই উন্নয়নের সকল সুবিধা ভোগ করতে পারছে। শিক্ষা ছাড়া ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি বুঝা যায় না এবং ভূমিকা রাখাও সম্ভব হয় না। অন্যকে জানতে না পারলে নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় না। নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে জানতে না পারলে আত্মপ্রত্যয় বা আত্মবিশ্বাস বিকশিত হয় না। মঙ্গলজনক কাজও করতে শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। আজকে যে উন্নয়ন এবং উন্নয়নে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা একমাত্র শিক্ষিত বলেই তা পারছে। বৃটিশ সা¤্রাজ্যের কথা ভাবলে দেখা যায়, একমাত্র শিক্ষাই তাদের এ বিশ্বকে জয় করতে এবং প্রভূত্ব বিস্তারে সহায়ক ভূমিকা রেখেছিল। স্পেনও অনুধাবন করতে পেরেছিল অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করে জয়ী হওয়া কঠিন এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাই তারা কলমের যুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে অতি কঠোরভাবে তা অনুশীলনের মাধ্যমে জাতিকে সচেতন করে অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে সফলকাম হয়েছিল। এতেই প্রমাণিত হয় শিক্ষা মানুষকে পরিবর্তন করে দিতে পারে, পারে উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে দিতে। পারে পরাধীনতার হাত থেকে মুক্ত করতে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ৬০ এর দশকে অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, সার্বিক উন্নয়ন সাধন শিক্ষা ছাড়া অসম্ভব। এছাড়া কোনো দেশ একার পক্ষে চালানো সম্ভব নয়। তাই প্রয়োজন যৌথ প্রচেষ্টা। বিশ্বের ৮৮টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের উপস্থিতিতে ১৯৬৭ সালে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শিক্ষার গুরুত্ব, সাক্ষরতার প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়।
সেই থেকে প্রতি বছর ৮ সেপ্টেম্বর আর্ন্তজাতিক সাক্ষরতা দিবস পালন করা হচ্ছে। দিবসটিকে ঘিরে অনেক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কারণ, সাক্ষরতা ছাড়া শিক্ষার বিস্তার বা শিক্ষিত নাগরিক গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
বিশ্বে বর্তমানে একশ কোটিরও বেশি মানুষ নিরক্ষরতার অভিশাপে নিমজ্জিত। তন্মধ্যে ৮০ কোটি বয়স্ক এবং ২০ কোটি শিশু এবং এর ৭০%-৭৫% এশিয়ার দেশসমূহে। এ চিত্রের আলোকে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) সারা পৃথিবীতে সবার জন্য শিক্ষা আন্দোলনে একটি অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করছে।
শিক্ষার প্রসারতার জন্য আমাদের দেশের সরকারও প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষানীতি ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ ঘোষণা করা হয়েছে এবং বাস্তবায়ন চলছে। সকল শিশু যেন শিক্ষার সমান সুযোগ পায় সে ব্যাপারে বিভিন্ন পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিশুরাও যেন বিদ্যালয় গমন ও অধ্যয়ন করতে পারে এ লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। স্কুল ক্যাসম্যান এলাকার সকল শিশু যেন স্কুলে ভর্তি হয় সে ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থাসহ, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি, স্কুলে