নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১২ পিএম | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন অসাধ্য হয়ে পড়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও মানুষের কষ্টের কথা স্বীকার করা হয়েছে। তবে নিত্যপণ্যের মূল্য কোনোভাবেই কমছে না। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো পদক্ষেপও দেখা যায় না। সরকার বিভিন্ন সময়ে পণ্যমূল্য নির্ধারণ করে দিলেও তা ব্যবসায়ীরা মানেনি। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেলেও পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তা কমতে শুরু করে। এতদিন আভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্যমূল্যের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দেয়া হলেও এখন চাল ও চিনি ছাড়া প্রায় সব খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে। এর প্রভাব দেশের বাজারে পড়েনি। বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে। একেক সময় একেক পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে পড়ে। কিছুদিন আগে কাঁচামরিচ নিয়ে লঙ্কাকা- ঘটে গেছে। দাম কেজি প্রতি হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। পেঁয়াজের দামবৃদ্ধি নিয়েও চলে কারসাজি। সর্বশেষ ডিম ও আলুর দাম মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যায়। নিত্যপণ্যের বাজার সরকার কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। গত বৃহস্পতিবার সরকার ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজের দাম বেঁধে দেয়। ডিম প্রতি পিস ১২ টাকা, আলু ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা এবং পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। সরকারের এই দাম নির্ধারণ ব্যবসায়ীরা মানছে না। তারা বেশি দামেই বিক্রি করছে। তাদের যুক্তি সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে, সে দামে তারা কিনতে পারছে না। তাহলে এ দামে তারা কিভাবে বিক্রি করবে?
নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ে বাজারে অরাজকতা চলছে। ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো বাজার নিয়ন্ত্রণ ও দাম নির্ধারণ করছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছে না। তাদের এই খেয়ালখুশিল শিকার হচ্ছে, দরিদ্র, নি¤œ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। তাদের জীবনযাপন দুর্বহ হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রায় প্রতিদিনই লেখালেখি হচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ ও পণ্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নানা কথা বললেও তার কোনো প্রতিফলন বাজারে নেই। বাজারে পণ্যমূল্যবৃদ্ধির হোতা হিসেবে সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হয়। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও তা নেয়া হচ্ছে না। বলা হয়ে থাকে, সিন্ডিকেটের কাছে সরকার অসহায় হয়ে রয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর কথায়ও অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সিন্ডিকেট কি সরকারের চেয়েও শক্তিশালী? বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকা থেকে অন্তত তাই বোঝা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাকে পর্যবেক্ষকরা দায়ী করছেন। সিন্ডিকেটে কারা জড়িত, তা সরকারের অজানা থাকার কথা নয়। তাহলে, কেন সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? এর পেছনের রহস্য কি? দিনের পর দিন সাধারণ মানুষ নিদারুণ কষ্ট নিয়ে জীবনযাপন করছে, অথচ সরকার তার প্রতিকার করতে পারছে না, এটা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। ভোক্তা অধিদফতর বাজারে অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করেও পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। দেখা যাচ্ছে, সরকার যে উদ্যোগ নিচ্ছে, তা ব্যর্থ হচ্ছে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমে যাওয়ায় এখন কোনো অজুহাত থাকতে পারে না। পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়াও কোনো সমাধান নয়। মূল জায়গায় হাত দিতে হবে। বিশ্ববাজারে দাম কমলেও কেন, কি কারণে দেশে পণ্যের দাম কমছে নাএবং দামবৃদ্ধির পেছনে কারা রয়েছে, তা শনাক্ত করে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের প্রকৃত উন্নয়ন বলতে সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়নকে বোঝায়। বিশেষ করে মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্যপণ্যের মূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকলে, তাকে সরকারের সাফল্য হিসেবে ধরা হয়। দেখা যাচ্ছে, সরকার এ কাজটি করতে পারছে না। একদিকে, মানুষের আয় কমে যাওয়া, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। বাজারে পণ্যমূল্যবৃদ্ধি নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দেয়া হয়। খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারদের, আড়তদাররা উৎপাদনকারী বা আমদানিকারকদের দোষারোপ করে। এই দোষারোপের কারণে নিত্যপণ্যের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য যে সিন্ডিকেট দায়ী, তাকে নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া দাম কমার সম্ভাবনা নেই। এটা স্পষ্ট, অতি মুনাফালোভী সিন্ডিকেট সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে এবং কষ্টে ফেলে তার উদ্দেশ্য হাসিল করছে। এতে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষেরও ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বদনাম হচ্ছে। সরকারকে এ বিষয়টি আমলে নিয়ে পণ্যমূল্যবৃদ্ধির আসল কারণ নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং স্বচ্ছন্দ জীবনযাপনের ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের
স্বৈরাচারের দোসর শাহরিয়ার আলমের স্ত্রী-সন্তানসহ দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা