নিম্নমানের ভারতীয় গোশত আমদানি রুখতে হবে
১২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
এক সময় দেশে গোশতের চাহিদা মিটাতে ভারত থেকে গরু-মহিষ আমদানি করতে হতো। হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মূলত গো-রক্ষা আন্দোলনের প্রভাবে বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করে দেয়া হয়। বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ হলেও ভারত থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গরুর গোশত রফতানি বন্ধ হয়নি। দেশটি বর্তমানে গরুর গোশত রফতানিতে বিশ্ববাজারে শীর্ষ তালিকায় রয়েছে। অথচ, গরুর গোশত খাওয়া ও সংরক্ষণের অভিযোগে ভারতীয় মুসলমানরা তথাকথিত গোরক্ষকদের হাতে যত্রতত্র আক্রমণ ও নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হচ্ছে। সে প্রসঙ্গ এখানে আলোচ্য নয়। যাহোক, ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দেশীয় কৃষক ও খামারিরা গরু-মহিষ ও পশু পালনে মনোযোগ দেন। তাদের এই প্রচেষ্টায় খুব দ্রুতই সুফল পাওয়া গেছে। প্রায় এক দশক ধরে ভারতীয় গরু আমদানি ছাড়াই কোরবানির সময় এবং সারা বছর গোশতের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে দেশীয় পশুর মাধ্যমে। বলা চলে, দেশ এখন পশু সম্পদে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। পশু সম্পদ তথা গোশতের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, পোল্ট্রি ও ডিম উৎপাদনেও দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে পশু ও পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদন ও আমদানিতে অতিরিক্ত ব্যয়বৃদ্ধি ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে ভোক্তা পর্যায় গোশত ও ডিমের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জন্য দুর্বহ হয়ে উঠেছে। সিন্ডিকেটেড দুর্নীতি ও মধ্যসত্বভোগীদের অতিরিক্ত মুনাফাবাজির কারণে প্রায় প্রতিটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। ফলে প্রথমত ভারত থেকে বিভিন্ন কৃষিপণ্য আমদানি করে মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানার চেষ্টা লক্ষ্যনীয় হয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারত থেকে বৈধ-অবৈধ পথে গোশত আমদানি হচ্ছে।
গোশত আমদানির কারণে পশু সম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের কারিগর দেশীয় খামারিরা বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। অন্যদিকে গোশত আমদানিকে সরকারিভাবে নিরুৎসাহিত করা হলেও আদতে নানাভাবে বছরে হাজার হাজার টন গরু-মহিষের গোশত দেশে প্রবেশ করছে বলে জানা যায়। দেশের বাজারে গরু-মহিষের গোশতের দাম প্রতি কেজি ৭০০ টাকার বেশি হলেও আমদানিকৃত গোশত এর প্রায় অর্ধেক দামে পাওয়া যায়। এতে দেশের অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁয় এসব গোশত কিনে রান্না করে খাওয়ানো হচ্ছে বলে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে চট্টগ্রাম বন্দরে ভারত থেকে আমদানিকৃত একটি গোশতের কন্টেইনার দীর্ঘদিনেও খালাস না হওয়ায় ২৮ হাজার কেজি কথিত মহিষের গোশত নিলামে বিক্রির চেষ্টা করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আমদানি নথি অনুসারে চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্যাকেটকৃত গোশত ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও ইতোমধ্যে গোশতের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের গোশত মাত্র ৪ লাখ টাকা দর উঠেছে বলে খবরে জানা যায়। তবে বৈধ পথে গোশত আমদানিতে ২০ ভাগ শুল্ক নির্ধারিত হওয়ায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে গোশত আমদানি করতে সীমান্তের বিভিন্ন রুট দিয়ে অবৈধ উপায়ে নানাভাবে গোশত বাংলাদেশে আসছে। ফ্রিজিং কন্টেইনারে গোশত দীর্ঘদিন ভালো রাখার ব্যবস্থা থাকলেও স্থলপথে অবৈধভাবে আসা গোশত আনতে ফরমালিনসহ নানাবিধ রাসায়নিকের ব্যবহার ছাড়াও অস্বাস্থ্যকর উপায়ে আনা হচ্ছে। তাছাড়া ভারত থেকে গরু বা মহিষের গোশত হিসেবে আমদানি করা হলেও এসব আসলে কিসের গোশত, হালাল উপায়ে জবাই করা হয়েছে কি না, ভোক্তারা এ সম্পর্কে কিছুই জানে না। শুধুমাত্র কম দামে গোশত কেনার সুযোগ গ্রহণ করতে হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিক ও একশ্রেণির ভোক্তা এসব গোশত কিনছেন। ফলে মানহীন, অস্বাস্থ্যকর ও অনিশ্চিত গোশত কিনে এবং খেয়ে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন।
ভারত থেকে গরু-মহিষ রফতানি বন্ধের পর দেশের চাহিদা পূরণে এ খাতে পুরনো ও নতুন খামারিরা বাড়তি বিনিয়োগসহ বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে সফল হয়েছেন। একইভাবে দেশের পোল্ট্রি খামারিরাও লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে সুলভ মূল্যে মুরগি ও ডিমের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সক্ষম হচ্ছেন। যেখানে ধানের বাম্পার ফলনের পরও ভারত থেকে চাল আমদানি করে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত করার পরও ভোক্তারা স্বল্পমূল্যে চাল কিনতে পারে না। একইভাবে আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচের মতো পচনশীল কৃষিপণ্য উৎপাদনে কোনো ঘাটতি না থাকলেও এসব নিয়ে সিন্ডিকেটেড মূল্যস্ফীতির দুর্ভোগে পড়তে হয় দেশের ভোক্তাদের। সব ক্ষেত্রেই কথিত সিন্ডিকেট দমন ও মূল্য নিয়ন্ত্রণের বদলে ভারত থেকে আমদানি করে মূল্য কমানোর যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায় তা দেশের উৎপাদন ব্যবস্থাকে ভারসাম্যহীন করে তোলে। ডিমের মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতে ভারত থেকে কোটি কোটি ডিম আমদানি করা হলেও মূল্য কমাতে পারেনি সরকার। দেশে গরু-মহিষ ও পোল্ট্রি খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি গরু-মহিষ পরিবহন ও কেনাবেচার ক্ষেত্রে পথে পথে চাঁদাবাজি, নানাবিধ খরচ কমিয়ে আনার মাধ্যমে গোশত ও ডিমের মূল্য ভোক্তাদের জন্য সহনীয় রাখা অসম্ভব নয়। প্রতিবেশী দেশগুলোতে গরুর গোশতের দাম ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে। বাংলাদেশে তা তিন-চারগুণ বেশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। বৈধ-অবৈধ পথে নি¤œমানের গোশত ও ডিম আমদানি বন্ধ করে খরচ কমিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি ও মূল্য নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন
এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস
লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের
সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক
ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!
যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা
তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল
৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে