খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতিতে দিশাহারা মানুষ
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৫১ পিএম | আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
গতমাসে বিশ্বে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি দু’বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ হলেও আমাদের দেশে এক যুগের মধ্যে তা সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানিয়েছে, আগস্ট মাসে বিশ্বে মূল্যস্ফীতি ছিল সর্বনি¤œ। এ সময় চাল ও চিনি ছাড়া সব খাদ্যপণ্যের দামই কমেছে। এটা বিশ্ববাসীর জন্য সুখবর। তবে আমাদের অবস্থাটা সম্পূর্ণ উল্টো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, আমাদের দেশে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আর গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ। লক্ষ করার বিষয়, আগস্টে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি হয়েছে। শহরে হয়েছে ১২ দশমিক ১১ শতাংশ। গ্রামে হয়েছে ১২ দশমিক ৭১ শতাংশ। এটাও কম বিস্ময় নয়, গ্রামে উৎপাদক ও ভোক্তা দুই-ই থাকে। শহরে কেবল থাকে ভোক্তা। সেক্ষেত্রে গ্রামে মূল্যস্ফীতি বেশি হয় কীভাবে? যা হোক আলু, চাল, পেঁয়াজ, মরিচ, ডিম, মাছ-গোশত, শাকসবজি, তরিতরকারি ইত্যাদির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় এই স্ফীতি ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে। পরিকল্পনামন্ত্রীর মতে, নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার পাশাপাশি বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে পণ্য সরবরাহ ব্যহত হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ার এটাও কারণ। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, দেশে যে সব পণ্য আমদানি করা হয়, সেগুলোর একটা শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে। অল্প কয়েকটি বড় প্রতিষ্ঠান বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের হাতে বন্দি থাকে পণ্যর দাম। পরিকল্পনামন্ত্রী এর আগেও বিভিন্ন সময় পণ্যমূল্য বাড়ার জন্য কতিপয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এবং তাদের সিন্ডিকেটবাজিকে দায়ী করেছেন। সিন্ডিকেট ভাঙ্গার প্রশ্নে তিনি তার অক্ষমতাও প্রকাশ করেছেন। বিশ্বে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি কমলেও আমাদের দেশে বাড়ার মূলে যে অতিলোভী সিন্ডিকটেবাজ ব্যবসায়ীদের কারসাজি এবং তাদের প্রতিরোধে সরকারের অক্ষমতা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
সরকারের তরফে বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে স্বাভাবিক পর্যায়ে স্থিতিশীল রাখা সরকারের নীতি। অথচ, ব্যতিক্রমই ঘটেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। মূল্যস্ফীতি বাড়লে ক্রেতা-ভোক্তাদের আর্থিক চাপ বাড়ে। বিশেষ করে, খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ঘটলে মানুষের দুঃখ-দুর্দশার শেষ থাকে না। নি¤œ আয়ের মানুষ এমন কি মধ্যবিত্তের অবস্থাও শোচনীয় হয়ে যায়। বলা বাহুল্য, খাদ্যপণ্যে সাড়ে ১২ শতাংশের মূল্যস্ফীতি তাদের রীতিমত দিশাহারা করে দিয়েছে। মোটা চালের কেজি ৫০ টাকার ওপর, ডাল প্রতিকেজি ১১০ থেকে ১৩০ টাকা, ডিমের হালি ৫০ টাকা, এক কেজি আলুর দাম ৫৫ টাকা, এক কেজি তরকারি ৮০ থেকে ১২০ টাকা, শাকের আঁটি ৪০ টাকা। সাধারণ মানুষের দু’বেলা শাক-ভাত, ডাল-ভাত, ভর্তা-ভাত খাওয়ার এখন সামর্থ্য নেই। মাছ-মুরগী-গোশত কেনার কথা তারা চিন্তাও করতে পারে না। এই হলো বেশির ভাগ মানুষের অবস্থা। অর্থনীতিবিদরা বরাবরই বলে আসছেন, মূল্যস্ফীতি এক কঠিন সমস্যা, যার নিয়ন্ত্রণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেখা যাচ্ছে, সরকার এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কিছুই করতে পারছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, টাকা ছাপিয়ে ধারে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করছে, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়ার জন্য সুদহার কমিয়ে রেখেছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো উদ্যোগই ঠিকমত কাজে আসছে না। অন্যদিকে বাজারব্যবস্থা বিশৃংখল। তার ওপর সরকারের ন্যূনতম নিয়ন্ত্রণ নেই। উৎপাদন বা আমদানিস্তর থেকে ভোক্তাস্তর পর্যন্ত পণ্য চলাচলে একটা অরাজকতা বিরাজ করছে। ব্যবসায়ী ও মধ্যসত্ত¡ভোগীরা মজা লুটে নিচ্ছে। আমদানি বৃদ্ধি বা ব্যাপক হলে আমদানিপণ্যের দামে এত স্ফীতি ঘটতো না। ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় আমদানিও সম্ভবপর হচ্ছে না। আর সবার ওপরে আছে সিন্ডিকেটবাজি। বড় বড় ব্যবসায়ীদের হাতে সবকিছু ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারা যথেচ্ছাচার করছে, যার খেসারত দিতে হচ্ছে ক্রেতা-ভোক্তাদের।
মূল্যস্ফীতির প্রভাব দেশের সব শ্রেণীর মানুষের ওপরই পড়ে। যারা ধনী-বিত্তবান, তারা এ প্রভাব সামাল দিতে পারলেও গরীবসহ অন্যান্য শ্রেণীর মানুষ এর অসহায় শিকারে পরিণত হয়। পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন সময় এই মর্মে রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যে, নি¤œআয়ের মানুষের খাদ্যপণ্য কেনার সামর্থ্য কমে যাওয়ায় তারা কম পণ্য কিনছে, খাদ্যগ্রহণও কমিয়ে দিয়েছে। কখনো উপোস, কখনো এক-আধ বেলা খেয়ে জীবনধারণ করছে। পুষ্টিকর ও পর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণের অভাবে তারা পুষ্টিহীন হয়ে পড়ছে। রোগব্যাধির কবলে পড়ছে। খাদ্য বা খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বাড়লেও অধিকাংশ মানুষের আয় বাড়েনি বা বাড়ছে না। সরকারি কর্মচারীদের বাড়তি অর্থ দেয়ার বন্দোবস্ত সরকার করলেও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে যে কয়েক কোটি মানুষ কাজ করছে, তাদের আয় বাড়ানোর কোনো ব্যবস্থা হয়নি। তাদের কীভাবে সংসার চলবে, জীবন নির্বাহ হবে? শিল্প-কারখানাসহ অনেক প্রতিষ্ঠানেরই অবস্থা ভালো নয়। দিন দিনই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বহু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। এদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেকার হয়ে পড়ছে। বন্ধ হওয়ার পথে রয়েছে যেসব প্রতিষ্ঠান, তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কর্ম হারানোর আতংকে রয়েছে। এর বাইরে আরো আছে লাখ লাখ শিক্ষিত-অশিক্ষিত বেকার। অভাব-অনটন, দারিদ্র্য-বেকারত্ব ইত্যাদিতে মানুষ দিশাহীন, হতাশ ও বিক্ষুব্ধ। এর প্রতিক্রিয়া আমরা সমাজের নানাক্ষেত্রে প্রতিফলিত হতে দেখছি। বাস্তবতার এই প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতি যেমন দ্রæত হ্রাস করা দরকার, তেমনি যাদের কারণে এই মূল্যস্ফীতি, তাদের কঠোর হাতে দমন করা প্রয়োজন। এইসঙ্গে মানুষের কর্মসংস্থান ও আয়-রোজগার বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অধিক জোর দেয়ার কোনো বিকল্প নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা