সরকারকে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে হবে
০৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
অসময়ে দেশজুড়ে ভারি বৃষ্টিপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নগরীতে পানিবদ্ধতা ও অসহনীয় যানজট সৃষ্টির কারণে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। তবে এই দুর্ভোগের চেয়েও বড় ক্ষতি হয়েছে আমন ধান ও আগাম শীতকালীন শাক-সবজির। কৃষকরা বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এতে আসন্ন মৌসুমে উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাধারণত অক্টোবরে মৌসুমী বায়ু বিদায় নেয়। এ সময় বৃষ্টিপাত হলেও তা ১৪০ থেকে ১৮০ মিলিমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। দিনের বেলা ১০ থেকে ৪০ মিনিটের মতো বৃষ্টিপাত হয়। গত তিনদিন ধরে যে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে, তা অস্বাভাবিক। কিশোরগঞ্জের নিকলিতে রেকর্ড ৪৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ময়মনসিংহ বিভাগের বেশিরভাগ জেলায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। অসময়ে এই বৃষ্টিপাতের অন্যতম কারণ, জলবায়ুর পরিবর্তন। এই পরিবর্তনের কারণে অকাল বর্ষণ থেকে শুরু করে বন্যা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। এর শিকার হচ্ছে, উন্নত বিশ্বের দেশ থেকে শুরু করে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো।
দেশে এবার বর্ষার ভর মৌসুমে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। এ বছর স্বাভাবিক বৃষ্টির তুলনায় ৬৫ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। গত বছরও একই পরিস্থিতি দেখা গেছে। গত দুই-তিন মাস আগেও বৃষ্টি ও পানির অভাবে আমন চাষীদের মধ্যে হাহাকার দেখা গেছে। এতে চাষের সময় থেকে তাদেরকে পিছিয়ে যেতে হয়। কোনো রকমে অধিক ব্যয়ে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে চাষের কাজ সমাপ্ত করতে হয়। শুধু আমনই নয়, বৃষ্টির অভাবে মৌসুমী শাক-সবজি চাষেও ব্যাঘাত ঘটে। এই সময়ে এসে যখন ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তখন চাষকৃত ফসলাদি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। দেশের অনেক এলাকায় ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি কোনো কোনো এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। ফসল তলিয়ে গেছে। কৃষিবিদরা জানিয়েছেন, ভারি বৃষ্টিপাত ও ঢলের কারণে দেশের অনেক জায়গায় আগাম শাক-সবজির ক্ষেত ডুবে যাচ্ছে। এছাড়া পরবর্তী চাষাবাদও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে উৎপাদন ব্যাহত হয়ে সংকট দেখা দিতে পারে। বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর পরিবর্তন নতুন কিছু নয়। এ পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে। এজন্য উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর অতিরিক্ত কার্বণ নিঃসরণকে দায়ী করা হয়। এতে পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রতিবছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে উত্তর মেরুর বরফ গলে সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশে বেশি লক্ষ্যণীয়। এ পরিস্থিতিতে ফসল উৎপাদন করতে কৃষকদের বেগ পেতে হচ্ছে। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া, অসময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টি, খরা, বন্যা, পাহাড়ি ঢল, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়তে হচ্ছে। সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি অধিদফতর থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের আবহাওয়ার এই বিরূপ পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে কিভাবে ফসল উৎপাদন করা যায়, এ নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। পরিবর্তনশীল আবহাওয়ার সাথে কৃষকদের অভ্যস্ত করে ফসল ফলাতে সহযোগিতা করতে হবে।
গত কয়েক দিনের ভারি বৃষ্টিপাতে আমনসহ মৌসুমী শাক-সবজির মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য কৃষকদের কাছে এখন আর নতুন করে ফসল ফলানোর মতো অর্থ নেই। বিষয়টি সরকারকে ভাবতে হবে। যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তারা যাতে নতুন করে দ্রুততম সময়ে ফসল ফলাতে পারে, এজন্য তাদের আর্থিক সহায়তা দিতে হবে। খাদ্য সংকট মোকাবেলায় সরকারকে এ খাতকে এখন সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রয়োজনে অন্যখাতের অর্থ দিয়ে কৃষিখাত তথা কৃষকদের দিতে হবে। এটাই এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। এমনিতেই নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। বাজারে গিয়ে তারা দিশাহারা হয়ে পড়ছে। শাক-সবজি কিনতে গিয়েও পারছে না। ইতোমধ্যে কাঁচামরিচ, পেঁয়াজসহ অন্যান্য শাক-সবজির দাম আকাশ ছুঁয়েছে। কাঁচামরিচের কেজি ৩০০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। অকাল বৃষ্টিপাতে আগাম মৌসুমী শাক-সবজির যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে আগামীতে সরবরাহ কমে গেলে দাম কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। সরকারও বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে। বাণিজ্যমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন, দাম বেঁধে দিয়েও তা কার্যকর করা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে, আগামীতে নিত্যপণ্যের মূল্য যে সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার আরও বাইরে চলে যাবে, তাতে সন্দেহ নেই। এ পরিস্থিতিতে, অকাল বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের পাশে আর্থিক সহায়তা নিয়ে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মোজাম্বিকে বাংলাদেশিদের ৩শ' ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লুটপাট ও ভাঙচুর
অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু
দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ
বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার
ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের
শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা
অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া
একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে
তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর
২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত
মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি
আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ
অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না