পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:২৮ পিএম | আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম
পর্যটন মওসুম শুরু হচ্ছে। ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবস পালনের মধ্যদিয়ে মওসুম শুরু হবে। এবার পর্যটন নগরী কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ও স্পটে বিপুল সংখ্যক ভ্রমণ পিপাসু মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করা হলেও আশংকা দেখা দিয়েছে নিরাপত্তা নিয়ে। পর্যটন কেন্দ্র ও স্পটগুলোতে নিরাপত্তার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে বলে জানা গেছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে কক্সবাজারে খুনখারাবি ও ধর্ষণের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গত মাসে এক আওয়ামী লীগ নেতার হোটেলকক্ষে খুন হওয়া ছাড়াও অন্তত অর্ধডজন খুনের ঘটনা ঘটেছে। ওদিকে পুলিশের রেকর্ড অনুযায়ী, রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও প্রতিনিয়তই হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটছে। কক্সবাজারে গত মাসেই ধর্ষণের শিকার হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৬৭ জন মহিলা। রোহিঙ্গারা এদেশে আসার পর থেকে আশ্রয় শিবিরগুলোতে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৮৮টি, হত্যাকা- ঘটেছে ১১৫টি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৩৯টি। এই সব হত্যা, ধর্ষণ ও অপহরণের ঘটনায় মামলা হয়েছে ২ হাজার ৪৩টি। এতে আসামি করা হয়েছে ৫ হাজার ২২৬ জনের। এর মধ্যে অস্ত্র ও মাদক মামলা যথাক্রমে ১৮০টি ও ১ হাজার ৬৩৬টি। এই সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান থেকেই কক্সবাজারের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি কতটা অবনত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে, তা সহজেই আন্দাজ করা যায়। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, অস্ত্রবাজি, মাদক কারবার কী নেই কক্সবাজারে? এমন একটি বিপজ্জনক জায়গায় কে যেতে চাইবে ভ্রমণে ও পর্যটনে? পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, সেই সঙ্গে পাহাড় ও বনজঙ্গল সব মিলিয়ে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজার। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখানে ছুটে আসে এসবেরই আকর্ষণে। কিন্তু যদি জানের নিরাপত্তা না থাকে, ইজ্জত-সম্মানের নিরাপত্তা না থাকে তবে যত মনোহর ও চিত্তাকর্ষী হোক, কেউ কক্সবাজারে যেতে চাইবে না। কক্সবাজারে আইনশৃংখলার অবনতি কিংবা জান-মালের নিরাপত্তার অভাব মোটেই নতুন নয়। অনেকদিন ধরেই এই অনিরাপত্তাজনক অবস্থা বিরাজ করেছে। এইসঙ্গে হোটেল-মোটেল ও যানবাহনের মালিকদের আচার-ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ইতোপূর্বে ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে উল্লেখ করা হয়েছিল। একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর অতিলোভ ও যাচ্ছেতাই ব্যবহারে পর্যটক হারাচ্ছে কক্সবাজার।
শুধু কি কক্সবাজারেই এই অবস্থা? অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্র ও স্পটে উচ্চ নিরাপত্তা, সুষ্ঠু আইনশৃংখলা, পর্যটন সংশ্লিষ্ট লোকদের উন্নত আচার-ব্যবহার, মসৃণ যাতায়াত ও উত্তম সংযোগ-সুবিধা কি নিশ্চিত আছে? কক্সবাজারেই যেখানে নেই, সেখানে অন্যান্য স্থানে কেমন করে থাকবে, বুঝতে অসবিধা হয় না। সামগ্রিকভাবে দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অবনতিশীল। মানুষের জান-মাল, ইজ্জত-সম্মানের নিরাপত্তা ভঙ্গুর। খুনী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, রাহাজান, চোর-ডাকাত ও প্রতারকে দেশ ছেয়ে গেছে। নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। সরকার পুলিশ ও পুলিশের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে এটা করে থাকে। অথচ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নাগরিকদের নিরাপত্তা উপেক্ষিত হচ্ছে। সরকার পুলিশকে তার নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থে ও উদ্দেশ্যে অতি মাত্রায় ব্যবহার করছে। সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীদের দমনে পুলিশ যতটা উৎসাহী ও তৎপর, আমজনতার সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে ততটাই নিরাসক্ত ও নিষ্ক্রীয়। এমতাবস্থায়, দেশে খুন, ধর্ষণ, আত্মহত্যা, সড়ক দুর্ঘটনা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ সব ধরনের অপরাধই বেড়ে গেছে এবং দিনকে দিন বাড়ছে। গত আগস্টে দেশে ৪৪১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪২৩ জন নিহত ও ৭৯৩ জন আহত হয়েছে। অথচ, সড়ক-মহাসড়কে পুলিশ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে এত মানুষ কখনোই হতাহত হতো না। অন্যান্য ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকার অভাবে মানুষের মধ্যে বেপরোয়া মনোভাব, আচরণ ও অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।
এটা স্বভাবতই ধারণা করা যায়, দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি হলে পর্যটন কেন্দ্র ও স্পটগুলোতে পর্যটকদের নিরাপত্তারও উন্নতি হবে। কাজেই সরকারের উচিত হবে, আইনশৃংখলার উন্নয়নে অধিকতর গুরুত্ব ও নজর দেয়া। ইতোপূর্বেই খবর প্রকাশিত হয়েছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অবৈধ অস্ত্রের অনুপ্রবেশ, বেচকেনা ও জোগান বাড়ছে। বলা বাহুল্য, অবৈধ অস্ত্র আইনশৃংখলার জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালানোর তাকিদ দেয়া হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। মানুষের জান-মাল ও ইজ্জত-সম্মানের নিরাপত্তার ওপর আর কোনো নিরাপত্তা নেই। সেটা অবশ্যই সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। পর্যটন ও পর্যটন-অর্থনীতির গুরুত্ব নতুন করে বিশদ উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। আমাদের দেশে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ইত্যাদিতে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। বলা হয়ে থাকে, পর্যটনের সঙ্গে সরাসরি ১০৯টি খাত ও পরোক্ষভাবে ১১০০টি খাত জড়িত। প্রতিজন পর্যটকের জন্য ১০টি প্রত্যক্ষ ও ৩৫টি পরোক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। পর্যটনে আমাদের দেশের অবস্থান মোটেই উল্লেখযোগ্য নয়। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ২০২২ সালের ভ্রমণ ও পর্যটন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৭টি, দেশের মধ্যে ১১০। এখাত থেকে আয় নগন্য। জিডিপিতে অবদান ২.২ শতাংশ, কর্মসংস্থানে ১.৮ শতাংশ। আরো উল্লেখ্য, পর্যটকদের মধ্যে বিদেশিদের সংখ্যা খুব কম। অথচ, পর্যটনের জন্য বাংলাদেশ একটি উত্তম ও আকর্ষণীয় স্থান হিসাবে পরিগণিত। দীর্ঘ ও একাধিক সমুদ্র সৈকত, বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, পাহাড়, অসংখ্য হাওর-বাওর, বিচিত্র পাখপাখালির সমাবেশ ছাড়াও ঐতিহাসিক ও প্রতœতাত্ত্বিক নানা নিদর্শন এখানে রয়েছে, যা পর্যটকদের স্বভাবতই আকর্ষণ করে। বিশ্বে এমন দেশও রয়েছে, যার অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ পর্যটন। পর্যটন-অর্থনীতি সকল দেশকেই সমৃদ্ধ করছে, এগিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও পর্যটন থেকে প্রভূত লাভবান হতে পারে। এই অর্জন সম্ভবপর করে তুলতে হলে দেশের সর্বত্র পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের যাতায়াত ও থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত সন্তোষজনক করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা