ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

মার্কিন ভিসানীতি দেশকে ভোগাবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৫ পিএম | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানান, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরাও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা বা এ ধরনের বিষয়ে জড়িত থাকা অন্যদেরও ভবিষ্যতে এই নীতির অধীনে মার্কিন ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হতে পারে। উল্লেখ্য, গত ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে। এ নিয়ে তখন বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এ ভিসানীতি আলাদাভাবে বাংলাদেশের জন্য করে। যদিও পরবর্তীতে কম্বোডিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে এ নীতি প্রয়োগ করা হয়েছে। এদিকে, গত শুক্রবার ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু বলেছেন, এই নীতির আওতায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা যাদের দেয়া হবে, তাদের নাম প্রকাশ করা হবে না। কাউকে ভিসা না দেয়াসহ যেকোনো ভিসা রেকর্ড মার্কিন আইন অনুযায়ী গোপনীয় তথ্য। এটুকু বলতে পারি, এই নীতি ঘোষণা করার পর থেকে সার্বিক ঘটনা খুব কাছ থেকে আমরা দেখেছি। সাক্ষ্য-প্রমাণ ভালোভাবে পর্যালোচনা করার পর আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি। তিনি আরো বলেছেন, এই নীতির উদ্দেশ্য হলো, সহিংসতা কমানো এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে এমন যেকোনো কর্মকা- প্রতিরোধ করার মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের গঠনমূলক অংশীদার হওয়া। ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সংগঠনের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা থেকে বিরত রাখতে সহিংসতা এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ বা মতামত প্রকাশ থেকে বিরত রাখতে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমের ওপর পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহণের মতো কারণে এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হতে পারে।

দেশে বিগত একদশক যাবত অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে। এ নিয়ে দেশে-বিদেশে সরকার সমালোচনার মুখে রয়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণতন্ত্রের সংকোচন, সুশাসনের অভাব এবং বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি অভিযোগে সরকার ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র‌্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরবর্তীতে জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে তাকিদ দিতে থাকে। এ নিয়ে প্রায় বছর জুড়ে বাংলাদেশস্থ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ সরকার, নির্বাচন কমিশন, বিরোধীদল, নাগরিক সমাজ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন শ্রেণীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন এবং এখনও করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঘন ঘন সফর করেন। এর মাঝেই যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণা করে, যা দেশের জন্য অপ্রত্যাশিত ঘটনা। সেই নীতিরই আনুষ্ঠানিক প্রয়োগ গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তির তালিকা খুব একটা বড় নয়। ভিসানীতি নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন নয়। সরকারের পক্ষ থেকে ভিসানীতি কার্যকর করা নিয়ে যাই বলা হোক না কেন, পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এটা বিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ করেছে। এতে বাংলদেশ ভুগবে এবং জনগণও ভুগবে। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোও এ নীতি অনুসরণ করতে পারে। দেশের মানুষ ক্ষতির শিকার হতে পারে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী যতই বলুন না কেন, নির্বাচনের আগে এমন আর কোনো পদক্ষেপ ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসবে না, তবে এই নিষেধাজ্ঞা যে দেশের জন্য অনেক বড় ক্ষতি, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ ক্ষতির প্রভাব কতটা, তা সামাল দেয়া যাবে কিনা, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। বলা বাহুল্য, গ্লোবাল ভিলেজ কিংবা কানেক্টিভিটির এ যুগে কোনো দেশের সাথেই সম্পর্ক খারাপ কিংবা বিরূপ আচরণ নিয়ে চলা যায় না। প্রত্যেকের সাথেই প্রত্যেকের স্বার্থ রক্ষা করে চলতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির সাথে সম্পর্কের টানাপড়েন যে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য কল্যাণকর নয়, তা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই।

র‌্যাবের সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসানীতিতে নিশ্চিতভাবেই দেশের বদনাম হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা কেন আসল, তা সরকারের গভীরভাবে ভাবা এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ ছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার পর পরিস্থিতির প্রশংসনীয় উন্নতি হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে বলা হয়েছে। এটা হয়েছে, সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার কারণে। ভিসানীতি ঘোষণার পর তার উল্টো চিত্র দেখা গেছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপিদের তরফ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাচ্ছেতাই ভাষায় বক্তব্য দেয়া হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরুদ্ধে বিষোদগার না করে কিংবা আবাঞ্চিত কথা না বলে কিভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার ছিল। কথায় আছে, কাঠের গুঁড়োকে আর বেশি গুঁড়া করো না। তদ্রুপ, পরিস্থিতি যথাযথভাবে অনুধাবন করে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ ছিল। এতে বিপদ কমতো। উস্কানিমূলক কথাবার্তা ও মনোভাব বিপদের আশঙ্কা বরং বাড়িয়েছে। ভিসানীতির সুদূরপ্রসারী ক্ষতি দেখছেন পর্যবেক্ষকরা। এমতাবস্থায়, সরকারের উচিৎ হবে আসন্ন নির্বাচনের পরিবেশ এমনভাবে উন্নত করা যাতে অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত হয়।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

কেরানীগঞ্জে তিন লক্ষ জাল টাকা এবং জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ, গ্রেফতার ২

কেরানীগঞ্জে তিন লক্ষ জাল টাকা এবং জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ, গ্রেফতার ২

পলাতক আওয়ামী খতিবের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল

পলাতক আওয়ামী খতিবের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে বিক্ষুব্ধ জনতার মিছিল

মাগুরায় যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

মাগুরায় যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

বায়তুল মোকাররমে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নামাজ না পড়িয়েই পালিয়ে গেলেন খতিব

বায়তুল মোকাররমে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, নামাজ না পড়িয়েই পালিয়ে গেলেন খতিব

ফলোঅনের শঙ্কায় বাংলাদেশ

ফলোঅনের শঙ্কায় বাংলাদেশ

শিক্ষক ভিন্ন ধর্মালম্বি হলেও তার সাথে ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ ও সম্মান করতে হবে -ছারছীনার পীর ছাহেব

শিক্ষক ভিন্ন ধর্মালম্বি হলেও তার সাথে ভদ্রতা, সৌজন্যবোধ ও সম্মান করতে হবে -ছারছীনার পীর ছাহেব

আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা: পুলিশ সদরদপ্তর

আইন নিজের হাতে তুলে নিলে কঠোর ব্যবস্থা: পুলিশ সদরদপ্তর

আখাউড়ায় ১১৫০ কেজি ভারতীয় কফিসহ গ্রেপ্তার ৩

আখাউড়ায় ১১৫০ কেজি ভারতীয় কফিসহ গ্রেপ্তার ৩

কোটালীপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করেছে সন্ত্রাসীরা

কোটালীপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের উপর সন্ত্রাসী হামলা, ঘরবাড়ি ভাংচুর লুটপাট করেছে সন্ত্রাসীরা

সাকিব-লিটনের ব্যাটে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা

সাকিব-লিটনের ব্যাটে ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা

মণিপুর সংঘাত ইস্যুতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত সরকার

মণিপুর সংঘাত ইস্যুতে নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে ভারত সরকার

বাংলাদেশ বেতারে উর্দু সার্ভিস চালু করতে পর্যালোচনা সভা

বাংলাদেশ বেতারে উর্দু সার্ভিস চালু করতে পর্যালোচনা সভা

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল, দাফন হলো বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে বাংলাদেশ

গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়

গণপিটুনিতে হত্যা: ঢালাওভাবে ছাত্রদের বিজয়কে খাটো করতে আওয়ামী মিডিয়ার আস্ফালন, সমালোচনার ঝড়

সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সাবেক এমপি ইয়াকুবসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান কারাগারে

ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫

ভারতকে ৩৭৬ রানে গুটিয়ে দিল বাংলাদেশ, হাসানের ৫

লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি

লিবিয়া থেকে ফিরলেন আরো ১৫০ অনিয়মিত বাংলাদেশি

দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ

দোয়ারাবাজার সীমান্তে মহিষসহ মাছের চালান জব্ধ