স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রই একমাত্র সমাধান
১২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
ফিলিস্তিনে পুনরায় ব্যাপক নারকীয়তা শুরু করেছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাস প্রাচীন কালের যুদ্ধাস্ত্রগুলতি মারা বন্ধ করে হঠাৎ করে আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র তথা রকেট ও ড্রোন দিয়ে ইসরাইলে ব্যাপক আক্রমণ চালিয়েছে গত ৭ অক্টোবর। তাতে ৫ হাজার রকেট ও অনেক ড্রোন ব্যবহার করেছে তারা। একই সঙ্গে সেদিন অনেক হামাস যোদ্ধারা ইসরাইলের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক হামলা করেছে। ইসরাইলও পাল্টা ভয়াবহ আক্রমণ শুরু করেছে। তিন লাখ সংরক্ষিত সামরিক সদস্যকে তলব, সীমান্ত জুড়ে ৩ লাখ সেনা মোতায়েন এবং ইউরোপ থেকে অনেক রিজার্ভ সেনা এনেছে। দেশটি ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে অবিরাম ব্যাপক আক্রমণ চালাচ্ছে। এ আক্রমণে ইসরাইল প্রায় ৫ লাখ সেনা মোতায়েন করেছে, এর মধ্যে গাজায় ৩.৭৩ লাখ। আক্রমণ থেকে শরণার্থী শিবির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রক্ষা পাচ্ছে না। এ আক্রমণে নিষিদ্ধ ঘোষিত সাদা ফসফরাস বোমা নিক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। গাজা পুরোপুরি বিধ্বস্ত ও মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের মতে, গাজায় প্রায় এক লাখ লোক বাস্তুচ্যুৎ হয়েছে। ইসরাইল গাজায় পানি, বিদ্যুৎসহ সব কিছু সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিম তীরেও মানুষ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। এ যুদ্ধে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত উভয় পক্ষের প্রায় ২ হাজার লোক প্রাণ হারিয়েছে। তন্মধ্যে হাজারের অধিক ইসরাইলি, ১১ জন মার্কিনি ও ১০ জন নেপালি রয়েছে। এছাড়া, উভয় পক্ষের কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়েছে। তন্মধ্যে অনেক মার্কিনিসহ বিভিন্ন দেশের বহু লোক আছে। গাজায় একই পরিবারের ১৯ জন সদস্য নিহত ও ৪ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছে। হামাসের ১৫শ’ সদস্যকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল। হামাসের হাতে ১৩০ জন ইসরাইলি সেনা ও সাধারণ মানুষ বন্দি হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকজন মার্কিনি ও অন্য দেশের লোক রয়েছে। হামলা বন্ধ না হলে বন্দিদের হত্যা করার হুমকি দিয়েছে হামাস। এ হামলা সম্পর্কে কিছুই জানতে না পারার কারণে ইসরাইলের গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে। মধ্যপ্রাচ্যেকে পাল্টে দেব বলেও হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন তিনি। হামাসের এ আকস্মিক ও ভয়াবহ হামলায় ইসরাইলের শক্তিমত্তার বড়াই বড় রকমে ধাক্কা খেয়েছে। সাধারণ ইসরাইলিদের মধ্যে চরম আতংক সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ে ঠাঁই নিয়েছে। গাজার পার্শ্ববর্তী শহরগুলো থেকে সব ইসরাইলিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ইসরাইলের সাবেক গোয়েন্দা উপ-প্রধান বলেছেন, জিম্মিদের উদ্ধার করাই বড় চ্যালেঞ্জ। লেবাননের হিজবুল্লাহও ইসরাইলে হামলা চালিয়েছে। তাদেরও কিছু লোক নিহত-আহত হয়েছে। যুদ্ধের চতুর্থ দিনে পশ্চিম তীরে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ হয়েছে। ইসরাইলের এক কমান্ডার গাজা থেকে সব ফিলিস্তিনদের পালিয়ে মিশরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। মিশর সংশ্লিষ্ট সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। হামাসও ইসরাইলের একটি শহর থেকে সব বাসিন্দার সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। হামাসের প্রধান হানিয়ে বলেছেন, যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বন্দিদের বিষয়ে কোনো সমঝোতা হবে না। তবে সংগঠনের পলিট ব্যুরোর সদস্য মারযুক বলেছেন, হামাসের সামরিক কার্যক্রমের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে এবং এখন যে কোনো মধ্যস্থতা বা সংলাপের জন্য তারা প্রস্তুত। ইসরাইলের সাবেক এমপি আবু শাহাদেহ বলেছেন, উগ্র ডান ফ্যাসিস্টদের কারণে আমাদের জীবন এখন মহাবিপদে। এ যুদ্ধের কারণে ইসরাইলি মুদ্রা শেকেলের ব্যাপক দরপতন হয়েছে, যা গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ।
ইসরাইল-হামাসের চলতি যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিশ্বব্যাপীই। জ্বালানি তেলসহ অনেক পণ্যের মূল্য বেড়েছে। বহু দেশে অসংখ্য মানুষ ফিলিস্তিনদের পক্ষে বিক্ষোভ সমাবেশ করছে। মুসলিম দেশগুলোতে বিক্ষোভকারীদের প্রধান শ্লোগান হচ্ছে, ‘ইসরাইলের কালো হাত ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও’। ‘বদরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার।’ ‘বিশ্ব মুসলিম ঐক্য গড়ো, ফিলিস্তিন স্বাধীন করো’। পশ্চিমা দেশগুলোতেও ইসরাইল ও ফিলিস্তিনদের পক্ষে বিপক্ষে ব্যাপক মিছিল-মিটিং হচ্ছে। রাশিয়া বলেছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সব চেয়ে নির্ভরযোগ্য সমাধান। ইইউ ফিলিস্তিনিদের সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। আমেরিকা ইসরাইলের পক্ষে যুদ্ধাস্ত্র প্রেরণ করেছে। এ যুদ্ধে ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা করার তীব্র নিন্দা করেছে রাশিয়া। গাজায় সাংবাদিক নিহত হওয়ায় সিপিজে উদ্বেগ জানিয়েছে। মার্কিন আহ্বানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত সভায় হামাসের প্রতি নিন্দা প্রস্তাবে কোনো ঐকমত্য হয়নি। ফলে যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়নি। চীন, বাংলাদেশসহ অনেক দেশ যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে। সৌদি আরব দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের ভিত্তিতে একটি বিশ্বাসযোগ্য শান্তি প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। হামাসের এ হামলায় ইরানের সহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু ইরান তা প্রত্যাখান করে বলেছে, ফিলিস্তিনের যোদ্ধাদের প্রতি আমাদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে। ওআইসিকে জরুরি সভা ডাকারও আহ্বান জানিয়েছে ইরান। লেবাননের হিজবুল্লাহ হামাসকে সমর্থন জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইতালি এক যৌথ বিবৃতিতে হামাসের আক্রমণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস এবং ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগের সঙ্গে ফোনালাপ শেষে বলেছেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিরা চাইলে তিনি উভয়ের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত। সৌদি যুবরাজ সালমান বলেছেন, তিনি ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতের বিস্তার রোধে কাজ করছেন। উপরন্তু তিনি ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, ফিলিস্তিন জনগণের একটি যথোপযুক্ত জীবনযাপনের বৈধ অধিকার অর্জন, তাদের আশা-আকাক্সক্ষার অর্জন ও ন্যায়সঙ্গত, স্থায়ী শান্তি অর্জনের জন্য তাদের পাশে থাকবে রিয়াদ। ভারত ইসরাইল থেকে ভারতীয়দের ফেরত আনা শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইসরাইলকে সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত। ফিলিস্তিন ৩টি মানবাধিকার সংগঠন চলমান ভয়াবহ যুদ্ধ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে খোলা চিঠিতে বলেছে, ইসরাইল পর্যায়ক্রমিকভাবে এবং ব্যাপক হারে ফিলিস্তিনে যে সহিংসতা করে যাচ্ছে সে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য দায়ী জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো। এশিয়ার অনেক এয়ারলাইন্স ইসরাইলে ফ্লাইট বাতিল করেছে। মালয়েশিয়ার সরকার ও বিরোধী দলগুলো সম্মিলিতভাবে বলেছে, ফিলিস্তিন জনগণের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে এবং পুরো বিশ্বের উচিত এই সত্যটি মেনে নেওয়া। সবার উচিত ইসরাইলের পেছনে থাকা পরাশক্তির তির্যক দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনদের পাশে দাঁড়ানো। জাতিসংঘ বলেছে, এ যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ সংঘাতের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে উত্তর কোরিয়া বলেছে, এ থেকে বের হওয়ার মূল উপায় হলো একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গড়ে তোলা। চেচেন নেতা কাদিরভ বলেছেন, ফিলিস্তিনের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এ যুদ্ধ বন্ধ না হলে তা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান বলেছেন, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের সম্পূর্ণ অবরোধ আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো বলেছেন, হামাসরা সন্ত্রাসী। কাতার বলেছে, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে বন্দি বিনিময় নিয়ে আলোচনা শুরুর সময় এখনো আসেনি। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের বর্তমান পরিস্থিতিতে চীনা নাগরিকদের সেখানে না যাবার পরামর্শ দিয়েছে। ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরো ইসরাইলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ করে বলেছেন, ‘আমরা অতীতে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও নৃশংসতা প্রত্যক্ষ করেছি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪টি ছাত্র সংগঠনের জোট এক বিবৃতিতে চলমান সংঘাতের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করে দেশটিকে একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
বর্তমান যুদ্ধের আগে ২০০৮, ২০০৯, ২০১২, ২০১৪, ২০২১ সালেও ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে ব্যাপক যুদ্ধ হয়েছে। উপরন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরাইল ফিলিস্তিনের অধিকৃত অঞ্চলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে, বহু এলাকা দখল করে নিয়ে ইহুদী বসতি স্থাপন ও লোক স্থানান্তর করেছে। পবিত্র আল আকসা মসজিদে মুসলিমদের প্রবেশে বাধাদান ও পবিত্রতা নষ্ট করছে। এসব ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক, সামরিক তথা সার্বিকভাবে সহায়তা করছে ইসরাইলকে। এসব নানা কারণে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে প্রচ- ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। যার বহিঃপ্রকাশ হামাসের সাম্প্রতিক আক্রমণ বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
বিশ্বের সব চেয়ে পুরাতন সংকটের অন্যতম ফিলিস্তিন সংকট। এ ব্যাপারে বিবিসির খবরে প্রকাশ, মধ্যপ্রাচ্যের সংকটের সৃষ্টি ১৯৪৮ সালের ১৪ মে থেকে। ফিলিস্তিন তুর্কী সাম্রাজ্যের অধীন ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুর্কী সাম্রাজ্যের পতন হলে লিগ অব নেশনের (বর্তমানের জাতিসংঘ) সিদ্ধান্তক্রমে ব্রিটেন ফিলিস্তিন শাসন করার ম্যান্ডেট পায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানিতে ব্যাপক ইহুদী নিধন হয়, যা হলোকাস্ট নামে খাতে। ফলে ইহুদীদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি উঠে। এ অবস্থায় ব্রিটেন মুসলিম অধ্যুষিত ও শাসিত ফিলিস্তিনকে মুসলিম ও ইহুদীদের মধ্যে ভাগাভাগি করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা আমেরিকাসহ অনেক দেশ সমর্থন করে। তৎপ্রেক্ষিতে ১৪ মে ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর ইউরোপের ইহুদীরা দলে দলে সেখানে এসে বাস শুরু করে। অন্যদিকে, মধ্যপ্রাচ্য সংকট শুরু হয়। ফিলিস্তিনরা ১৪ মে-কে নাকবা বা বিপর্যয়ের দিন হিসাবে পালন করে এবং স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করে, যা অব্যাহত আছে এখনো। ফিলিস্তিনিদের প্রধান দাবি পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। অপরদিকে, ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত বহুবার আরব-ইসরাইল যুদ্ধ হয়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছে ১৯৬৭ সালে। তখন ৬ দিনের যুদ্ধে ইসরাইল পার্শ্ববর্তী সব মুসলিম দেশের বহু অঞ্চল দখল করে নিয়েছে, যার অধিকাংশ বহাল আছে এখনো। ইসরাইলের ব্যাপক আক্রমণের কারণে ফিলিস্তিনের প্রায় অর্ধেক মানুষ বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরের মানবেতর জীবনযাপন করছে বহু দিন থেকে। তারা সব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। উপরন্তু ফিলিস্তিনিরা বিদেশি সহায়তা নির্ভর হয়ে পড়েছে। ইসরাইলের আক্রমণে এ পর্যন্ত অসংখ্য ফিলিস্তিন নিহত-আহত হয়েছে। তন্মধ্যে বেশিরভাগ শিশু, নারী ও বয়স্ক মানুষ।
বর্ণিত অবস্থায় ১৯৯৩ সালে অসলোতে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে একটি শান্তি চুক্তি হয়, যা অসলো চুক্তি নামে খ্যাত। তাতে স্বাক্ষর করেন পিএলও নেতা ইয়াসির আরাফাত এবং ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী আইজাক রবিন। এ কারণে তারা শান্তিতে নোবেল প্রাপ্ত হন। এই চুক্তির শর্তের অন্যতম হচ্ছে- চুক্তির পর থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনিরা গাজা ও পশ্চিম তীরে স্বায়ত্তশাসন পাবে এবং ২০০০ সাল থেকে পূর্ণ স্বাধীন হবে। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এই শান্তি চুক্তিকে স্বাগত জানায়। কিন্তু ইসরাইলের কট্টরপন্থীরা এই শান্তি চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে। উপরন্তু প্রধানমন্ত্রী রবিনকে হত্যা করে। এই কট্টরপন্থীদের কারণেই আজ পর্যন্ত উক্ত শান্তি চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। ফিলিস্তিনও স্বাধীন হয়নি। ফলে মধ্যপ্রাচ্য সংকট অব্যাহত আছে। বর্তমান যুদ্ধেরও কারণ অসলো শান্তি চুক্তির বাস্তায়ন না হওয়া।
মধ্যপ্রাচ্যের এবং বিশ্বের শান্তি ও উন্নতি অব্যাহত রাখার স্বার্থে হামাস-ইসরাইল চলতি যুদ্ধ বন্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংকটের স্থায়ী সমাধান করা আবশ্যক। এখন সর্বাগ্রে প্রয়োজন চলতি যুদ্ধ বন্ধ করা। অতঃপর স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ও ইসরাইলের সব দখলকৃত এলাকা মুক্ত করা। এসব করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে জাতিসংঘকে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বাধা সৃষ্টি করলেও তা মোকাবেলা করেই সাফল্য অর্জন করতে হবে। এ ব্যাপারে ওআইসিকে পূর্ণাঙ্গ সহায়তা করতে হবে। ফিলিস্তিনদেরও নিজেদের ভেদাভেদ ভুলে মহান স্বাধীনতার জন্য একযোগে লড়াই করতে হবে। নতুবা স্বাধীনতা অর্জিত হবে না। স্বাধীনতা কখনো দয়ার দান হয় না, লড়াই করেই অর্জন করতে হয়। আধুনিক যুদ্ধকে আধুনিক সমরাস্ত্র দিয়েই মোকাবেলা করত হয়। ইসরাইলিদের মনে রাখতে হবে, ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠি হয়ে চতুর্দিকে মুসলিম দেশগুলোর মাঝখানে শান্তিতে বাস করতে হলে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং মধ্যপ্রাচ্য সংকট নিরসনে তাদের আন্তরিক ও উদ্যোগী হতে হবে। নতুবা টিকে থাকা হবে কঠিন।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু
দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ
বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার
ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের
শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা
অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া
একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে
তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত
ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ
‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর
২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা
ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ
পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ
ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত
মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি
আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ
অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না
হাসিনার নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত শুরু