গাজায় ইসরাইলের চূড়ান্ত বর্বরতা
২০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
গত ৭ অক্টোবর ২০২৩ ভোরে ইসরাইলের অভ্যন্তরে ফিলিস্তিনি মুক্তিকামী হামাস যোদ্ধাদের অতর্কিত হামলার পর ইসরাইল বন্ধ করে দিয়েছে বিদ্যুৎ, তেল, গ্যাস, খাদ্যদ্রব্য পারাপারের সমস্ত ব্যবস্থাপনা। গাজা এখন পুরোপুরি অবরুদ্ধ। প্রতিনিয়ত ইসরাইল বোমাবর্ষণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা। রাতের আঁধারে বোমার অগ্নি-ফুলকিই একমাত্র আলোর উৎস। ২৫ লাখ মানুষ অপরিমেয় মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহ শিকার।
১৯৪৮ সালের ১৫ মে অবৈধ ইসরাইল রাষ্ট্রের জন্ম ফিলিস্তিনের মুসলমানদের জীবন থেকে কেড়ে নিয়েছে স্বাধীনতার স্বাদ। কেড়ে নিয়েছে মুসলমানদের প্রথম ক্বিবলা, ইসলামের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থান মাসজিদুল আকসার প্রবেশাধিকার। ইহুদি দখলদারিত্বের ৭৫ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল। এই দীর্ঘ পরাধীনতাকালে প্রতিটি মুহূর্ত ফিলিস্তিনি মুসলমানদের অতিবাহিতহ করতে হচ্ছে আতঙ্কের মধ্যে। নিজ ভূমে উদ্বাস্তু হয়েছে লক্ষ লক্ষ পরিবার। শরণার্থী শিবিরই হয়েছে তাদের স্থায়ী আবাস। জাতিসংঘের দেয়া রেশনই তাদের জীবনধারণের উপকরণ। এই দফায় ইসরাইল প্রস্তুতি নিচ্ছে গাজায় স্থল হামলার। ফিলিস্তিনিকে এথনিক ক্লিনজিংয়ের মাধ্যমে জনশূন্য উপত্যাকায় পরিণত করার ভয়ংকর পরিকল্পনা নিয়ে ইসরাইল এখন এগিয়ে আসছে নৃশংস শ্বাপদের মতো।
আমার ঘনিষ্ট ফিলিস্তিনি বন্ধু ড. হাসান বাযাযো গাজার পরিস্থিতি নিয়ে হালনাগাদ সংবাদ জানাচ্ছিল ইসরাইলি হামলা শুরুর পর থেকে। গত রাত থেকে সে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন। জানি না, কী অবস্থায় আছে। সর্বশেষ বার্তায় সে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছিল, ‘আমরা যে অবস্থায় আছি, মানুষ তা চিন্তাও করতে পারবে না। খাবার নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, গ্যাস নেই, ইন্টারনেট নেই। গাজার প্রত্যেক অধিবাসী এখন বিপর্যস্ত। মৃত্যু তাদেরকে যে কোন সময় গ্রাস করবে। অথচ গোটা বিশ্ব নিশ্চুপ। কেউ তাদের সাহায্য করার নেই। কেউ এই গণহত্যা বন্ধে এগিয়ে আসেনি। পশ্চিমারা ইসরাইলের পাশে সবকিছু নিয়ে দাঁড়ালেও মুসলিম দেশগুলো ফিলিস্তিনের পাশে নেই। ওআইসিরও কোনো ভূমিকা দৃশ্যমান নয়। গোটা বিশ্বের আর কোথাও এমন ঘটনা আর ঘটেনি; সম্ভবত মানবেতিহাসেও এমন ঘটনার সাক্ষ্য পাওয়া যাবে না’।
ইসরাইলের অব্যাহত নিষ্পেষণ চলমান থাকা সত্ত্বেও মিডিয়া যথারীতি ইসরাইলের পক্ষেই। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামীদের এখনও বলা হচ্ছে জঙ্গী! অথচ, শত অপরাধ করেও ইসরাইলিরা পার পেয়ে যাচ্ছে নির্বিঘেœ। মিথ্যার সুকৌশল বুননে আর গোয়েবলসীয় তত্ত্বের স্বার্থক প্রয়োগে নিজেদের অপকর্মের বৈধতা দেয়ার জন্য তারা তৈরি করে হাজারো বিভ্রান্তিকর ভাষ্য। যে পশ্চিমা বিশ্ব হলোকাস্ট ঘটিয়ে লক্ষ ইহুদি হত্যা করেছিল, তারাই এখন মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার জন্য নিষ্ঠুর স্বার্থবাদী রাজনীতিকে সামনে রেখে ইহুদিদের সবচেয়ে বড় বন্ধু সেজে বসেছে।
