সব ধরনের বাড়াবাড়ি পরিহার করতে হবে
২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
আজ রাজধানীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধীদল বিএনপি, জামায়েতে ইসলামীসহ মোট ৩৭টি রাজনৈতিক দলের সমাবেশের কর্মসূচি রয়েছে। সরকারের পদত্যাগ এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধীদলগুলো সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করবে। আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে, বিএনপি নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি পালন করবে বলে অনড় অবস্থান নিয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, দুই দলকে এখন পর্যন্ত সমাবেশের অনুমতি না দিলেও শেষ মুহূর্তে অনুমতি দিতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। জামায়তে ইসলমী মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি চাইলেও পুলিশ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, অনুমতি দেবে না। তবে দলটি সেখানেই সমাবেশ করবে বলে অনড় অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে, বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি ও গণঅধিকার পরিষদ একই সময়ে পৃথক পৃথক স্থানে সমাবেশ করবে। এ নিয়ে রাজনীতিতে তুমুল উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এসব সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কি হবে, কোন দিকে গড়াবে তা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার অবধি নেই। এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিশেষভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে, ক্ষমতাসীনদল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিএনপি’র সমাবেশকে টার্গেট করে ক্ষমতাসীনদল কড়া ভাষায় হুমকিÑধমকি দিয়েছে এবং দিচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশ বিএনপি’র নেতাকর্মীদের টার্গেট করে ব্যাপক ধরপাকড়, বাড়ি গিয়ে তল্লাশি, ঢাকার বাইরে থেকে যাতে নেমাকর্মীরা আসতে না পারে, তার জন্য রাজধানীর প্রবেশ মুখে পুলিশ ও র্যাব চেকপোস্ট বসিয়েছে। পত্র-পত্রিকার খবর অনুযায়ী, গত তিন দিনে দেশজুড়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাসহ প্রায় ১২০০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে কয়েকশ’ মামলায় কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিরোধীদলগুলোর সরকারবিরোধী আন্দোলন দমাতে বরাবরই পুলিশ আক্রমণাত্মক ভূমিকায় থাকে। বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে এসেও এর ব্যতিক্রম পরিলক্ষিত হচ্ছে না। যদিও অতীতের সব সরকারের আমলের শেষের দিকে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে থাকে। তবে এ সরকারের আমলে মামলা ও গ্রেফতারের আধিক্য অনেক বেশি। পুলিশ রাষ্ট্রের বাহিনী হিসেবে নয়, ক্ষমতাসীনদলের অনুগত বাহিনী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বিগত একদশক ধরে পুলিশের এহেন আচরণ পরিলক্ষিত হয়েছে। পুলিশের অনেক কর্মকর্তা রাজনীতিকের ভাষায় বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে। ক্ষমতাসীনদল যে ভাষায় বিরোধীদলকে হুমকি-ধমকি দেয়, অনুরূপ ভাষাই পুলিশের তরফ থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই সরকারের আমলেই কোনো কোনো পুলিশ সদস্যকে ‘দেশের রাজা পুলিশ’ বলে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। এমনকি, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একটি রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যদের কাছ থেকে এ ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য অপ্রত্যাশিত ও অনুচিত। বিরোধীদলগুলোর আজকের সমাবেশ নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে যে ধরনের বক্তব্য ইতোমধ্যে দেয়া হয়েছে, শুধু বক্তব্যেই সীমাবদ্ধ নয়, যেভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও মামলা দেয়া হচ্ছে, তা পুলিশের অতি বাড়াবাড়ি বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। ক্ষমতাসীনদলও ক্রমাগতভাবে বিএনপিকে শায়েস্তা করার কথা বলছে। ২০০৮ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার হামলা এবং ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামির দমনের কথা উল্লেখ করে অনুরূপ পরিণতির হুমকি দেয়া হচ্ছে। এতে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর সাথে পুলিশের আক্রমণাত্মক মনোভাব আতঙ্কের পারদকে আরও ঊর্ধ্বমুখী করে তুলেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ক্ষমতাসীনদল এবং বিরোধীদলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে পুলিশের সাঁড়াশি আক্রমণ বিরোধীদলের উপরই চালানো হবে। এর সাথে ক্ষমতাসীনদলের নেতাকর্মীরা যুক্ত হলে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। বিএনপির পক্ষ থেকে বিগত দিনগুলোতে যত সমাবেশ ও কর্মসূচি পালন করা হয়েছে, তার সবগুলোই শান্তিপূর্ণ হয়েছে। অথচ ক্ষমতাসীনদল ও পুলিশ আশ্বস্ত হতে পারছে না। গণতান্ত্রিক ধারায়, বিরোধীদল সভা-সমাবেশ করবে, আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। এতে ক্ষমতাসীন দলের ও পুলিশের বাধা দেয়ার কারণ নেই। বরং তাদের দায়িত্ব উসকানিমূলক বক্তব্য ও পদক্ষেপ না নিয়ে বিরোধীদলের সভা-সমাবেশ শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলা নিশ্চিত করা। তা না করে বিরোধীদলের সমাবেশের আগেই পুলিশ হামলা ও গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে আতঙ্কজনক পরিবেশ তৈরি করছে।
ক্ষমতাসীনদল ও বিরোধীদলগুলোর আজকের সমাবেশের দিকে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও দলগুলোর কর্মকা- তারা পর্যবেক্ষণ করবে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর দেশের ভাবমর্যাদা নির্ভর করছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের সতর্কভাবে চলাফেরা করার পরামর্শ দিয়েছে। এ থেকে এটাই প্রতীয়মাণ হয়, দেশগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সাংঘর্ষিক হওয়ার আশঙ্কা করছে। মনে রাখা দরকার, যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। সুষ্ঠু, অবাধ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ক্ষেত্রে যারা বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছে। পাশাপাশি দেশটি বিরোধীদলের গণতান্ত্রিক অধিকার সভা-সমাবেশে বাধা না দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছে। আজকের সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোনো সাংঘর্ষিক রিস্থিতি সৃষ্টি না হোক, আমরা সেটাই কামনা করি। ক্ষমতাসীনদল ও পুলিশ সর্বদা সংযম প্রদর্শন করবে এবং বিরোধীদলগুলো ধৈর্য ও সহনশীলতা অবলম্বন করবে, সেটাই প্রত্যাশিত। রাজনৈতিক সংঘাত ও অনিশ্চয়তা কোনো বিবেচনাতেই মঙ্গলজনক নয়। এমনিতেই দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত শোচনীয়। রিজার্ভ ক্রমেই তলানির দিকে ধাবিত, অর্থনীতির সবসূচক নি¤œগামী, আমদানি-রফতানি ও রেমিট্যান্স আয় সর্বনি¤œ এবং নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। এমতাবস্থায় রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে অর্থনীতিও অত্যন্ত সংকটাপন্ন অবস্থায় নিক্ষিপ্ত হবে। আশঙ্কার এই প্রেক্ষাপটে, ক্ষমতাসীনদল ও বিরোধীদলগুলোকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। কীভাবে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করা যায়, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সে পথ বের করতে হবে। সব ধরনের বাড়াবাড়ি পরিহার করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শম্ভুর ধরা পড়ায় এলাকায় আনন্দের বন্যা
রাজবাড়ীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা
খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু
পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি
আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার
অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী
পার্লামেন্টে ক্ষমা
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!
লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার
মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার
সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক
গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই
সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির
স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।
আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন
জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার
ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি
বিতর্ক পরিহার করতে হবে