টিফিন ইত্যেকার পদক্ষেপ গ্রহণ করে প্রায় সকল স্কুল গমন উপযোগী শিশুরা বর্তমান শিক্ষাবর্ষে শিক্ষা কেন্দ্রে তথা স্কুলে ভর্তি হয়েছে। এমনকি ঝরে পড়া শিশুরাও পুনরায় স্কুলে ভর্তি হয়েছে। শিক্ষা প্রসারে এনজিওদেরও কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে, যেন যে সকল এলাকায় সরকারি শিক্ষা প্যাকেজ নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না, সে সকল এলাকার শিশুরাও যেন শিক্ষার সুযোগ পেয়ে শিক্ষার মূল ¯্রােতধারায় একিভূত হতে পারে। এ উদ্যোগ সকল পর্যায়ে ভূয়সী প্রশংসিত হচ্ছে। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে শিক্ষায় আমাদের দেশ আর পিছিয়ে থাকবে না। বর্তমানে সকল পর্যায়ে শিক্ষার জন্য গণজাগরণ ঘটেছে। এখন দরিদ্র, হত দরিদ্র, পাহাড়ি, জেলে একদিন যাদের নিকট শিক্ষা ছিল অপ্রয়োজনীয় বিষয়, গুরুত্ব ছিল না। তাদের মুখে শোনা যেত, শিক্ষিত হয়ে লাভ কি, ছেলেকে শিক্ষা দিলে যে আয় করবে তার চেয়ে এখন বেশি আয় করে। প্রত্যন্ত পাহাড়িদের মুখে শোনা যেত, পোয়া (ছেলে) শিক্ষা পেলে তাকে হারাতে হবে, আমাদের শিক্ষার দরকার নেই। আজ ঐ সকল কথার পরিবর্তে শিশুকে কীভাবে শিক্ষা দেওয়া যায় সে কথা ভাবার অন্ত নেই। যেকোনো মূল্যে শিশুর শিক্ষা চাই। অনেক ঝুঁকির মধ্যেও শিশুর ভবিষ্যৎ চিন্তায় পিতা-মাতা শিক্ষাদানের নিমিত্তে অন্যত্র পাঠিয়ে দিতেও কুণ্ঠিত বোধ করে না।
শিক্ষার প্রসারতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বটে কিন্তু মানসম্মত শিক্ষার ঘাটতি রয়েছে প্রচুর। ঘাটতি রয়েছে সুশিক্ষার। আমরা উপলব্ধি করছি, উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর অনেক শিক্ষিত যুবকরা কর্মজীবনে সফলকাম হতে পারছে না। আবার যারা য্যেগ্যতা বা যে কোনভাবে পদ পেয়েছে তারাও তা ধরে রাখতে পারছে না। বড় পদ পেয়ে অর্থনৈতিক কাজ করছে, ক্ষতি করছে সমাজ তথা দেশের! যাদের ঘাম ঝরানো অর্থে উচ্চশিক্ষা পেয়েছে তাদের ঠকানোর প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। শিক্ষায় ভেজাল, খাদ্যদ্রব্যÑ তাতেও ভেজাল, ভেজাল চিকিৎসায়। এমনকি শিশু খাদ্যেও ভেজাল। এ সকল সঠিক ও সুশিক্ষার অভাবে। নৈতিক শিক্ষার বড্ড অভাব উপলব্ধি করছি আমরা। এ অবস্থা থেকে কবে মুক্ত হওয়া যাবে তা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কারও জানা নাই। এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য চাই সুশিক্ষা তথা নৈতিক শিক্ষা। মানসম্মত শিক্ষা ছাড়া বিশেষজ্ঞ বা পেশাধারী জনবল তৈরি করা অসম্ভব। বিষয়টি ভাবার সময় এসেছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
সাক্ষরতাবিহীন-শিক্ষাবিহীন উন্নয়ন অসম্ভব। সঠিক উন্নয়নবিহীন শান্তিও প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। আর শান্তির পূর্বশর্ত হল ন্যায্যতা, শিক্ষা ছাড়া ন্যায্যতা অচল। কারণ, সুশিক্ষিত জনগণবিহীন ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা অসম্ভব। একজন সুশিক্ষিত ব্যক্তিই অন্য মানুষের কথা ভাবতে পারে, তাই মানুষের প্রয়োজন ও অধিকার বিষয়ে চিন্তা করতে পারে। পারে দুঃখী অসহায় মানুষের জন্য কিছু ভূমিকা রাখতে। নিরক্ষর-অশিক্ষিত মানুষ অন্ধ মানুষের মতো। একজন অন্ধ আরেকজন অন্ধকে পথ দেখাতে পারে না এবং অন্যকে সহায়তা দিতে পারে না। তাই একজন সাক্ষরহী-শিক্ষাহীন মানুষ উন্নয়নের সপ্ন দেখতে পারে না এবং অন্যকেও দেখাতে পারে না। বর্তমানে বিশ্ব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে বিষয়টি পরিষ্কার বুঝা যায় মানুষ যতই উন্নয়নের শিখরে পৌঁছেছে ততই শোষণ বাড়ছে। মানুষ হয়ে যাচ্ছে স্বার্থপর। এ কারণেই এক শ্রেণীর মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দিন দিন অশান্তি ও অস্থিরতা নামক মানসিক রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোথাও যেন শান্তি নাই। এর কারণ অন্যায্যতা নামক ব্যাধি বিশ্বটাকে গ্রাস করে ফেলেছে। অশান্ত পৃথিবী হন্যে হয়ে খুঁজতে শুরু করেছে শান্তি। বলা বাহুল্য, সুশিক্ষিত মানুষ নৈতিক মানুষ। শিক্ষাই পারে মানুষের মধ্যে মমত্ববোধ সৃষ্টি করতে, মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে পারে, শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। কাজেই শিক্ষা ছাড়া উপায় নাই, সাক্ষরতা ছাড়া শান্তি নাই, শান্তি ছাড়া প্রগতি নাই।
শিক্ষা একটি মৌলিক অধিকার যা প্রতিটি নাগরিকের পাওয়ার অধিকার রয়েছে। অপরদিকে সরকারও এ অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে। তবে সরকারেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সঙ্গতকারণেই শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সময় ও সামর্থ্যরে অভাবে সম্ভব হয়ে উঠে না। সেক্ষেত্রে সচেতন নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। অগ্রগামী নাগরিকদের দায়িত্ব রয়েছে পশ্চাতগামী নাগরিকদের এগিয়ে নেওয়ার। আর অনেক নাগরিক সে দায়িত্ব পালনও করছে বটে; তবে এর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। কাজেই সকল নাগরিকের স্ব স্ব ক্ষেত্র থেকে সরকারের উদ্যোগে সহায়তা করার মাধ্যমে দেশে একদিন শিক্ষিত তথা উন্নত মানব সম্পদ তৈরি হবে এবং হবে দেশ উন্নত। শিক্ষিত নাগরিকরাই পারে উন্নত দেশ উপহার দিতে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ফিরে আসছে: উপদেষ্টা নাহিদ
কমলা হ্যারিস জিতলে বিনিয়োগ তুলে নেয়ার হুমকি প্রস্তুতি নিচ্ছেন ওয়ারেন বাফেটও: ইলন মাস্ক
বান্দরবানের রুমায় অস্ত্র গোলাবারুদ জ্যামার উদ্ধার
প্রথমবারের মতো ছুটির দিনেও চলছে মেট্রো
বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ ও বিচারের দাবীতে খুলনায় মানববন্ধন
শেখ হাসিনার দলবলকে আগলে রেখেছে বর্তমান প্রশাসন: সেলিমা রহমান
রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ জনে
অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী ইবি শিক্ষার্থীদের
৩শ' আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
বরিশালে রাইজিং স্কলার অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ অনুষ্ঠিত
ঈশ্বরদীতে সাপের কামড়ে ১ ব্যাক্তির মৃত্যু
৭ দিনের রিমান্ডে মশিউর রহমান
সিলেট মহানগর শ্রমিক কল্যাণের ট্রেড ইউনিয়নের দিনব্যাপী কর্মশালা সম্পন্ন
দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৪ ডিগ্রী বেশী মধ্য শরতের দুঃসহ গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত
নামাজের আগে বায়তুল মোকাররমে নাটকীয়তা
জয়সয়ালকে ফেরালেন নাহিদ
সরকারের শিক্ষা-গণমাধ্যমসহ আরও কিছু সংস্কার কমিশন করার পরিকল্পনা আছে : নাহিদ
তাসকিনের শিকার রোহিত
কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ফাঁসির আসামি গ্রেপ্তার হলো ধামরাইয়ে