ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:২৩ পিএম | আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বহুদিন ধরেই টানাপড়েন চলছে। করোনার পর ইউক্রেন যুদ্ধ অর্থনীতির উপর মারাত্মক আঘাত হেনেছে। অর্থনৈতিক এ মন্দাবস্থার মধ্যে উন্নত দেশ থেকে শুরু করে সকল দেশই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নানা কৌশল অবলম্বন করে চলেছে। খাদ্য সংকট মোকাবেলা, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। যে শ্রীলঙ্কা দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল, সে শ্রীলঙ্কা এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অর্থনৈতিক বিপর্যয় অনেকটাই সামালে নিয়েছে। এত দ্রুত দেশটির ঘুরে দাঁড়ানোর সাফল্যে বিশ্বে চমক সৃষ্টি হয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা আমাদের দেশেও ভালভাবে লেগেছে। রফতানি ও বিনিয়োগ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়া, ডলার সংকট, আইএমএফ’র মান অনুযায়ী রিজার্ভ ধরে রাখতে না পারা এবং তা ক্রমাবনতির দিকে থাকা, সর্বোপরি মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি দেশের অর্থনীতি নাজুক পরিস্থিতিরই প্রমান বহন করে। গতকাল ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে দুইটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন দুটি’র একটিতে বলা হয়, গত ২১ মাসের মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ সর্বনি¤œ অবস্থায় রয়েছে। বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি সিঙ্গেল ডিজিটে (৯.৮২) নেমে এসেছে। অন্য প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি ২০ শতাংশ কমেছে। অর্থনীতিবিদরা এ নিয়ে শঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির অন্যতম পূর্বশর্ত বিনিয়োগ। বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও রফতানি হয় না। দেশের রফতানির সবচেয়ে বড় খাত গার্মেন্ট। এ খাতটি এককভাবে মোট রফতানির প্রায় ৮৩ শতাংশের জোগানদার। এছাড়া রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। রিজার্ভের উঠানামা এই রেমিট্যান্সের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। দেখা যাচ্ছে, বিগত কয়েক মাস ধরে এই দুই খাত নেতিবাচকতার দিকে ধাবিত। পোশাক রফতানি এবং রেমিট্যান্স এবং বিনিয়োগ কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত খারাপ খবর। গার্মেন্ট খাতের সবচেয়ে বড় বাজার বা প্রধানতম গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। তারপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। এ খাতের ঋণাত্মক প্রভাব রফতানি খাতকে নিশ্চিতভাবেই দুর্বল করছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতি ও ব্যাংক সুদ এবং ডলার সংকটে লেটার অফ ক্রেডিট (এলসি) খুলতে সমস্যা হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানি কমছে। ইতোমধ্যে টাকার চেয়ে ডলারের মূল্য ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে রফতানি কমার অর্থনৈতিক এ কারণ যেমন রয়েছে, তেমনি বৈশ্বিক রাজনীতিও রয়েছে। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বারবার বলে আসছে। অন্যদিকে, চীন, রাশিয়াসহ অন্য দেশগুলো বিদ্যমান রাজনীতির প্রতি সমর্থন করছে। এ নিয়ে একধরনের ¯œায়ুযুদ্ধ চলছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এতে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রবণতা দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, আমাদের সিংহভাগ রফতানির ডেস্টিনেশন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। এসব দেশ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা ধরনের বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে, যা সরকারের জন্য বিব্রতকর। এর বিপরীতে চীন, রাশিয়া সরাসরি সরকারের অবস্থানকে সমর্থন জানাচ্ছে, যা কম বিব্রতকর নয়। এ অবস্থা অর্থনীতিকে আরো চাপে ফেলতে পারে। রফতানি, বৈদেশিক ঋণ, বিনিয়োগ ইত্যাদি চাপে রয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকার যতই বলুক, দেশের অর্থনীতি ভাল অবস্থায় রয়েছে, তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে। রফতানি, বিনিয়োগ, রিজার্ভসহ অর্থনীতির অন্যান্য সূচকের নেতিবাচক প্রবণতা অর্থনীতির শঙ্কাজনক চিত্র সরকারের বক্তব্যের সাথে মিল খুব কমই রয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির চাপ সামলানোর জন্য সরকারের সঠিক সিদ্ধান্ত ও বাস্তবোচিত নীতি অবলম্বন করতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশ কিভাবে অর্থনৈতিক চাপ সামলাচ্ছে, তা থেকে অভিজ্ঞতা নিতে হবে। বিনিয়োগ, রফতানি, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সরকার যদি অর্থনৈতিক উত্তরণে সঠিক ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করবে। অতএব, আমাদের সেই দিকেই অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে, যেদিক থেকে বিনিয়োগ, রফতানি, কর্মসংস্থান ইত্যাদির সুযোগ বাড়বে। এমন দিকে ঝুঁকে পড়া যাবে না, যেদিকে অর্থনীতি খুব বেশি লাভবান হবে না। সরকারকে সতর্কতা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অর্থনীতির মন্দাবস্থা নিরসনে এর বিকল্প নেই।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

প্রথমবারের মতো ছুটির দিনেও চলছে মেট্রো

প্রথমবারের মতো ছুটির দিনেও চলছে মেট্রো

বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ ও বিচারের দাবীতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড বন্ধ ও বিচারের দাবীতে খুলনায় মানববন্ধন

শেখ হাসিনার দলবলকে আগলে রেখেছে বর্তমান প্রশাসন: সেলিমা রহমান

শেখ হাসিনার দলবলকে আগলে রেখেছে বর্তমান প্রশাসন: সেলিমা রহমান

রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ জনে

মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ জনে

অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী ইবি শিক্ষার্থীদের

অনতিবিলম্বে ভিসি নিয়োগ না হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী ইবি শিক্ষার্থীদের

৩শ' আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

৩শ' আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বরিশালে রাইজিং স্কলার অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ অনুষ্ঠিত

বরিশালে রাইজিং স্কলার অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ অনুষ্ঠিত

ঈশ্বরদীতে সাপের কামড়ে ১ ব্যাক্তির মৃত্যু

ঈশ্বরদীতে সাপের কামড়ে ১ ব্যাক্তির মৃত্যু

৭ দিনের রিমান্ডে মশিউর রহমান

৭ দিনের রিমান্ডে মশিউর রহমান

সিলেট মহানগর শ্রমিক কল্যাণের ট্রেড ইউনিয়নের দিনব্যাপী কর্মশালা সম্পন্ন

সিলেট মহানগর শ্রমিক কল্যাণের ট্রেড ইউনিয়নের দিনব্যাপী কর্মশালা সম্পন্ন

দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৪ ডিগ্রী বেশী মধ্য শরতের দুঃসহ গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত

দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৪ ডিগ্রী বেশী মধ্য শরতের দুঃসহ গরমে জনজীবন বিপর্যস্ত

নামাজের আগে বায়তুল মোকাররমে নাটকীয়তা

নামাজের আগে বায়তুল মোকাররমে নাটকীয়তা

জয়সয়ালকে ফেরালেন নাহিদ

জয়সয়ালকে ফেরালেন নাহিদ

সরকারের শিক্ষা-গণমাধ্যমসহ আরও কিছু সংস্কার কমিশন করার পরিকল্পনা আছে : নাহিদ

সরকারের শিক্ষা-গণমাধ্যমসহ আরও কিছু সংস্কার কমিশন করার পরিকল্পনা আছে : নাহিদ

তাসকিনের শিকার রোহিত

তাসকিনের শিকার রোহিত

কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ফাঁসির আসামি গ্রেপ্তার হলো ধামরাইয়ে

কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ফাঁসির আসামি গ্রেপ্তার হলো ধামরাইয়ে

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজনকে পিটিয়ে হত্যার বিচার দাবিতে চাটমোহরে ছাত্র-জনতার মানববন্ধন

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজনকে পিটিয়ে হত্যার বিচার দাবিতে চাটমোহরে ছাত্র-জনতার মানববন্ধন

বায়তুল মোকাররমের অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে যা বললেন খতিব রুহুল আমীন

বায়তুল মোকাররমের অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে যা বললেন খতিব রুহুল আমীন

গোদাগাড়ী সরকারি ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক, সাবেক এমপি লুৎফুন নেসা হোসেন মারা গেছেন।

গোদাগাড়ী সরকারি ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক, সাবেক এমপি লুৎফুন নেসা হোসেন মারা গেছেন।