সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ সরকার কেন জরুরি
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১৮ পিএম | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
গণতান্ত্রিক দেশে বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ার নজির নেই। সেখানে ভোটের মাধ্যমেই সরকার নির্বাচিত হয়। ব্যতিক্রম আমাদের দেশ। এখানে গণতান্ত্রিক ধারার কথা বলা হলেও বিনাভোটে সরকার গঠনের নজির সৃষ্টি হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের কথা ধরা যাক। এ নির্বাচনে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ১৫৩ জন এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এ ধরনের নজির বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি নেই। আর ঘটবে কিনা, তার সম্ভাবনা নেই। অন্তত গণতান্ত্রিক ধারার দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না বলে ধরে নেয়া যায়। ফলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি ইতিহাসে স্থান পেয়েছে। সাধারণত বিরল ঘটনার প্রতি মানুষের আগ্রহ থাকে বেশি এবং তা মনে রাখে। ডিসকভারি চ্যানেলটি এ কারণেই বেশি জনপ্রিয়। এ চ্যানেলে প্রাণী ও প্রকৃতির বিরল সব ঘটনা দেখানো হয়। এটা ঠিক, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচনের ঘটনা অহরহ ঘটে। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ এমপি নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা ঘটে না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এবং পরে তা দেখা যায়নি। অবশ্য ২০১৮ সালের নির্বাচনটি বিনাভোটে না হলেও রাতে ব্যালট বক্স ভর্তি করে ভোট দেখানোর নজির রয়েছে। এরকম নির্বাচনও বিশ্বে দ্বিতীয়টি হয়নি। তবে বাংলাদেশে বিনাভোটের পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ, আমাদের দেশে রাজনীতিতে মানুষের ধারণার বাইরে ঘটে না, এমন কিছু নেই। যেমন সামরিক শাসন সম্পর্কে মানুষ জানে। তারা হুট করেই ক্ষমতায় এসে পড়ে। এ অভিজ্ঞতা দেশের মানুষের আছে। তবে ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের মতো আর্মি ব্যাকড সরকার হতে পারে, তা তাদের কল্পনাও ছিল না। সামরিক শাসন যে বেসামরিক শাসনের মোড়কে কাজ করতে পারে, তা মানুষ আগে দেখেনি। এ ধরণের সরকার বাংলাদেশের মানুষের জন্য একেবারেই নতুন একটি অভিজ্ঞতা ছিল। তাদের সামনে যে আরও বড় ধরণের বিস্ময় জাগানিয়া ঘটনা অপেক্ষা করছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে কি তারা কল্পনা করতে পেরেছিল? কেউ কি ভেবেছিল, বিনাভোটে সরকার গঠন হয়ে যেতে পারে? গণতন্ত্রমনস্ক কোনো মানুষের মনে এ ধরনের চিন্তা আসতে পারে না। দুটি ভিন্ন সালের দুই জানুয়ারি মাসের বিরল দুই ঘটনা মানুষের মনে যে চিরদিন গেঁথে থাকবে, তাতে সন্দেহ নেই।
দুই.
অনেকেই বিনাভোটে নির্বাচিত সরকার আর সামরিক সরকারের মধ্যে পার্থক্য খোঁজার চেষ্টা করেন। কেউ যুক্তি দেখান, সামরিক শাসকও বিনাভোটে ক্ষমতায় আসে। জনসাধারণের ভোট নেয়ার প্রয়োজন মনে করে না। তবে জাতীয় নির্বাচনও যে বিনাভোটে হয়, তা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দেখিয়ে দিয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে ভোটারদের ভোট দেয়ার সুযোগই দেয়া হয়নি। প্রধান বিরোধীদল সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও ক্ষমতাসীনদল তার জোটের কাউকে প্রার্থী না করে বা জোটের প্রার্থীর বিপরীতে প্রার্থী না দিয়ে বিনাভোটে নির্বাচন করে সরকার গঠন করে ফেলে। এর ফলে সচেতন নাগরিকরা মনে এ ধারণা জন্মায়, আচরণের দিক থেকে বিনাভোটের সরকার সামরিক শাসকের চেয়েও কখনো কখনো ভয়ংকর হয়ে উঠে। এর কারণ হচ্ছে, এ ধরনের সরকারের সামনে সাংবিধানিক বৈধতার উসিলা থাকে। জনমতের তোয়াক্কা না থাকলেও সাংবিধানিক ও আইনগত বৈধতা থাকে। এক্ষেত্রে সে যে যুক্তি দাঁড় করায় তা হচ্ছে, বিরোধীদলের কেউ নির্বাচনে না এলে কি করার আছে? কেউ ভোটে আসতেও পারে, আবার না-ও আসতে পারে, সেটা তার ইচ্ছা। অংশগ্রহণমূলক হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। এই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনেরও নতুন একটি সংজ্ঞা দাঁড় করানো হয়েছে। সেটি হচ্ছে, বিপুল সমর্থনপুষ্ট বা বৃহৎ বিরোধীদল অংশগ্রহণ না করলেও চলবে। মানুষ ভোট দিলেই তা অংশগ্রহণমূলক হয়ে যাবে। এই সংজ্ঞা যে, গণতান্ত্রিক মনস্ক নয়, তা বলা বাহুল্য। এটা ক্ষমতাসীন দলের কোনোমতে একটি নির্বাচন দেখিয়ে ক্ষমতায় থাকার কৌশল ছাড়া কিছু নয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কেন বিরোধীদল নির্বাচনে আসবে না, সে ব্যাখ্যা দেয়া হয় না। এটা যে এক ধরনের চালাকি, তা সচেতন মানুষ মাত্রই বোঝে। এ ধরনের সরকার বাহ্যিকভাবে গণতান্ত্রিক হলেও ভেতরগতভাবে স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে থাকে। কোনো কোনো দেশে এ ধরনের সরকার থাকলেও তাদের সুশাসনের কারণে জনগণ মেনে নিয়েছিল। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা দৃশ্যমান নয়। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখলে বোঝা যায়, এখানে বিরোধীদলের রাজনীতির ক্ষেত্রটি সংকুচিত। তারা একধরনের কোনঠাসা অবস্থায় বা অনুমতি নির্ভর রাজনীতি করছে। মাঠ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি দলের আধিপত্য। অন্যদিকে, সামরিক সরকার যেহেতু নিজেও জানে সে বৈধভাবে আসেনি, তাই নিপীড়ন-নির্যাতন চালালেও, তা মানুষ স্বাভাবিকভাবে ধরে নেয়। তবে সাংবিধানিকভাবে বৈধ সরকারের নিপীড়ন যে কতটা ভয়াবহ ও নির্মম হতে পারে, তা বিরোধীদলগুলো হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। বলা হয়ে থাকে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিনাভোটে সরকার গঠনের থিওরি ভারত দিয়েছিল। অথচ সেই ভারতের পত্র-পত্রিকায়ই সে সময় এর বিরোধিতা করে লেখালেখি হয়েছিল। ২০১৫ সালে ভারতীয় কলামিস্ট রামচন্দ্র বাংলাদেশ সফর শেষে ৩ ডিসেম্বর ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা টেলিগ্রাফ-এ একটি উপসম্পাদকীয় লিখেছিলেন। উপসম্পাদকীয়তে তিনি বেশ খোলখুলিভাবেই বাংলাদেশের রাজনীতির অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত নিয়ে তার মতামত তুলে ধরেছিলেন। এক জায়গায় তিনি লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের একমাত্র কারণ হচ্ছে, পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পশ্চিম পাকিস্তানীদের যথেষ্ট জায়গা দিতে না চাওয়া। কিন্তু নিয়তির পরিহাস হলো, সেই আওয়ামী লীগই এখন বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ উপসম্পাদকীয়র আরেক অংশে রামচন্দ্র উপদেশ এবং উদাহরণ দিয়ে লিখেন, ‘শেখ হাসিনা এবং তার উপদেষ্টারা ভাল করবেন, যদি তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে একদলীয় শাসন কায়েম করা অতীতের সরকারগুলোর ইতিহাসের সাথে নিজেদেরকে পরিচিত করান। নাৎসীরা মাত্র ১২ বছর ক্ষমতায় ছিল, অথচ তাদের সমর্থকদের হাজার বছরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার দিকে তাকালে, ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস, পাকিস্তানের পিপলস পার্টি এবং শ্রীলংকার ফ্রিডম পার্টিÑসবাই একদল শাসিত রাষ্ট্র গড়তে চেয়েছিল, কিন্তু কেউই কয়েক বছরের বেশি টিকেনি। সে জন্যই একদলীয় রাষ্ট্রের ভাগ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। কিন্তু যে সময়টা তারা ক্ষমতায় থাকে তখন ব্যাপক বিনাশ সাধন করে।’ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও শাসন ব্যবস্থা নিয়ে তার বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ কি অবস্থায় রয়েছে। তবে এ পরিস্থিতি সমর্থনের লোকেরও অভাব হয় না। কারণ, তারা বিভিন্নভাবে ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে সুবিধা পায় কিংবা সুবিধা দিয়ে তাদের সমর্থনের একধরনের বশংবদ গোষ্ঠী তৈরি করে। একটি স্তাবক শ্রেণী সৃষ্টি হয়েছে। সরকারও চায় স্তাবক শ্রেণী শুধু তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হোক। হচ্ছেও তাই। সাধারণ মানুষ এ ধরনের শাসনের ধরণ-ধারণ বুঝলেও, তাদের বলার মতো কোনো সুযোগ বা প্ল্যাটফর্ম থাকে না। যে বিরোধীদল বলবে, সে নিজেই দৌড়ের উপর রয়েছে। ‘চাচা, আপন প্রাণ বাঁচা’র মতো পরিস্থিতির মধ্যে তাকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। আবার সচেতন শ্রেণীর কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে সমালোচনা করলে, তাকে দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। ইতোমধ্যে এ ধরনের অনেক নজির সৃষ্টি হয়েছে। এমন এক পরিস্থিতিতে যখন বিদেশি পত্র-পত্রিকায় বাংলাদেশ ও তার সরকারের সমালোচনামূলক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়, তখন সাধারণ মানুষের কাছে তা তাদের কথা বলে প্রতিভাত হয়। ভিনদেশি খবরের উপর এ ধরনের নির্ভরশীলতা স্বৈরশাসকের আমলের কথাই মনে করিয়ে দেয়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় দেখা গেছে, মানুষ বিবিসি বা বিদেশের অন্যকোনো গণমাধ্যমের খবরকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছে। তাদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল, সঠিক খবর দিলে একমাত্র এই মাধ্যমগুলোই দিতে পারে। এখনও সাধারণ মানুষ বিদেশের গণমাধ্যমের সংবাদের ওপরই বেশি নির্ভর করছে। তারা জানে, দেশের গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রিতভাবে চলছে এবং কিছু কিছু গণমাধ্যম সরকারের লোকজনের হওয়ায় তা তার মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে।
তিন.
জনসাধারণের ভোটের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে বিজয়ী হওয়ার মধ্যে যে সম্মান, গৌরব ও দায়বদ্ধতা থাকে, বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ার মধ্যে তার আমেজ থাকে না। যিনি বিনাভোটে নির্বাচিত হন, তার আত্মসম্মানের যেমন হানি হয়, তেমনি জনসাধারণের মধ্যেও তার গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়। কেবল জনসাধারণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমেই একজন প্রার্থীর আচার-আচরণ, কথা-বার্তা, সততা, নিষ্ঠা, কর্মদক্ষতা, একাগ্রতা এবং জনদরদী ও ভাল মানুষের পরীক্ষা হয়। বিজয়ী হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধরে নেয়া যায়, যিনি বিজয়ী হয়েছেন, তিনি এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এ পরীক্ষা ছাড়া যিনি নির্বাচিত হন, দেখা গেছে, তাদের কেউ কেউ জনসাধারণের সাথে এমন আচরণ করেন যে, তাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার উপক্রম হয়। ইতোমধ্যে এ ধরনের নজির সৃষ্টি হয়েছে। অনেক এমপি নিজ এলাকার সাথে খুব কম সম্পৃক্ত থাকেন। জনসাধারণের সাথে হৃদ্যতা খুব কম থাকে। বিনাভোটে নির্বাচিত হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের সাথে তাদের নিবিড় যোগাযোগ থাকে না। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এখন এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেশের বিরোধীদলগুলো তো বটেই জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ উন্নত বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হওয়া নিয়ে বেশ শক্ত অবস্থান নিয়েছে। তবে সরকার তার অধীনে নির্বাচন করা নিয়ে ছাড় দিতে রাজি নয়। এক্ষেত্রে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের কথা বলছে। এ কথা বলছে না, সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীন দলের অধীনে দেশে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য কখনো হয়নি। এ নজির দেশে নেই। ক্ষমতাসীন দলের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না, তার পরীক্ষা ২০১৪ ও ২০১৮ সালে হয়েছে। বিরোধীদল থেকে সচেতন মহল মনে করে, সংবিধানের উসিলা দিয়ে ক্ষমতাসীন দল তার সাজানো প্রশাসন ও দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে প্রাধান্য বিস্তার করে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্যই এ কথা বলছে। কোনো সরকারই নিজের অধীনে নির্বাচন করে তাকে জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারেনি। এরশাদ সরকারের সময় যে নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। গ্রহণযোগ্যতা পায়নি বলেই তার শাসনামলের পতনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিল। দেশের ইতিহাসে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বলতে ঐ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকেই বোঝায়। মাঝে ’৯৬ সালে বিএনপি সরকার তার অধীনে নির্বাচন করতে চাইলে বিরোধীদল আওয়ামী লীগ ও অন্যান দল তা মেনে নেয়নি। যেহেতু তখন সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান ছিল না, সেহেতু বিএনপিও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করতে চেয়েছিল। সংবিধানিক ধারার প্রতি যদি বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের এত কঠোর অবস্থান থাকে, তাহলে সে সময় কেন, তা মেনে নেয়নি? কেন তত্ত্বাবধয়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছে? বিএনপি সরকার সে সময় অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সাংবিধানিক করার জন্য বিরোধীদলের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে নির্বাচন করে সংসদে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংযোজিত করেছিল। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরবর্তীতে বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের কাছে কেন অসাংবিধানিক মনে হলো? কেন মনে হলো, এটি গণতান্ত্রিক ধারা নয়? যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার জন্য দাবী তুলে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছিল, তখন কেন মনে হলো না? সংবিধানের বাইরে যাওয়া যাবে না বলে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল যে কথা বলছে, তখন কেন এ কথা বলেনি? কারণ, তার এবং জনগণের ধারণা ছিল, দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। তার প্রমাণ, এরশাদ সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচন এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের অধীনে অনুষ্ঠিত বিগত দুটি নির্বাচন। বিএনপি তখন বিরোধীদলের দাবী মেনে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংযুক্ত করে নির্বাচন দিয়েছে। এখন ক্ষমতাসীন দলের তা দিতে সমস্যা কোথায়? সংবিধানের দোহাই দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দাবী উপেক্ষা করার কারণ কি? বিগত দুটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মতো নির্বাচন করে ক্ষমতায় থাকার জন্য?
চার.
অনেকেই বলেন, দেশে এখন ‘ভোটশূন্যতা’ বিরাজ করছে। দেশের মানুষকে ভোটের প্রতি অনীহার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এই অনীহা সৃষ্টি করা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে। পরবর্তীতে উপনির্বাচনসহ স্থানীয় সব নির্বাচনগুলোতে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে দেখা যায়নি। কারণ, তারা দেখেছে, প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের ভোট দিয়ে দিয়েছে। তাদের ভোট দেয়ার প্রয়োজন পড়েনি। এই ভোটারবিহীন অপসংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত করতে অত্যন্ত কঠোরভাবে বিরোধীদলকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনও ক্ষমতাসীনদের অধীনে করার মধ্যে একতরফা নির্বাচন করার প্রবণতা রয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে বরাবরের মতোই বলা হচ্ছে, কে নির্বাচনে এলো বা কে এলো না, তার জন্য নির্বাচন অপেক্ষা করবে না। মানুষ ভোট দিতে পারলেই হলো। এটা যে আবারও একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। তবে এবার আবধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে দেশি-বিদেশি শক্তিগুলো যেভাবে সোচ্চার, তাতে ক্ষমতাসীনদল কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে। যে ভারত তার সবচেয়ে বড় ভরসা, বন্ধু ও সহায়তাকারী, সেও এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলছে। দেশটির ভেতরের মনোভাব যাই থাকুক, আগের মতো প্রকাশ্যে ক্ষমতাসীনদের পক্ষে যায়, এমন মন্তব্য করছে না। ফলে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দল কি কৌশল অবলম্বন করে, তাই এখন দেখার বিষয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা