ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

ধীরগতির কবলে দেশ

Daily Inqilab সরদার সিরাজ

১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৬ এএম

গতি বৃদ্ধির ব্যাপক প্রতিযোগিতা চলছে সারা বিশ্বেই। যেমন: চীন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণ সফলভাবে সম্পন্ন করেছে ২০২১ সালে, যার গতি শব্দের চেয়ে ৫ গুণ বেশি। রাশিয়ার জিরকন ক্ষেপণাস্ত্রের গতি ঘণ্টায় ১১,২৬৫ কিলোমিটার। আরো কিছু দেশের পরমাণু বোমা বহনে সক্ষম দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, যার গতিবেগ জিরকনের কাছাকাছি। চীন, রাশিয়া ও আমেরিকার হাইপারসোনিক বিমান রয়েছে, যার গতিবেগ শব্দের গতির চেয়ে তিন-চার গুণ বেশি। গত আগস্টে রাশিয়া চাঁদে গেছে মাত্র ৭ দিনে। আর ভারত গেছে ৪০ দিনে। অর্থাৎ চন্দ্রযানের গতি ভারতের চেয়ে রাশিয়ার ৭ গুণ বেশি। সাধারণ কম্পিউটারের গতির চেয়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের গতি শতগুণ বেশি। আবার কোয়ান্টাম কম্পিউটারের গতির চেয়ে লক্ষগুণ গতি বেশি চীনের সুপার কম্পিউটারের (জুশংসি)। এটাই এ পর্যন্ত সর্বাধিক গতির কম্পিউটার। এর চেয়েও অধিক গতির কম্পিউটার আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে। চীনে ঘণ্টায় ৩৫০ কিলোমিটার গতিবেগের প্রথম ক্রস-সি হাই-স্পিড রেলওয়ের ট্রেন চালু করা হয়েছে গত ২৮ সেপ্টেম্বর। এটি চলবে দক্ষিণ ফুচৌ থেকে সিয়া মেন পর্যন্ত। এতে ৮৪টি প্রধান লাইন সেতু এবং ২৯টি টানেল রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ায়ও ঘণ্টার ৩৫০ কিলোমিটার গতিবেগের বুলেট ট্রেন চালু করা হয়েছে গত ২ অক্টোবর। জাপান ও জার্মানিতে ১১০ কিলোমিটার গতিবেগের চালকবিহীন বুলেট ট্রেন চলছে গত দু’বছর যাবত। চীন ঘণ্টায় ৬০০ কিলোমিটার উচ্চ গতির ম্যাগলেভ ট্রেন চালু করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বেশিরভাগ দেশের সড়ক পথের অবস্থাও ভালো। গতিবেগ ঘণ্টায় একশ’ কিলোমিটারের অধিক। সড়ক ও চালকের অবস্থাও খুব ভালো। নৌপথেরও অবস্থা খুবই ভালো। এছাড়া, অন্য সব কাজেরও গতির মাত্রা অনেক, যা ক্রমান্বয়েই বেড়েই চলেছে। এছাড়া, অনেক দেশে এখন থ্রি ইন ওয়ান গাড়ি চলছে। একই গাড়ি সড়কে চলছে, পানিতে চলছে আবার উড়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের চিত্র উল্টো। সব ক্ষেত্রেই গতি অত্যন্ত ধীর। যেমন: ট্রেনের গতিবেগ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫০-৬০ কিলোমিটার। এছাড়া, দুর্ঘটনার অন্ত নেই। কারণ, ট্রেন ও রেলপথের অবস্থা চরম খারাপ। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদন-২০২১ মতে, এশিয়ায় খারাপ রেল অবকাঠামোর দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ। গত দেড় দশকে দেড় লাখ কোটি টাকার অধিক ব্যয় করেও তেমন উন্নতি হয়নি। লোকসানও চলছে। দেশের সড়কপথের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় এনবিইআরের ধীর গতির শহরের সূচক-২০২৩ মতে, বিশ্বের ১৫২টি দেশের ১,২০০টি শহরের যান চলাচলে সবচেয়ে ধীর গতির শীর্ষ ২০ তালিকায় ঢাকা প্রথম, ময়মনসিংহ নবম ও চট্টগ্রাম দ্বাদশ। বাংলাদেশের রাস্তায় চলাচলের গতি ১.৩% বাড়াতে পারলে জিডিপি ১০% বাড়বে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ভালো সড়কের তালিকায় ১৩৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১১৩তম। আইএমএফের সাম্প্রতিক তথ্য মতে, বিশ্বের চতুর্থ ধীর গতির সড়ক নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের, যেখানে যানবাহনের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪১ কিলোমিটার। ইউএন-এসকাপের প্রতিবেদন-২০২৩ মতে, অননুমোদিত যানবাহন চলাচলে এশিয়ার শীর্ষে রয়েছে খুলনায় ৫৮% ও ঢাকায় ৫৪%। অন্য শহরের অবস্থাও প্রায় একই। বেশিরভাগ চালকও অদক্ষ ও লাইসেন্সহীন। বিআরটিএ সম্প্রতি জানিয়েছে, দেশে এখন দক্ষ চালকদেরও অধিকাংশের চোখের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ও চোখের কন্ট্রাক্ট সমস্যা রয়েছে। উপরন্তু ৫ লাখের বেশি মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন চলছে। এসব নানা কারণে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হারও বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। দেশের নৌ পথের অবস্থাও তথৈবচ। দেশের যোগাযোগ খাতের গতিবেগ ও অবস্থা বিশ্বের মধ্যে সর্বনি¤œ। ইন্টারনেটের গতি উগান্ডার চেয়েও কম। ইন্টারনেটের গতিতে বিশ্বের ১৩৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৫তম। একই অবস্থা সরকারের মেগাপ্রকল্পগুলোরও। বিদেশি ঋণনির্ভর এবং শুধুমাত্র অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ প্লান্টভিত্তিক মেগাপ্রকল্পগুলোর একটিও নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন হয়নি। তাতে ব্যয় বেড়েছে অনেক। একই অবস্থা সরকারি সব কাজেরই। উপরন্তু মানও খারাপ। পরিবেশ বান্ধবও নয়। এডিপিও নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন হয় না কোন বছরই। যেটুকু কাজ হয়, তারও মান খারাপ। দুর্নীতি ব্যাপক। আবার অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে না পারায় টাকা ফেরৎ যায়।

সরকারি জনবলের প্রায় এক চতুর্থাংশ পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন যাবত। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী গত ১৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে বলেন, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও অফিসে বেসামরিক জনবলের ৩,৫৮,১২৫টি পদ শূন্য রয়েছে। অর্থাৎ সরকারি বেসামরিক জনবলের (১৫.৬ লাখ) প্রায় এক চতুর্থাংশ শূন্য রয়েছে বহুদিন থেকে। তবুও নিয়োগ হচ্ছে না। দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা থেকে তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগ করে পিএসসি। কিন্তু সংস্থাটি যথাসময়ে চাহিদা মাফিক নিয়োগ করতে পারে না। ফলে অনেক পদ শূন্য থাকছে। তাতে কাজের চরম ব্যাঘাৎ ঘটছে। উন্নতির ক্ষতি হচ্ছে। বেকারত্বও বাড়ছে। দেশের সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায়। খবরে প্রকাশ, সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদ শূন্য আছে প্রাথমিকে ৩৮ হাজার, মাধ্যমিকে ২ হাজার, কারিগরিতে ৭০% ও মেডিকেলে ৪৫%, বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা অনেক। আর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের শূন্য পদের সংখ্যা অত্যাধিক। উপরন্তু যেসব শিক্ষক কর্মরত আছে, তাদের অধিকাংশই অপ্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ফলে তাদের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। এসব কারণে দেশের শিক্ষার মানের ব্যাপক অবনতি হযেছে। যা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা ব্যয় বহুল কোচিং নির্ভর হয়েছে। ফলে শিক্ষা ব্যয় বেড়েছে অনেক, যা বহন করতে না পেরে গরীব শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে/ঝরে পড়ছে। ধনী শিক্ষার্থীরা কোচিং করে শিক্ষার ঘাটতি পুষিয়ে নিচ্ছে। ফলে দেশের শিক্ষা ধনীক শ্রেণীর হয়ে পড়েছে। তাদের সন্তানদের বেশিরভাগই বিদেশে শিক্ষা গ্রহণ করছে (ইউনেসকোর প্রতিবেদন মতে, ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গেছে ৫২,৭৯৯ শিক্ষার্থী)। এদের বেশিরভাগ শিক্ষা শেষে বিদেশেই স্থায়ী হচ্ছে। উপরন্তু সম্প্রতি স্কলারশিপ দিয়ে মেধাবীদের নিয়ে যাচ্ছে ধনী দেশগুলো। এভাবে দেশে দক্ষতার ঘাটতি ব্যাপক, যা পূরণের জন্য বিপুল ব্যয়ে বিদেশিদের এনে কাজ করাতে হচ্ছে। এছাড়া, দক্ষতার ঘাটতির কারণে আমাদের রেমিটেন্সের হারও খুব কম অন্যসব দেশের তুলনায়। দেশের সরকারি ব্যাংকের কর্ম খুবই মন্থর। সামান্য টাকা তুলতেও কমপক্ষে ২ ঘণ্টা লাগে। দক্ষতা ও জবাবদিহির অভাবেই এটা হয়েছে। একই কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো বিপুল খেলাপী ঋণের ভারে ডুবতে বসেছে। গত ১৪ বছরে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ৭ গুণ। তন্মধ্যে সরকারি ব্যাংকে বেশি। বিশ্ব ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য মতে, ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার বাংলাদেশে ১০.১১%, ভারতে ৩.৯% ও পাকিস্তানে ৭.৪%। উল্লেখ্য যে, গত জুন, ২৩ পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলোর (মোট ৬১টি) ঋণের পরিমাণ ১৫,৪২,৬৫৫ কোটি টাকা, তন্মধ্যে ৪,১৩,৩০৯ কোটি টাকা তথা ২৬.৭৯% দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ (আইএমএফের মতে খেলাপি, পুনঃতফসিল ও অবলোপন করা ঋণ ‘দুর্দশাগ্রস্ত’)। এছাড়া, সুদহার স্বল্পতার কারণে ব্যাংকে আমানত কমে গিয়ে প্রায় অর্ধেক ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষক/সমন্বয়ক বসিয়েও কোন লাভ হচ্ছে না। ব্যাংকবহির্ভূত ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও গত জুন পর্যন্ত মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১৯,৯৫১ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২৭.৬৫%। ফলে ৭টি প্রতিষ্ঠান অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। দেশের অন্যসব প্রতিষ্ঠানেরও কাজের গতি খুবই ধীর। তন্মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানে বেশি। তাই কোন কাজই সঠিক সময়ে হয় না। বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪২ লাখ, যার অধিকাংশই দীর্ঘদিনের। বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি, সব ধরনের দূষণের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত ইত্যাদি রয়েছে। এভাবে গতি মন্থরতার কারণে দেশের মানুষের শ্রমশক্তির ব্যাপক অপচয় হচ্ছে। এছাড়া ব্যবসায়িক পরিবেশেরও কাক্সিক্ষত উন্নতি হচ্ছে না। ব্যবসায়িক পরিবেশের সূচক-২০২৩ মতে, বিশ্বের ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬৮তম।

