ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:১৪ পিএম | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিচারহীনতার সংস্কৃতি একটি বহুল আলোচিত বিষয়। দেশের গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মানবাধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা চরমভাবে নিয়ন্ত্রিত হওয়ার ধারাবাহিক ঘটনাক্রম এখন আন্তর্জাতিক নজরদারি ও নিষেধাজ্ঞার বিষয় হয়ে উঠলেও সরকার এবং বিচারবিভাগ সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ছে না। অতএব, এ ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, দেশের মানুষের প্রত্যাশা এবং পশ্চিমা উন্নয়ন অংশীদারদের ক্রমবর্ধমান চাপ মোকাবেলায় বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে অবস্থার পরিবর্তনের বদলে এক ধরণের অস্বীকার করার প্রবণতা এবং বেপরোয়া মনোভাবের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। বেআইনী গুম-খুন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে এলিট ফোর্স র‌্যাবের কতিপয় শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের শর্ত হিসেবে গুম-খুনের ঘটনাগুলোর বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত এবং প্রতিকারের কথা বলা হয়েছিল। সে সব বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়া এবং সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে।গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রশ্নে ইতিপূর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠান, সরকারি বাহিনী ও কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও এই প্রথম বাংলাদেশের বিচার বিভাগকেও ভিসা নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করেছে। খোদ বিচারপতিদের তরফ থেকেই বিষয়টিকে এলার্মিং বলে গণ্য করা হচ্ছে। তবে বিচারপতিদের কেউ কেউ এসব বিষয়ে কোনো তোয়াক্কা না করে নিজেদেরকে শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ বলে দাবি করেন। এ নিয়ে বিরোধীদলের সমর্থক আইনজীবীরা প্রবল প্রতিবাদ বিক্ষোভ করলেও সরকার সমর্থক আইনজীবীদের বিচারকদের সমর্থনে মাঠে নামতে দেখা গেছে।

সামাজিক-রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও শাসনতান্ত্রিক জটিলতার মধ্যে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা এবং সাংবিধানিক আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগের মাধ্যম হিসেবে বিচার বিভাগ হতে পারে অসহায় মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। আইনের শাসনের সেই নিরপেক্ষ ক্ষেত্রটি যদি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক পক্ষের একচেটিয়া প্রভাববলয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়ে, তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের আর কোনো জায়গা থাকে না। বাংলাদেশের এহেন বাস্তবতায় জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা জোরালো ভ’মিকা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর কয়েক দফায় কংগ্রেসম্যানদের চিঠিসহ আরো বেশকিছু ও চাপ সৃষ্টির তৎপরতা দেখা গেছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে পশ্চিমাদের শ্যেনদৃষ্টি এবার প্রধানত বাংলাদেশের বিচার বিভাগের দিকে নিবদ্ধ হয়েছে। শান্তিতে নোবেল বিজয়ী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নামে শতাধিক মামলা এবং বিচারের নামে হয়রানি বন্ধে বিশ্বের শতাধিক নোবেল লরিয়েটসহ ১৭৫জন বিশ্বনেতার চিঠির পরও ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে নতুন মামলা হয়েছে এবং হচ্ছে। এ কথা ঠিক যে, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। তার আগে আমাদের সরকার ও বিচার বিভাগকে প্রভাবমুক্ত ও স্বাধীন সত্ত্বার প্রমান দিতে হবে। যখন সরকারি দলের রাঘব বোয়ালরা হাজার হাজার কোটি টাকা তছরুপ ও পাচার করেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন, যখন বিরোধিদলের লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে হাজার হাজার ভুয়া মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে, নি¤œ আদালত থেকে উচ্চ আদালতের এক শ্রেণীর বিচারক ক্ষমতাসীনদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রায় দিচ্ছেন, উচ্চ আদালতের বিচারকরা প্রকাশ্যে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন, তখন তাদের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং ‘আইন সবার জন্য সমান’ এ দাবিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

বর্তমান অবস্থায় ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিচার স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। সরকার সেই দাবি প্রত্যাক্ষ্যান করেছে। দেশের তথাকথিত বিশিষ্ট্য নাগরিক দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতিও দিয়েছেন। এরপর আদালতের রায়ে মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের প্রধান আদিলুর রহমানকে কারাদন্ড দেয়ার ঘটনায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগ আন্তর্জাতিক নজরদারির বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রযুক্তি ও অর্থনীতির এই বিশ্বায়নের যুগে কোনো দেশই স্বয়ংসম্পুর্ণ নয়। পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রিত মুক্তবাজার অর্থনীতি ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দাবিদার দেশগুলো বিশেষভাবে পশ্চিমা প্রভাব বলয়ের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য এবং উন্নয়ন অংশীদারিত্ব একচেটিয়াভাবেই পশ্চিমা ব্যবস্থার সাথে সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মত অপরিহার্য ইস্যুতে তাদের অবস্থানকে অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই। দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্নে পশ্চিমা অবস্থানকে সমর্থন করছে। রাজনৈতিক বিভাজন-বিশৃঙ্খলা রাজনৈতিক ঘটনাক্রমের মধ্য দিয়ে নিস্পত্তি হলেও ক্ষমতাসীনদের পক্ষে বিচারকদের অবস্থান আইনের শাসনের প্রশ্নে বড় ধরণের ব্যত্যয়। এ ক্ষেত্রে দেশের মানুষের এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জনের জন্য দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ন্যায়বিচার, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা এবং আইনের শাসনের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে হাজার হাজার পুরনো মামলা সচল করে রকেট গতিতে এগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এসব তৎপরতা অব্যাহত রেখে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিকÑঅর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা সম্ভব নয়।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা: পুলিশ সদরদপ্তর

আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা: পুলিশ সদরদপ্তর

আখাউড়ায় ১১৫০ কেজি ভারতীয় কফিসহ গ্রেপ্তার ৩

আখাউড়ায় ১১৫০ কেজি ভারতীয় কফিসহ গ্রেপ্তার ৩

কোটালীপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করেছে সন্ত্রাসীরা

কোটালীপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করেছে সন্ত্রাসীরা

সাকিব-লিটনের ব্যাটে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা

সাকিব-লিটনের ব্যাটে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা

মণিপুর সংঘাত ইস্যুতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত সরকার

মণিপুর সংঘাত ইস্যুতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত সরকার

বাংলাদেশ বেতারে উর্দু সার্ভিস চালু করতে পর্যালোচনা সভা

বাংলাদেশ বেতারে উর্দু সার্ভিস চালু করতে পর্যালোচনা সভা

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়

গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়

সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫

ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫

লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি

লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি

দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ

দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ

সিলেটে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার, নারী গ্রেফতার

সিলেটে ১৫০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার, নারী গ্রেফতার

আশ্বিনকেও ফেরালেন তাসকিন

আশ্বিনকেও ফেরালেন তাসকিন

কক্সবাজার পাহাড়তলীতে অনৈতিক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ, বাধা দেয়ায় বাসার মালিকের উপর হামলা

কক্সবাজার পাহাড়তলীতে অনৈতিক কাজে অতিষ্ঠ মানুষ, বাধা দেয়ায় বাসার মালিকের উপর হামলা

অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ

অংশীদারত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির খসড়া পাঠিয়েছে ইইউ

তাসকিনের জোড়া আঘাত, লিটনের রেকর্ড

তাসকিনের জোড়া আঘাত, লিটনের রেকর্ড

ডিবির আলোচিত ডিসি মশিউর গ্রেপ্তার

ডিবির আলোচিত ডিসি মশিউর গ্রেপ্তার