দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক শাসন চায়
১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১৮ পিএম | আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০২ এএম
বাংলাদেশের ৯১ শতাংশ মানুষ গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত একটি দেশে বসবাস করা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনে’র এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপে যেসব দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন রয়েছে, তারা কি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার চেয়ে ভালো করছে, ১০টি সূচকের ভিত্তিতে করা এই প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের ৯১ শতাংশ মানুষ জানিয়েছে, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পক্ষেই তাদের অবস্থান। ‘ওপেন সোসাইটি ব্যারোমিাটার: ক্যান ডেমোক্রেসি ডেলিভার?’Ñ শীর্ষক জরিপে বাংলাদেশ ছাড়াও ২৯টি দেশের ৩৬ হাজার ৩৪৪ জন নাগরিক অংশগ্রহণ করে। তাদের ৮৬ শতাংশই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বসবাস করতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, রাশিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, সউদী আরব, ভারত, জাপান প্রভৃতি জনবহুল দেশের মানুষ জরিপে অংশ নেয়ায় তাদের দেয়া অভিমতের গুরুত্ব বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য। অন্য কোনো সরকারব্যবস্থা বা শাসনব্যবস্থার চেয়ে গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা বা শাসনব্যবস্থাই যে উত্তম ও অধিক জনপ্রিয়, জরিপে সেটাই প্রতিফলিত হয়েছে। অন্যদিকে গণতন্ত্রের জন্য, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার, নাগরিক অধিকার, সমতার অধিকারের জন্য বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ সংগ্রাম করেছে। তাদের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষার মধ্যে এসব অধিকার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা লাভের প্রত্যাশা ছিল। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, স্বাধীনতার এত বছরেও এসব অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিগত দুটি সাধারণ নির্বাচনে মানুষের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার, ভোটাধিকার উপেক্ষিত ও ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে মানবাধিকার, নিরাপত্তার অধিকার, সমঅধিকার ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার নানাভাবে অগ্রাহ্য হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোনো দিক-দিশা এখনো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সর্বক্ষেত্রে জনঅধিকারের বিপরীতে কর্তৃত্ববাদের আলামত বরং আরো জোরালো হয়ে উঠছে। জরিপে প্রতিফলিত বাংলাদেশিদের অভিমতে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রতি তাদের সমর্থনই ব্যক্ত হয়নি, চলমান শাসনব্যবস্থার প্রতি অনাস্থাও প্রকাশিত হয়েছে।
জরিপে গণতন্ত্র, নাগরিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার, সমতা, ন্যায়বিচার, জনপ্রত্যাশা, অর্থনীতি, ক্ষমতা ও রাজনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষ গণতান্ত্রিক শাসনের অধীনে নিজেদের দেখতে চেয়েছে। সরকার কাঠামো হিসেবে ৫৯ শতাংশ মানুষ গণতন্ত্রকেই পছন্দ করেছে। মানবাধিকার প্রশ্নে ৮৮ শতাংশ বলেছে, বিশ্বের কল্যাণে মানবাধিকার একটি বড় শক্তি। কোন অধিকার বেশি জরুরি, এমন প্রশ্নের উত্তরে ৩৬ শতাংশ বলেছে, তাদের কাছে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ২৮ শতাংশের কাছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার, ১৭ শতাংশের কাছে পরিবেশগত অধিকার এবং ১৩ শতাংশের কাছে ডিজিটাল অধিকার বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রতিভাত হয়েছে। গণতন্ত্র বা নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের চেয়ে উন্নয়ন বা অর্থনৈতিক প্রসার অধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে প্রচার করার যে চেষ্টা চলমান রয়েছে, সেটা এই জরিপে একটা বড় রকমে ধাক্কা খেয়েছে। উন্নয়ন বা সমৃদ্ধি চায় না, এমন কেউ নেই; তবে গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক অধিকারের বিনিময়ে অবশ্যই নয়। সেই পাকিস্তান আমলে আইয়ুব খানের সময় উন্নয়ন কম হয়নি। ‘উন্নযনের দশক’ পর্যন্ত ঘটা করে পালন করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। তখন দেশে গণতন্ত্র ছিল না, গণতান্ত্রিক অধিকারই লংঘিত হতো যখন-তখন। শাসনের মধ্যে কর্তৃত্ববাদ প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। এতে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে শেষ পর্যন্ত গণআন্দোলনের মাধ্যমে আইয়ুব খানকে বিদায় করে দিয়েছিল। কথিত উন্নয়ন তার বিদায় রোধ করতে পারেনি। ক্ষমতা প্রলম্বিত করার বা ধরে রাখার জন্য ‘আইয়ুবী নীতি’ কার্যকর নয়, সেটা প্রমাণিত।
বহু দেশেই গণতন্ত্র নেই। সেখানে এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে। চীন, রাশিয়া, সউদী আরব প্রভৃতি দেশের কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। ভারতে বিজেপির কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। পাকিস্তানে সামরিক বাহিনীর কর্তৃত্বশীল শাসন কায়েমের প্রয়াস লক্ষণীয়। জরিপে দেখা গেছে, চীনের ৯৫ শতাংশ, রাশিয়ার ৬৫ শতাংশ, সউদী আরবের ৭৪ শতাংশ মানুষ গণতান্ত্রিক শাসন চায়। ভারতে চায় ৯৩ শতাংশ মানুষ এবং পাকিস্তানে ৭৯ শাতংশ। এছাড়া যুক্তরাজ্যের ৮২ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের ৮০ শতাংশ, জার্মানির ৮১ শতাংশ মানুষ গণতন্ত্রের পক্ষে। কোনো দেশের মানুষ যা চায়, তা দেয়া বা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সে দেশের সরকার বা শাসকদের। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের মানুষ (বেশির ভাগ) যা চায়, তা বাস্তবায়ন করা আমাদের সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বিগত প্রায় ১৫ বছর দেশে জনগণের গণতন্ত্র নেই। নির্বাচন আছে বটে, তবে ভোটাররা ভোট দিতে পারে না। ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে ইচ্ছা তাকে দেবো’Ñ এ অবস্থা নেই। জনগণের গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক, নাগরিক ও মানবিক অধিকার খর্বিত, খ-িত ও লংঘিত হচ্ছে পূর্বাপর। সামনে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায়, দেশ যেন আশঙ্কিত বিপজ্জনক অবস্থায় পতিত না হয়, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রধানত সরকারের। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে। আমরা আশা করবো, জরিপে প্রতিফলিত জনঅভিমত বা জনপ্রত্যাশা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও প্রাধান্য দেয়া হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা