তিনিই মুসলমানদের ঐক্যের প্রতীক
০২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
ইসলামীবিশ্ব হচ্ছে একই দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মতো বা একটি পরিবারের ন্যায়, যার শেকড় অনেক গভীরে। এর সংযোগস্থাপনকারী শক্তিশালী উপাদান রয়েছে, যা কিনা এই বৃহৎ ধর্মীয় পরিবারকে সুদৃঢ় (সমন্বিত) ও শক্তিশালী করতে পারে এবং সদা, সর্বদা ও সর্বত্র একত্র রাখতে পারে।
রাসূলগণের এবং আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তিদের সিলমোহর মুহম্মদ মুস্তফা (সা.) এর উজ্জ্বল ও বরকতময় অস্তিত্ব বিশ্বের সমস্ত মুসলমানের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম, যা সর্বশেষ ঐশি ধর্ম হিসেবে ইসলাম ও আসমানী কিতাব আল কুরআনের পাশাপাশি বিশ্বের সমস্ত মুসলমান ও ইসলামী উম্মার ধারাবাহিকতা ও স্থায়িত্বের স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত।
নবী মুহম্মদ (সা.) তাঁর নবুওয়তের ২৩ বছরে ইসলাম ধর্মের মূল কা-ারী হিসেবে সবার জন্য যেসব পরামর্শ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিয়ে গেছেন, তাতে তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করাই ইসলামী উম্মার ঐতিহাসিক ও অগ্রসরমান পথ চলার মূল কথা, যা সকল বিভেদ ও বিভাজনকে দূর করতে সক্ষম।
পবিত্র কুরআনে সূরা ফাতাহ-এর ২৯ নম্বর আয়াতে মুহম্মদ মুস্তফা (সা.)-এর অনুসরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা এই আয়াতে বলেন, ‘মুহম্মদ আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর সঙ্গীরা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং তাদের মধ্যে দয়ালু।’
ইসলামের নবীকে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে এই প্রধান নির্দেশকের ধারণাটি খুবই স্বচ্ছ ও পরিষ্কার এবং এর ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যার অবকাশ নেই। পবিত্র কুরআনে সর্বশক্তিমান আল্লাহর বাণী অনুসারে একজন প্রকৃত মুসলমানকে ইসলামের নবীর আনুগত্য করার জন্য অবশ্যই কাফেরদের সাথে কঠোর এবং তার একই ধর্ম অনুসারীদের সাথে সদয় ও বিন¤্র হতে হবে।
বর্তমান যুগে পবিত্র কুরআনের এই আলোকিত আয়াত বাস্তবায়নের ব্যাপারে মুসলমানদের মিশন ও কর্তব্য সম্পর্কে কিছু মৌলিক বিষয় ও বিবেচনা রয়েছে, যার কয়েকটি নি¤েœ উল্লেখ করা হলো:
এক. যে কোন সময় ও যুগে পবিত্র কুরআনের এই আয়াতের ভূমিকা হল কুফরের ফ্রন্ট এবং ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুদের ফ্রন্টকে চিনতে পারা। এই আয়াত অনুসরণ করার জন্য মুসলিম ও ইসলামীবিশ্বকে সর্বপ্রথম কুফরের ফ্রন্টকে জানতে হবে এবং কুফরের ফ্রন্ট সম্বন্ধে প্রয়োজনীয় জ্ঞান না থাকলে এই আয়াত অনুসরণের ক্ষেত্রে কেউ সফল হতে পারবে না। অতএব, সর্বদা ও সকল যুগেই শত্রুকে চেনা মুসলমানদের অন্যতম কর্তব্য এবং যতক্ষণ না এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অর্জন হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কুফর ও শত্রুর সম্মুখে কঠোরতার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের এই আয়াতে যে নির্দেশ রয়েছে তার বাস্তবায়ন হবে না।
দুই. সকল যুগে কুফরের ফ্রন্ট মুসলমানদের সামনে ছিল এবং মুসলমানদের সাথে শত্রুতা ও বিরোধিতার মাধ্যমে এর সীমারেখা নির্ধারণ করেছে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, এই ফ্রন্ট চেনা ও শনাক্ত করা খুব একটা কঠিন নয় এবং আচরণ ও কার্যকলাপ দেখে শত্রু ও কুফরের ফ্রন্টকে চেনা যায়। আজ এই ফ্রন্ট স্পষ্ট এবং যারা পবিত্র কুরআনে অগ্নিসংযোগ করছে এবং ইসলামের নবীকে অবমাননা করছে তারাই কুফর ও শত্রুর ফ্রন্ট এবং যে সরকারগুলো এই কুফরিপূর্ণ ও নিন্দনীয় আচরণ এবং কাজকে সমর্থন করে তাদের শীর্ষে রয়েছে দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইল ও কিছু পশ্চিমা শক্তি। তারা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুতা ও কুফরি ফ্রন্টের হোতা হিসেবে বিবেচিত। অতএব, বর্তমান পর্যায়ে কুফর ও শত্রুর ফ্রন্ট সুস্পষ্ট এবং ইসলামী বিশ্বের সকল দেশ ও সকল মুসলমানকে সূরা ফাতাহর ২৯ নং আয়াত যথাযথভাবে মেনে চলতে হবে এবং এই ফ্রন্টের বিরুদ্ধে নিজের কঠোরতাকে প্রদর্শন করতে হবে।
তিন. সূরা ফাতাহর ২৯ নং আয়াতটি সমস্ত ইসলামী সরকার ও মুসলমানদের জন্য পরীক্ষা এবং এই আয়াতটি অনুসরণ না করলে ইসলামের নবী এবং পবিত্র কুরআনকে অনুসরণ করার কোনো অর্থ নেই। তাই পবিত্র এই আয়াত নাযিলের সাথে সাথে আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের জন্য একটি স্থায়ী পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করেছেন এবং সকল মুসলমানকে, বিশেষ করে ইসলামী দেশগুলোর শাসকদের এই আয়াত ও খোদায়ী আদেশ অনুসরণের জন্য তাদের উদ্যোগ ও সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে, যাতে এই মহাপরীক্ষায় এবং আল্লাহতায়ালা ও পবিত্র কুরআনের আদেশ বাস্তবায়নে সফল হয়।
চার. এই আয়াত অনুসারে ইসলামের নবীর আনুগত্য ও অনুসরণে কাফেরদের প্রতি কঠোরতা ছাড়াও আরেকটি দিক রয়েছে, যা প্রথম দিকটির মতোই গুরুত্বপূর্ণ। কাফেরদের সামনে কঠোর হওয়ার সমানতালে ইসলামের নবীর আনুগত্যকারী ও অনুসারীদের একে অপরের প্রতি কোমল ও সদয় হতে হবে এবং বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বের সাথে একে অপরের পাশে থাকতে হবে। এই ঐশী নির্দেশ অনুসারে, বিশ্বের মুসলমানরা যে জাতি, বর্ণ বা যে ভৌগোলিক অস্থানেরই অধিকারী হোক না কেন, এমনকি তারা ইসলামের যে মাজহাবের অনুসারীই হোক না কেন, তাদের একে অপরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে হবে এবং যেকোন ধরনের বিভেদ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত পরিহার করতে হবে। অন্যথায়, সূরা ফাতাহর ২৯ নং আয়াতে ‘পরস্পরের প্রতি দয়াশীল’ বাক্যাংশটির আওতায় পড়বে না এবং তারা ইসলামের নবীকে অনুসরণ ও আনুগত্য করার বৃত্ত থেকে বাদ পড়বে।
পাঁচ. মুসলিম ক্যালেন্ডারে কিছু ঐতিহাসিক উপলক্ষ ইসলামের নবী এবং পবিত্র কুরআনের সাথে প্রতিশ্রুতি নবায়ন করার একটি ভালো সুযোগ। এই উপলক্ষগুলির মধ্যে একটি হল ইসলামের নবীর পবিত্র জন্মদিন, যা সুন্নি মাজহাবের অনুসারীরা ১২ রবিউল আউয়াল আর আহলে বাইত (সা.)-এর অনুসারীরা এই মাসের ১৭ তারিখে উদযাপন করে থাকে। ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান সমস্ত মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে এবং তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব ও ভ্রাতৃত্বকে সুসংহত করতে এই দুটি দিনের মধ্যবর্তী ব্যবধানকে ঐক্য সপ্তাহ হিসাবে নামকরণ করেছে, যাতে ক্যালেন্ডারে এই পাঁচ দিনের ব্যবধান তাদের মধ্যে কোন বিভেদ বা দূরত্ব তৈরির কারণ না হয়।
আশা করা যায় যে, ইসলামের মহানবী (সা.)-এর জন্মবার্ষিকী এবং ঐক্য সপ্তাহ বিশ্বের সকল মুসলমানের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও বন্ধুত্ব আরো শক্তিশালী করার উপলক্ষ্য হবে এবং তাদের বৃহৎ পরিবারকে কাফের এবং কুরআন ও ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও শক্তিশালী একক সত্ত্বা হিসেবে স্থিতিশীল ও মর্যাদাবান করে রাখবে।
লেখক: কালচারাল কাউন্সেলর, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান দূতাবাস, ঢাকা।
বঙ্গানুবাদ: মো. সাইদুল ইসলাম
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেলবোর্নে অনিশ্চিত হেড, অভিষেক হচ্ছে কনস্টাসের
লে. জেনারেল মাইনুলকে বিদেশ যেতে বাধা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আন্ত:ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের কলমবিরতি
এস আলমের চিনি, ইস্পাত ও ব্যাগ কারখানা বন্ধ ঘোষণা
পটুয়াখালীতে সুবিধা বঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকার দুর্যোগের প্রভাব বিষয়ক প্রজেক্ট ওরিয়েন্টশন
ফরিদপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকে মারধোর
মুফতি মুতাজ সভাপতি মুফতি শুয়াইব সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত
নওগাঁয় দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত
সিরিয়ায় বিমান চলাচল স্থগিত করল ইরান
যুক্তরাষ্ট্রে খুন মাদক পাচারকারী সুনীল যাদব, দায় নিল বিষ্ণোই গ্যাং
চাঁদপুরে জাহাজে সেভেন মার্ডার: স্বজনদের দাবি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড
বাগেরহাটে ইউপি চেয়ারম্যান নাসির উদ্দীন বরখাস্ত
কালীগঞ্জে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা
"স্বপ্ন রুরাল ফাউন্ডেশন: তরুণদের হাত ধরে সমাজ বদলের এক নতুন যাত্রা"
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে পুড়ে ছাই হাজারো ঘর, শিশুসহ নিহত দুজন
সিলেট সীমান্ত থেকে ১৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
নিখোঁজের ৬ দিন পর বিক্রয় কর্মীর লাশ উদ্ধার
চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুন একজনের বাড়ী ফরিদপুর গেরদা ইউনিয়নে
স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা বা সিস্টেম হিসেবে ডেভেলপ করেনি; স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান
ট্রাম্পের জয়ে ইউক্রেনের সংঘাতে পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে: উপদেষ্টা