পাটকল চালুর উদ্যোগ নিতে হবে
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৪৯ পিএম | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
গত চারদশক ধরে দেশের পাটশিল্প নিয়ে অনেক রাজনীতি ও ব্লেইমগেম দেখা গেলেও কোনো সরকারই পাটশিল্পের উন্নয়নে এবং পাটের কথিত সুদিন ফিরিয়ে আনতে সফল হয়নি। বিগত চারদলীয় জোটের সময় অব্যাহত লোকসানের কারণে দেশের বৃহত্তম আদমজী পাটকল বন্ধ করে সেখানে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল গড়ে তোলা হয়। এ নিয়ে তৎকালীন বিরোধীদল ও বর্তমান সরকারিদল আওয়ামীলীগ অনেক রাজনৈতিক বক্তৃতা বিবৃতি দিয়েছে। তারা ক্ষমতায় এলে বন্ধ থাকা সব পাটকল চালু করে পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিও শোনা গেছে। বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর পাটের জিনোম সিকোয়েন্স উদঘাটন, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট থেকে পরিবেশবান্ধব মোড়ক উদ্ভাবন ও বাজারজাতকরণ, সব পণ্য বিপনণে বাধ্যতামূলকভাবে পাটজাত মোড়ক ব্যবহারের আইনগত বাধ্যবাধকতা ইত্যাদি কার্যব্যবস্থার মধ্য দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং কৃষক পর্যায়ে পাটের মূল্যবৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। অনেকেই পাটের সুদিন ফিরে আসার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেছিল। অনেকটা হঠাৎ করেই বিপরীত চিত্র দেখা গেল। রাষ্ট্রায়াত্ব পাটকলগুলো নতুনভাবে চালুর কথা বলে ২০২০ সালের ১ জুলাই একযোগে ২৬টি সরকারি পাটকল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কথা ছিল ৩ মাস পর এসব পাটকল চালু করা হবে। কিন্তু সাড়ে ৩ বছর অতিক্রান্ত হলেও এসব পাটকল আর চালু হয়নি। কর্মসংস্থান হারানো পাটকল শ্রমিকরা নিজেদের কলোনি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। সন্তানদের লেখাপড়া এবং স্বাভাবিক জীবন ধারণ তাদের জন্য দুর্বহ হয়ে পড়েছে। কিছুদিন পর পর দেশের বিভিন্ন জোনের পাটকল শ্রমিকরা সরকারি পাটকল চালু এবং পাওনা বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে চলেছে।
বাংলাদেশ জুটমিল কর্পোরেশনের(বিজেএমসি) আওতাধীন বন্ধ ঘোষিত ২৬টি পাটকলের মধ্যে অন্তত ১০টি পাটকল সরকারিভাবে চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পাটচাষি ও পাট ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ। গত সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতি তাদের লিখিত দাবি দাওয়া তুলে ধরে। সরকারীভাবে মিল চালাতে গিয়ে লোকসান এড়াতে বন্ধ করে দেয়া এসব মিল লিজ দিয়ে ব্যক্তি মালিকানায় চালুর উদ্যোগ নিয়েও ব্যর্থ হয়েছে বলে তারা উল্লেখ করেছেন। তবে এই মুহূর্তে স্থায়ী শ্রমিক না থাকা এবং শ্রমিক সংগঠনের তৎপরতা না থাকায় সরকারি মিলগুলো চালু করলে লোকসানের কোনো আশঙ্কা নেই বলে তারা দাবি করেন। শ্রমিকরা কর্মচ্যুত ও সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় পাটচাষিরা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। এক সময় ৪-৫ হাজার টাকা মন দামে পাট বিক্রি করলেও এখন তাদেরকে ১৫০০-২৫০০ টাকা দরে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে। এভাবে তারা পাটচাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। অন্যদিকে বন্ধ থাকা পাটকলের মূল্যবান যন্ত্রপাতি মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অবিলম্বে পাটকল চালুর উদ্যোগ না নিলে বিজেএমসি’র আওতাধীন মিলগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট ও বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
হাজার হাজার পাটচাষি, পাটকল শ্রমিক এবং পাটব্যবসায়ীর পেশা জীবনে দুর্ভোগ নেমে এলেও বিজেএমসি’র প্রধান কার্যালয়সহ ২৬টি পাটকলের প্রায় ৩০০ কর্মকর্তা কর্মচারি কোনো কাজ না করেও প্রতি মাসে বেতন পাচ্ছেন। এভাবে দীর্ঘদিন চলতে পারেনা। লিজ দেয়া এবং প্রক্রিয়াধীন মিলগুলো বেসরকারিভাবে চালুর পাশাপাশি তিনটি প্রধান জোন থেকে অন্তত ১০ পাটকল সরকারিভাবে চালুর উদ্যোগ নিলে পাটকল শ্রমিক, পাটচাষি এবং পাট ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ ও হতাশা নিরসন হত। এরফলে পাটশিল্পে নতুন উদ্যম ও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। জলবায়ুর পরিবর্তন ও পরিবেশগত বিষয়গুলো এখন বিশ্বের অগ্রাধিকার ভিত্তিক আলোচ্য বিষয়। পলিথিন ও প্লাস্টিকের বিপর্যয়কর পরিবেশগত প্রতিক্রিয়ার ফলে পাটের মত প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার ও জনসচেতনতা বেড়ে চলেছে। এহেন বাস্তবতায় সিনথেটিক পণ্যের বদলে বিশ্বব্যাপী পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির সুফল পেতে পারে বাংলাদেশের পাটচাষি, পাটকল শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা। সরকারি ও বেসরকারীভাবে পাটকল চালুর উদ্যোগের পাশাপাশি পাটপণ্যের নতুন নতুন উদ্ভাবনীর মাধ্যমে পাটের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে একই সঙ্গে সরকারি পাটকলের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের সঠিক ও গণমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করা, পাটচাষে আগ্রহ হারাতে বসা পাটচাষিদের স্বার্থ নিশ্চিত করা এবং হাজার হাজার পাটকল শ্রমিক এবং পাট ব্যবসায়ীদের স্বার্থ ও কর্মসংস্থান রক্ষায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। পর্যায়ক্রমে সব বন্ধ পাটকল খুলে দেয়ার পাশাপাশি দুর্নীতি, অস্বচ্ছতা রোধ এবং পাটপণ্যের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার বৃদ্ধির কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি। বিশেষত পণ্যের মোড়ক হিসেবে পাটজাত তন্তু ব্যবহারে বিদ্যমান আইনের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পারলে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার কমার সাথে পাটশিল্পের সুদিন ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা