ইসরাইলি বর্বরতা বন্ধ করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম

গত শনিবার ফিলিস্তিনের মুক্তি আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গাজা উপত্যকা থেকে হঠাতই ইসরাইলের অভ্যন্তরে রকেট হামলা চালায়। একইসঙ্গে ইসরাইলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে হামলা করে। অনেক দিন ধরে ইসরাইল গাজায় ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে যাচ্ছিল। চলতি বছর দু’শর বেশি ফিলিস্তিনি ইসরাইলি হত্যাকা-ের বর্বরতার শিকার হয়েছে। ওদিকে সাম্প্রতিককালে বার বার ইসরাইলি কর্মকর্তারা আল আকসা মসজিদের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এর পবিত্রতা নষ্ট করছিল। মুসলমানদের তৃতীয় পবিত্র স্থান হিসাবে আল আকসা পরিগণিত। এর অমর্যাদা সঙ্গতকারণেই ফিলিস্তিনিদের আহত করছিল। এ প্রসঙ্গে এও স্মরণ করা যেতে পারে, গাজায় একটানা ১৬ বছর ধরে চলছে ইসরাইলি অবরোধ। এতে ফিলিস্তিনিদের আয়-উপার্জন সীমিত হয়ে পড়েছে। খাদ্যসহ অর্থনৈতিক সংকটে তারা নাজেহাল ও ক্ষুব্ধ। এর উপর যখন-তখন ইসরাইলি হানা ও হত্যাকা-। এর আগেও হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, ইসরাইলি আগ্রাসন, জুলুম, নির্যাতন ও হত্যাকা-ে অতীষ্ট হয়ে হামাস ইসরাইলে এ হামলা চালিয়েছে, যা এ যাবৎ কালের মধ্যে সবচেয়ে বড় বলে মনে করা হচ্ছে। ৭৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম গ্রিন লাইন অতিক্রম করেছে ফিলিন্তিনি যোদ্ধারা। এ হামলায় ইসরাইলের জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অবশ্য এর পরপরই ইসরাইলি বাহিনী গাজায় নির্বিচার বিমান হামলা চালিয়ে হামাসের কিছু স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে। উভয়পক্ষে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত যুদ্ধে ৭০০ ইসরাইলি ও ৪১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। উভয়পক্ষে কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে। হতাহতদের মধ্যে বেসামরিক ব্যক্তির সংখ্যাই বেশি। ২০১৪ সালের হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ সামরিক বাহিনীর মধ্যেই সীমিত ছিল। এবার তার ব্যতিক্রম। ইসরাইলি বাহিনী গাজায় যে বর্বরতা দেখাচ্ছে, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর যুদ্ধ ঘোষণার পর সেটা আরো ব্যাপক ও মারাত্মক রূপ নিতে পারে। ওদিকে হামাসের সমর্থনে ইসলামিক জিহাদ এবং পশ্চিম তীর ও লেবাননের হিজবুল্লাহও যুদ্ধে শরীক হয়েছে। এমতাবস্থায় যুদ্ধের বিস্তৃতি ও ভয়াবহতা বাড়তে পারে। বেসামরিক নাগরিক আরো অধিক সংখ্যায় হতাহত হতে পারে। দুনিয়াতে প্রাণের চেয়ে মূল্যবান কিছু নেই। প্রাণ মুসলমানের হোক, ইহুদির হোক বা অন্য কোনো ধর্মীয় জাতি-গোষ্ঠীর হোক, সমান মূল্যবান। যুদ্ধ প্রাণহানি ও ধ্বংস ছাড়া আর কোনো কিছু দেয় না। যুদ্ধে বেসামরিক নাগরিক হত্যা সর্বোতভাবে পরিত্যাজ্য।

পৌনে এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের ওপর আগ্রাসন ও যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। ফিলিস্তিনি ভূখ-ে সা¤্রাজ্যবাদী ও ইসলামবিদ্বেষীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই রাষ্ট্রটি শুরুতেই ফিলিস্তিনিদের হত্যা ও বিতাড়নের নীতি গ্রহণ করেছে। এ পর্যন্ত কত ফিলিস্তিনিকে যে ইসরাইল হত্যা করেছে, তার ইয়ত্তা নেই। ফিলিস্তিনিদের অধিকাংশ জায়গা সে দখল করে নিয়েছে। লাখ লাখ ফিলিস্তিনি বিতাড়িত হয়ে বিভিন্ন দেশে বসবাস করছে। গাজা ও পশ্চিম তীরে যতটা জায়গা ফিলিস্তিনিদের অধিকারে আছে, সেখানে পরিকল্পিতভাবে ইহুদি বসতি স্থাপন করা হচ্ছে। ফিলিস্তিনি ভূখ- থেকে ফিলিস্তিনিদের সম্পূর্ণ নির্মূল ও বিতাড়নই ইসরাইলের আসল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যেই সে কাজ করে আসছে। দুঃখজনক, এই অবৈধ, আগ্রাসী, সন্ত্রাসী ও ঘাতক রাষ্ট্রটিকে সমর্থন ও সহায়তা করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রম-লী। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো চোখ বন্ধ করে হামাসের হামলার নিন্দা করেছে। হামাস কেন, কোন্ প্রেক্ষাপটে হামলা চালাতে বাধ্য হয়েছে তা বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। পশ্চিমারা সব সময় ফিলিস্তিনিদের কোনো জবাবী হামলার পর ইসরাইলের ‘আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলে ইসরাইলকে প্ররোচণায়ও শক্তি যোগায়, ইসরাইলি হামলা ও হত্যাকা-কে সমর্থন জানায়। প্রশ্ন হলো, আত্মরক্ষার অধিকার কি কেবল ইসরাইলের বা ইহুদিদের আছে, মুসলমান বা ফিলিস্তিনিদের নেই? আত্মরক্ষার অধিকার, মানবাধিকার ইত্যাদি প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বরাবরই দ্বৈত নীতি অনুসরণ করে আসছে। বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তার অজুহাতে তারা আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া প্রভৃতি মুসলিম রাষ্ট্র ও তাদের জনগণের সঙ্গে কী ব্যবহার ও আচরণ করেছে, তা কারো অজানা নেই। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’র নামে এসব মুসলিম রাষ্ট্রকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ হতাহত ও বিতাড়িত হয়েছে। কোথায় তাদের আত্মরক্ষার অধিকার ও মানবাধিকার? রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো ইউক্রেনকে সমর্থন করছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ইহুদী বলে এবং তার অধিবাসীরা শ্বেত বলে কি? শ্বেতাঙ্গবাদ, ইহুদিবাদ, খ্রিস্টবাদ ইত্যাদি এসব রাষ্ট্র ও তার নেতাদের অন্ধ করে দিয়েছে।

চোখ বন্ধ করলে প্রলয় বন্ধ হয় না। আজ হামাস যা করছে, তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে এগিয়ে এসেছে ইসলামিক জিহাদ, হিজবুল্লাহ। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ঐক্যের যে সংকট ছিল, তা ইতোমধ্যে কেটে যাওয়ার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ফিলিস্তিনির ঐক্য খুবই জরুরি। লক্ষ করার বিষয়, মুসলিম দেশই নয় অন্যান্য দেশেও ফিলিস্তিনিদের অধিকার ও সংগ্রামের প্রতি গণসমর্থন রয়েছে। এখনই যদি গাজায় হামলা থেকে ইসরাইল বিরত না হয় কিংবা হামাস হামলা জোরদার করে তবে যুদ্ধ প্রলম্বিত হবে এবং একতরফা হবে না। মানুষ পারতপক্ষে যুদ্ধ ও প্রাণহানি চায় না। চায় শান্তি, নিরাপত্তা ও সৌভ্রাতৃত্ব। এই জনপ্রত্যাশার মূল্য দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে। উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শন করতে হবে। এতদিনের ‘ফিলিস্তিন সমস্যা’র সমাধান না হওয়া বিশ্ব নেতৃবৃন্দের শোচনীয় ব্যর্থতার প্রমাণ বহন করে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো আন্তরিক হলে অনেক আগেই এ সমস্যায় সমাধান হয়ে যেতো। বস্তুত তাদের স্বার্থেই সংকট বহাল রয়েছে। তারাই এ সংকট জিইয়ে রেখেছে। আরব বিশ্ব কিংবা ওআইসি’র ভূমিকাও এক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। ওআইসি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আল আকসার মর্যাদা ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য। আরব লীগ ও ওআইসি দৃঢ়ভাবে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়ালে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা প্রমাদ গনতে বাধ্য হতো। তারা শান্তি, স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের পক্ষে কিনা, তার প্রমাণ দেয়ার এখন একটা উপযুক্ত সময়। আমরা আশা করি, তারা যুদ্ধ বন্ধে এবং দীর্ঘকালীন এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে, যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বই আত্মার মহৌষধ
তরুণদের সামরিক প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে
সারবাহী জাহাজে ৭ খুন : দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে
গণতন্ত্র ও সাম্যের পথে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ রুখে দেয়া আর সম্ভব নয়
রাষ্ট্র সংস্কারে ইসলামের অনুপম শিক্ষা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে
আরও

আরও পড়ুন

অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু

অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু

দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ

দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ

বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার

বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার

ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের

ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের

শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা

শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা

অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার

অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া

একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে

একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে

তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত

তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ

‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর

‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর

২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ

২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ

পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ

ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত

ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত

মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি

মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি

আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ

আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ

অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না

অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না

হাসিনার নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত শুরু

হাসিনার নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত শুরু