মানুষের পাপাচারই দুর্যোগ-দুর্বিপাক ডেকে আনে
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১৭ পিএম | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
আল্লাহতাআলা মানুষকে নানা প্রকারে পরীক্ষা করে থাকেন। পরীক্ষায় ধৈর্য সহকারে উত্তীর্ণ হতে পারলে সে জন্য পুরস্কারের সুসংবাদও রয়েছে। বহু প্রকারের পরীক্ষার মধ্যে পাঁচ প্রকারের পরীক্ষার কথা আল্লাহ কোরআনের সূরা বাকারা’র একটি আয়াতে এইভাবে ঘোষণা করেছেন: ‘এবং অবশ্যই তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।’ (আয়াত-১৫৫)। একই সাথে বলা হয়েছে: ‘যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁর সান্নিধ্যে ফিরে যাব।’ (আয়াত-১৫৬)।
কোরআন ও হাদীসের আলোকে তফসীরবিদগণ আয়াতদ্বয়ের যে ব্যাখ্যা করেছেন, তা একত্রিত করলে বিশাল আকার ধারণ করবে। প্রথম আয়াতে যে পাঁচ প্রকারের পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর প্রত্যেকটির শাখা-প্রশাখার অন্ত নেই। শুমার করে শেষ কারা যাবে না। এ পরীক্ষাগুলোকে সাধারণত প্রাকৃতিক বিপর্যয় রূপে আখ্যায়িত করা হলেও মূলত মানুষের খোদাদ্রোহিতা ও নানা প্রকারের অপকর্ম ও পাপাচারের কারণে খোদার পক্ষ হতে আপতিত হয়ে থাকে বলে খোদায়ী গজব বা খোদায়ী আজাব নামে খ্যাত। খোদার পক্ষ হতে অবতীর্ণ এসব বিপদকে আল্লাহতাআলাই ‘পরীক্ষা’ বলেছেন। সারা দুনিয়ার মানুষ প্রতিনিয়ত এ খোদায়ী আজাব-পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে আসছে। দুনিয়ার সর্বত্র কোনো না কোনো স্থানে ভূমিকম্প, দাবানল, কলেরা, মাহামারি, করোনা, ডেঙ্গু, দুর্ভিক্ষ, খরা, পঙ্গপালের আক্রমণ, বন্যা-প্লাবন, ঝড়-তুফান, টর্নেডো ইত্যাদি জানা অজানা অনেক প্রকারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলছেই।
মানব ইতিহাসের এমন কোনো যুগ অতিবাহিত হয়নি, যখন আল্লাহর আজাব অবতীর্ণ হয়নি এবং নানা প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বালা-মুসিবতের কবলে পতিত হয়ে বিভিন্ন জাতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়নি। উল্লেখিত এ সকল আপদ-বিপদ সকল জাতির ওপর এবং সকল যুগেই এসেছিল। আল্লাহর এ পরীক্ষা হতে কোনো জাতি নিস্তার লাভ করতে পরেনি। ফলে অনেক জাতিকেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে হয়েছে। পবিত্র কোরআনে স্বয়ং আল্লাহতাআলা বিভিন্ন জাতির ধ্বংস বিবরণ উল্লেখ করেছেন। প্রাচীন জাতিসমূহের ইতিহাস পাঠ করলে তাই জানা যায়। জাতীয় অধঃপতনের দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ বলেছেন: ‘(হে লোক সকল) তোমাদের ওপর বালা-মুসিবত যা কিছু নাজেল হয়ে থাকে তা তোমাদেরই কর্মফলের দরুন। আল্লাহ তোমাদের অনেকের পাপ মার্জনা করে থাকেন’ (সূরা-শুরা)। ‘বস্তুত নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেরাই অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়।’ (সূরা রাদ)।
সুতরাং প্রমাণিত, মানবতার উন্নতি-অগ্রগতি এবং অধঃপতন ও সর্বনাশের মূলেও রয়েছে মানুষের কৃতকর্ম বা আমল। মানুষ সৎপথে থাকতে চাইলে আল্লাহ তাকে সেজন্য সাহায্য করেন এবং বিপথে পরিচালিত হতে চাইলে তাও তার এখতিয়ারভুক্ত।
হযরত রাসূলে করিম (সা.) কেয়ামতের যে সকল পূর্ব লক্ষণের কথা বলেছেন, সেগুলির প্রতি লক্ষ করলে মুসলমান সমাজের বর্তমান অবস্থা সম্যকরূপে উপলব্ধি করা যায়। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, হুজুর (সা.) বলেছেন: যখন লোকেরা গণিমতের (যুদ্ধলব্ধ) মালকে আল্লাহর দয়ার দান স্বরূপ নিজস্ব মাল বলে গণ্য করবে, গচ্ছিত মালের খেয়ানত করতে থাকবে, জাকাত আদায় করাকে কর্জ পরিশোধ বলে মনে করবে, দ্বীনের শিক্ষাকে বৈষয়িক উপকারের জন্য শিখবে, পুরুষগণ নিজেদের স্ত্রীগণের আদেশ মেনে চলবে, লোকেরা মাতার আদেশ অমান্য করবে, বন্ধু-বান্ধবদের নৈকট্য লাভ ও তাদের সম্মান বেশি করতে থাকবে ও পিতাকে দূর স¤পর্কীয় ব্যক্তি বলে মনে করবে, মসজিদসমূহে দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও আত্মকলহ হতে থাকবে, ফাসেক বা পাপাসক্ত এবং হীন ও নীচ ব্যক্তিগণ জাতি ও স¤পদের নেতৃত্বদান করবে, কোনো মানুষের সম্মান কেবল তার ভয়ে এবং তার অন্যায়-অবিচার হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য করবে, গায়িকাদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বাদ্যযন্ত্রের প্রাচুর্য দেখা যাবে, মদ্য পান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকবে, পরবর্তী লোকেরা তাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি অভিশাপ দিতে থাকবে। (অর্থাৎ তাদেরকে বোকা মনে করবে)। তখন তুমি অগ্নিবর্ণ ঝড়-তুফানের, প্রচন্ড ভূমিক¤েপর, জমিন বিধ্বস্তের, আসমান হতে পাথর বর্ষণের, সুরত (বিকৃতির) পরিবর্তনের এবং হাড় ভাঙানোর ন্যায় বহু অনল প্রবাহ লক্ষণের অপেক্ষা করো। (তিরমিজি)।
হযরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, একদা হযরত নবী করিম (সা.) কিছু বর্ণনা করছিলেন এমন সময় এক লোক এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল, কেয়ামত কবে সংঘটিত হবে? হুজুর (সা.) বললেন: যখন লোক গচ্ছিত ধন আত্মসাৎ করবে। সে আবার জিজ্ঞাসা করল, গচ্ছিত ধন আত্মসাৎ করার অর্থ কী? হুজুর বললেন: যখন অযোগ্য ব্যক্তিদের হাতে শাসন কার্য দেওয়া হবে তখন তুমি কেয়ামতের প্রতীক্ষা করতে পারো। অন্যত্র হুজুর (সা.) এরশাদ করেছেন: ঐ সময় খুব দূরে নয়, যখন প্রকৃত ধর্ম শিক্ষা উঠিয়ে নেয়া হবে। সেই সময় ফেতনা-ফাসাদ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা অনিষ্ট ও বিশ্বাসঘাতকতা ইত্যাদি প্রকাশ পাবে এবং রক্তপাত ও খুনখারাবী অধিক হবে। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, যে জাতি খেয়ানতে লিপ্ত হয়ে পড়ে, আল্লাহ তাদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করে দেন। যে জাতি ব্যভিচার (জেনা) করে তাদের মধ্যে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পেতে থাকে, যে জাতি ওজন ও মাপে কম দেয় তাদের রেজেক, উপার্জন হ্রাস করে দেওয়া হয়। যে জাতি সত্যের বিরুদ্ধে রায় দান করে তাদের মধ্যে হত্যাকা--রক্তপাত বেড়ে যায় এবং যে জাতি অঙ্গীকার ভঙ্গ করে তাদের শত্রুর অধীনস্ত করা হয়। (মোয়াত্তা মালেক)।
হযরত উসমান (রা.) বলতেন, তোমাদের মধ্যে এমন এক সময় আসবে, যখন ইমাম বা শাসকগণ তোমাদের রক্ষক হওয়ার পরিবর্তে কেবল তহসীলদার (কর আদায়কারী) হিসেবে গণ্য হবে। তখন হায়া-শরম (লজ্জা), আমানত এবং ওয়াদাকারী বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। মানুষের কুকর্ম ও পাপ কার্যের ফলে নানা প্রকার আসমানী বালা-মুসিবত অবতীর্ণ হতে থাকবে এবং কেয়ামতের পূর্বে সেগুলি অধিক পরিমাণে দেখা দেবে বলে নবী করিম (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।
লোক যখন প্রকৃত মোমেন মুসলমান, পরহেজগার, আল্লাহর ফরমাবরদার, এবাদত-বন্দেগিরত খোদাভীরু, সত্যবাদী, ধৈর্যশীল, দাতা, রোজাদার, কুসংস্কারমুক্ত এবং যাবতীয় ধর্মীয় অনুশাসন মান্য করে চলবে, তখন আল্লাহর মহিমা (রহমত) বর্ষিত হতে থাকবে এবং জগতে শান্তি বিরাজ করবে। আর তাদের মধ্যে উল্লেখিত গুণাবলির অবর্তমানে যদি তারা কাফের, ফাসেক, ফাজের, পাপী, ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী, ব্যভিচারী, মদ্যপায়ী, চোর, ডাকু, অত্যাচারী, অহংকারী, অভিশপ্ত, অজ্ঞ, ধোঁকাবাজ, বিদ্রোহী, মিথ্যাবাদী এবং হত্যাকারী প্রভৃতি রূপে জীবনযাপন করে তবে আল্লাহর করুণা ও মহিমার সকল দ্বার রুদ্ধ হয়ে যায় এবং জগতে দাঙ্গা-হাঙ্গামা, বিশৃঙ্খলা, অশান্তি এবং জান-মালের নিরাপত্তা বিপন্ন হয়ে পড়ে। পবিত্র কোরআনের ভাষায় ‘জাহারাল ফাসাদু ফিল বাররে ওয়াল বাহরে বিমা কাছাবাত আইদিন্নাসে।’ অর্থাৎ জলে-স্থলে ফ্যাসাদ ভরপুর হয়ে গেছে লোকদের কৃতকর্মের ফলে। জাতীয় অধঃপতনে এর চেয়ে ¯পষ্ট ইঙ্গিত আর কী হতে পারে?
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা