ভারতের রেল ট্রানজিটে বাংলাদেশের কী লাভ
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:০৪ পিএম | আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৬ এএম
গত দেড় দশকে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক ‘অনন্য উচ্চতায়’ পৌঁছেছে বলে বলা হচ্ছে। এ সময়ে দুই দেশের মধ্যকার লেনদেনের প্রধান অংশ জুড়ে রয়েছে কানেক্টিভিটির নামে একের পর এক ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর সুবিধা দেয়া। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বহুল চর্চিত সুসম্পর্কের প্রেক্ষাপটে ট্রানজিট-করিডোর দেয়ার রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও কৌশলগত ঝুঁকি সত্ত্বেও সবকিছুই একতরফাভাবে করা হয়েছে। এতে আমাদের লাভ বলে কিছু নেই। ট্রানজিট শুরুর পর দেখা গেল, নামমাত্র মাশুলে ট্রানজিট সুবিধা দেয়া হচ্ছে। দেশের মন্ত্রী-এমপি, আমলারা ট্রানজিটে ভারতের কাছ থেকে যৌক্তিক রাজস্ব আদায় না করার ক্ষেত্রে মনগড়া বক্তব্য দিয়েছেন। কলকাতা থেকে আগরতলায় পণ্য পৌঁছাতে ১৬৫০ কিলোমিটার দুর্গম পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে কমপক্ষে ৩৬ ঘন্টা। বাংলাদেশের সাথে ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তি বাস্তবায়নের পর ২০১৬ সালে প্রথম কলকাতা থেকে আসা পণ্য আশুগঞ্জ নৌবন্দরে খালাসের পর তা স্থলপথে আগরতলায় পণ্য পরিবহনের দূরত্ব দাড়ায় সাড়ে ৩০০ কিলোমিটার। তিন ভাগের একভাগ সময় এবং খরচ কমিয়ে যে সুবিধা ভারতকে দেয়া হয়েছে, তার বিনিময়ে প্রতি টনে মাত্র ১৯২ টাকা রাজস্ব আদায় করা হচ্ছে, তাও ডলারে নয় টাকায় পরিশোধ করা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের প্রত্যাশা এবং আন্তর্জাতিক নীতিমালার ধারেকাছেও নেই।
তৃতীয় মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে সরকার আবারো ভারতকে নতুন নতুন ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার অনুমোদন দিয়েছে। গত মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত নতুন ট্রানজিট সুবিধায় ভারতকে চারটি রুট ব্যবহারের কথা জানা যায়। অনুমোদন পাওয়া প্রটোকল রুটগুলো হচ্ছে, চট্টগ্রাম বন্দর-আখাউড়া-আগরতলা, মোংলা বন্দর-আখাউড়া- আগরতলা, চট্টগ্রাম বিবির বাজার-শ্রীমন্তপুর এবং মোংলা বন্দর-বিবির বাজার শ্রীমন্তপুর হয়ে ভারতের ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজগুলোয় ভারতীয় পণ্য পরিরহনের সুবিধা। বিগত দশক থেকে ভারতের আবদারে একের পর এক ট্রানজিট করিডোরের সুবিধা ভারতের জন্য খুলে দেয়া হলেও বাংলাদেশ তেমন কোনো রাজস্ব সুবিধা পাচ্ছে না। উপরন্তু ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের বিদ্যমান বাজার হারিয়েছে দেশের রফতানিকারকরা। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাংলাদেশের সুমদ্রবন্দর, নৌবন্দর, স্থল বন্দর, সড়ক ও রেলপথের সুবিধা নিয়ে সাড়ে ১১শ’ কিলোমিটার রাস্তা কমিয়ে ৩৬ ঘন্টার পথ ১০ ঘন্টায় পাড়ি দিয়ে ভারত যে সুযোগ পাচ্ছে, তার বিনিময়ে নেপাল-ভূটানের মত প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে অবাধ বাণিজ্যিক কানেক্টিভিটিতে ভারতের প্রতিবন্ধকতা এবং ট্রানজিটের মাশুল আদায়ের ক্ষেত্রে ন্যায্য মানদ- নিরূপণ ও বাস্তবায়ন করতে না পারা অনেক বড় ব্যর্থতা।
গঙ্গা-তিস্তাসহ অভিন্ন নদনদীর পানি বন্টনের মত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ভারত বাংলাদেশের ন্যায্য দাবী গুরুত্ব দিচ্ছে না। নেপাল-ভূটানের সাথে সরাসরি কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রেও ভারত প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। অন্যদিকে ভারত সকল পন্থায় বাংলাদেশের ভূমি ও অবকাঠামো ব্যবহার করে ট্রানজিট সুবিধা আদায় করে নিয়েছে। বাংলাদেশের সমুদ্র, নৌ ও স্থল ট্রানজিটের পর এবার বাংলাদেশের ভূমি ও রেলপথ ব্যবহার করে আরো ব্যাপক পরিসরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে পণ্য পরিবহণে নতুন রেলপথ চালুর প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে আখাউড়া-আগরতলা নতুন রেললাইন উদ্বোধনের কথা থাকলেও নয়াদিল্লীতে জি-২০ সম্মেলনের কারণে উদ্বোধনের কারণে তারিখ পেছানো হয়েছে। তবে ইতিমধ্যেই এই রুটের ট্রায়াল রান সম্পন্ন হয়েছে বলে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়। এর মধ্য দিয়ে ভারত বাংলাদেশে মাল্টিমোডাল যেগাযোগ ও বাণিজ্যিক ট্রানজিট সুবিধা পেয়ে গেছে। এটি নিতান্তই একপাক্ষিক সুবিধা। অথচ এসব অবকাঠামো উন্নয়নে বাংলাদেশ জনগণের রাজস্ব থেকে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেছে। ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে শিল্পায়ণের লক্ষ্যে ভারীশিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ও খাদ্যপণ্য পরিবহনে বাংলাদেশের অবকাঠামোর উপর যে চাপ ও ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, তা সংস্কারের খরচও বাংলাদেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকেই বহন করতে হচ্ছে। ভারতের এক অংশ থেকে আরেক অংশে পণ্য পরিবহনে বাণিজ্য ও কৌশলগতভাবে বাংলাদেশের বড় ধরণের ক্ষতি এবং সম্ভাবনা নষ্ট হয়েছে। এক্ষেত্রে, আন্তর্জাতিক মানদ- অনুসরণে কান্ট্রি টু কান্ট্রি ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য প্রযোজ্য রাজস্ব আদায় করা গেলে বাংলাদেশ কিছুটা হলেও লাভবান হতে পারে। ভারতীয় ট্রানজিট-কানেক্টিভিটি থেকে বাংলাদেশের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের সম্ভাব্য পন্থা এবং রাজস্ব পুন:নির্ধারণের মাধ্যমে যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীত করার উদ্যোগ নিতে হবে। ভারতীয় ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট চালুর পর গত ৮ বছরে এর বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক ফলাফলসহ সামগ্রিক মূল্যায়ণ জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। আমরা কেবল দিয়েই যাব, বিনিময়ে কিছু পাব না, তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ফরিদপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকে মারধোর
মুফতি মুতাজ সভাপতি মুফতি শুয়াইব সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত
নওগাঁয় দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
সিরিয়ায় বিমান চলাচল স্থগিত করল ইরান
যুক্তরাষ্ট্রে খুন মাদক পাচারকারী সুনীল যাদব, দায় নিল বিষ্ণোই গ্যাং
চাঁদপুরে জাহাজে সেভেন মার্ডার: স্বজনদের দাবি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড
বাগেরহাটে ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন বরখাস্ত
কালীগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা
"স্বপ্ন রুরাল ফাউন্ডেশন: তরুণদের হাত ধরে সমাজ বদলের এক নতুন যাত্রা"
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে পুড়ে ছাই হাজারো ঘর, শিশুসহ নিহত দুজন
সিলেট সীমান্ত থেকে ১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
নিখোঁজের ৬ দিন পর বিক্রয় কর্মীর লাশ উদ্ধার
চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুন একজনের বাড়ী ফরিদপুর গেরদা ইউনিয়নে
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বা সিস্টেম হিসেবে ডেভেলপ করেনি; স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান
ট্রাম্পের জয়ে ইউক্রেনের সংঘাতে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে: উপদেষ্টা
চট্টগ্রাম আবাহনীর জালে মোহামেডানের গোল উৎসব
আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ দুর্নীতি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি!
স্থানীয় সরকার একটি সিস্টেম হিসেবে ডেভেলপ করেনি: সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান
ফ্যাসিবাদরা এখনো নানা সুরতে আবির্ভুত হওয়ার পাঁয়তারা করছে- ডিসি মুফিদুল আলম
প্রকাশ পেল 'নকশিকাঁথার জমিন' সিনেমার ট্রেলার