ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১০ পৌষ ১৪৩১

খালেদা জিয়ার কিছু হলে দায় সরকারের

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪০ পিএম | আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম

বেগম খালেদা জিয়া ভালো নেই। বিএনপির চেয়ারপারসন ও দেশের তিন বারের প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। ৯ আগস্ট তাকে এখানে ভর্তি করা হয়। ৭৮ বছর বয়সী দেশের কোটি কোটি মানুষের অবিসংবাদী নেত্রী কিডনি, ফুসফুস, হৃদরোগ, লিভার সিরোসিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। একটি মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করছে। লাগাতার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসায়ও তার অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না। তাকে একবার আইসিইউ, একবার কেবিনে আনা-নেয়া করা হচ্ছে। লিভার সিরোসিস জটিল রূপ নিয়েছে। এটাই তাকে বেশি ভোগাচ্ছে। পেটে পানি জমে যাচ্ছে। দু-একদিন পরপর পানি বের করা হচ্ছে। সর্বক্ষণ বিছানায় ইঞ্জেকশান ও স্যালাইনের ওপর থাকতে হচ্ছে তাকে। মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক পত্রিকান্তরে জানিয়েছেন, এখন লিভার প্রতিস্থাপন ছাড়া দেশে তার আর কোনো চিকিৎসা নেই। যেহেতু তিনি নানারকম জটিলতার ভুগছেন তাই মাল্টিপল ডিসিপ্ল্যানারি সেন্টারে চিকিৎসা দেয়া জরুরি। উল্লেখ করা যেতে পারে, বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া যে আবশ্যক, সেটা তার পরিবার, চিকিৎসক, দল ও শুভাকাক্সক্ষীদের তরফে শুরু থেকেই বারবার বলা হচ্ছে। সরকার তাতে কান দিচ্ছে না। আইনী মারপ্যাঁচ ও বিভিন্ন অজুহাতে তাকে বিদেশে চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার, এমন অভিমত দেশের অধিকাংশ মানুষের। পর্যবেক্ষক মহলের ধারণাও এরকমই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নিষ্ঠুরতা এতটাই চরমে উপনীত হয়েছে যে, তার অনিবার্য চিকিৎসার প্রয়োজন পর্যন্ত অস্বীকৃত হচ্ছে। বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন, তাকে স্লোপয়জনিং করা হয়েছে। অভিযোগ গুরুতর, সন্দেহ নেই। সরকারকেই এর জবাব দিতে হবে। একথা কারো অজানা নেই, আমাদের দেশেও দ-প্রাপ্ত অতীতে ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। আইন তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে তাহলে ব্যক্তিক্রম হবে কেন? এই সরকারের আমলে শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গসহ অনেকেই চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেছেন। এখাতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। অথচ, দেশের সুবৃহৎ একটি দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রের নয়, ব্যক্তিগত অর্থেও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে!

বেগম খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় সরকারের দায়িত্ব ছিল স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ-ব্যবস্থা ও অর্থে তাকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো। সরকার তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। উল্টো নানা আইনী প্যাঁচ ও অজুহাত হাজির করছে। ২০ সেপ্টেম্বর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে তার কাছে কোনো আবেদন আসেনি। আবেদন আসলে দেখা যাবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের তরফে যে চিঠি দেয়া হয়েছিল, সেখানে চিকিৎসার জন্য বাইরে যাওয়ার কথা ছিল। বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, আবেদন আগেই করা আছে। নতুন করে আবেদনের প্রয়োজন নেই। নতুন করে আবেদনের প্রশ্ন তোলা অমানবিক। তিনি আরও বলেছেন, এটা করে গুরুতর অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে। সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার অনুমোদন রয়েছে বলে মনে করেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। তার মতে, সংবিধানের ১৫ ও ৩২ অনুযায়ী তিনি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে পারবেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের একটি ঘোষণা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সাজাপ্রাপ্ত, কিন্তু তার উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব বিদেশে পাঠানো। সেই ঘোষণার প্রেক্ষিত রাশিয়ার বিরোধী দলীয় নেতা অ্যালেক্স নাভালিনকে জার্মানি পাঠানো হয়েছিল উন্নত চিকিৎসার জন্য। বলা বাহুল্য, দেশের অতীতের নজির, সংবিধানের বিধি ও আন্তর্জাতিক আইন মোতাবেক, বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ায় কোনো বাধা নেই।

দেশের অন্যতম শীর্ষ নেত্রী, সাবেক সরকারপ্রধান, গুরুতর অসুস্থ, বর্ষীয়ান নারী সুযোগ ও অধিকার থাকা সত্ত্বেও বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিতে যেতে পারবেন না, এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আইনমন্ত্রী যাই বলুন, সেটা অজুহাত হিসেবে গণ্য হবে। বিএনপির তরফে আলটিমেটাম দেয়া হয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে, চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে হবে। ছল-চাতুরি করে কোনো লাভ হবে না। এরপরও সরকার যদি গড়িমসি ও সময় ক্ষেপণ করে এবং বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হয়ে যায়, তাহলে তার দায়িত্ব এককভাবে সরকারকেই নিতে হবে। বিষয়টি সরকারের গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে হবে। ‘বেগম জিয়ার কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’ বলে যে শ্লোগান উঠেছে, সরকারকে সেটাও বিবেচনায় নিতে হবে। তার কোটি কোটি অনুসারী, কর্মী, সমর্থক ও অনুরাগী উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। তারা চায়, অবিলম্বে তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়া হোক। সরকার এ ব্যাপারে যত দ্রুত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়, ততই মঙ্গল।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

রাষ্ট্র সংস্কারে ইসলামের অনুপম শিক্ষা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে
মাহফুজ আলমের কথায় ভারতের আঁতে ঘা
অপরাধ বাড়ছে কেন?
বিহারীরা কেমন আছে
পিলখানা হত্যাকান্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে
আরও

আরও পড়ুন

পরাজিত শক্তির দোসররা এখনো নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত : মির্জা ফখরুল

পরাজিত শক্তির দোসররা এখনো নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত : মির্জা ফখরুল

ধামরাইয়ে উপজেলা আ' লীগের সাধারণ সম্পাদক কবির গ্রেফতার

ধামরাইয়ে উপজেলা আ' লীগের সাধারণ সম্পাদক কবির গ্রেফতার

আগামীকাল প্রকাশিত হচ্ছে নূরানী কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষার ফলাফল

আগামীকাল প্রকাশিত হচ্ছে নূরানী কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষার ফলাফল

২০২৫ সালে মুক্তি পেতে যাচ্ছে অমিতাভ রেজার 'রিকশা গার্ল' সিনেমা

২০২৫ সালে মুক্তি পেতে যাচ্ছে অমিতাভ রেজার 'রিকশা গার্ল' সিনেমা

ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের

ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের

‘পাঠ্যপুস্তক থেকে নোংরা শব্দ বাদ দিতে হবে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে অধিকাংশ মানুষের চেতনার আলোকে সাজাতে হবে’

‘পাঠ্যপুস্তক থেকে নোংরা শব্দ বাদ দিতে হবে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে অধিকাংশ মানুষের চেতনার আলোকে সাজাতে হবে’

নরসিংদীতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত শ্রমিকদল নেতার ৬ দিন পর মৃত্যু

নরসিংদীতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত শ্রমিকদল নেতার ৬ দিন পর মৃত্যু

১০ মামলার আসামী সিলেট  মহানগর আ‘লীগ নেতা বিজিত গ্রেপ্তার

১০ মামলার আসামী সিলেট  মহানগর আ‘লীগ নেতা বিজিত গ্রেপ্তার

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খুলনা অঞ্চলের বিজনেস রিভিউ মিটিং অনুষ্ঠিত

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খুলনা অঞ্চলের বিজনেস রিভিউ মিটিং অনুষ্ঠিত

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি

নারী উদ্যোক্তাদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি

হিমেলের দুচোখ হারানো মামলা  মির্জাপুরে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

হিমেলের দুচোখ হারানো মামলা মির্জাপুরে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

আল্লাহর একাত্ববাদ কায়েম করতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে

আল্লাহর একাত্ববাদ কায়েম করতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে

কুয়াকাটায় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ৬৭ হাজার জরিমানা

কুয়াকাটায় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ৬৭ হাজার জরিমানা

ভ্রমণকারীদের জন্য মেডিকেল ডেবিট কার্ড নিয়ে এল ভিসা ও ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি

ভ্রমণকারীদের জন্য মেডিকেল ডেবিট কার্ড নিয়ে এল ভিসা ও ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি

সংস্কারবিহীন নির্বাচন দেশে নব্য ফ্যাসিবাদের জন্ম দেবে

সংস্কারবিহীন নির্বাচন দেশে নব্য ফ্যাসিবাদের জন্ম দেবে

নেত্রকোনার পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ

নেত্রকোনার পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ

আটঘরিয়ায় নারীর মৃতদেহ উদ্ধার

আটঘরিয়ায় নারীর মৃতদেহ উদ্ধার

রামপালে ইউপি চেয়ারম্যান নাসির বরখাস্ত

রামপালে ইউপি চেয়ারম্যান নাসির বরখাস্ত

রাজবাড়ীর কালুখালীতে এনআরবিসি ব্যাংকের ১০৮তম শাখার উদ্বোধন

রাজবাড়ীর কালুখালীতে এনআরবিসি ব্যাংকের ১০৮তম শাখার উদ্বোধন

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান শাখায় অপ্রীতিকর ঘটনা

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান শাখায় অপ্রীতিকর ঘটনা