ভারতীয় গোশত আমদানি ও চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না কেন?
২০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে গরু আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দেশীয় কৃষক ও খামারিরা গরু-মহিষ ও পশু পালনের মাধ্যমে দেশকে পশুসম্পদে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। তাদের এই প্রচেষ্টায় খুব দ্রুতই সুফল পাওয়া গেছে। প্রায় এক দশক ধরে ভারতীয় গরু আমদানি ছাড়াই কোরবানিসহ সারা বছর গোশতের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে দেশীয় খামারিদের বিশেষ উদ্যোগের কারণে। বলা চলে, দেশ এখন পশু সম্পদে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। পশু সম্পদ তথা গোশতের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, পোল্ট্রি ও ডিম উৎপাদনেও দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তবে পশু ও পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদন ও আমদানিতে অতিরিক্ত ব্যয়বৃদ্ধি ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে ভোক্তা পর্যায়ে গোশত ও ডিমের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দরিদ্র মানুষ এখন আর গরুর গোশত ও ডিম কিনতে পারছে না। সিন্ডিকেটেড দুর্নীতি ও মধ্যসত্ত্বভোগীদের অতিরিক্ত মুনাফাবাজির কারণে প্রায় প্রতিটি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে। ফলে প্রথমত ভারত থেকে বিভিন্ন কৃষিপণ্য আমদানি করে মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানার চেষ্টা লক্ষ্যনীয় হয়ে উঠেছে। সিন্ডিকিটেড দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ না করে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করে সাময়িকভাবে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা হলেও এর মধ্য দিয়ে দেশের কৃষক ও খামারিরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তারা বিনিয়োগে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন।
ভারত থেকে গোশত আমদানির কারণে পশু সম্পদে আত্মনির্ভরতা অর্জনের কারিগর দেশীয় খামারিরা বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। অন্যদিকে গোশত আমদানিকে সরকারিভাবে নিরুৎসাহিত করা হলেও আদতে নানাভাবে বছরে হাজার হাজার টন গরু-মহিষের গোশত দেশে প্রবেশ করছে বলে জানা যায়। দেশের বাজারে গরু-মহিষের গোশতের দাম প্রতি কেজি ৭০০ টাকার বেশি হলেও আমদানিকৃত গোশত এর অর্ধেকেরও কমদামে পাওয়া যায়। এ কারণে দেশের অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁয় এসব গোশত কিনে রান্না করে দেশীয় গোশত বলে বেশি দামেই বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানিকৃত একটি গোশতের চালান দীর্ঘদিনেও খালাস না করায় চট্টগ্রাম বন্দরে তা নিলামে বিক্রির খবর গত সপ্তাহে ইনকিলাবে প্রকাশিত হয়েছিল। বৈধ পথে গোশত আমদানিতে ২০ ভাগ শুল্ক নির্ধারিত হওয়ায় শুল্ক ফাঁকি দিতে সীমান্তের বিভিন্ন রুট দিয়ে অবৈধ উপায়ে নানাভাবে গোশত বাংলাদেশে আসছে। ফ্রিজিং কন্টেইনারে গোশত দীর্ঘদিন ভালো রাখার ব্যবস্থা থাকলেও স্থলপথে অবৈধভাবে আসা গোশত আনতে ফরমালিনসহ নানাবিধ রাসায়নিকের ব্যবহার ছাড়াও অস্বাস্থ্যকর উপায়ে আনা হচ্ছে। গতকাল পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চোরাই পথে ভারত থেকে মহিষের সেদ্ধ গোশত আসছে দেশে। এসব গোশতের প্রধান ক্রেতা এক শ্রেণীর হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিক। লবণ ও হলুদ মাখানো গোশত কিছুটা সিদ্ধ করে ছোট ছোট প্যাকেটে ভরে চোরাই পথে এনে দেশের বাজারে ছাড়া হচ্ছে। দেশীয় গোশতের চেয়ে অর্ধেকেরও কমদামে কেনা এসব গোশত নাকি রান্না করলে ফুলে-ফেঁপে তিন-চারগুণ বেড়ে যায়। অথচ, সাধারণ ভোক্তারা কমদামে কেনা গোশতের সুফল পাচ্ছে না। নি¤œমানের গোশত কিনে দেশীয় সাড়ে ৭শ টাকা কেজি দরে কেনা গরুর গোশতের সমান দামে বিক্রি করে হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকরাই শুধু লাভবান হচ্ছে। প্রতারিত হচ্ছে ভোক্তারা। তাছাড়া ভারত থেকে আসা গোশত গরু বা মহিষের গোশত হিসেবে কেনা হলেও সব রেস্তোরাঁয় গরুর গোশত বলেই বিক্রি করা হচ্ছে। এসব আসলে কিসের গোশত, হালাল উপায়ে জবাই করা হয়েছে কিনা, ভোক্তারা এ সম্পর্কে কিছুই জানে না। ভোক্তারা নানাভাবে প্রতারিত হলেও তা দেখার যেন কেউ নেই।
জনস্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তায় প্রোটিনের চাহিদা পূরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। প্রাণীজ প্রোটিনের সবচেয়ে সহজ সমাধান গরু-মহিষের গোশত, হাঁস-মুরগী ও ডিম। দেশের পোল্ট্রি খামারিরাও লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে মুরগি ও ডিমের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সক্ষম হচ্ছেন। সংশ্লিষ্টরা দেশে গোশতের চাহিদা পূরণে সক্ষম বলে দাবি করা হলেও গরু-মহিষের গোশতে দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে দ্বিগুণের বেশি দামে দেশে গোশত বিক্রির জন্য পশুখাদ্যের অতিমূল্য এবং পথে পথে চাঁদাবাজিকে দায়ী করছেন গোশত ব্যবসায়ীরা। গরু-মহিষ ও পোল্ট্রি খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি গরু-মহিষ পরিবহন ও কেনাবেচার ক্ষেত্রে পথে পথে চাঁদাবাজিসহ নানাবিধ খরচ কমিয়ে আনার মাধ্যমে গোশত ও ডিমের মূল্য ভোক্তাদের জন্য সহনীয় রাখা অসম্ভব নয়। দেশীয় খামারিদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করার পাশাপাশি সাধারণ দরিদ্র ভোক্তাদের কথাও ভাবতে হবে। দেশীয় খামারিদের স্বার্থে গোশত আমদানি নিরুৎসাহিত করা এবং অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হলেও অবৈধ পথে অস্বাস্থ্যকর উপায়ে গোশত আমদানি বন্ধ করার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। তাছাড়া, গরু-মহিষের গোশত বলে বিক্রি হওয়া এসব আসলে কিসের গোশত তার নিশ্চয়তা কে দেবে? লবণ ও ফরমালিনযুক্ত গোশত স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। হোটেল-রেস্তোরাঁয় এসব গোশত দেশীয় গরুর গোশত হিসেবে উচ্চ দামে বিক্রি হলেও ভোক্তা অধিকার কিংবা নিরাপদ খাদ্য বিভাগের কোনো নজরদারি নেই। চোরাই পথে, নি¤œমানের গোশত আমদানি বন্ধের পাশাপাশি দেশে গরু-মহিষের গোশতের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক
সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি
রাতের আধারে অসহায় ব্যাক্তিদের বাড়ির দরজায় গিয়ে কম্বল দিলেন ইউএনও
আমাদের সংস্কৃতির অংশ হলো সব ধর্মের মাঝে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ভাঙ্গায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষে নারী-পুরুষসহ আহত- ১০
কবি জসীমউদ্দিনের মেজ ছেলে ড. জামাল আনোয়ার আর নেই
নির্বাচনের তারিখ নিয়ে যা জানালেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার
কারখানায় আগুন, পরিদর্শনে হাতেম
নোয়াখালীর সুবর্ণচরে মোটর থেকে বৈদ্যুতিক তার খুলতে প্রাণ গেল যুবকের
৫ জানুয়ারি থেকে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু
নাচোলে পিয়ারাবাগানে এক গৃহবধূ খুন
সিদ্দিরগঞ্জে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে বিদ্যুতায়িত, দুই শ্রমিকের মৃত্যু
দীর্ঘ ১৩ বছর পর দেশে ফিরছেন কায়কোবাদ
বগুড়ার ধুনট পল্লীতে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে ব্যবসায়ীর ৩৫ হাজার টাকা ছিনতাই
গণমাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের ওপর গুরুত্বারোপ করলেন উপদেষ্টা
আসছে ভিভোর নতুন ফ্ল্যাগশিপ, থাকছে জাইস টেলিফটো প্রযুক্তি
শেরপুরে নানা আয়োজনে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বড়দিন উদযাপিত
ধোবাউড়ায় নেতাই নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে
সাংবাদিক শাহ আলম চৌধুরী আর নেই