আগুন লাগার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন করতে হবে
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:০৬ পিএম | আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম
মোহাম্মদপুরে ঐতিহ্যবাহী কৃষি মার্কেটটি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ছোট বড় মিলিয়ে টিনসেড কৃষি মার্কেটটিতেও আগুন লাগে গত বুধবার দিবাগত শেষ রাতের দিকে। এতে জুয়েলারি, গার্মেন্টস, কোক্রারিজ, মুদি ও কাঁচা মালসহ দোকান ছিল অন্তত সাড়ে পাঁচশ’। ভয়াবহ আগুনে কোনো দোকানই আর অবশিষ্ট নেই। মার্কেটে আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশন থেকে ১৭টি ইউনিটের দেড়শ’ ফায়ার ফাইটার সাড়ে ৬ ঘন্টার চেষ্টায় আগুন নির্বাপণ করে। ফায়ার ফাইটারের সঙ্গে আগুন নির্বাপণে যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনি। এছাড়া বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ তাদের সহযোগিতা করে। মার্কেটটিতে কাঁচাবাজারের দোকান থেকে জুয়েলারী দোকানও ছিল। অন্তত ১৮টি স্বর্ণের দোকান পুড়ে গেছে। এক জুয়েলারি ব্যবসায়ী বরেছেন. তার দুটি জুয়েলার্সের দোকান ছিল। দুই দোকানে প্রায় দুই কোটি টাকার জুয়েলার্সের মালামাল ছিল। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। মার্কেটটি ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ঘটনার সময় মার্কেটের চারদিকের গেট ছিল তালাবদ্ধ। নাইটগার্ড যারা ছিলেন, আগুন লাগার পর তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। কলাপসিবল গেট এবং তালা ভেঙে আগুন নির্বাপণে কাজ করতে হয়েছে ফায়ার কর্মীদের। তদন্তের আগে ভয়াবহ এ আগুন লাগার কারণ স¤পর্কে বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। তবে প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিস বলছে, মার্কেটটির একটি মুদি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। হয়তো বৈদ্যুতিক শর্ট শার্কিট থেকে অথবা মশার কয়েল থেকে আগুন লাগতে পারে। অন্যদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অনেকেই এ আগুন লাগা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন তুলেছেন। ব্যবসায়ীদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, নিউমার্কেট, বঙ্গবাজারের পর কৃষি মার্কেটেও আগুন লাগে গভীর রাতে। একই সময়ে আগুন লাগার রহস্য কি? ইতোমধ্যে মার্কেটটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে সিটি করপোরেশন। মার্কেটটিকে টিনের পরিবর্তে পাকা ভবন করার পরিকল্পনা চলছে বলে জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।
বিগত কয়েক মাস ধরে বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী ও ক্রেতাদের কাছে জনপ্রিয় মার্কেটে আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে গেছে। বঙ্গবাজার, নিউমার্কেটের চন্দ্রিমা, বনানী ডিসিসি মার্কেট পুড়ে ধ্বংস হয়ে যায়। এতে শত শত কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়ে ব্যবসায়ীরা। তাদের জীবিকার একমাত্র উৎস দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় পুঁজি হারিয়ে তারা পথে বসে গেছে। পরিবার নিয়ে এক দুঃসহ জীবনযাপন করছে। নতুন করে যে আবার শুরু করবে, সে সামর্থ্য তাদের অনেকে নেই। প্রতিবারই মার্কেটসহ কোথাও আগুন লাগলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে। তবে সেই তদন্ত কমিটি আর আলোর মুখ দেখে না। সরকারের পক্ষ থেকে প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, আগুন লাগার ঘটনা নাশকতা কিনা, তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে। এ নিয়ে রাজনীতিও শুরু হয়। তবে সময় গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আগুন লাগার আসল কারণ উদ্ঘাটিত হয় না। এ থেকে জনমনে প্রশ্ন জাগে, আগুন লাগার প্রকৃত কারণ না জানানোর মধ্যে কোনো দুরভিসন্ধি রয়েছে কিনা? এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা? তা নাহলে, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন কেন প্রকাশ করা হয় না? এ ধরনের সন্দেহ অমূলক নয়। কারণ, তদন্ত কমিটির দায়িত্ব হচ্ছে, সুষ্ঠু তদন্ত করে আগুন লাগার কারণ জানিয়ে দেয়া। তাহলে, অন্যান্য মার্কেট বা স্থাপনার কর্তৃপক্ষ সচেতন হতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকানদাররা শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, এতে অর্থনীতিও ক্ষতি হয়। অনেকে সামর্থ্য হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ে। প্রত্যেক মার্কেটেই অসংখ্য সেলসম্যান চাকরি করে। দোকান ধ্বংস কিংবা বন্ধ হয়ে গেলে তারা বেকার হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তাদের কাজ পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। বেকার এই তরুণ শ্রেণী হতাশায় একসময় বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। এতে আইনশৃঙ্খলারও অবনতি ঘটে। যেসব মার্কেট পুড়েছে, সেসব মার্কেটের দোকানিরা এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। বঙ্গবাজারে একসময় যে দোকানির এক বা একাধিক দোকান ছিল, সে এখন ফুটপাতে বা খালি জায়গায় ছাপড়া তুলে কোনো রকমে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের পরিবারগুলোর আহাজারি এখনও কমেনি। সচ্ছল অবস্থা থেকে নিমিষে দরিদ্র হয়ে গেছে। আগুনে যে শুধু সম্পদহানি হয় তা নয়, অনেক মানুষের মৃত্যুও হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের প্রতি সরকারের তরফ থেকে ক্ষতিপূরণ কিংবা বিভিন্ন আশ্বাস দিলেও, তা পাওয়ার খবর খুব একটা পাওয়া যায় না।
বিভিন্ন মার্কেট ও স্থাপনায় আগুন লাগার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পর্যবেক্ষকরা বারবার তাকিদ দিলেও তা প্রকাশ করা হয় না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেখা যায়, প্রাথমিকভাবে আগুন লাগার কারণ হিসেবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট, সিগারেটের আগুন কিংবা মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে বলে গদবাঁধা বক্তব্য দিয়েই দায় সারা হয়। তদন্ত কমিটি গঠন করলে তার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয় না। তদন্ত রিপোর্ট কেন প্রকাশ করা হয় না, সেটা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে রয়েছে। আগুন লাগার পেছনে কি কারণ এবং তা নাশকতা কিনা, তা যদি শনাক্ত করে প্রকাশ করা না হয়, তাহলে আগুন লাগা বন্ধ করা যাবে না। আমরা মনে করি, প্রত্যেকটি আগুন লাগার কারণ উদ্ঘাটন করে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হবে। আগুন লাগতে পারে, এমন কারণ নিজ দায়িত্বে শনাক্ত করে মার্কেট কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক মার্কেটে আগুন নির্বাপণের যথাযথ ব্যবস্থা রাখতে হবে। তদন্ত কমিটিকে যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে আগুন লাগার কারণ প্রকাশ করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা