অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। আমদানি-রফতানি কমে যাওয়া থেকে শুরু করে উৎপাদন ব্যহত হওয়া, অস্বাভাবিক মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক বিনিয়োগের নি¤œগামিতা, ডলার সংকট তীব্র হওয়া, রিজার্ভের ক্রমাবনতি, মানুষের জীবনমানের টানাপোড়েন অর্থনীতির চরম মন্দাবস্থা নির্দেশ করছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, আগামীতে এ পরিস্থিতি আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের প্রধানতম রফতানি পণ্য এবং বিপুল কর্মসংস্থানের খাত গার্মেন্ট রফতানি ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে। এ খাতের শীর্ষ গন্তব্যস্থল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। গত বুধবার দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিজিএমইএ-এর সংবাদ সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গত ৭ মাসে গার্মেন্ট রফতানি কমেছে ২৯ শতাংশ, যা মোট রফতানির এক তৃতীয়াংশ। ইউরোপের বাজারে কমেছে ১৪.৫০ শতাংশ। একইসঙ্গে জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ায় এ খাতে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। ফলে খাতটি অত্যন্ত চাপে পড়েছে। শুধু গার্মেন্ট খাতই নয়, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎস রেমিট্যান্স প্রবাহও কমছে। আশানুরূপ রেমিট্যান্স আসছে না। আমদানি-রফতানি ব্যয় মেটানোর অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও নি¤œগামী। আকুসহ অন্যান্য ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে রিজার্ভে টান ধরেছে। অর্থনীতির এমন মন্দাবস্থার মধ্যে দুঃসংবাদ হয়ে এসেছে, ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মুডিস, স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস-এর পর আন্তর্জাতিক সংস্থা ফিচ রেটিংসেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পূর্বাভাসকে স্থিতিশীল থেকে নেতিবাচকের দিকে ধাবিত হওয়ার খবর দিয়েছে। অর্থনীতির এসব নেতিবাচক দিক দেশের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশে সাসটেইনঅ্যাবল ডেভেলপমেন্ট বা টেকসই উন্নয়নের ওপর অর্থনীতিবিদরা বহুবছর ধরেই জোর দিয়ে আসছেন। এদিকে নজর না দিলে যেকোনো সময় অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। বর্তমান অর্থনীতির যে পরিস্থিতি, তাতে তাদের এ শঙ্কা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। যদিও সরকারের নীতিনির্ধারকরা অর্থনীতি ভাল আছে বলে বলছেন এবং এ নিয়ে যারা কথা বলছেন, তারা অর্থনীতি বোঝেন না বলেও তিরস্কার করেছেন। এ ধরনের বক্তব্য কাম্য হতে পারে না। সরকারের অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা যতই আশ্বস্থ করেন না কেন, বাস্তবতা হচ্ছে, অর্থনীতি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার দিকে ধাবমান। সরকারের তরফ থেকে এতদিন ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনীতি চাপে পড়েছে বলে বললেও, তা স্থিতিশীল রাখতে ও উত্তরণ ঘটাতে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা পরিস্কার নয়। পদক্ষেপ নিলেও তার প্রতিফলন যে ঘটছে না, তা অর্থনীতির মন্দাবস্থা থেকেই বোঝা যায়। সরকার আমদানি ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধন প্রক্রিয়া বহু আগেই নিয়েছে। কমগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে। প্রশাসনেও বিদেশ ভ্রমণসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলেছে। এসব পদক্ষেপ নেয়ার পরও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখা যাচ্ছে না। বরং খারাপের দিকে যাচ্ছে। অন্যদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে এমন পদক্ষেপ নেযা হচ্ছে, যা হিতে বিপরীত হতে বাধ্য। ইতোমধ্যে কমগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ শুরু করা থেকে অন্যান্য খাতেও খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশ আমদানি নির্ভর হওয়ায় ডলার সংকটের কারণে ভারি মেশিনারিজ আমদানিসহ অন্যান্য পণ্য আমদানিতে ব্যাঘাত দেখা দেয়ায় উৎপাদন খাতে একধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে দুঃসংবাদ হয়ে এসেছে, গার্মেন্ট ও রেমিট্যান্সের আয় কমে যাওয়া। বলার অপেক্ষা রাখে না, রফতানি ও রেমিট্যান্স কমে গেলে রিজার্ভ সংকট বৃদ্ধি পাবে। এই দুই খাত থেকে অর্থের সংস্থান না হলে এবং ঋণ পরিশোধ করতে থাকলে রিজার্ভ কমে যাবে। বর্তমানে রিজার্ভের সংকট তীব্র। সাধারণত তিন মাসের আমদানি-রফতানির জন্য রিজার্ভ থাকলে, তাতে শঙ্কার কিছু নেই। তবে রফতানি ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়া এবং ঋণ পরিশোধ করার কারণে রিজার্ভ এখন তিন মাসের প্রান্তসীমায় এসে ঠেকেছে। এই সীমা যদি ধরে না রাখা যায়, তবে দেশ এক গভীর সংকটে পড়ে যাবে।
একের পর এক দুঃসংবাদে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কতটা নাজুক হয়ে পড়েছে, তা একজন সচেতন মানুষ জানে। বাজারে নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি থেকে তারা আরও বেশি জানতে পারে। বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে সাধারণ মানুষকে নিদারুণ টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, দেশের সার্বিক অর্থনীতি সঠিক পথে নেই এবং এ থেকে উত্তরণে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে একপ্রকার ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। বিশ্ব রেটিংয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ‘ডি’ গ্রেড পেয়েছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। এ সংক্রান্ত অন্য সংস্থাগুলোও যে পারছে না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ প্রেক্ষিতে, দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে এবং অবনমন ঠেকাতে সরকারের সর্বোচ্চ মনোযোগ দেয়া আবশ্যক। এখন আর বিশ্ব মন্দাবস্থার কথা বলে লাভ নেই। এ পরিস্থিতির মধ্যেও দেউলিয়া হয়ে যাওয়া শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। আমাদেরকে সে পরিস্থিতিতে পড়ার আগেই যথাযথ অর্থনৈতিক নীতি ও পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে, তা নিরসনে দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ এবং সমন্বিত কার্যব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মাদারীপুরে জুলাই বিপ্লবে আহতদের আর্থিক সহযোগিতা
ধামরাইয়ে কৃষি জমির মাটি কাটায় ৬ ভেকু ও ৩ ড্রেজার মেশিন জব্দ
পরাজিত শক্তির দোসররা এখনো নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত : মির্জা ফখরুল
ধামরাইয়ে উপজেলা আ' লীগের সাধারণ সম্পাদক কবির গ্রেফতার
আগামীকাল প্রকাশিত হচ্ছে নূরানী কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষার ফলাফল
২০২৫ সালে মুক্তি পেতে যাচ্ছে অমিতাভ রেজার 'রিকশা গার্ল' সিনেমা
ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের
‘পাঠ্যপুস্তক থেকে নোংরা শব্দ বাদ দিতে হবে, শিক্ষা ব্যবস্থাকে অধিকাংশ মানুষের চেতনার আলোকে সাজাতে হবে’
নরসিংদীতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত শ্রমিকদল নেতার ৬ দিন পর মৃত্যু
১০ মামলার আসামী সিলেট মহানগর আ‘লীগ নেতা বিজিত গ্রেপ্তার
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খুলনা অঞ্চলের বিজনেস রিভিউ মিটিং অনুষ্ঠিত
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি
হিমেলের দুচোখ হারানো মামলা মির্জাপুরে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার
আল্লাহর একাত্ববাদ কায়েম করতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে
কুয়াকাটায় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ৬৭ হাজার জরিমানা
ভ্রমণকারীদের জন্য মেডিকেল ডেবিট কার্ড নিয়ে এল ভিসা ও ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি
সংস্কারবিহীন নির্বাচন দেশে নব্য ফ্যাসিবাদের জন্ম দেবে
নেত্রকোনার পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ
আটঘরিয়ায় নারীর মৃতদেহ উদ্ধার
রামপালে ইউপি চেয়ারম্যান নাসির বরখাস্ত