শিক্ষিত ও মেধাবী তরুণরা কেন দেশ ছেড়ে যাচ্ছে
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪১ পিএম | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৭ এএম
দেশের শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে দেশ ছেড়ে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকের মধ্যে এমন প্রবণতা দেশ ছেড়ে যেতে পারলে বাঁচি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার উচ্চশিক্ষার সুযোগ বাড়াতে দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ালেও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত না করা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক সুরক্ষার অভাব, কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ ইত্যাদি কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশ ছাড়ার প্রবণতা বাড়ছে। এসব শিক্ষার্থী বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য গেলেও পরবর্তী সময়ে সেখানেই স্থায়ী হচ্ছে। ফলে দেশের মানবস¤পদ উন্নয়নে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। প্রতিবছর উচ্চশিক্ষার জন্য কতশিক্ষার্থী দেশ ছাড়ে, এমন পরিসংখ্যান প্রকাশ করে ইউনেস্কো। ২০২২ সালে প্রকাশিত ইউনেস্কোর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অন্তত ৪৯ হাজার ১৫১ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ৫৮টি দেশে পড়াশোনার জন্য গিয়েছে। ২০২১ সালে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৪৪ হাজার ২৪৪ জন, ২০২০ সালে ৫০ হাজার ৭৮, ২০১৯ সালে ৫৭ হাজার ৯২০ এবং ২০১৮ সালে ৬২ হাজার ১৯১ জন শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। এদের সিংহভাগই বিদেশে থেকে যায়। শিক্ষিত তরুণদের দেশ ছাড়ার প্রবণতা অনেক আগে থেকে থাকলেও বিগত এক দশকে তা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে এক দশক আগে দৈনিক ইনকিলাবের একটি জরিপের কথা উল্লেখ করা যায়। ২০১৪ সালে দৈনিক ইনকিলাব শিক্ষিত তরুণদের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে তিনটি জরিপ প্রকাশ করেছিল। ২০১৪ সালের ২১ মে ‘অনিশ্চয়তায় দেশবিমুখ এক-তৃতীয়াংশ তরুণ’ শিরোনামে ২৩ মে ‘রাজনীতি বিমুখ তরুণ সমাজ’ এবং ১ জুন ‘দেশ ও অর্থনীতি নিয়ে হাতাশা’ শিরোনামে জরিপ প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সর্বত্র অনিশ্চয়তা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দুর্নীতি, অতিমাত্রায় অপরাধ প্রবণতা, অপর্যাপ্ত কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধার অভাব, নিরাপত্তার ঘাটতিসহ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভাবনা থেকে তরুণরা দেশ ছাড়তে চায়। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, উৎপাদনমুখী ব্যবস্থার অভাব এবং মেধাবীদের যথাযথ মূল্যায়ন না করায় তারা দেশবিমুখ হচ্ছে। এক দশক আগে করা ইনকিলাবের এ জরিপের কোনো হেরফের হয়েছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে না। বরং রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা, দুঃশাসন, মানবাধিকার লংঘন, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের অভাবসহ সার্বিক অনিরাপত্তা আরও বেড়েছে।
দুই.
দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির অগ্রদূত তরুণ সমাজ। তাদের হাতেই দেশের ভবিষ্যত। আমাদের দেশে বিপুল সংখ্যক তরুণ রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশেই এত তরুণ নেই। ইউরোপের দেশগুলোতে বৃদ্ধের সংখ্যা বেড়ে গেছে। ফলে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ এখন তৃতীয় বিশ্বের মেধাবী তরুণদের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের দেশের সম্পদে পরিণত করছে। এমনকি রাজনীতিতেও তাদের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। তাদেরকেই আবার আমাদের দেশে তাদের প্রতিনিধি করে পাঠাচ্ছে। আফসোস হয় এই ভেবে, যখন তারা বাংলাদেশের জন্য নয়, তাদের প্রতিনিধিত্বকারী দেশের স্বার্থ রক্ষার জন্য এবং বাংলাদেশের রাজনীতি কি হবে, কেমন হওয়া উচিত এই পরামর্শ দিতে আসে। অথচ আমাদের দেশের রাজনীতি, অর্থনৈতিক উন্নতি ও অগ্রগতিতে তাদেরই অবদান রাখার কথা। যে তরুণরা আজ রাজনীতির প্রতি বিমুখ ও বিরক্ত হয়ে দেশ ছেড়ে যাচ্ছে বা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, দেখা যাবে পাঁচ বছর পর হয়তো এই তাদেরই কেউ কেউ অন্য দেশের প্রতিনিধি হয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট মিটাতে দূতিয়ালির ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে। তখন তাদের দেখে ভাল লাগা ও গর্ব করার এক মিশ্র অনুভূতি প্রকাশ করা ছাড়া কিছু করার থাকবে না। আমরা যতই নিজের দেশের সন্তান বলে গর্ববোধ করি না কেন, তারা সেই দেশের স্বার্থের বাইরে একচুলও যাবে না। ট্র্যাজেডি হচ্ছে, দেশের নেতিবাচক রাজনীতির শিকার হয়ে মেধাবী তরুণদের অনেকেই উন্নত জীবনের সন্ধানে দেশ ছাড়ছে। যারা ছাড়তে চায় না বা পারে না, তাদেরকে প্রতিনিয়ত হতাশা ও জানমালের অনিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে বসবাস করতে হয়। যে তরুণ রাজনীতি বিশেষ করে বিরোধীদলের রাজনীতির সাথে জড়িত তাকে হামলা-মামলা এমনকি গুম-খুনের শিকার হতে হয়। বলাবাহুল্য, এই পরিস্থিতির জন্য তরুণ সমাজ স্পষ্টভাবেই দায়ী করছে দেশের প্রচলিত রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের। ইনকিলাবের জরিপে দেখানো হয়েছিল, শতকরা ৬০.৫ ভাগ তরুণ মনে করে, দেশের বর্তমান অবস্থা ও সব ব্যর্থতার জন্য রাজনীতি ও রাজনীতিবিদরাই দায়ী। তারা মনে করে, রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের ছত্রছায়াতেই সন্ত্রাস, হত্যা, গুম-খুন ইত্যাদি হয়ে থাকে। রাজনীতিবিদদের মধ্যেই দুর্নীতিবাজের সংখ্যা বেশি। অপরাধ করার পর সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে রাজনীতিবিদরাই কাজ করে। ৪৩ শতাংশ মনে করে, বর্তমান রাজনীতি দুর্নীতিগ্রস্ত, সঙ্কটময় ও অস্থিতিশীল। এটি আর রাজনীতিকদের কাছে নেই। চলে গেছে ব্যবসায়ী, স্বার্থেন্বেষী ও বিত্তবানদের হাতে। রাজনীতিতে পরস্পরের প্রতি কোনো আন্তরিকতা, সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ নেই। অর্থাৎ যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে সে দল স্বার্থবাদীতার রাজনীতি এবং তাদের অনেক নেতা-কর্মী ‘জোর যার মুল্লুক তার’ যুগের সুচনা করে। দেশের বর্তমান রাজনীতি ও রাজনীতিকদের আচরণ ও কথাবার্তার ধরণ কি, তা বিভিন্ন টেলিভিশন ও পত্র-পত্রিকার খবর থেকে জনসাধারণ দেখে ও বোঝে। জনসাধারণের এই দেখা ও বোঝার বিষয়টি বর্তমান রাজনীতিবিদরা আমলে যে নিচ্ছে না, তা তাদের আচরণ থেকেই বোঝা যায়। দুঃখের বিষয়, কিছু দলকানা বুদ্ধিজীবী তাদের বোধ-বিবেচনা দলীয় রাজনীতির মোড়কে আবদ্ধ রেখে রাজনীতিবিদদের এই অনাকাক্সিক্ষত আচরণকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা দিয়ে ডিফেন্ড করতে দেখা যায়। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে, তবে রাজনীতির এই নেতিবাচক ধারার পরিবর্তন কোনদিনই হবে না। শিক্ষিত তরুণ সমাজকে রাজনীতিতে যুক্ত করা এবং তাদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার পলায়নপর মনোবৃত্তি থেকেও ফেরানো যাবে না।
তিন.
বলার অপেক্ষা রাখে না, শিক্ষিত তরুণদের অনেকে মনে করে, দেশের বেশিরভাগ রাজনীতিবিদ স্বার্থপর। তারা কেবল ব্যক্তি ও দলের স্বার্থে কাজ করে। দেশ ও জনগণের স্বার্থে কেউ রাজনীতি করে না। তারা প্রতিহিংসার রাজনীতি করে। অনেকে মনে করে, ‘মাফিয়াতন্ত্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে রাজনীতি। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় ঘটে চলেছে সব ধরনের অপরাধ। খুন-খারাবি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, টেন্ডারবাজি থেকে শুরু করে সংঘাত-সংঘর্ষ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে রাজনৈতিক নেতারা। আধিপত্য সৃষ্টি এবং সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটাতে একেক স্থানে একেকজন নেতা অপরাধের নেপথ্য নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠছে। খুনি, দুর্বৃত্ত, সন্ত্রাসীরা অপরাধ করে রাজনৈতিক ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে বহাল তবিয়তে থাকে। রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট এসব পেশাদার অপরাধীর কাছে প্রশাসনও অনেক সময় অসহায় হয়ে পড়ে। দেশে যত ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস হয়, তার নেপথ্যে রাজনীতি ও রাজনীতিকদের কোন না কোন স্বার্থ এবং সংশ্লিষ্টতা থাকে। প্রতিকারহীন এ পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের হতাশ ও অসহায় হওয়া ছাড়া আর কি উপায় থাকতে পারে! অথচ শিক্ষিত তরুণ সমাজ থেকে শুরু করে একজন অতি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, একজন রাজনীতিবিদ হবে আদর্শবান এবং কখনই নিজস্বার্থে বা দলের হয়ে কাজ করবে না। তার কথা ও কাজে মিল থাকবে। দেশ ও জনগণের কল্যাণে আত্মনিবেদিত হবে। হবে, জনসাধারণের কাছে সম্মানিত ও নির্ভরশীল ব্যক্তি। দেশের যে খাতেই সম্ভাবনা রয়েছে, নিবেদিত প্রাণ হয়ে তা কাজে লাগিয়ে দেশকে এগিয়ে নেবে। বলাবাহুল্য, বর্তমানে যে রাজনৈতিক ধারা, তাতে সাধারণ মানুষের এ চাওয়া পূরণ হবার নয়। রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার জন্য, তাদের সামনে কোন স্বপ্নদ্রষ্টা নেই। অনুপ্রাণিত ও অনুরণিত হওয়ার মতো রাজনীতি ও রাজনীতিবিদ নেই বললেই চলে। শত ত্যাগ-তিতিক্ষা ও নির্যাতন সয়ে জনগণের সামনে হাজির হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন মেন্ডেলা বলেছিলেন, ‘আই স্ট্যান্ড হিয়ার বিফোর ইউ নট অ্যাজ আ প্রফেট, বাট অ্যাজ আ হাম্বল সার্ভেন্ট অফ ইউ, দ্য পিপল। ইউর টায়ারলেস অ্যান্ড হিরোয়িক সেক্রিফাইসেস হ্যাভ মেড ইট পসিবল ফর মি টু বি হিয়ার টুডে। আই দেয়ারফোর, প্লেস দ্য রিমেইনিং ইয়ারস অফ মাই লাইফ ইন ইউর হ্যান্ডস।’ এমন রাজনীতিক আমাদের দেশে কল্পনাও করা যায় না। নেতার জন্য সাধারণ মানুষের সংগ্রাম করা দূরে থাক, উল্টো নেতাদের দ্বারা নিগৃহীত ও প্রাণ সংহারের আতংকে তাদের দিন কাটাতে হয়। এমনকি মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মতো জাতীয় নেতাদের আদর্শ ও দর্শন নিয়ে যেসব দল গড়ে উঠেছে, সেগুলোর মধ্যেও এখন আর তাদের আদর্শ ও দর্শন ধারণ এবং চর্চা করার প্রবণতা নেই। ‘আমি এবং আমরা’র মধ্যে রাজনীতিকে সীমাবদ্ধ করে যা খুশি তাই করার প্রবণতা বিদ্যমান। এই ধারার রাজনীতি এ প্রজন্মের শিক্ষিত ও সচেতন তরুণদের কেন আকর্ষণ করবে? ফিলিপিনের সাবেক প্রেসিডেন্ট জোসেফ এস্ট্রাদা ১৯৯৮ সালে যখন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন, তখন তিনি একটি কথা জনসাধারণের সামনে বার বার বলেছিলেন, ‘আই উইল নট ফেইল ইউ। আই উইল ডাই ওয়ার্কিং টু ব্রিং ব্যাক দ্য গ্লোরি অ্যান্ড প্রাইড টু ফিলিপিনস।’ তার এই কথায় জনসাধারণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করে তাকে নির্বাচিত করেছিল। তবে ৩ বছরের মাথায় ২০০১ সালে সেই জনসাধারণই তার দুর্নীতি, স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ এবং নারী ঘটিত কেলেঙ্কারীর কারণে গণআন্দোলনের মাধ্যমে বিদায় করে দেয়। আদালতে ছয় বছর বিচার কার্যক্রম চলার পর তার ৩০ বছরের কারাদ- হয়। পরবর্তীতে ফিলিপিনের প্রেসিডেন্ট এস্ট্রাদারই এক সময়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট গ্লোরিয়া আরোয়া তাকে ক্ষমা করে মুক্তি দেন। ২০১৩ মালে এস্ট্রাদা একই শ্লোগান দিয়ে রাজধানী ম্যানিলার গৌরব ও গর্ব ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। ৭৬ বছরের এস্ট্রাদা তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং ম্যানিলাবাসীর সেবা নিশ্চিত করার জন্য নিজেই রাস্তায় নেমে পড়েন। প্রতিদিন ভোরে রাস্তায় বের হয়ে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যানজট নিরসনে সুশৃঙ্খলভাবে গাড়ি চলাচলের জন্য ট্র্যাফিক পুলিশকে সহায়তা করেন। এক সময় যে এস্ট্রাদা দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তা এড়িয়ে নিজেকে শুধরে জনতার কাতারে শামিল হয়েছিলেন। ম্যান্ডেলাকে আদর্শ মেনে জনসেবা করেছেন। ঘটনাটি এখানে উল্লেখ করা হয়েছে এজন্য যে, রাজনীতিতে ভুল-ভ্রান্তি হতেই পারে। তবে সেই ভুল শুধরে এবং শিক্ষা নিয়ে আবার জনগণের সেবায়ও আত্মনিবেদন করা যায়।
চার.
আমাদের দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিই এমন যে, ভুল স্বীকার দূরের কথা, রাজনীতিকরা বিশেষ করে ক্ষমতায় যারা থাকে তারা যেন সকল ভুলের ঊর্ধ্বে। তারা যা খুশি তা করতে পারে। এর ফলে যা হচ্ছে, রাজনীতি জনসেবার পরিবর্তে আত্মসেবায় পরিণত হয়েছে। নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে। এ ধরনের রাজনীতির প্রতি মেধাবী তরুণদের আগ্রহ থাকবে কেন? শুধু তরুণ মেধাবী শ্রেণীই নয়, অতি সাধারণ মানুষও এ ধরনের রাজনীতির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তারা ভাল করেই জানে, দেশের রাজনীতি স্বার্থবাদিতার মধ্য দিয়ে চলছে। এখানে ক্ষমতায় থাকার জন্য শক্তি প্রয়োগ করা হয়, জনগণের মতামতের তোয়াক্কা করা হয় না। জনসাধারণের ভাল-মন্দ বা মতামতের উপর নির্ভর করছে না। বরং তাদের ভাল-মন্দ ও মতামত জনসাধারণের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। গণতন্ত্র নয়, দলতন্ত্র, গোষ্ঠীতন্ত্র প্রাধান্য পাচ্ছে। যে রাজনীতিতে জনসাধারণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটে না, সে রাজনীতি দেশকে এগিয়ে নিতে পারে না। রাজনীতিতে ‘শেষ বলে কথা নেই’ এ ধরনের ধোঁকাবাজি, নীতিহীন ও স্বার্থবাদীতার কথা যারা বলে, মূলত তারাই সুস্থ্য রাজনীতি ধ্বংস করে দিচ্ছে। তরুণ মেধাবী শ্রেণী তাদের এই কূটকথা বোঝে বলেই, তারা রাজনীতি বিমুখ এবং অনাগ্রহী হয়ে পড়ছে। এটা কোনভাবেই দেশের জন্য কল্যাণকর হতে পারে না। দেশের মেধাবীরা দেশ ছেড়ে যাবে, দেশের প্রতি অনীহা প্রকাশ করবে, উন্নত জীবনের খোঁজে বিদেশ চলে যাবে, এ প্রবণতা এখন বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে দেশ মেধাশূন্যতার কবলে পড়ছে। যে মেধাবী শ্রেণী দেশের নেতৃত্ব এবং উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে, তারা বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে। একটি দেশের জন্য এটি অত্যন্ত হতাশার এবং মেধার অভাবে অন্তঃসারশূন্য হয়ে যাওয়ার শামিল। এ পরিস্থিতির অবসান হওয়া জরুরি। শিক্ষিত তরুণদের নার্ভ ক্ষমতাসীন এবং বিরোধীদলগুলোর উপলব্ধি করা অপরিহার্য। দেশের ভবিষ্যত যাদের উপর নির্ভরশীল এবং যারা সত্যিকার অর্থে দেশকে এগিয়ে নেয়ার সক্ষমতা রাখে, সেই শিক্ষিত ও মেধাবী তরুণদের দেশের সম্পদ ভেবে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। তা নাহলে, দেশে সুস্থ্য রাজনীতি, সুশাসন, সমাজনীতি এবং গণতন্ত্র যেমন ভিত্তি লাভ করবে না, তেমনি টেকসই উন্নয়নও হবে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন
গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু
শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি