নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে প্রয়োজন নাগরিক শিক্ষা ও সচেতনতা
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:১৪ পিএম | আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম
সড়ক দুর্ঘটনা ও নিরাপত্তা আইন নিয়ে কাজ করা সংস্থা ও সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘রোড সেফটি কোয়ালিশন’ নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন করার দাবি জানিয়েছে। গত শনিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’র (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর আনুমানিক ২৫ হাজার মানুষ মারা যায়। অনেকে আহত ও পঙ্গু হয়ে যায়। কোনোভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তার মতে, নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য উন্নত দেশগুলো সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের (মালিটমডাল ট্রান্সপোর্টেশন, নিরাপদ সড়ক ও নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক ব্যবহারকারী ও সড়ক দুর্ঘটনা পরবর্তী ব্যবস্থাপনা) আলোকে আইন ও নীতিকাঠামো প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুফল পেয়েছে। তাই সেইফ সিস্টেম অ্যাপ্রোচের আলোকে আমাদের দেশেও আইন করা দরকার বলে তিনি মনে করেন। উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১৮ সালে সড়ক পরিবহন আইন ও ২০২২ সালে সড়ক পরিবহন বিধিমালা প্রণীত হয়েছে। এই আইন ও বিধিমালা সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও বড় ধরনের আঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট নয় বলে ইলিয়াস কাঞ্চনের অভিমত। সুতরাং, তার ভাষায়, নতুন আইনের বিকল্প নেই। সড়ক দুর্ঘটনা, দুর্ঘটনায় মৃত্যু ও আহত বা পঙ্গু হয়ে যাওয়া আমাদের দেশে অতি সাধারণ বা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। গত মাসে সারাদেশে ৪৪১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪২৬ জন নিহত ও ৭৯৩ জন আহত হয়েছে। গত জুলাইয়ে এরচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ হতাহত হয়েছে। বলা যায়, প্রতি মাসে, প্রায় প্রতি দিনে মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে কিংবা আহত হচ্ছে। এক খবরে প্রকাশ, প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় বিপুল সংখ্যক মানুষ পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছে। একজন সক্ষম ও কর্মজীবী মানুষের নিহত বা পঙ্গু হয়ে যাওয়া মানে একটি সংসার ধ্বংস হয়ে যাওয়া। এভাবে কত সংসার যে ধ্বংস বা নিরালম্ব হয়ে গেছে তার ইয়ত্তা নেই।
এই মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের শিকার হওয়া নতুন আইন যদি নিয়ন্ত্রণ করতে বা কমাতে পারে, তাহলে যতদ্রুত সম্ভব তা করা যেতে পারে। পর্যবেক্ষক মহলের অবশ্য প্রশ্ন: দুর্ঘটনা, মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব রোধে আইন প্রণয়নই কি যথেষ্ট? যদি তাই হতো তবে সড়ক পরিবহন আইন ও সড়ক পরিবহন বিধিমালা প্রণয়নের পরও সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা এতটুকু কমেনি কেন? কমা তো দূরের কথা বরং এ সংখ্যা দিন কে দিন বাড়ছে। আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই আইন আছে। ভালো আইনও আছে। কিন্তু সেই আইনের সুফল সকল ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রতিফলিত হতে দেখা যায় না। আইন যথাযথভাবে প্রয়োগ না হওয়া এর প্রধান কারণ। আইন সম্পর্কে দেশের মানুষের, বিশেষ করে যাদের জন্য আইন, তাদের সম্যক ধারণা না থাকা অথবা আইনকে শ্রদ্ধা ও মান্য করার মনোবৃত্তির ঘাটতি ইত্যাদি আইনের সুফল না পাওয়ার জন্য কম দায়ী নয়। সড়ক পরিবহন আইন ও সড়ক পরিবহন বিধিমালা আমাদের চালকদের কতজন জানে? পথচারীরাই বা কতজনে জানে? পরিসংখ্যান সাক্ষ্য দিচ্ছে, চালকদের কারণেই অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। তাদের প্রশিক্ষণের অভাব, অদক্ষতা, প্রতিযোগিতা করে যান চালনা, অভারটেক করার প্রবণতা ইত্যাদি এর মূলে। সড়ক দুর্ঘটনায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পথচারী হতাহতের শিকার হয়। এর জন্য চালকই একমাত্র দায়ী নয়, অনেক ক্ষেত্রে পথচারীরাও দায়ী। তাদের বেখেয়াল, অসতর্কতা ও রাস্তাঘাটে চলাচলের জন্য প্রচলিত নিয়মবিধি না জানা কিংবা উপেক্ষা করার ফল তারা মর্মান্তিকভাবে ভোগ করে। হতাহতের সংখ্যা ও দুর্ঘটনা হ্রাসে একই সঙ্গে চালক, পথচারী ও যাত্রীদের প্রয়োজনীয় জানাশোনা, সচেতনতা, ধৈর্য ও সহিষ্ণুতা থাকা অত্যাবশ্যক। ঘটে যাওয়া প্রাণহানিকর সড়ক দুর্ঘটনার একাংশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, চালকের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছিল না, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল না। কারো লাইসেন্স থাকলেও তা ছিল ভুয়া। এজন্য যানবাহনের মালিক, বিআরটিএ এবং ট্রাফিক কর্র্তৃপক্ষ যুগপৎভাবে দায়ী। কম প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও লাইসেন্স বিহীন চালকের হাতে যানবাহনের ভার ছেড়ে দেয়ার দায় মালিকের। ভুয়া লাইসেন্সের জন্য বিআরটিএ তার দায় এড়াতে পারে না। অভিযোগ আছে, টাকা দিলে বিআরটিএ থেকে লাইসেন্স পাওয়া কোনো ব্যাপারই নয়। রাস্তাঘাটে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, যানবাহন ও চালকের কাগজপত্র পরখ করার দায়িত্ব ট্রাফিক কর্তৃপক্ষের। পর্যবেক্ষকদের অনেকের অভিমত, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সুচারু ও যথাযথ হলে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি নিশ্চিতভাবেই কমে আসতো।
নিরাপদ সড়ক সকলেরই কাম্য। এজন্য আরো আইনে কারো আপত্তি থাকতে পারে না। তবে শর্ত হলো, আইনের অনুপুংখ বাস্তবায়ন হতে হবে। এ সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন কার্যকর হচ্ছে না। প্রশাসনিক নির্দেশ, এমন কি আদালতের নিদের্শনাও উপেক্ষিত হচ্ছে। মহাসড়কে থ্রি হুইলার চলা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা কেউ মানেনি। নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার আবার নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে। ফুটপাত মুক্ত করার কথা বলা হয়েছিল, ফুটপাত দিয়ে মটরসাইকেল চালানো মানা করা হয়েছিল। সে কথাও কেউ গ্রাহ্য করেনি। এই যদি বাস্তবতা হয়, তাহলে বস্তা বস্তা আইন করলেও বাস্তবতার কোনো হেরফের হবে না। আইন মান্য করার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। যাতে মানুষ আইন মানে, তার ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন বাস্তবায়নকারীদের সততা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট সকল দফতর, প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপালনে সক্রিয় ও দায়িত্বশীল করে তুলতে হবে। তদারকি, নজরদারি ও জবাবদিহি এদের ক্ষেত্রে একান্তভাবে প্রযোজ্য। সর্বোপরি, নাগরিক শিক্ষা ও সচেতনতার প্রচার ও প্রসার ঘটাতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
সাতক্ষীরা কালিগঞ্জে পটল চাষে বাম্পার ফলন
গফরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু
শাহরাস্তিতে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু
পাকিস্তানে অবশেষে সরকার ও বিরোধী দলের আলোচনা শুরু
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার ফোন
রানার অটোমোবাইলস পিএলসির এজিএম সম্পন্ন
আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ কাজের আহ্বান: এমরান আহমদ চৌধুরী
নকল পণ্য প্রতিরোধে আমদানির উপর শুল্ক কমানোর দাবি বাজারের ২০ শতাংশ খাদ্য মানহীন
লক্ষ্মীপুরে চুরির অপবাদে জনসম্মুখে যুবককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন, নাকে খত
বাঘায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ৪ ইউপিতে প্রশাসক নিয়োগ
বিশ্বে বছরজুড়ে আলোচনায় যুদ্ধ, নির্বাচন ও মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্র আগুন নিয়ে খেলছে : চীন
আওয়ামী দুঃশাসনের বিচার না হলে জুলাই আগষ্টের শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানী হবে: ডা. জাহিদ হোসেন
মেক্সিকোতে প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ৭
মাথাপিছু ১৪০০ ডলারের চেক পাচ্ছেন ১০ লাখ মার্কিনি
৯১ শিশু খেলোয়াড়সহ ৬৪৪ ক্রীড়াবিদকে হত্যা করেছে ইসরাইল
মোজাম্বিকে ঘূর্ণিঝড় চিডোরে নিহত ৯৪
মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পড়িয়ে সম্মানহানী
রাফালের আগমনে ভারত সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি