ওআইসি ও আরবলিগের নিষ্ক্রিয়তা ধিক্কারযোগ্য

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম

গত রমজান মাসে আল আকসা মসজিদে প্রবেশ করে ইবাদতরত রোজাদার মুসলমানদের উপর বর্বর আক্রমণ চালিয়ে মসজিদের পবিত্রতা ও ঐতিহ্যের উপর কালিমা লেপন করে সশস্ত্র ইসরাইলী পুলিশ। নারী ও শিশুসহ অসংখ্য মানুষ তাদের আক্রমণে রক্তাক্ত, আহত হয়। এরপর গত মে মাসের শেষদিকে অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলী বিমান হামলায় প্রায় অর্ধশত ফিলিস্তিনি নিহত হয়। গাজায় এপি, আল জাজিরার অফিস ভবন বিমান হামলায় ধ্বংস করা হয়। গত মাসে শত শত ইসরাইলী নিরাপত্তারক্ষির প্রহরায় হঠাৎ করেই কয়েক শ’ ইহুদি আল আকসা মসজিদ কমপ্লেক্সে ঢুকে পড়ে এবং তাদেরকে মুসলমানদের প্রতি উস্কানিমূলক ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে দেখা যায়। এভাবেই চলছে দশকের পর দশক ধরে। আগ্রাসনের মাত্রা অনেক আগেই সীমা ছাড়িয়েছে। সাম্প্রতিক দেড় দশকে বেশ কয়েকবার লেবানন-ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যোদ্ধা হেজবুল্লাহ ও হামাসের প্রতিরোধ-প্রত্যাঘাত ইসরাইলী বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করলেও ইসরাইলের আগ্রাসী বাহিনীর বেপরোয়া বিমান হামলায় প্রতিবারই হাজার হাজার বেসামরিক বাড়িঘর, স্থাপনা ধ্বংস এবং হাজার হাজার নিরস্ত্র বেসামরিক ফিলিস্তিনির মৃত্যু হলেও ফিলিস্তিনের আরব প্রতিবেশী কিংবা মানবাধিকারের ধ্বজাধারি পশ্চিমা কুশীলবদের কখনোই অবরুদ্ধ গাজাবাসি ও ফিলিস্তিনিদের মানবিক অধিকারের পক্ষে কোনো ভূমিকা রাখতে দেখা যায়নি। উপরন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইঙ্গ-মার্কিনীদের প্ররোচনায় ইসরাইলীদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে কতিপয় আরব দেশ। সেখানে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও অধিকারের প্রশ্নটি দু:খজনকভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। এসব বিষয়কে সামনে রেখেই হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধারা ৭ অক্টোবর ইসরাইলের শহরগুলোতে রকেট নিক্ষেপ ও সীমান্ত প্রতিরক্ষাব্যুহ ভেঙ্গে ইসরাইলের দক্ষিনাঞ্চলীয় শহরগুলোতে প্রবেশ করে গেরিলা যুদ্ধে লিপ্ত হয়।

হামাসের এই দু:সাহসী অভিযানে সারাবিশ্বে বিষ্ময়ের জন্ম দিয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ক্রমাগত নিপীড়ন, আগ্রাসন ও আল-আকসার অবমাননার প্রতিবাদে ‘অপারেশন আল আকসা ফ্লাড’ শুরুর আগে দশকের পর দশক ধরে একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি চলছে। পশ্চিমা অস্ত্রের বলে বলিয়ান হয়ে ইহুদি হাগানা মিলিশিয়ারা ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনিদের পূর্ব পুরুষের আবাসভূমি থেকে উচ্ছেদ করে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠন করা হয়। কোনো আরব রাষ্ট্র জায়নবাদী ইসরাইলকে মেনে না নিলেও তারা তাদের আগ্রাসী ভূমিকা ও সম্প্রসারণবাদী তৎপরতা অব্যহত রাখায় ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সৃষ্টি হয়। সে সময়ও পশ্চিমাদের অস্ত্র ও প্রত্যক্ষ মদতে পূর্ব জেরুজালেম, গোলান মালভূমিসহ ফিলিস্তিন, মিশর ও জর্ডানের বিশাল এলাকা দখলে নেয় ইসরাইল। পশ্চিমা মধ্যস্থতায় যুদ্ধ বিরতি হলেও অধিকৃত ভূমি ফিরিয়ে দেয়ার কোনো ব্যবস্থাই কোনো পক্ষ গ্রহণ করেনি। এ ক্ষেত্রে আরবলীগ ও ওআইসির ভূমিকা ও ব্যর্থতা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। অবৈধভাবে গড়ে তোলা কয়েক মিলিয়ন ইহুদি অধ্যুসিত ইসরাইলের হাতে যত সমরাস্ত্রই থাক না কেন, ওআইসি ও আরবলীগের সদস্য অর্ধশতাধিক মুসলমান রাষ্ট্রের শতকোটি মুসলমানের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ কিংবা প্রত্যাঘাতে ইসরাইলের শক্তির দর্প দুইদিনেই চূর্ণ করে দেয়া সম্ভব।

গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের স্থল-নৌ ও বিমান অবরোধ চলছে ১৬ বছর ধরে। হামাসের অপারেশন শুরুর পর গতকাল পর্যন্ত ৬দিন ধরে গাজা সিটির উপর হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা করা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় এক হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। প্রায় ৬ হাজার মানুষ আহত এবং তিনলক্ষাথিক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র ও ঘনবসতিপূর্ণ গাজায় ইসরাইলের বেপরোয়া আক্রমণে ফিলিস্তিনি নারী-শিশুসহ দেড়হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার পর জাতিসংঘ গাজায় ইসরাইলের অবরোধকে যুদ্ধাপরাধ বলে ঘোষণা করেছে। ইতিপূর্বেও আন্তর্জাতিক তদন্তে ফিলিস্তিনের উপর ইসরাইলের ডিসপ্রোপর্শনেট শক্তি প্রয়োগ এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদতে সংঘটিত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন, মানবাধিকার ও যুদ্ধাপরাধে ইসরাইলের কোনো জবাবদিহিতা না থাকায় তারা ক্রমেই আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আঞ্চলিক সংহতি ও জনগণের প্রবল প্রতিরোধের মুখে ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও ইয়েমেনে পশ্চিমা আগ্রাসন প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমানিত হয়েছে, কোনো শক্তিই আর অজেয় নয়। মুসলমানদের প্রথম কিবলা বায়তুল মোকাদ্দাস পুনরুদ্ধারসহ মুসলমানদের ঐক্য ও অধিকারকে নিরাপদ ও সমুন্নোত করতেই ওআইসি এবং আরবলীগের জন্ম হয়েছিল। হামাসের রকেট হামলা শুরুর সাথে সাথেই ইঙ্গ-মার্কিন তরফে ইসরাইলের পক্ষে নির্লজ্জ ভূমিকায় অবর্তীণ হলেও অসহায় ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলী অবরোধ ও গণহত্যার মুখে থাকা গাজাবাসির পক্ষে আরব দেশগুলোর নিষ্ক্রীয় ভূমিকা বিষ্ময়কর ও নিন্দনীয়। রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান মার্কিন ভূমিকাকে ইসরাইলের গণহত্যায় পৃষ্ঠপোষকতা বলে উল্লেখ করেছেন। তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়া ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বললেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদতে ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে আরবলীগ-ওআইসির সমন্বিত ও কঠোর অবস্থান এখন সময়ের দাবি। ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র বদলে দেয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা দেয়ার পর তাদের আর বসে থাকার সুযোগ নেই। ফিলিস্তিনের কোনো নিয়মিত সেনাবাহিনী নেই-বিমানবাহিনী না থাকলেও আঞ্চলিক পরাশক্তি ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে রণতরী ও বিদ্ধংসী সমরাস্ত্র পাঠিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে বার্তা দিয়েছে তা খুবই হতাশাজনক। বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তি হিসেবে বিশ্ব নেতৃত্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই দুর্বল ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক আইন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বেসামরিক গাজাবাসিদের ওপর যুদ্ধাপরাধের মত অভিযোগকে অগ্রাহ্য করে জায়নবাদী ইসরাইলের পক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের এমন ভূমিকা কোনো নতুন বিষয় নয়। গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ ও জোরালো ভূমিকা নিতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বই আত্মার মহৌষধ
তরুণদের সামরিক প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে
সারবাহী জাহাজে ৭ খুন : দ্রুত তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে
গণতন্ত্র ও সাম্যের পথে এগিয়ে চলা বাংলাদেশ রুখে দেয়া আর সম্ভব নয়
রাষ্ট্র সংস্কারে ইসলামের অনুপম শিক্ষা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে
আরও

আরও পড়ুন

অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু

অতিসত্বর নির্বাচন হওয়ার দরকার : আমীর খসরু

দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ

দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরা মাফিয়াদল যাতে বাংলাদেশে আর ফেরত না আসতে পারে : মেজর হাফিজ

বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার

বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিচ্ছে সরকার

ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের

ক্যাডার বর্হিভূত রাখার সুপারিশ প্রত্যাখ্যান শিক্ষা ক্যাডারের

শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা

শেখ হাসিনাসহ ৬৩ জনের নামে মামলা

অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার

অভিযানের খবরে পালাল শ্রাবণধারা কারখানার পরিচালক-ম্যানেজার

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে নেই আশানুরূপ সাড়া

একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে

একতাই পারবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে

তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত

তিতাস গ্যাস টি.এন্ড ডি. পিএলসি’র ৫% নগদ লভ্যাংশ অনুমোদিত

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ

ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল্লামা সাজিদুর নির্বাহী সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ

‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর

‘আপনারা আমার খালেদকে ফেরত এনে দেন’ : নিখোঁজ সহ-সমন্বয়কের বাবা লুৎফর

২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ

২৮ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাফত মজলিসের অধিবেশন প্রেস ব্রিফিংয়ে নেতৃবৃন্দ

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

ইনসেপ্টার বিক্রয় প্রতিনিধির ২২টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ

পিকে হালদারের পাঁচ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের নির্দেশ

ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত

ভূমধ্যসাগরে ৮ বাংলাদেশি নিহত

মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি

মুক্তি পেলেন ভারতের সমুদ্রসীমায় গ্রেফতার ১২ বাংলাদেশি

আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ

আ.লীগকে পুনর্বাসনকারীদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়বে গণঅধিকার পরিষদ

অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না

অন্তর্বর্তী এ সরকারের মধ্যে দুটি সরকার রয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না

হাসিনার নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত শুরু

হাসিনার নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলার পুনঃতদন্ত শুরু