ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধি করতে হবে
১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০১ এএম
ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রথম নির্বাচনী মেনিফেস্টো প্রকাশিত হয়েছিল। কথা ছিল দেশের প্রতিটি সেবা খাত এবং সরকারের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও তথ্য পরিষেবাকে ডিজিটালাইজ করে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া হবে। এ কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। কিছু সমস্যা থাকলেও দেশ ডিজিটালাইজেশনের আওতায় এসেছে। অন্যদিকে, ইন্টারনেটের গতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুধু দক্ষিণ এশিয়ায়ই নয়, সারাবিশ্বেই অনেক পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে কিছুদিন পর পর ইন্টারনেট সার্ভিসের ফাইভ জি বা পঞ্চম জেনারেশন সার্ভিসের উদ্বোধন করতে দেখা গেলেও, বাস্তবে দুই জেনারেশন আগের গতিও নিশ্চিত করা যায়নি। এটা আইএসপি প্রতিষ্ঠান ও মোবাইল অপারেটরগুলোর ব্যর্থতা বটে।
তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রসরমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে সবাই এগিয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। যেখানে দেশের ক্ষমতাসীনরা ইন্টারনেট সেবা ও ডিজিটালাইজেশনকে সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প হিসেবে গ্রহণ করেছে, সেখানে এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার কথা নয়। ইন্টারনেটের দিক থেকে বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। গতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আফ্রিকার অতি দরিদ্র দেশ উগান্ডার চেয়েও পিছিয়ে রয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। স্পিডটেস্ট ডটনেটের ২০২১ সালের তথ্যমতে, বিশ্বের ১৩৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৩৫তম। যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ সিরিয়া, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, লিবিয়াসহ অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার কোনো কারণ নেই। গত মাসে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি শার্ফ সার্কের ডিকিএল (ডিজিটাল কোয়ালিটি লাইফ) রিপোর্টে দেখা যায়, ইন্টারনেটের গতির ক্ষেত্রে বিশ্বে তো বটেই, ভারতের চেয়ে ৭৩ শতাংশ পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। এহেন বাস্তবতা সামনে রেখে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটর এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানিগুলো অনেকটা মনোপলি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। একের পর এক দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের গতিশীল ইন্টারনেট সার্ভিস চালুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়ার পরও ইন্টারনেটের গতি বাড়েনি। দেশে ফাইভ জি বা পঞ্চম প্রজন্মের ইান্টারনেট ব্যবস্থা উদ্বোধনের পর ইতিমধ্যে ২ বছর পর হয়ে গেলেও সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে ফাইভ জি গতির ইন্টারনেট সোনার হরিণ হয়ে রয়েছে। বেশিরভাগ ব্রডব্যান্ড ও মোবাইল ইন্টারনেট সার্ভিসে এখনো ফোর জি সেবাই চালু করতে পারেনি। এ নিয়ে তাদের উপর বিটিআরসি কিংবা সরকারের কোনো সংস্থার নিয়ন্ত্রণ কিংবা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের সংশ্লিষ্টরা মন্ত্রীরা আইএসপি ও মোবাইল অপারেটরদের স্পেক্ট্রাম বা তরঙ্গ বরাদ্দ দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। তরঙ্গ বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার এবং গ্রাহকদের সুবিধা-অসুবিধা নিশ্চিত করতে তাদের কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়না। বাস্তব ক্ষেত্রে তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিমন্ডলে ইন্টারনেটের গতির প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে দেশ। মোবাইল অপরাটের কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের নানা মেয়াদের ইন্টারনেট বান্ডেল বিক্রির বিজ্ঞাপণ প্রচার করলেও এর বেশিরভাগই গতি ও মেয়াদের সাথে সামঞ্জস্যহীন। প্রকারান্তরে কোটি কোটি মোবাইলফোন গ্রাহক প্রতিনিয়ত, ঠকছে ও প্রতারিত হচ্ছে। বিশ্বের খুব অল্প কয়েকটি দেশের মধ্যে প্রথম ফাইভ জি ইন্টারনেট সেবা চালুর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান থাকলেও বছরের পর বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও ফাইভ জি দূরের কথা, আগের ফোর জি গতি-পরিষেবাও পাওয়া যাচ্ছে না। ইন্টারনেটের গতি ও পরিষেবা শুধুমাত্র যোগাযোগ ও বিনোদনের বিষয় নয়। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষা, গবেষণা এবং বিশাল কর্মউদ্যোগ ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে অনেক বড় অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। থ্রি-জি, ফোর-জি বাস্তবায়ন না করেই ফাইভ জি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে, তা এখন অনেকটা আতুড় ঘরেই পড়ে রয়েছে। সরকার এখন স্মার্ট বাংলাদেশের স্লোগান দিচ্ছে। তার এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ধীরগতির ইন্টারনেট সেবা দিয়ে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মানুষ স্লোগান শুনতে চায় না। তারা তার বাস্তবতা ও সেবা পেতে চায়। ইন্টারনেটের বিদ্যমান ধীরগতি, দিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠন করা দুরুহ। এ প্রেক্ষিতে, ইন্টারনেটের বিদ্যমান গতিবৃদ্ধির সাথে সাথে ফাইভ জি প্রচলনে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ইন্টারনেট সেবা নিয়ে ইতোমধ্যে এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন সার্ভিস প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের দাপট পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিটিআরসি সেখানে ব্যবস্থা নিতে পারছে না। সে-ও অসহায় হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষ ইন্টারনেটের প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা কোনোভাবে কাম্য নয়। দেশকে স্মার্ট করতে হলে ইন্টারনেট নিয়ে এ ধরনের অরাজক পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে হবে। দুই বছর আগে চালু হওয়া ফাইভ জি ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা দ্রুত, সহজে ও সুলভে জনগণের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়ার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশ থেকে ৯ গ্রেনেড উদ্ধার
শিশু মুনতাহা হত্যায় জড়িত সন্দেহে ৩ নারী আটক
স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ায় বন্যা মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা নিয়ে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ
নতুন ধারাবাহিক 'হাউজ হাজবেন্ড' নিয়ে ছোট পর্দার ফিরছেন নির্মাতা ফরিদুল হাসান
শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষ্যে তারেক রহমানের বাণী
বেনাপোল বন্দর দিয়ে যাত্রী পারপার কমে অর্ধেকের নিচে, রাজস্ব আদায়ে ধস
ঢাকাসহ সারা দেশে ১৯১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
কুড়িগ্রামে বাস চাপায় মোটরসাইকেল চালক নিহত
হোয়াইট হাউজে বাইডেনের সঙ্গে বুধবার দেখা করবেন ট্রাম্প
দেখা না দিলে বন্ধু, কথা কইয়ো না : হাসনাত আব্দুল্লাহ
তারেক রহমানের পিপিই বিতরণ, বহিস্কৃত শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব সম্পাদক ফিরে পেলেন সদস্যপদ
বাতিল হচ্ছে শেখ পরিবারের নামের সব পুরস্কার
বাতিল হচ্ছে শেখ পরিবারের নামের সব পুরস্কার
ব্রিটিশ রাজা চার্লস ও পুত্র উইলিয়াম সমালোচনার মুখে পড়েছেন!
কোন বয়সে কতটা ঘুমোনো উচিত? আপনাদের বয়স অনুযায়ী মিলিয়ে নিন তালিকা
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার লিভ টু আপিল শুনানি শুরু
আ. লীগ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা
শহীদ নূর হোসেনের প্রতি পরিবারের শ্রদ্ধা
গাজীপুরে বাসের ধাক্কায় প্রাইভেটকারের তিন যাত্রী নিহত
বাতিল হচ্ছে হাওরের উড়ালসড়ক-মেট্রোরেলসহ বহু ‘ইচ্ছাপূরণ’ প্রকল্প