বস্তুত দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই গতি অত্যন্ত মন্থর। তাই ব্যাপক সম্ভাবনাময়ী দেশ হওয়া সত্ত্বেও কাক্সিক্ষত উন্নতি হচ্ছে না। উপরন্তু যেটুকু উন্নতি হয়েছে তা থেকেও অবনমন ঘটছে। যেমন: দেশের ব্যালেন্স অব পেমেন্টের ঘাটতি বেড়েই চলেছে। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য মতে, ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৮২২ কোটি ডলারের অধিক, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৬৬৫ কোটি ডলারের বেশি। ইআরডির তথ্য মতে, গত জুলাই পর্যন্ত দেশের ঋণ জিডিপির হার ৪২.১%। আর কোনো ঋণ না নিলেও গৃহীত ঋণ পরিশোধ করতে ২০৬২ সাল পর্যন্ত লাগবে। তবুও ঋণ বেড়েই চলেছে। পরিকল্পনামন্ত্রী গত ৮ অক্টোবর বলেছেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশ উচ্চমাত্রায় ঋণগ্রস্ত’। অনেক দিন থেকে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে পণ্যমূল্য ৬-৭% হলেও দেশে প্রায় ১০%। তন্মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় ১৫%। ফলে দেশের বেশিরভাগ মানুষের ঘরে চলছে চরম হাহাকার। তারা বাধ্য হয়ে খাদ্য গ্রহণ অনেক কমিয়ে দিয়েছে! ফলে পুষ্টিহীনতা বাড়ছে। সিইআইসি ডাটার মতে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির চাপে ক্রয়ক্ষমতা সংকুচিত হয়ে ব্যক্তি খাতের ভোগ ব্যয় কমতে যাচ্ছে ১৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ আজ বিপর্যস্ত।
এই অবস্থায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও ভারতের তিস্তা ব্যারেজের সব গেইট খুলে দেওয়ায় বন্যার সব পানি ঢুকে উত্তর বঙ্গে ব্যাপক অকাল বন্যায় রোপা আমনসহ সব ফসল ডুবে গেছে। তাই খাদ্যের মূল্য সহজে কমবে না। সর্বোপরি রিজার্ভ সংকট (বর্তমানে আছে ১৮ বিলিয়ন ডলারের নিচে। অথচ আইএমএফ’র শর্ত মতে, প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার থাকতে হবে), মার্কিন ডলারের সংকট ও উচ্চ মূল্য, টাকার মানের ব্যাপক অবনমন, রেমিটেন্স, রফতানি, শেয়ার বাজার, বিনিয়োগ ও বেসরকারি খাত ইত্যাদিতে ভাটা, যুদ্ধ, মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বিপুল অর্থ পাচার, হুন্ডির কারবার বৃদ্ধি, কর জিডিপির হার নগন্য, আয় বৈষম্য সর্বোচ্চ, আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ইত্যাদি রয়েছে। অর্থাৎ দেশের সামাজিক ও আর্থিক সব সূচকই নি¤œমুখী হয়ে নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যার বেশিরভাগই হয়েছে সুশাসনের অভাবে ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে। বাংলাদেশ ব্যাংকও সম্প্রতি বলছে, দেশের অর্থনীতি সংকটে পড়েছে কেবল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে নয়। বরং এর জন্য দেশের অভ্যন্তরীণও ছয় কারণ দায়ী (আবহাওয়াজনিত প্রতিবন্ধকতা, অনৈতিক ব্যবসা, দুর্বল করপোরেট পরিচালনা, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি সংস্কৃতি, জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো এবং শুল্ক ফাঁকি ও অর্থ পাচার) বলে খবরে প্রকাশ। যা’হোক, দেশে অর্থনৈতিক সংকট ছাড়াও রাজনৈতিক ও এলডিসি উত্তরণেরও সংকট রয়েছে। তাই দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে পন্ডিতদের মধ্যে আশংকা দেখা দিয়েছে। বিশ্বব্যাংক প্রবৃদ্ধির হার, আইএমএফ জিডিপির পরিমাণ ও আন্তর্জাতিক ঋণমান সংস্থাগুলো ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে। দেশের পরিস্থিতি শ্রীলংকার পর্যায়ে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। এই পরিস্থিতিতে হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ চলছে, যা মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়লে ও দীর্ঘ স্থায়ী হলে জ্বালানি তেলের মূল্য দ্বিগুণ ও রেমিটেন্স অর্ধেকের বেশি কমে গিয়ে দেশে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

সংকট আছে এবং থাকবে। তাই সংকট মোকাবেলা করেই অগ্রসর হতে হবে। সরকারি জনবলের সব শূন্য পদ দ্রুত পূরণ এবং সব ক্ষেত্রেই গতি বৃদ্ধি করে বিশ্ব পর্যায়ের করতে হবে আইনগতভাবে। সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা এবং অটোমেশন ও প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা হলেই এটা হবে। তাতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা বাড়বে। উন্নতি তরান্বিত হবে। মানুষের ব্যাপক কল্যাণ হবে। বিশ্ব ব্যাংকের মতে, বাংলাদেশের রাস্তায় চলাচলের গতি ১.৩% বাড়াতে পারলে জিডিপি ১০% বাড়বে। সে মতে, দেশের সব ক্ষেত্রে গতি বাড়াতে পারলে জিডিপির পরিমাণ দ্বিগুণ হবে স্বল্প দিনেই। যেভাবেই হোক সব ক্ষেত্রেই গতি বাড়াতে হবে।

লেখক:সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে

তোফাজ্জলকে হত্যার আগে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা চাওয়া হয় পরিবারের কাছে

বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন

বিশ্বের কাছে ১২টি পরমাণু গবেষণার ও স্থাপনা উন্মুক্ত করবে চীন

এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার

এবার রাবির শেরে-বাংলা হল থেকে লাঠিসোঁটা-হকিস্টিক উদ্ধার

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস

লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের

লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের

সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক

সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক

ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!

ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!

যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা

যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা

তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল

তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল

৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা

৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা

‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে

‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে

ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার

সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার

সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু