সরকারি আইভি স্যালাইন প্ল্যান্ট বন্ধ কেন?
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪১ পিএম | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৭ এএম
আগস্ট মাস থেকে দেশে ডেঙ্গুজ্বর মহামারি আকার ধারণ করতে শুরু করেছিল। সে সময় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণসহ ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও চিকিৎসা সামগ্রির চাহিদা পুরণে কার্যকর উদ্যোগের কথা বলা হলেও তা আদতে কোনো কাজে আসেনি। প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যাও। গত বুধবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিন হাজারের বেশি মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং ২৪ ঘন্টায় আরো ২১জন রোগী মারা গেছে। চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পৌনে ২ লাখ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যার প্রায় অর্ধেক ঢাকায়। ঢাকার হাসপাতালগুলোতে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সুযোগ খুব সীমিত হয়ে পড়েছে। তবে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসেবের অন্তত কয়েকগুণ বেশি বলেই ধারণা করা হয়। হাসপাতালে অপ্রতুল চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং নানাবিধ সমস্যার কারণেই অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বাসায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছে। জটিল ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন একটি অপরিহার্য ব্যবস্থা। হাসপাতালে ভর্তি হাজার হাজার ডেঙ্গু রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় স্যালাইন এখন বাজারে নেই। এ সুযোগে দেশীয় উৎপাদকরা উৎপাদন বৃদ্ধির বদলে বাজার মূল্যের কয়েকগুণ দাম বাড়িয়ে সিন্ডিকেটেড মুনাফাবাজি করছে।
সম্প্রতি ঢাকা এবং নারায়ণগঞ্জে ভোক্তা অধিকারের অভিযানে জানা যায়, ৮৭ টাকা দামের ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন ৩০০-৪০০টাকায় বিক্রি করছে একশ্রেণীর ওষুধের দোকানদার। অন্য এক রিপোর্টে জানা যায়, দেশীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে আইভি স্যালাইন নির্মাতা কোম্পানিগুলো ঢাকার চাহিদার ৫০ ভাগ এবং সারাদেশের চাহিদার ৩০ ভাগ পুরণ করতে পারছে। ধীরে ধীরে বেড়ে যাওয়া ডেঙ্গু মহামারির সময়ে এসব কোম্পানির উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো উদ্যোগ কিংবা সরকারি নির্দেশনা দেখা যায়নি। কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির সময় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রয়াস ও সুদক্ষ নির্দেশনায় আমাদের সরকার যথেষ্ট সর্তকতা ও সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছিল। ডেঙ্গু মোকাবেলায় স্যালাইনের ঘাটতির মত বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের যথেষ্ট শৈথিল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। জুলাই মাস থেকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়তে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে আইভি স্যালাইনের সম্ভাব্য ঘাটতি ও চাহিদা পুরণে কার্যকর উদ্যোগের অভাব স্পষ্টভাবে ধরা পড়ছে। একদিকে বেসরকারি ওষুধ কোম্পানিগুলোর উৎপাদন মনিটরিং ও ঘাটতি পুরণে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা নেই, অন্যদিকে তিন বছর ধরে বন্ধ থাকা দেশের একমাত্র সরকারি স্যালাইন প্লান্টটি চালুর উদ্যোগও পরিলক্ষিত হয়নি। এহেন বাস্তবতায় সরকার ভারত থেকে ২০ লাখ ব্যাগ স্যালাইন আমদানি করে জরুরি চাহিদা পুরণের উদ্যোগ নিয়েছে।
গত চারদশকে বাংলাদেশ ওষুধশিল্পে অভাবনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে। দেশের চাহিদার শতকরা ৯৫ভাগ ওষুধ দেশেই প্রস্তুত করার পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বসহ বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে ওষুধ রফতানি করছে আমাদের ওষুধ কোম্পানিগুলো। যে দেশ বছরে বিলিয়ন ডলারের ওষুধ রফতানি করছে, সে দেশের জরুরি প্রয়োজনে বড় বড় ওষুধ কোম্পানি উৎপাদন বাড়িয়ে আইভি স্যালাইনের চাহিদা পুরণ করতে পারবে না, এটা কেউ বিশ্বাস করেনা। দেশে প্রতিটি পণ্যের পেছনে মুনাফাবাজ সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। বিনা কারণে আলু, পেঁয়াজ কিংবা কাঁচামরিচের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে জনদুর্ভোগ লাঘব করতে ভারত থেকে পণ্য আমদানির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে দেখা যায়। দেশীয় মজুতদার সিন্ডিকেটেড মুনাফাবাজি ঠেকানোর উদ্যোগ গ্রহণ না করে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে ভারত থেকে পণ্য আমদানির সহজ পন্থাকেই বেছে নেয়া হচ্ছে। অথচ বন্ধ থাকা সরকারি স্যালাইন প্লান্টে আইভি স্যালাইন উৎপাদন শুরুর পাশাপাশি বেসরকারি ওষুধ কোম্পানিগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যকর নির্দেশনা ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এ সংকট মোকাবেলা অসম্ভব ছিল না। গতকাল ডেইলি নিউএজ পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথা বলে সরকারি আইপিএইচ স্যালাইন প্লান্টটি বন্ধ করে দেয়ার পর ৩ বছরেও চালু না হওয়ার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনীহা ও শৈথিল্যকেই দায়ী করছেন পর্যবেক্ষকরা। তাদের মতে, সংস্কারের জন্য একমাসের বেশী সময় লাগার কথা নয়। বেসরকারি ওষুধ কোম্পানির স্বার্থেই সংস্কারের অজুহাতে সরকারি স্যালাইন প্লান্ট বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন দেশের ওষুধ সিন্ডিকেট ডেঙ্গু মহামারির সময় স্যালাইনের সংকট দেখিয়ে তিন-চার গুণ বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি করছে। সরকারি স্যালাইন প্ল্যান্ট বন্ধ রেখে জরুরি সময়ে আমদানি নির্ভর করে তোলার নেপথ্য কুশীলবদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। ডেঙ্গু মহামারি মোকাবেলায় হাসপাতালে উন্নততর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করাসহ সারাদেশে আইভি স্যালাইনের সরবরাহ সুলভ ও সহজ করার জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। জরুরি ওষুধের ঘাটতি পুরণে আমদানির বিকল্প না থাকলেও নিজেদের চাহিদা পুরণের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আমদানি নির্ভরতা গ্রহণযোগ্য নয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি
উত্তর প্রদেশে নিহত ৩ খলিস্তানি নেতা
ভারতে বাল্যবিবাহবিরোধী অভিযানে আটক ৫০০০
মুজিবল্যান্ড বানিয়ে হিন্দুস্তানে থাকুক আ.লীগ : রাশেদ প্রধান
গ্রেফতার ভয়ে পোল্যান্ড সফর বাতিল করলেন নেতানিয়াহু
পানামা খাল দখলের হুমকিকে ভর্ৎসনা পানামা প্রেসিডেন্টের