ফলে পিঠ ঠেকে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের এখন আর কোনো পথ নেই। এতবছরেও ফিলিস্তিনি সমস্যার কোনো রাজনৈতিক সমাধান না হওয়ায় তাদের সামনে একটাই পথÑ হয় প্রতিরোধ, নয় শাহাদাত। সম্প্রতি নেতানিয়াহু জাতিসংঘে গিয়ে নতুন ইসরাইল রাষ্ট্রের যে মানচিত্র উপস্থাপন করেছে, তাতে গাজার কোনো উল্লেখই ছিল না। অন্যদিকে আরবদেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নিজের মতো ইসরাইলি ভূখ- সাজানোর পরিকল্পনাও তাদের চলমান ছিল। এতে সবার মৌন সমর্থনও তারা আদায় করে নিয়েছিল। কিন্তু সবাই বিস্মৃত হলেও ফিলিস্তিনিদের আত্মবিস্মৃতির সুযোগ ছিল না। নিজেদের আত্মপরিচয় টিকিয়ে রাখতে, আল-আকসার মর্যাদা অক্ষুণœ রাখতে তাই তাদের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা ছিল না। পাল্টা আক্রমণকালে তারা জানত এতে ইসরাইলিদের ক্ষয়ক্ষতি যা হবে, তার চেয়ে বহুগুণ ভয়ংকর প্রতিশোধের শিকার হ’তে হবে তাদের। তবুও পরিণতির ভয়ে পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ তাদের ছিল না। যে জনপদের প্রতিটি বাড়ি শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে, সে জনপদের মানুষের বুকে জ্বলা তুষের আগুনের মর্ম আর কেউ না বুঝলেও, তারা তো বোঝে। সেই মর্মজ্বালাই তাদেরকে এই মরিয়া আক্রমণে বাধ্য করেছে। কবি মাহমুদ দারবীশের কথায়: ‘দুনিয়া ঘনিয়ে আসছে আমাদের দিকে/ ধরিত্রি ঠেসে ধরছে একেবারে শেষ কোনাটায়.../ শেষ প্রান্তে ঠেকে গেলে যাবটা কোথায়?/ শেষ আসমানে ঠেকে গেলে পাখিগুলো উড়বে কোথায়?’
এই অসম যুদ্ধের ফলাফল আমাদের অজানা নয়। বিশ্বরাজনীতির কঠিন মারপ্যাঁচে এবং মুসলিম বিশ্বের যথারীতি নিশ্চুপ ভূমিকায় এই হামলার চূড়ান্ত পরিণতি যে খুবই ভয়ংকর হবে, তা সহজেই অনুমেয়। বিশেষত এই আক্রমণকে উপলক্ষ করে গাজার অধিবাসীদের বিতাড়িত করা এবং রাফার শরণার্থী শিবিরে বন্দি রাখা এবং সেই সাথে সম্পূর্ণ ফিলিস্তিনকে নিজেদের অধিকারে নেয়ার সহজ সুযোগ গ্রহণ করবে ইসরাইল। আল-আকসা, আল-কুদসকে চিরতরে মুসলমানদের হাতছাড়া করতে তাদের বদ্ধপরিকর সংকল্প এখন বাস্তব রূপ নেবে।
পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আমরা সর্বান্তকরণে কামনা করি, আল্লাহ যেন ফিলিস্তিনের মুসলিম ভাইদের এই মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফিক দান করেন। কেউ না থাকলেও তাদের জন্য আল্লাহ রয়েছেন, এটাই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। ইসরাইলের বিশাল সামরিক শক্তির বিপরীতে ফিলিস্তিনিরা শক্তিতে যত ক্ষুদ্রই হোক আল্লাহর রহমতের চেয়ে বড় শক্তিশালী আর কিছু নয়। সুতরাং আমরা তাঁরই রহমত কামনা করি। সেই সাথে মুসলিম বিশ্বের দায়িত্বশীলদের জন্য দো‘আ করি, তারা যেন নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার চেয়ে মুসলিম উম্মাহর স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন। ন্যায় ও ইনসাফের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেন। কেননা আল-আকসা কেবল ফিলিস্তিনের নয়, সমগ্র মুসলমানদের। ফিলিস্তিনের পরাজয়ের অর্থ সমগ্র মুসলিম বিশ্বের পরাজয়। কোনো মুসলিমের সর্বশেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত তারা তাদের এই রক্তের অধিকার ছাড়তে পারে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফিলিস্তিনকে রক্ষা করুন। ফিলিস্তিনের মুসলিম ভাই-বোনদের রক্ষা করুন।
লেখক: গবেষক।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসবেন ড. ইউনূস
লেবাননে এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা ইসরায়েলের
সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলেন পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক
ইনস্টাগ্রামের মতো ফিচার এবার আসছে হোয়াটসঅ্যাপেও!
যুক্তরাষ্ট্রে কোর্টহাউসে বিচারককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা
তাপপ্রবাহ নিয়ে যা জানা গেল
৫০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা
‘ভারতীয় খাবার জঘন্য’, অস্ট্রেলিয়ান ইউটিউবারের পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে