দুঃখজনক
৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২৩, ১২:১৪ এএম
বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে দলটির গত শনিবারের মহাসমাবেশ হতে পারেনি। মাঝপথেই পণ্ড হয়ে গেছে। কোনো কোনো পত্রিকায় বলা হয়েছে, নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মহাসমাবেশ শুরুর আগেই পুলিশ ও বিএনপিকর্মীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের সূত্রপাত হয় এবং থেমে থেমে চলতে থাকে। এটাই পরবর্তীতে নয়াপল্টন ছাড়িয়ে বিজয়নগর, কাকরাইল আরামবাগ, দৈনিক বাংলাসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সংঘাত-সংঘর্ষের এক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তাতে শামিল হয়। ত্রিমুখী সংঘর্ষে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষকালে একজন পুলিশসদস্য ও যুবদলের একজন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা নিহত হয়েছে। উভয়পক্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। সংবাদিক আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। সরকার পতনের দাবিতে ডাকা বিএনপির এ মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণ হবে, এমন প্রতিশ্রুতি দলটির তরফে দেয়া হয়। বিএনপি সম্প্রতিককালে যত কর্মসূচি পালন করেছে, তা শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নানা বাধাবিপত্তি ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দলের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সমর্থক মহাসমাবেশ উপস্থিত হয়। দুপুরের আগেই নয়াপল্টন ছাড়িয়ে জনস্রোত ছড়িয়ে পড়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন এলাকায়। প্রতিশ্রুত শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ কীভাব সংঘাতময় ও সংঘর্ষপ্রবণ হয়ে উঠলো, সেটা অবশ্যই গভীরভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। একই দিনে একই সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পাল্টা শান্তি সমবেশ আহ্বান করেছিল। ওই সমাবেশ উপলক্ষেও ব্যাপক সংখ্যায় মানুষ হাজির হয়েছিল। দু’ দলের সমাবেশ কার্যত শক্তি প্রদর্শনের মহড়ায় পরিণত হয়েছিল। বিবদমান দুই দলের কর্মসূচি একই দিনে না দেয়াই শ্রেয়। কারণ, দু’দলের কর্মীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের আশংকা থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে আমরা লক্ষ করছি, বিএনপি কোনো কর্মসূচি দিলেই আওয়ামী লীগ তার পাল্টা কর্মসূচি দেয়। এতদিন পাল্টা-পাল্টি কর্মসূচি ঘিরে তেমন বড় কোনো সংঘাত-সংঘর্ষ না হলেও এবার হলো। মানুষ মরলো, অনেকে আহত হলো। শুরু হলো হরতালের রাজনীতি।
বিএনপি তার মহাসমাবেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলার প্রতিবাদে শনিবার মহাসমাবেশস্থল থেকেই রোববার সারাদেশ সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয়। নির্বাচন প্রশ্নে দু’দলের অনড় অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যবেক্ষক মহল অনেক আগে থেকেই আশংকা করছিল, দু’দলের মধ্যে সমঝোতা না হলে শেষ পর্যন্ত রাজনীতি সংঘর্ষের পথে চলে যাবে। রাজপথেই নির্ণীত হবে ফয়সালা। এপথ অত্যন্ত বন্ধুর, ঝুঁকিপূর্ণ ও রক্তাক্ত। আমরা দু’দলের পরস্পর বিরোধী সমাবেশের আগে বলেছিলাম, পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ সকল পক্ষকে সব রকম বাড়াবাড়ি পরিহার করতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতিতে সংযম প্রদর্শন করতে হবে। তিক্ত হলেও বলতে হচ্ছে, পুলিশ সংযমের পরিচয় দিতে পারেনি। আওয়ামী লীগের কর্মীরা শান্তির পক্ষে থাকতে পারেনি। বিএনপির কর্মীরাও ধৈর্য ধরে রাখতে পারেনি। একারণে দু’টি মূল্যবান প্রাণ চলে গেছে। এর দায় কে নেবে? কে দেবে ক্ষতিপূরণ? প্রাণের কি কোনো ক্ষতিপূরণ হয়? রাজনীতি এখন যে পথে উঠলো, তা থেকে দ্রুত ফেরানোর কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি শেষাবধি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, কেউ তা বলতে পারে না। রাজনীতিতে সদাচার, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান খুবই জরুরি ও বাঞ্ছনীয়। রাজনীতির এই চারিত্রলক্ষণ আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। তার স্থলে কর্তৃত্ববাদ ও প্রতিহিংসা স্থাপিত হয়েছে। যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতায় যাওয়া রাজনীতির মুখ্য প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। দেশের কোনো বিবেকবান মানুষই কর্তৃত্ববাদী, প্রতিহিংসাপ্রবণ, সংঘাতময়, সর্বোপরি দেশ ও জনগণবিমুখ রাজনীতি পছন্দ ও সমর্থন করতে পারে না। এর আশু পরিবর্তন কাম্য।
সরকারের পদত্যাগ ও দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের। পক্ষান্তরে সরকারের প্রতিজ্ঞা বর্তমান সরকারের অধীনে সংবিধান মোতাবেক যথাসময়ে নির্বাচন হবে। দু’পক্ষের এই অনড় অবস্থানের প্রেক্ষিতে একটা অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, এই অচলাবস্থা ভাঙতে সংলাপ-সমঝোতার বিকল্প নেই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল যে পাঁচটি সুপারিশ করেছে। তার প্রথমটি হলো সংলাপ ও সমঝোতা। এ ব্যাপারেও এখন পর্যন্ত দু’পক্ষই অনমনীয়। এর মধ্যেই বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়া এবং হরতাল-অবরোধের রাজনীতির আবির্ভাব হওয়া উদ্বেগজনক। এদিকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। অর্থনীতির সকল সূচকই ক্রমাবনতিশীল। ডলার সংকট থেকে শুরু করে রিজার্ভ হ্রাস, রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়া ইত্যাদি একটা বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এমন কোনো নিত্যপণ্য বা দরকারিপণ্য নেই, যার দাম অব্যাহতভাবে না বাড়ছে। নিম্নবিত্তের মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্তের মানুষও বেঁচেবর্তে থাকার অবস্থায় নেই। তাদের আয় ও জীবনাযাত্রার ব্যায়ের মধ্যে বিশাল ফারাক। এমতাবস্থায়, রাজনীতি সংঘাতপূর্ণ ও অনিশ্চিত হয়ে পড়লে দেশ ও মানুষের হাল কী হবে, তা আন্দাজ করা কঠিন নয়। আশংকার এই পটভূমিতে আমরা আশা করবো, বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট মোচনে যথাযথ উদ্যোগ ও কার্যব্যবস্থা নেয়া হবে। দেশের মানুষ অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন চায়। যুক্তরাষ্ট্রসহ গণতান্ত্রিক বিশ্বও এধরনের নির্বাচনের লাগাতার তাকিদ দিয়ে যাচ্ছে। কাক্সিক্ষত এ নির্বাচন নিশ্চিত করতে পারে, একমাত্র সরকার। অতএব, সরকারকেই অগ্র-ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শম্ভুর ধরা পড়ায় এলাকায় আনন্দের বন্যা
রাজবাড়ীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা
খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু
পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি
আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার
অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী
পার্লামেন্টে ক্ষমা
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!
লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার
মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার
সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক
গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই
সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির
স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।
আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন
জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার
ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি
বিতর্ক পরিহার করতে হবে