আন্দোলন জোরদার করা ছাড়া বিএনপির উপায় নেই
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
বিগত এক দশকে বিএনপি’র সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনেক ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছে এবং এখনও করছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার স্বভাবসুলভ ভাষায় বিএনপি’র আন্দোলনকে ‘মাজাভাঙা’ ‘খাদের কিনারে’, ‘পশ্চাদপদ’ ‘মরণযাত্রা’ ইত্যাদি বলে আখ্যায়িত করেছেন। আন্দোলন করে সরকার হঠানোর চ্যালেঞ্জও দিয়েছেন। বাস্তবতা হচ্ছে, বিএনপি এখন পর্যন্ত সরকার হঠানোর মতো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটি সরকারের পদত্যাগের যে একদফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছে, তা কতটা সফল হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে দলটি ধারাবাহিকভাবে সমাবেশ, পদযাত্রা, রোডমার্চ ইত্যাদি কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের যে ইতিহাস, তাতে এ ধরনের আন্দোলন করে কখনো সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা যায়নি। যেসব আন্দোলন হয়েছে তা হরতাল, অবরোধ, ভাঙচুরের মতো সহিংসতার মধ্য দিয়েই হয়েছে। সরকারকেও নমনীয় ও নতিস্বীকার করতে হয়েছে। বিরোধীদলে থাকতে আওয়ামী লীগ এভাবেই সরকারবিরোধী আন্দোলন করেছে। তবে আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কথা বিবেচনা করে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিরোধীদল যাতে সহিংস আন্দোলন করে তাকে ক্ষমতা থেকে হটাতে না পারে, এমন প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছে। ক্ষমতায় এসেই যে কাজটি করেছে তা হচ্ছে, সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিয়ে নিজের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। সে জানত, এ ব্যবস্থা বিরোধীদলগুলো মানবে না। ফলে বিরোধীদল আন্দোলন করলে তা কিভাবে মোকাবেলা করা হবে, তার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা আগে থেকেই নিয়ে রাখে। ২০১৩ সালে বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন জোট যখন আন্দোলন শুরু করে, তখন সরকারের পক্ষ থেকে লোক দেখানো কিছু প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম নির্বাচনকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ পাঁচটি মন্ত্রণালয় বিএনপিকে দেয়ার প্রস্তাব। বিএনপি তা প্রত্যাখ্যান করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল থাকে এবং আন্দোলন চালিয়ে যায়। অনেকে বলে থাকেন, বিএনপি যদি এ প্রস্তাব গ্রহণ করত, তাহলে সরকার বেকায়দায় পড়ে যেত। সরকার বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়ে এ প্রস্তাব দিয়েছিল। বিএনপি প্রস্তাব গ্রহণ করে ফেললে পরিস্থিতি ভিন্ন রূপ লাভ করত। তবে বিএনপি যাতে এ প্রস্তাব গ্রহণ না করে, সে ব্যবস্থাও করে রেখেছিল বলে শোনা যায়। সরকারের এই কৌশল কাজে দেয়। বলা যায়, রাজনীতিতে সে সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সুবিধাজনক অবস্থায় চলে যায় এবং সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় অটল থাকে। এইসঙ্গে বিএনপি’র আন্দোলন দমাতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে পিটিয়ে বিএনপিকে তক্তা বানিয়ে ফেলে। বিএনপি ও তার জোট যে আন্দোলন করে, বলা হয়ে থাকে, তা স্যাবোটাজের শিকার হয়েছিল। এতে বিএনপি’র যে ক্ষতি হয়েছে, তা অপূরণীয়। বিশেষ করে, দলটির শীর্ষ নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতা, সন্ত্রাস, সম্পদের ক্ষতিসহ নানা ধরনের অভিযোগে হাজার হাজার মামলা হয়েছে। বিএনপির মামলার তথ্য ও সংরক্ষণ শাখার হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে গত ২৫ জুলাই পর্যন্ত বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ৪০ লাখের ওপরে।
দুই.
বিএনপি’র নেতাকর্মীদের এখন এমন পরিস্থিতি যে, ছুটির দিন ছাড়া সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতে সকালে ঘুম থেকে উঠেই আদালতে দৌড়াতে হচ্ছে। এটা তাদের রুটিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো কোনো দিন একাধিক মামলার তারিখ থাকায় এক কোর্টে হাজিরা দিয়েই আরেক কোর্টে হাজিরা দিতে হচ্ছে। মামলার সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল। তার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ৪৫০। একেক দিন চার থেকে পাঁচটি মামলার শুনানি থাকে। তারপর রয়েছেন যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব। তার মামলার সংখ্যা ৩৫০টি। যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর হোসেনের ৩১৭টি এবং যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর ৩১৫টি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মামলার সংখ্যা ৯৮টি। বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানের ২৫০টি, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর ১৮০টি, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের ২৫০টি, কেন্দ্রীয় কমিটির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সফুর ২৫০টি। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে তাদের এবং অন্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলার গতি বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ফলে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এমনকি আদালতকে রাত পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, যদি এসব মামলার প্রত্যেকটির গড়ে এক বছর করেও সাজা হয়, তাহলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাজা হবে ৯৮ বছর এবং হাবিবুন নবী খান সোহেলের হবে ৪৫০ বছর। বিএনপির নেতাদের মামলা পরিচালনা করেন এমন বেশ কয়েকজন আইনজীবী বলেছেন, শতাধিক মামলার আসামি এমন নেতা-কর্মীদের প্রায় সবাইকে ঘুম থেকে উঠেই আদালতে আসতে হয়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা আছেন শতাধিক। প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি’র নেতাকর্মীরা যতই বলুক, এসব মামলা গায়েবি এবং প্রতিহিংসামূলক, তাতে কি তারা এসব মামলা থেকে খালাস পাবে? সরল উত্তর হচ্ছে, না। যতদিন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন তারা মুক্ত হতে পারবে না। কোনো না কোনো মামলায় তাদের জেলে যেতেই হবে এবং আজীবন জেলেই কাটাতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের ইতিহাসে একটি বিরোধীদলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এত মামলা কখনো হয়নি। বিশ্বে আর কোনো দেশে এমন নজির আছে কিনা, জানা নেই। বিএনপির ৪০ লাখ নেতাকর্মীর যদি সাজা হয় এবং তা হওয়ার আশঙ্কা অমূলক নয়, কিংবা কেউ কেউ যদি খালাস পায়, তাহলে এত সংখ্যক সাজাপ্রাপ্তদের সরকার কোথায় রাখবে? বর্তমানে দেশে ৬৮টি জেলখানা রয়েছে। এগুলোর মোট ধারণ ক্ষমতা কমবেশি ৪২ হাজার ৮৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষদের জন্য ৪০ হাজার ৯৩৭ জন এবং মহিলাদের জন্য ১৯২৯ জনের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তসহ বিভিন্ন মেয়াদের সাজাপ্রাপ্তরা থাকে। এক্ষেত্রে কারো কারো সাজার মেয়াদ শেষ হলে বের হয়ে আসে। এ সংখ্যা নেহায়েতই কম। তাহলে, বিএনপি’র ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হলে তাদের কোথায় রাখা হবে? যদি একেকটি জেলখানায় গড়ে ৪ হাজার সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেতাকর্মী রাখা হয়, তাহলে শুধুমাত্র বিএনপি’র ৪০ লাখ নেতাকর্মীর জন্য প্রয়োজন হবে ১০০০ জেলখানা। ফলে সরকারকে বিদ্যমান জেলখানার বাইরে আরও ৯৩২টি নতুন জেলখানা বানাতে হবে। নতুন জেলখানার একেকটি বিএনপি নেতাকর্মীদের আস্তানায় পরিণত হবে। বন্দি অবস্থায়ই জেলখানাগুলে তাদের সরকারবিরোধী স্লোগানে মুখরিত হবে। এ ধরনের ঘটনা যদি ঘটে, তবে তা হবে বিশ্বে বিরল।
তিন.
অস্বীকার করার উপায় নেই, বিএনপির ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে, তার সিংহভাগই রাজনৈতিক। আন্দোলন করতে গিয়ে তারা এসব মামলার আসামী হয়েছে। আমরা যদি এরশাদের শাসনামল থেকে শুরু করে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিরোধীদলগুলোর আন্দোলন-সংগ্রামের কথা বিবেচনা করি, তাহলে দেখব, কোনো রাজনৈতিকদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এত মামলা হয়নি। এমনকি স্বৈরাচার হিসেবে পরিচিত এরশাদের শাসনামলেও একক কোনো দলের এত সংখ্যক নেতাকর্মী মামলার শিকার হয়নি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেকে গণতান্ত্রিক বলে দাবি করলেও, বিরোধীদল বিশেষ করে বিএনপি’র ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে, যা স্বৈরাচারী শাসনামলকেও হার মানিয়েছে। তার আমলে এসেই ‘গায়েবি’ নামক নতুন একটি মামলার নাম দেশের মানুষ জানতে পারে। অর্থাৎ একটি মামলা হলে কয়েকজনকে আসামী করে আরও অসংখ্য অজ্ঞাত ব্যক্তির নাম উল্লেখ থাকে। এতে ঘটনার সাথে কেউ সম্পৃক্ত না থাকলেও বিরোধীদল তথা বিএনপির নেতাকর্মী হওয়ার কারণে তাকেও মামলায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এমনকি ঘটনার সময় বিদেশে আছেন, এমন ব্যক্তিকেও মামলার আসামী করার নজির রয়েছে। অনেক সময় মৃতব্যক্তির নামও মামলায় থাকে। অর্থাৎ বিএনপি নামক দলটিকে হামলা-মামলা দিয়ে কোনঠাসা কিংবা নিঃশেষ করে দেয়ার নজির গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার দাবিদার সরকারের সময় বেশি হচ্ছে। এমন নজির সম্ভবত আর কোনো গণতান্ত্রিক ধারার দেশে নেই। বিএনপি’র এই ৪০ লাখ নেতাকর্মীর শুধু রাজনৈতিক জীবনই নয়, তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবন রয়েছে। রাজনৈতিক জীবনের কথা বাদ দিলে যে মানবিক প্রশ্নটি সামনে আসে, তা হচ্ছে, তাদের জীবনের ভবিষ্যত কি? ধরা যাক, ৪০ লাখ নেতাকর্মীর মধ্যে তরুণ ও অবিবাহিত নেতাকর্মী রয়েছে ২০ লাখ। তাহলে, তাদের ব্যক্তিজীবন বলে কি কিছু আছে? একজন সাধারণ তরুণের জীবনের লক্ষ্য থাকে, একটি ভাল চাকরি বা ব্যবসা করা। তারপর বিয়েসাদী করে সংসারী হওয়া। যে তরুণ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তার যেমন এই লক্ষ্য থাকে, তেমনি দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার লক্ষ্যও থাকে। দুটো কাজই তাকে সমানতালে চালিয়ে যেতে হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি’র ২০ লাখ তরুণের কি এই স্বপ্ন আছে? আপাত দৃষ্টিতে নেই। কারণ, অনিবার্যভাবেই কোনো না কোনো মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে তাদের জীবন জেলে কাটবে। অন্যদিকে, জামিনে থাকলেও অসংখ্য মামলার কারণে তাদেরকে আদালতে হাজিরা দিতে দিতে জীবন পার হয়ে যাবে। তাদের ব্যক্তিজীবন বলে কিছু নেই। বিয়ে যে করবে, কোন বাবা, কোন ভরসায় তার মেয়েকে তাদের কাছে বিয়ে দেবে? কোনো বাবা কি চাইবে, তার মেয়ের স্বামী অসংখ্য মামলার আসামী হোক এবং সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে থাকুক? এমনকি বিএনপি’র কোনো নেতা কি তার মেয়েকে তার কাছে বিয়ে দেবে? দেবে না। অন্যদিকে, ধরে নেয়া যাক, বাকি ২০ লাখ নেতাকর্মী বিবাহিত। প্রশ্ন হচ্ছে, অসংখ্য মামলার কারণে তাদের সংসার জীবন কি ঠিক আছে? তাদের স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মায়েরা কি এক অনিশ্চিত জীবনযাপন করছে না? এই অনিশ্চয়তার কারণে, কারো কারো সংসার কি ভেঙ্গে যায়নি? কিংবা তাদের সন্তানরা কি সমাজে সম্মান নিয়ে চলাফেরা করতে পারছে? তাদের আনেকে কি মামলার খরচ চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে না? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, তারা কি রাষ্ট্রের নাগরিক নয়? তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া যাক, কেউ কেউ সত্যিকার অর্থে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত ছিল। তাদের সাজা হলে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। তাই বলে কি ৪০ লাখের সবাই জড়িত? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? বিশ্বাসযোগ্য নয়। ‘গায়েবি’ নামক যে হাওয়াই মামলা, তাতে বিশ্বাস করার কারণ আছে বলে মনে হয় না। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে এবং বিদগ্ধজনরাও এর বিরোধিতা করেছে। তাতে সরকারের কিছু যায় আসে না। বলা বাহুল্য, মামলায় পড়া বিএনপি’র এই ৪০ লাখ নেতাকর্মী যে শুধু ভুগছে তা নয়, তাদের পরিবারের সদস্য, যদি চারজন করেও ধরা হয়, তাহলে ১ কোটি ৬০ লাখ লোক ভুগছে।
চার.
বিএনপি এখন সরকার পতনের একদফা আন্দোলন করছে। এ আন্দোলনে যদি সফল না হয়, তাহলে দলটির নেতাকর্মীদের কি হবে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। তার যে ৪০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, তা বেড়ে যদি দ্বিগুণ হয়ে যায়, অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না এবং এটা অনিবার্যভাবেই ধরে নিতে হবে, এখন যেসব নেতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের সাজা হবে ও জেলে যেতে হবে। ইতোমধ্যে সাজা ও জেলে যাওয়া শুরু হয়েছে। ফলে বিএনপি’র জন্য এ আন্দোলন এক জীবনমরণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। তাদের সামনে দুটি অপশন রয়েছে। প্রথম অপশন ‘ডু’। দ্বিতীয় অপশন ‘ডাই’। আরেকটি পথ রয়েছে, যদি দলটি সরকারের কথা মতো কোনো শর্ত ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এতে কিছুটা পরিত্রাণ পেতে পারে। সেক্ষেত্রে দলটিকে জাতীয় পার্টির মতো গৃহপালিত বিরোধীদলে পরিণত হতে হবে। সরকারের গুণগান গাইতে হবে এবং নতুন করে কোনো হামলা-মামলার শিকার হতে হবে না। অন্যদিকে, তাদের বিরুদ্ধে চলমান মামলা সংখ্যা কমলেও সব মামলা থেকে খালাস পাবে না। মামলার বেড়াজালে আটকে থেকে তাদের সরকারের কথামতো চলতে হবে। যেমনটি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এরশাদকে সরকারের কথামতো চলতে হয়েছে। ববিএনপি’র মতো বিপুল জনসমর্থিত দলের এমন পন্থা অবলম্বন সচেতন আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও সমর্থন করবে না। বিএনপি’র বর্তমান আন্দোলনের কর্মসূচিতে বিপুল নেতাকর্মী অসংখ্য মামলা মাথায় নিয়ে অংশগ্রহণ করছে, সাধারণ মানুষও অংশ নিচ্ছে। লাখ লাখ লোক হচ্ছে। যেসব নেতাকর্মী মামলার শিকার হয়েও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছে, তারা কেন করছে? নিজেরা নিপীড়নমূলক মামলা থেকে মুক্তি পেতে, দেশের মানুষকে একটি অসহিষ্ণু পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে, দেশে একটি মানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে, সর্বোপরি সংকুচিত গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতাকে অবারিত করতে। বিএনপি’র নেতৃত্বদানকারী নেতাদের দলের এসব নিপীড়িত-নির্যাতিত নেতাকর্মী এবং দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের এই আকাক্সক্ষা ও অসহিষ্ণু পরিস্থিতি গভীরভাবে উপলব্ধি করে আন্দোলন করতে হবে। এছাড়া তাদের সামনে মুক্তির কোনো পথ নেই। বিএনপিকে ৪০ লাখ মামলাবন্দি নেতাকর্মী এবং তাদের পরিবারের দুঃখ-কষ্ট মানবিকতা দিয়ে অনুধাবন করতে হবে। আন্দোলনকে এমন উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে, যাতে সরকার সিংহভাগ মানুষের আকাক্সক্ষা মেনে নিতে বাধ্য হয়। এর কোনো বিকল্প নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি
হিমেলের দুচোখ হারানো মামলা মির্জাপুরে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার
আল্লাহর একাত্ববাদ কায়েম করতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে
কুয়াকাটায় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ৬৭ হাজার জরিমানা
ভ্রমণকারীদের জন্য মেডিকেল ডেবিট কার্ড নিয়ে এল ভিসা ও ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি
সংস্কারবিহীন নির্বাচন দেশে নব্য ফ্যাসিবাদের জন্ম দেবে
নেত্রকোনার পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ
আটঘরিয়ায় নারীর মৃতদেহ উদ্ধার
রামপালে ইউপি চেয়ারম্যান নাসির বরখাস্ত
রাজবাড়ীর কালুখালীতে এনআরবিসি ব্যাংকের ১০৮তম শাখার উদ্বোধন
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান শাখায় অপ্রীতিকর ঘটনা
খুলনা বারের সাবেক সম্পাদক কারাগারে
ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেল ‘রূপসী বাংলা’ ট্রেন, উৎফুল্ল যাত্রীরা
'মেসির সম্মান রক্ষার্থেই বার্সা ছাড়েন নেইমার'
সারাদেশে নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতির আল্টিমেটাম মোংলায় প্রতিবাদ সভা এবং বিক্ষোভ
সংস্কার কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করছে নির্বাচনের সূচি: আসিফ মাহমুদ
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন
ইজতেমার মাঠে মুসল্লিদের উপর বর্বর হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল
কলাপাড়ায় দিনমজুরের বসত ঘর পুড়ে ছাই
মেলবোর্নে অনিশ্চিত হেড, অভিষেক হচ্ছে কনস্টাসের