গাজায় নির্মূলীকরণ রোধে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে
২৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৩ এএম
ফিলিস্তিনের গাজায় সর্বাত্মক হামলা শুরু করেছে ইসরাইল। ইন্টারনেটসহ সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে এ হামলা শুরু করেছে। গত শুক্রবার রাতে স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে এ হামলা চালানো হয়েছে। ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাস বলেছে, গণহত্যা চালানোর উদ্দেশ্যেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে হামলা চালানো হচ্ছে। গত ২১ দিনে ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় নিহত হয়েছে ৭ হাজার ৩০০’র বেশি ফিলিস্তিনি। এর অধিকাংশই শিশু ও নারী। এদিকে, কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির আলোচনা দ্রুততার সঙ্গে এগোচ্ছে বলে আলজাজিরা জানিয়েছে। এই অগ্রগতিকে তিন সপ্তাহ ধরে চলা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ক্ষেত্রে নতুন মোড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে এটা নির্ভর করছে সমঝোতার শর্তের ওপর। এটা কি মানবিক যুদ্ধবিরতি হতে যাচ্ছে, নাকি সাময়িক যুদ্ধবিরতি হতে যাচ্ছে কিংবা এই যুদ্ধের অবসান হতে যাচ্ছে? ইসরাইল যেকোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে আসছে, এমনকি মানবিক যুদ্ধবিরতিও। ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত বৃহ¯পতিবার এক সভায় মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। সে অর্থে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ইসরাইলের ওপর তেমন বড় ধরনের চাপ নেই। গত শুক্রবার জাতিসংঘ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তার জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। সাধারণ পরিষদে তোলা ওই প্রস্তাবে ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের বেসামরিক মানুষের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ও নির্বিচার হামলাসহ সব সহিংস কর্মকা-ের নিন্দা জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বেসামরিক লোকজনের সুরক্ষা ও বাধাহীন ত্রাণসহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছে। আরব দেশগুলোর পক্ষে সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে জর্ডান। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে পরিষদের ১২০ সদস্য। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ১৪ সদস্য। অপর দিকে ৪৫ সদস্য ভোটদানে বিরত ছিল। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে কোনো প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর, তা মেনে চলার কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। তবে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এ পরিষদের সদস্য হওয়ায় গৃহীত হওয়া প্রস্তাবগুলোর নৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।
ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসন, হামলা ও হত্যাযজ্ঞ বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনকে ইসরাইলের পক্ষ নিতে দেখা যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত ৭ অক্টোবর হামাস হামলা চালালে ইসরাইল যুদ্ধনীতির কোনো তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে ফিলিস্তিনি সাধারণ মানুষের ওপর নৃশংস হামলা চালায়। হাসপাতাল, আশ্রয়স্থল, স্কুলসহ বেসামরিক বাসাবাড়িতে হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। ইসরাইলের এমন বর্বর হামলার বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের পাশে থাকাসহ তাকে সহায়তা দানে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। অথচ সে দেশের সাধারণ জনগণ ও বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ, এমনকি মডারেট ইহুদিরা পর্যন্ত ইসরাইলের গাজায় হামলা ও নিরীহ মানুষকে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ মানবিকতা দেখালেও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তা দেখাচ্ছেন না। তিনি ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তার একগুঁয়ে মনোভাবের কারণে ইসরাইল কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে হামলা ও গণহত্যা চালাচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা শ্যামদাসানি হামাসের হামলার জবাবে গাজার সব বাসিন্দার ওপর ইসরাইলের হামলাকে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তবে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো ফিলিস্তিনের প্রতি অনেকটা লোকদেখানো নিন্দা জানিয়েছে। এতে যে ইসরাইল থামবে না, তা সচেতন মানুষ ভালোভাবেই জানে। বিস্ময়ের ব্যাপার, বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মুসলমান গাজায় ইসরাইলের নৃশংস হামলা ও নির্বিচারে হত্যাকা-ের প্রতিবাদে সোচ্চার হলেও, ওআইসি, আরব লীগ অনেকটা নির্বিকার রয়েছে। সংস্থা দুটির তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। ইসরাইল নিরীহ মুসলমানদের যেভাবে হত্যা করছে, তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সংস্থা দুটি বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের হত্যা, নিপীড়ন, নির্যাতনের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা পালন করে না। মিয়ানমার সরকার যখন রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে দেশছাড়া করেছে কিংবা ভারতের মুসলমানরা যেভাবে নির্যাতন এবং হত্যার শিকার হচ্ছে, তার বিরুদ্ধেও সংস্থা দুটি কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। কেবল বিবৃতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রশ্ন উঠতে পারে, যেসব প্রতিষ্ঠান মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায় কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না, তাদের প্রয়োজনীয়তা কি?
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মার্কিন নাগরিকদের জন্য বিশ্বব্যাপী সতর্কতা জারি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র তার নাগরিকদের বাইরের কোনো দেশ ভ্রমণ না করতে সতর্ক করেছে। নজিরবিহীন এই সতর্কতা জারি নিশ্চিতভাবেই মার্কিন নাগরিকদের জন্য অসম্মানের এবং নিরাপত্তাহীনতা। তাদের মুক্তভাবে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেশবন্দি করা হয়েছে। এ পরিস্থিতির জন্য এককভাবে যদি কাউকে দায়ী করতে হয়, তাহলে তার জন্য দায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার ভুল নীতি বিশ্বব্যাপী মার্কিন জনগণের অবাধ চলাচল নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, সতর্কতা জারি মার্কিন নাগরিকদের প্রতি বিশ্বব্যাপী বিদ্বেষ সৃষ্টির শঙ্কা জাগিয়েছে বাইডেনের একরোখা মানসিকতা। ইসরাইলকে একতরফা সমর্থন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার পক্ষপাতিত্বমূলক নীতি মার্কিন জনগণকে হুমকির মধ্যে ফেলেছে। নিশ্চিতভাবেই তার নীতি মার্কিন জনগণ ভালোভাবে নিচ্ছে না। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সচেতন ও সোচ্চার। ফিলিস্তিনে ইসরাইলের মানবতাবিরোধী হামলার প্রতিবাদ থেকেই সেটা বোঝা যায়। জো বাইডেনের উচিত, তার দেশের মানুষের ও সমাজের নীতিবোধ, মূল্যবোধ ও মানবিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে নীতিনির্ধারণ করা। সরাসরি অন্যায়ের পক্ষ না নিয়ে তা নিরসনে উদ্যোগ নেয়া। পাশাপাশি ওআইসি এবং আরব লীগের উচিত ফিলিস্তিনে হামলা করে ইসরাইলের মুসলমান নির্মূল করার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শম্ভুর ধরা পড়ায় এলাকায় আনন্দের বন্যা
রাজবাড়ীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা
খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু
পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি
আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার
অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী
পার্লামেন্টে ক্ষমা
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!
লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার
মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার
সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক
গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই
সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির
স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।
আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন
জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার
ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি
বিতর্ক পরিহার করতে হবে