সন্তানদের মোবাইল আসক্তি দূর করতে হবে
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:২৪ পিএম | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
প্রতিটি ঘরে বাবা-মায়ের সাথে এখন সন্তানদের যুদ্ধ চলে মোবাইল নিয়ে। ছেলে-মেয়ের দোষ হলো মোবাইল আসক্তি, এটা সবাই বলে একবাক্যে। কিন্তু আসলে দায়ী কে বা কারা? আগে সব পরিবারে ভাই-বোনের সংখ্যা ছিলো চার থেকে সাত-আটজন পর্যন্ত। এখন সব পরিবারে সন্তান দেখি দুইজন বা একজন। এই ক্ষেত্রে আগে ভাই-বোনরা নিজেরা সবাই এক সাথে খেলাধুলা, মারামারি, ঝগড়া, খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি, প্রত্যেক খাবার ভাগ করে খাওয়া, আবার একসাথে মজা, হুল্লোড় করা, একসাথে ভাগাভাগি করে খাটে শোয়া, টেবিলে পড়াশোনা করা, আবার বড়রা ছোটদের পড়া বুঝিয়ে দেয়া এক কথায় সব মিলিয়ে বেশ সুন্দর সময় কাটতো। কোনো সন্তান একাকী বোধ করার সুযোগ পেত না।
এখন? এখন, একজন বা দু’জনের জন্য দুইটা ঘর, আলাদা আলাদা টেবিল, খাট, খাবার অফুরন্ত, আরাম আয়েশ আরো কত কী? এর ভেতরে ওদের পড়াশোনার পর হাতে থাকে পর্যাপ্ত সময়। এই সময়ে আবার বাইরে সন্তানদের কেউ বের হতে দেয় না, বাইরে গিয়ে তারা খেলতে পারে না। এছাড়া কোনো মাঠ নেই শহরের বিভিন্ন জায়গায়। তাহলে ওরা করবে কী?
বাচ্চাদের সময় দেয়ার মতো সময়ও থাকে না আজকাল বাবা-মায়ের। বাবা-মা, সংসারের সুখের জন্য বিভিন্ন কাজে খুব ব্যস্ত থাকে। সন্তানের হাতে গিফট হিসেবে বই ও দেন না কেউ আজকাল। তাহলে ওরা কার সাথে কথা বলবে? ওদের নানা রকম জানার ও মনের কথা বলার মানুষ পাবে কই?
হয় টিভি দেখা, নয়তো মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকা। এই দুয়ের মাঝে সন্তানরা ডুবে যায়। তখন মনের সব জানার কৌতূহল মেটাতে পারে একমাত্র মোবাইল চালিয়ে। আর মোবাইল তখন বন্ধু হিসেবে ওদের প্রিয় হয়ে ওঠে। সকল কিছু জানতে পারে মোবাইল থেকে, বরং একটু বেশিই জেনে যায়।
বাবা-মা দুইজনের কাছ থেকে বাচ্চারা ক্রমাগত দূরে বহু দূরে চলে যাচ্ছে শুধু আন্তরিকতার অভাবে। বাবা শাসন করলে মা প্রশ্রয় দেয়, মা শাসন করলে বাবা বিপরীত বলেন। পরিবারের এই প্রশ্রয়টাও সন্তানকে বিপথে নিয়ে যেতে সাহায্য করে অনেক বেশি। আগে কিন্তু পরিবারের প্রধান থাকতো বাবা, তিনি যা বলবেন তাই মেনে নিতে হতো। এখন পিতার মান্য-মানাটাও অনেক কমে গেছে।
আগে শিশুদের কাজ শিশুদের করতে হতো। নিজের বিছানা তোলা, জামাকাপড় ধোয়া, বই খাতা টেবিলে গুছিয়ে রাখা, নিজের খাবারের প্লেট নিজে ধুয়ে রাখাÑ এই রকম ছোট ছোট কাজ। কিন্তু এখন একজন দুজন সন্তান হওয়াতে সন্তানকে দিয়ে এই ছোট ছোট কাজ করানো হয় না। কোনো কোনো মা ছোট সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাগ অনেক ভারী বলে নিজেই কাঁধে করে নিয়ে যান। যাওয়া আসার সময় বাচ্চারা খালি হাতে হেঁটে আসে আর ব্যাগ বহন করে মা। সন্তানকে ছোটকাল থেকে নিজের বোঝা নিজেকে বহন করতে শিক্ষা দেয়া উচিত। নইলে বড় হয়েও আর শক্ত হয়ে গড়ে উঠতে পারবে না। জীবনের বোঝা তখন খুব কষ্টের মনে হবে।
এছাড়াও ছোটকালে ছোট ছোট মিথ্যা বলে বাবা-মা সন্তানদের নানাভাবে ভুলিয়ে রাখে। সেই মিথ্যা শিখে যখন শিশুরা বড় হয়ে বলতে শুরু করে তখন ছোট শিশু ভুল করেছে বলে বাবা-মা আবারও প্রশ্রয় দিয়ে যায়। এক সময় ছোট ছোট ভুল ও মিথ্যাগুলো বিশাল আকার ধারণ করে বড় হওয়ার পর। তখন আর শাসন করে শোধরানোর কিছু থাকে না। তাই ছোট থেকেই এগুলো শেখানো উচিত। পরিবার হচ্ছে প্রথম বিদ্যালয়। ছোটদের সামনে এমন কিছুই বলা বা করা উচিত নয়, যা তাদের খারাপ কিছু করা শিখিয়ে দেয়। ছোট থেকে ছেলেমেয়েদের ধর্মীয় বিষয়ে বেশি করে বোঝানো হয় না। প্রতিদিন নামাজ পড়ার ব্যাপারে জোর করা হয় না। এভাবেই সন্তানদের আমরা খারাপ পথে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করে দেই। ওদের ছোট থেকেই ধর্মীয় বিষয়ে বেশি উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
দিন শেষে পরিবারের সবাই একসাথে বসা, সন্তানের সাথে কথা বলা উচিত। কিন্তু সবাই এত ব্যস্ত যে, বাবা-মায়ের কথা বলার সময় হয় না, হয় না জানা সন্তানদের মন কী চায়? এছাড়াও বাবা-মা নিজেদের দাম্ভিকতা ধরে রাখতে গিয়েও সন্তানকে কাছে ডাকতে পারে না। শাসন করতে ভালো লাগে, কিন্তু বুঝিয়ে বা আদর করে কিছু বলতে বেশ কষ্ট হয়। পিতা-মাতা ভাবে আমাদের বাবা-মায়েরা মেরে, বকে, শাসন করেছে তাই আমরা এত ভালো হয়েছি, আমাদের সন্তানদেরও তাই করা উচিত। কিন্তু সময় যে বদলে গেছে, সেটা মানতে তারা অপারগ।
মোবাইল নামক নেশা থেকে সন্তানদের ফেরাতে ছোটকাল থেকেই পারিবারিক কিছু ভালো নিয়ম শেখাতে হবে। পিতা-মাতাকে সন্তানদের সময় দিতে হবে। সন্তানদের মনের কথা জানতে হবে। ভালোবেসে বন্ধু হতে হবে। ওদের ভালো ভালো নীতিমূলক গল্প বা জীবনের অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করতে হবে। ধর্মীয় বিষয়ে ওদের জ্ঞান দিয়ে দান ও ধর্ম পথে নিয়ে আসতে হবে। সফল, স্মরণীয়, নামী, গুণী মানুষের গল্প বলতে হবে। ঘরের বা সন্তানদের নিজের কাজ নিজেকে করার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। পরিবারের সবাই মিলে একসাথে টিভি দেখা, ঘরে ইনডোর গেইম খেলা, মাঝে মাঝে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আসলে পরিবারেই যদি সন্তানরা সব আনন্দ পেয়ে যায়, তাহলে আর কোনো সন্তান মোবাইল হাতে নেয়ার কথা মনেই আনবে না। এখন পরিবারে পিতা-মাতার অনেক ঘাটতি থাকে বলে ওদের শূন্যতা পূরণ করে থাকে মোবাইল।
লেখক: সিনিয়র শিক্ষক, বিএএফ শাহীন কলেজ, চট্টগ্রাম।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা