ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অসাধারণ জয়
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:২৬ পিএম | আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
অপেক্ষাকৃত তরুণ ও স্বল্প অভিজ্ঞ এক একটি দল নিয়ে এশিয়া কাপে যাওয়া বাংলাদেশ মহাপরাক্রমশালী ভারতকে হারিয়ে দিয়েছে। এমন দল নিয়ে বাংলাদেশ ভারতকে হারাতে পারবে, তা অনেকেই ধারণা করেনি। ক্রিকেটবোদ্ধা নাজমুল আবেদীন বলেছেন, কেউ হয়তো আশা করেনি, ভারতের বিপক্ষে এমন একটা জয় পাবে। ¯্রােতের বিরুদ্ধে অর্জিত এ জয়ের কৃতিত্ব দলের প্রতিটি সদস্যের। তারা এমন জয় দিয়ে নিজেদের এবং দেশকে সম্মানিত করেছে। ভারত টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায়। মাঠে নেমে ৫৯ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। মনে হয়, যারা আগে প্রত্যাশাও করেনি, তাদের সেই শঙ্কাই যেন সত্যি হতে চলেছে। টপ অর্ডারদের এই ব্যর্থতায় অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, ভারতের বোলিংয়ের সামনে বাংলাদেশ দেড়শ’ রান করতে পারবে কিনা। তবে তাদের সেই শঙ্কার মধ্যে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যায়, অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও তরুণ তাওহিদ হৃদয়। তারা ভঙ্গুর ইনিংসকে ধীরে ধীরে মেরামত করতে শুরু করে। ১০১ রানের জুটি করে দলকে খাদের কিনার থেকে অনেকটা টেনে তোলে। সাকিব দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে অধিনায়োকোচিত ৮৫ বলে ৮০ রান করে। তৌহিদ করে ৮১ বলে ৫৪ রান। তাদের এই দৃঢ়তা এবং ঘুরে দাঁড়ানো লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান, যারা মূলত বোলার তাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। তারা উইকেট ধরে রেখে ছোট ছোট ইনিংস খেলে দলকে সম্মানজনক স্কোরে (২৬৫ রান) নিয়ে যায়। ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের কাছে এ রানও যথেষ্ট বলে অনেকের কাছে প্রতীয়মান হয়নি। তবে ব্যাটিং ধসের পরও যে বাংলাদেশ ২৬৫ রান করতে পেরেছে, এটা অনেক সম্মানজনক অবস্থান ছিল এবং এই রান ডিফেন্ড করতে বোলারদের উদ্যমী ও অনুপ্রাণিত করে। শেষ পর্যন্ত তারা জয় ছিনিয়ে আনে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে আমরা আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ভারতকে সর্বশেষ হারিয়েছিল ২০১২ সালে। তার প্রায় ১১ বছর পর ফের ভারতকে হারিয়েছে। এবারের টুর্নামেন্টে একমাত্র অপরাজিত দল ছিল ভারত। তার শক্তি ও সামর্থ্য হিসাব করে, সবাই ভেবেছিল, বাংলাদেশকে হারিয়ে তারা অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হবে। তবে বাংলাদেশের কাছে হেরে তারা অপরাজিত থাকতে পারেনি। দুইদিন আগে সাকিব আল হাসান বলেছিল, ভারতকে হারাতে চায়। অনেকেই ধরে নিয়েছিল, এটা একটা কথার কথা। তবে সেটা যে কথার কথা ছিল না, সাকিব তা মাঠে খেলে ভারতকে পরাজিত করে প্রমাণ করেছে। নিজে যেমন দায়িত্ব নিয়ে খেলেছে, তেমনি একজন দক্ষ অধিনায়কের মতো ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বুঝে যে কৌশল নিতে হয়, তা দেখিয়েছে। কখন বোলিং পরিবর্তন করতে হবে, সে অনুযায়ী কীভাবে ফিল্ডিং সাজাতে হবে, বোলার ও ফিল্ডারদের কীভাবে মোটিভেশন ও উৎসাহ দিতে হবে, তা অত্যন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন করেছে। তরুণ ক্রিকেটারদের অন্তর্নিহিত শক্তিকে কাজে লাগাতে পেরেছে। পুরো দলকে একসূত্রে গেঁথে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। সাকিব তার কথা রেখেছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে দল গড়া ও ক্রিকেটার সিলেকশন নিয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছিল। এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দলের মধ্যে পড়া স্বাভাবিক। এশিয়া কাপে তার কিছুটা প্রভাব দেখা যায়। দর্শকদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়। বিশেষ করে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের দলে রাখা না রাখা নিয়ে একধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। সমন্বয়ের অভাব দেখা দেয়। এছাড়া দলের পেস বোলারসহ অভিজ্ঞ ব্যাটারদের ইনজুরিও দলকে সমস্যায় ফেলে। ভারতের বিপক্ষে মূল বোলারদের অন্তত তিনজনকে ছাড়া দল গড়তে হয়। এ ম্যাচে বোলার তানজিমের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয়। ভারতের মতো পরাশক্তির ক্রিকেট দলের বিপক্ষে একজন নতুন বোলারের ভালো করা নিয়ে সন্দেহ থাকা স্বাভাবিক। তবে নতুন এই বোলার তার সামর্থ্য দক্ষতা দিয়ে সব সন্দেহ ও শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে। শুরুতেই ভারতের অধিনায়ক ওপেনিংয়ে নামা রোহিত শর্মা এবং টপঅর্ডারের ব্যাটার তিলককে আউট করেছে সে। তানজিম তার প্রতিভা ও সামর্থ্য দুটোই প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। দেশের তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে যে প্রতিভা রয়েছে এবং তারা সুযোগ পেলে যে তা প্রয়োগ করতে পারে, তা এ ম্যাচে দেখা গেছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেট সামর্থ্য নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। বিশ্বের সব ক্রিকেট দলকে ইতোমধ্যে হারিয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে ঘরের মাঠে বিশ্বের পরাশক্তি দলগুলোর বিরুদ্ধে সিরিজ জয় এমনকি হোয়াইট ওয়াশ করে জেতার রেকর্ড রয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে ক্রিকেট বোর্ডের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে। একজন ভালো ক্রিকেটার গড়ে তোলার জন্য যে ধরনের কোচ, ট্রেইনার, ফিজিও এবং সুযোগ-সুবিধা দরকার তার ব্যবস্থা করেছে। এর ফলে ধীরে ধীরে ক্রিকেটের যেমন উন্নতি হয়েছে, তেমনি জয়ের অভ্যাসও গড়ে উঠেছে। মাঝে মাঝে ছন্দপতন ঘটলেও ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য দেখিয়েছে। এখন আধুনিক ক্রিকেটে অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেক নিয়ম-কানুন যুক্ত হচ্ছে। ক্রিকেট বোর্ডের উচিত ক্রিকেটের বিবর্তনের ধারা মাথায় রেখে ক্রিকেটারদের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা। এক্ষেত্রে ব্যত্যয় ঘটলে পিছিয়ে যাওয়ার শঙ্কা থেকে যাবে। আগামী মাসে বিশ্বকাপ শুরু হতে যাচ্ছে। সময় খুব বেশি নেই। বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ক্রিকেটারদের মধ্যে সমন্বয় এবং তাদের সমস্যার সমাধান ও যথাযথ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করে একটি সুষম দল গঠনে মনোযোগ দিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জকিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশুর মৃত্যু
সালথা উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক নাসির উদ্দিন বহিষ্কার
হোক না সবার সুপারনিউমেরারি পদোন্নতি, কর্মক্ষেত্রে আসুক গতি
জামিনে এসে হত্যা মামলার সাক্ষীসহ ৫ জনকে কুপিয়েছে প্রধান আসামি
সীমান্তে ভারত উত্তেজনা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে: ইসলামী আন্দোলন
কলম্বিয়ায় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৬০
প্রতিযোগিতায় যারা টিকে থাকবে তারাই গ্রহণযোগ্য সাংবাদিক হবে
কাঁটাতার পেরিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে কুড়িগ্রামে ভারতীয় গৃহবধূ
জাতির সংকট উত্তরণে সর্বদা মানুষের আস্থা ও ভরসাস্থল জিয়া পরিবার : মীর হেলাল
স্বৈরাচার মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশে বিএনপি সবকিছু নতুনভাবে শুরু করতে চায়: আমিনুল হক
গুলি করা পুলিশের শাস্তি নয়, চিকিৎসকের গ্রেফতার ফ্যাসিবাদের উদাহরণ - ডা. রফিকুল
ফেনীতে সিক্সার্স ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে ছাগলনাইয়া উপজেলা দল চ্যাম্পিয়ন
দৌলতপুর সরকারি প্রমোদা সুন্দরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
গোপালগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করণে জেলা প্রশাসকের ব্যতিক্রম আয়োজন
সৈয়দপুরে শহিদ জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালন
বিশ্বনাথের চাউলধনী হাওরে সীমানা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত
স্বভাবী চোরের শাস্তি ইসলামেই নির্ধারিত - পীর সাহেব চরমোনাই
‘সীমান্তে গন্ডগোল শুরু হয়েছে, জীবন বিপন্ন হলেও দেশের সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখবো’
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী: সরকারের নতুন পদক্ষেপে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ সম্ভাবনাময়
আলজেরিয়ায় কুরআন প্রতিযোগিতায় হাফেজ তাওহিদুলের দেশত্যাগ