আইনশৃঙ্খলার ক্রমাবনতি উদ্বেগজনক
০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
রাজধানীতে ছিনতাই-রাহাজানি বেড়ে গেছে। গত শুক্রবার মোহাম্মাদপুরের বছিলা গার্ডেন সিটি হাউজিং এলাকায় গণছিনতাইয়ের ঘটনা এর সাক্ষ্য দেয়। ইনকিলাবে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সন্ধ্যা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সময়ে ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সীদের প্রায় ৩০ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছিনতাইয়ে লিপ্ত থাকে। তারা কয়েকজন পথচারীকে ছুরিকাগাত ও মারধর করে। মোবাইল ফোন ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। এছাড়া আশপাশের ১২-১৪টি দোকানে ভাংচুর করে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, ওই এলাকায় দিনে-রাতে প্রায়ই চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এলাকাটি কার্যত অপরাধীদের অভয়ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ছিনতাই-রাহাজানি নিয়মিত ঘটনা হলেও থানা-পুলিশের তৎপরতা ও প্রহরা লক্ষ করা যায় না। সঙ্গতকারণেই এলাকাবাসী চলাফেরা ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে আতঙ্কিত থাকে। ভীত-সন্ত্রাস ও অনিরাপত্তা ঢাকার প্রায় সর্বত্রই কমবেশি লক্ষ করা যায়। জান-মালের নিরাপত্তার কোনো নিশ্চয়তা নেই কোথাও। ইনকিলাবের খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, একটি চক্র প্রায় এক যুগ ধরে উত্তরা, এয়ারপোর্ট, আবদুল্লাহপুর, কুড়িল বিশ্বরোডসহ বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই করে আসছে। বাধা পেলে বা ধরা পড়লে ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাত, এমনকি হত্যা করতে দ্বিধা করে না। গত ২৭ সেপ্টেম্বর একজনকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটে। পরে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুধু ছিনতাইকারী ও রাহাজনদের দৌরাত্ম্যই নয়, অন্যান্য অপরাধীচক্রও বিশেষেত, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টির দৌরাত্ম্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। আরো উদ্বেগের বিষয়, নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকার আন্ডার ওয়ার্ল্ড সক্রিয় হয়ে উঠেছে। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকে জেল থেকে জামিন পেয়েছে। তারাও তৎপর। ক’দিন আগে সন্ত্রাসীদের এলোপাথাড়ি গুলিতে একজন আইনজীবী আহত ও পরে মারা গেছেন। অবৈধ অস্ত্রের বিকিকিনি ও ব্যবহার বাড়ছে বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে অপরাধী চক্রগুলোর বাড়বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসী চক্রগুলোর নাশকতাও যে বৃদ্ধি পাবে, সহজেই তা আন্দাজ করা যায়।
আইনশৃঙ্খলা সুরক্ষা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশ সে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না বা করতে পারছে না। আইনশঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি এর প্রমাণ বহন করে। আমাদের পুলিশের অনেক ‘নামডাক’ আছে। এমনও বলা হয়ে থাকে, পুলিশ মাটির নিচ থেকে অপরাধী ধরে আনতে পারে। এরূপ নামডাকের পুলিশও কেন অপরাধী ও সন্ত্রাসী চক্রেগুলোর হাত থেকে নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না, সেটাই প্রশ্ন। এদিকে পুলিশের দক্ষতা ও পারঙ্গমতা প্রশ্নের সম্মুখীন হলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে ও গ্রেফতার করতে কোনো জুড়ি নেই। পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকার পুলিশকে অতিমাত্রায় দলীয়করণ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। এর ফলে পুলিশের পক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নাগরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মূল দায়িত্ব পালন ব্যহত হচ্ছে বা সম্ভব হচ্ছে না। পুলিশের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা অতিরিক্ত দলবাজ এবং আরেক শ্রেণীর কর্মকর্তা দুর্নীতিবাজ হওয়ায় পেশাগত দায়িত্ব পালনে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। পুলিশের যত দুর্নাম ও অখ্যাতি এদেরই জন্য, এদেরই কারণে। পুলিশের অপারগতা ও ব্যর্থতার জন্যই অপরাধীচক্র, সন্ত্রাসীচক্র, চাঁদাবাজচক্র ইত্যাদি বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ক্রমাগত খারাপ হয়ে যাচ্ছে। ডলার সংকট, রিজার্ভ হ্রাস, রফতানি ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়া ইত্যাদি অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামছাড়া। মূল্যস্ফীতি অতীতের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। অধিকাংশ মানুষের কাজ নেই, আয় নেই। বিনিয়োগ নেই, নতুন কর্মসংস্থান নেই। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীরা বরং বেকার হয়ে যাচ্ছে বা তাদের আয় কমে যাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বাড়ার কারণে তাদের মধ্যে হতাশা যেমন বাড়ছে, তেমনি যাচ্ছেতাই করার প্রবণতাও বাড়ছে। বছিলা এলাকায় যারা দলবেঁধে ছিনতাই করেছে তাদের বয়সের উল্লেখ থেকেই বুঝা যায় কৈশরউত্তীর্ণরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। কিশোর গ্যাং সৃষ্টি এবং তাদের অপকর্মের পরিধি যেভাবে বাড়ছে, সেটা একটা বড় আশংকার কারণ। কিশোর-যুবারা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি থেকে শুরু করে ইভটিজিং, হত্যা, ধর্ষণ পর্যন্ত করতে পিছপা হচ্ছে না। লক্ষ করা যাচ্ছে, পুরুষের তুলনায় নারীরা অধিকতর অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া ছাড়াও এখন অধিক হারে নারীরা কর্মজীবী হিসাবে কাজ করছে। তারা অপরাধী চক্রগুলোর বিশেষ টার্গেটে পরিণত হয়েছে।
কথায় বলে, অভাবে স্বভাব নষ্ট। অভাব-দারিদ্র্য মানুষকে বিপথগামী করে। অপরাধী করে তোলে। অপরাধের ধরন, সংখ্যা ইত্যাদি থেকে বুঝা যায় এর পেছনে অভাব-দারিদ্র্যের অন্যতম ভূমিকা রয়েছে। কাজেই, মানুষের কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে, যাতে মানুষ কর্মহীন ও বেকার না থাকে। আর্থ-সামাজিক কারণেই সরকারের উচিত উৎপাদনশীল ও অধিক কর্মসংস্থানমুখী খাতে বিনিয়োগ করা। মানুষের কর্মসংস্থান ও আয় বাড়লে আপনা আপনিই অপরাধ প্রবণতা কমবে। পর্যবেক্ষকদের মতে, অপরাধের প্রবণতা ও সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অবক্ষয় ও অনুপস্থিতি বিশেষভাবে দায়ী। দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে পরিকল্পিতভাবে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। পরিবার বলয়েও নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের চর্চা প্রায় উঠে গেছে। এর ফল আমরা সর্বত্র প্রত্যক্ষ করছি। দেশ ও সমাজকে অপরাধমুক্ত করতে হলে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও চর্চা বাড়ানোর বিকল্প নেই। বলার অপেক্ষা রাখে না, অপরাধের সংশোধন ও শাস্তি অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। সেক্ষেত্রে সংশোধন ও শাস্তি অত্যাবশ্যক। আমরা আশা করব, পুলিশ আইনশৃঙ্খলার উন্নতি বিধান এবং নাগরিক নিরাপত্তা জোরদারে যথাযথ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে। সরকারের দায়িত্ব হবে পুলিশের কাজ পুলিশকে করতে দেয়া।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি
হিমেলের দুচোখ হারানো মামলা মির্জাপুরে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার
আল্লাহর একাত্ববাদ কায়েম করতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে
কুয়াকাটায় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযানে ৬৭ হাজার জরিমানা
ভ্রমণকারীদের জন্য মেডিকেল ডেবিট কার্ড নিয়ে এল ভিসা ও ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসি
সংস্কারবিহীন নির্বাচন দেশে নব্য ফ্যাসিবাদের জন্ম দেবে
নেত্রকোনার পূর্বধলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ইসলামী যুব আন্দোলনের কম্বল বিতরণ
আটঘরিয়ায় নারীর মৃতদেহ উদ্ধার
রামপালে ইউপি চেয়ারম্যান নাসির বরখাস্ত
রাজবাড়ীর কালুখালীতে এনআরবিসি ব্যাংকের ১০৮তম শাখার উদ্বোধন
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রধান শাখায় অপ্রীতিকর ঘটনা
খুলনা বারের সাবেক সম্পাদক কারাগারে
ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গেল ‘রূপসী বাংলা’ ট্রেন, উৎফুল্ল যাত্রীরা
'মেসির সম্মান রক্ষার্থেই বার্সা ছাড়েন নেইমার'
সারাদেশে নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতির আল্টিমেটাম মোংলায় প্রতিবাদ সভা এবং বিক্ষোভ
সংস্কার কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করছে নির্বাচনের সূচি: আসিফ মাহমুদ
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন
ইজতেমার মাঠে মুসল্লিদের উপর বর্বর হামলার প্রতিবাদে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল
কলাপাড়ায় দিনমজুরের বসত ঘর পুড়ে ছাই
মেলবোর্নে অনিশ্চিত হেড, অভিষেক হচ্ছে কনস্টাসের