ডেঙ্গু চিকিৎসায় সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:২৭ পিএম | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম
প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ও মৃতের সংখ্যা। ডেঙ্গু রোগীর চাপ বেড়েছে নগরীর হাসপাতালগুলোতে। রয়েছে চিকিৎসক ও নার্স সংকট। সব মিলিয়ে ডেঙ্গু পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ তখন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ব্যস্ত নিজেদের পকেট ভারী করতে। চিকিৎসকরা ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ডেক্সাট্রোজ নরমাল স্যালাইনের (ডিএনএস) ব্যবহার করে থাকেন। সাধারণত একটি স্যালাইনের মূল্য ১০০ টাকা। কিন্তু ফার্মেসিগুলোতে সেটি বিক্রি করা হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ফার্মেসিতে ডিএনএস থাকার পরও বেশি দামে বিক্রির জন্য ক্রেতাকে নেই বলে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপকে কেন্দ্র করে ডিএনএস নিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। ফলে রোগীদের এ স্যালাইন কিনতে হচ্ছে অতিরিক্ত মূল্যে। ফার্মেসিগুলোতে অভিযান পরিচালনা করেও এ দৌরাত্ম্য থামানো যাচ্ছে না। অভিযানে অনিয়ম ধরা পড়লে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। প্রকৃত ঘটনার চেয়ে ‘দোকানে স্যালাইন নেই’-এ বিষয়টি প্রচার বেশি হওয়ার সুযোগ নিচ্ছে এক শ্রেণির মানুষ। ফার্মেসিগুলো দাম বাড়িয়ে ফেলে। এ কারণে ফার্মেসিগুলোতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে।
ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকায় স্যালাইনের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম বলেও দাবি করা হচ্ছে কোনো কোনো হাসপাতালে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনদের একটি স্যালাইন জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোনো কারণে হাসপাতালে স্যালাইনের সংকট দেখা দিলে রোগী ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়বে, ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়বে। ঘাটতি পূরণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ১৪৭টি দেশে। এ পরিসংখ্যান গর্বের শুধু নয় অহঙ্কারের। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলোতেও বাংলাদেশের ওষুধ রপ্তানি হয়। ওষুধের মানের ব্যাপারে যাদের রক্ষণশীল ভূমিকা দুনিয়াজুড়েই প্রশংসিত। বাংলাদেশে মানসম্মত ওষুধ তৈরি হচ্ছে এবং ইউরোপ আমেরিকার মানুষও বাংলাদেশের প্রতি আস্থা রাখছে এটি একটি আলোকিত দিক।
এদিকে, কিছু অসাধু ব্যক্তি হুবহু ‘আসল’ মোড়কে গ্যাস্ট্রিক, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগের নকল ওষুধ বাজারে ছাড়া হচ্ছে। যা দেখে ভোক্তাদের আসল-নকল পরখ করা অনেকটাই দুঃসাধ্য। স্বনামধন্য এবং পরিচিত ওষুধ কোম্পানির ওষুধগুলোই নকল করা হয় বেশি। নকল ওষুধ সাধারণত রুগ্ন কারখানা বা ইউনানি-হারবালের মতো কারখানাগুলোতে উৎপন্ন হয়। কারখানা থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় চক্রের তালিকাভুক্ত কিছু ফার্মেসির কাছে পৌঁছানো হয় এসব ভেজাল ওষুধ। মিটফোর্ড কেন্দ্রিক কিছু অসাধু ফার্মেসি নকল ভেজাল চক্রের সঙ্গে জড়িত। সেখান থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এ ভেজাল ওষুধ। গ্রামগঞ্জে ক্রেতার হাতে পৌঁছে যাচ্ছে প্রাণঘাতী এসব নকল ওষুধ।
নকল ওষুধের কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে এবং মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে। গুটিকয়েক নকল ব্যবসায়ীর জন্য দেশের ওষুধ ব্যবসার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। আশার কথা, প্রস্তাবিত ওষুধ ও কসমেটিকস আইন ২০২৩-এ নকল ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বিপণনের অপরাধকে জামিন অযোগ্য করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, কড়া আইন অপরাধ দমনে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
এখন প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। ক্রমাগত বৃষ্টিপাতের কারণে সামনের দিনগুলোতে এডিস মশা বাড়বে এবং ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবও বেশি হবে। অন্যদিকে সারা দেশেই ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে। আমরা চাই, রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হোক।
পরিশেষে বলছি, সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি ডেঙ্গু থেকে দ্রুত সেড়ে উঠার জন্য সঠিক খাবার গ্রহণ করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। সুষম ডায়েটের মাধ্যমে রোগীর শরীরে প্লাটিলেট সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব, পাশাপাশি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্লিডিং, ডিহাইড্রেশন ইত্যাদির মতো গুরুতর জটিলতা রোধ করা সম্ভব।
শরীরের পানির ঘাটতি পূরণ করতে হবে। ডেঙ্গু হলে অনেক সময় শরীরে প্রচুর পানির ঘাটতি তৈরি হয়। ডাবের পানি এক্ষেত্রে অনেক উপকারী হতে পারে। ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ইলেক্ট্রোলাইট ও পুষ্টি থাকে। লেবুর পানি ভিটামিন সির খুব ভালো উৎস। এটি শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে। অনেক ক্ষেত্রে আদা পানি গ্রহণেরও পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ, এটি অনেক ডেঙ্গু রোগীর বমি বমি ভাব মোকাবিলায় সহায়তা করে।
প্রক্রিয়াজাত খাবারের পাশাপাশি তৈলাক্ত, মশলাদার ও ভাজা খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এসব খাবারের ফলে পেটে অ্যাসিড জমতে পারে, পিএইচ স্তর নেমে যেতে পারে যার ফলে আলসার ও অন্ত্রের দেয়ালের ক্ষতি হতে পারে। ক্যাফিনেটেড পানীয় দ্রুত হৃদস্পন্দন বাড়ায়। ফলে এসব পানীয় ক্লান্তি এবং পেশীর ক্ষতি করতে পারে। এটি আমাদের শরীরে পানিশূন্যতাও সৃষ্টি করে।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, উপদেষ্টা, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা