‘চাঁদ হবে হিন্দু রাষ্ট্র’, চমৎকার দাবি! ভারতের হিন্দু মহাসভার জাতীয় সভাপতি ধর্মগুরু স্বামী চক্রপানি মহারাজের চাঁদ অধিকারে আসার দাবি আন্তর্জাতিকভাবে স¦ীকৃত হয়েছে কি না, এখনও জানা যায়নি। চন্দ্র অভিযানকারী পরাশক্তিবর্গ কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, তাও দেখার বিষয়। হিন্দু মহাসভার জাতীয় সভাপতি ম্বামীজির দাবি স্পষ্ট। তার দাবি প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চন্দ্রযান অবতরণ করার পর এবার চাঁদকে হিন্দু রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করা হোক এবং যে স্থানে চন্দ্রযানের সফট ল্যান্ডিং হয়েছে, সেই জায়গাকে রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হোক।

ভারতীয় পার্লামেন্ট ধর্মগুরু স্বামীজির দাবির ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা জানা যায়নি। তবে তার কথিত শিবশক্তি পয়েন্টকে রাজধানী করা হলে তিনি মনে করেন যে, সেখানে ‘জেহাদি মানসিকতা’ পৌঁছতে পারবে না।
পূর্বের এক খবরে বলা হয় যে, গত ২৩ আগস্ট মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় ৬:৩৩ মিনিটে চাঁদের জমিতে নামে ভারতের চন্দ্রযান বিএন-৩। এর মাধ্যমে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো ইতিহাস তৈরি করলো। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এ সফল অভিযান ভারতীয়দের বিপুল আনন্দ-উল্লাসের বিষয় সন্দেহ নেই, ভারতবাসী স্বাভাবিকভাবে আনন্দিত। এর জন্য ‘ইসরো’ সবার ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

কিন্তু আমাদের আলোচনা ভিন্ন, চাঁদের সম্পদ কাড়াকাড়ির জন্য কয়েকটি বৃহৎ শক্তি চন্দ্র অধিকার প্রতিযোগিতার ভারতের প্রচারিত সাফল্য ও দাবিতে মনে হবে, চাঁদে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এখন তারা সেখানে পৌঁছে তাদের ইচ্ছামত ভোগ করবে, নিয়ন্ত্রণ করবে!

এ জন্যই আমরা গোড়াতেই একজন ভারতীয় ধর্মগুরুর সীমাহীন উৎসাহের বিষয়টি উল্লেখ করছি। তার বর্ণিত বক্তব্যে প্রচ্ছন্নভাবে মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাবটিও প্রকাশ পেয়েছে। আমেরিকা যেখানে বিগত সত্তরের দশকে চাঁদের ভূ-পৃষ্ঠে অবতরণের দাবি করেও এ যাবত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছে, সেখানে ভারত মাত্র সেদিন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের সাফল্যের খবর দেয় এবং অতি উৎসাহী ধর্মগুরু চাঁদকে হিন্দু রাষ্ট্র করার স্বপ্ন দেখেছেন এবং এজন্য পার্লামেন্টে আনুষ্ঠানিক দাবিও উত্থাপন করেছেন।

এরই মধ্যে রাশিয়ার একটি বক্তব্য এসেছে, তাতে চাঁদের সম্পদে বিষয়টি রয়েছে। চাঁদে কী কী সম্পদ রয়েছে, তা বাস্তব ক্ষেত্রে গিয়ে অনুসন্ধান গবেষণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার বিষয়। এজন্য কার আগে কে চাঁদে পৌঁছতে পারে এবং কে আগে চাঁদকে দখল করতে পারে, সেজন্যই বৃহৎশক্তিবর্গের মধ্যে প্রতিযোগিতা। ভারতের সাফল্যের দাবি সঠিক হয়ে থাকলে বাকিদের চিন্তিত হওয়ার কথা। তবুও তারা ধৈর্য্য হারা নন। ভারত কেবল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পদার্পণ করেছে বলে তার দাবি, তাহলে সেখানেই তাকে কর্মতৎপর হতে হবে। চাঁদের অপর বিশাল মুক্ত অংশে প্রতিযোগী হিসেবে কোন রাষ্ট্র উপনীত হতে পারে সেটি এখন দেখার বিষয়। আরো কিছু কিছু অংশ যখন কুক্ষিগত করা যাবে, তখনই দখলকারীদের প্রকৃত স্বরূপ প্রকাশ পাবে। ততদিন বিশ্ববাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকবে।

প্রথম যখন চাঁদে মানব নামানোর খবর প্রচার করা হয়, তখন একজন পাকিস্তানি বিখ্যাত আলেমকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, হুজুর! ওরা তো চাঁদে মানুষ নামিয়েছে, আপনারা কী করবেন? মওলানা সাহেব জবাবে বলেছিলেন, ‘আমরা চাঁদে গিয়ে মসজিদ কায়েম করবো, আজান দিয়ে মানুষকে নামাজের জন্য ডাকবো, ওয়াজ নসিহত করবো এবং মানুষের মধ্যে ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব পালন করবো।’

কিছুদিন পর একদল বিজ্ঞানী ঘোষণা করেন যে, চাঁদে মানুষ অবতরণের ঘটনা নিছক প্রতারণা। ১৯৬৯ ও ১৯৭২ সালে মানুষের চাঁদে অবতরণ সম্পর্কে আমেরিকানরা বিশ্ববাসীকে একটা সাজনো নাটক উপহার দিয়েছে বলে দাবি করেন সে সময়কার বিজ্ঞানী রলফ রেলে ‘নাসাসুনড্’ আমেরিকা নামক বইতে। বিভিন্ন যুক্তি প্রমাণ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ ঘটনাকে একটা সম্পূর্ণ ধোকা হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বিজ্ঞানী রলফ্ রেলের বক্তব্য ও মন্তব্যকে আরো জোরালোভাবে সমর্থন করেন বিখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী বিনকোলি। তিনি বলেন, ‘নভোচারীরা চাঁদের উদ্দেশ্যে এ যাত্রা ঠিকই শুরু করেছিল কিন্তু পৌঁছতে পারেননি।’ তখনকার প্রচার মাধ্যমেও বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিজ্ঞানীদের বক্তব্য অভিমত বিস্তারিতভাবে প্রচারিত হয়েছিল।

তবে বিজ্ঞানীদের অভিমত অনুযায়ী, আমেরিকা প্রচারণা চালিয়েছিল সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে। তারা (তৎকালীন) সোভিয়েট ইউনিয়নকে একটা বড় ধরনের টেক্কা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। অবশ্য এ সুযোগে তারা যে বিশাল অংকের (৪০ বিলিয়ন) টাকা সংগ্রহ করে সেটা তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সমাজতন্ত্র বিরোধীদের পেছনে খরচ করে।

ভারতের চন্দ্র অভিযানের শেষ দিকে রাশিয়ার মহাকাশ প্রধানের একটি বক্তব্য গত ২৩ আগস্টের সংবাদপত্রে রয়টার্স সূত্রে প্রকাশিত হয়েছে। ‘চাঁদের সম্পদের জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে’ শিরোনামে ইনকিলাবের এ খবরে ভারতের চন্দ্রযান-৩ এর উল্লেখ না থাকলেও কারো বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে, রাশিয়া এ ব্যাপারে সতর্ক অবস্থান নিয়েই বক্তব্য রাখছে। প্রকাশিত খবরের শুরুতেই বলা হয় যে, চাঁদের সম্পদ অন্বেষণ এবং বিকাশের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে এবং ৪৭ বছরে তার প্রথম চন্দ্র অভিযান ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়াকে অবশ্যই এ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে বলে গত সোমবার (২২ আগস্ট) রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা প্রধান বলেছেন। রাশিয়ার লুনা-২৫ গত শনিবার চাঁদে বিধ্বস্ত হওয়ার কথাও তিনি জানান।

বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) এর পবিত্র অঙ্গুলি সংকেতে চাঁদ বিদীর্ণ বা দ্বিখন্ডিত হওয়ার মোজেযা বিস্ময়কর ঘটনা। এটি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করে ভারতের যিনি রসূল (সা.) এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন, রসূল (সা.) খোদ তার নাম রাখেন আব্দুল্লাহ এবং তারই মাধ্যমে ভারতের ইসলাম প্রচারের সূচনা হয় বলে অনেকের দাবি।

প্রথম চাঁদে অবতরণ এখন থেকে ৫৪ বছর আগের ঘটনা। তা সত্য হয়ে থাকলে এতো বছরে তো সেখানে বিরাট মানব বসতি হবার কথা। কিন্তু সেটি হয়নি। এটাও একটি ভাববার বিষয় বটে।