শ্রমিক অসন্তোষ জিঁইয়ে রাখা যাবে না
৩১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
দেশের রফতানির প্রধান খাত গামেন্টের অবস্থা ভালো নয়। গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ও উচ্চমূল্যের কারণে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ছে। সেই তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম পাওয়া যাচ্ছে না। গার্মেন্টপণ্যের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে কার্যাদেশ দিন দিন কমে আসছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিল্পের ওপর। কাজ না পেয়ে আর্থিক সংকটে পড়ছে কারখানা। অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বেকার হয়ে পড়ছে শ্রমিকরা। গার্মেন্ট শিল্প এলাকা হিসাবে পরিচিতি ঢাকার গাজীপুর, আশুলিয়া, সাভার, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে সেই রমরমা অবস্থা বিদ্যমান নেই। মালিকদের অনেকে শ্রমিকদের ঠিকমত বেতন-ভাতা দিতে পারছে না। বকেয়া পড়ছে। শ্রমিক ছাঁটাইও চলছে। এর মধ্যে গাজীপুর, আশুলিয়া, কালিয়াকৈর প্রভৃতি এলাকায় শ্রমিকরা ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধি ও বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে। মিটিং-মিছিল, বিক্ষোভ প্রদর্শন এমনকি রাস্তা অবরোধ, যানবাহন ভাংচুরের মতো নাশক আচরণও তারা করছে। ‘আন্দোলনের’ এই ধারা-প্রকৃতি অন্যান্য এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছে পর্যবেক্ষক মহল। উচ্চমূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার অস্বাভাবিক ব্যয় বৃদ্ধির নিরিখে শ্রমিকদের দাবিকৃত বেতন খুব বেশি নয়। আবার তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিও অন্যায় নয়। মালিকদের উচিত শ্রমিকদের প্রতি যথার্থ দায়িত্বশীল, সদয় ও সহানুভূতিশীল হওয়া। যত অসুবিধাই হোক, বেতন যৌক্তিক পর্যায়ে বাড়ানো এবং বকেয়া বেতন-ভাতা যত দ্রুত সম্ভব পরিশোধ করা। গড়িমসি কিংবা শক্তি প্রদর্শন এক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে। কারখানা সচল রাখা, উৎপাদনশীল রাখা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় কাজ। এ দায়িত্ব মূলত মালিকদেরই। শ্রমিকদেরও এমন কিছু করা সঙ্গত নয়, যাতে কারখানার ক্ষতি হয়, বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়, উৎপাদন ব্যহত হয়। রাস্তাঘাট অবরোধ করে গাড়ি ভাংচুর ও উচ্ছৃঙ্খলা প্রদর্শনও তাদের কাছ থেকে কাম্য নয়। তাদের সহনশীল ও ধৈর্যশীল থাকতে হবে। কারখানা যেমন মালিকের আয়ের উৎস। তেমনি শ্রমিকেরও কর্মসংস্থানের উপায়। কারখানা না থাকলে উভয়েরই সমূহ ক্ষতি। বেশি ক্ষতি শ্রমিকের। তাকে কর্ম হারিয়ে বেকার হয়ে যেতে হয়। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, শ্রমিক অসন্তোষ বা আন্দোলন বাড়তে দেয়া উচিত নয়। মালিক, শ্রমিক ও সরকার একসঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা গ্রহণযোগ্য ফয়সালায় অবিলম্বে আসা দরকার। গত ২৩ অক্টোবর শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেছে। অবিলম্বে তার অবসান হওয়া দরকার।
গার্মেন্ট শুধু রফতানির প্রধান খাত নয়, রফতানি আয়েরও সিংহভাগ আসে এখাত থেকে। এখানে কর্মসংস্থান আছে সবচেয়ে বেশি। করোনাকালে অন্যান্য শিল্পের মতো গার্মেন্টও ক্ষতির শিকার হয়। উৎপাদন ব্যহত হয়। রফতানি কমে যায়। বিপুল সংখ্যক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। করোনাত্তোরকালে পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন যখন ঘটছিল তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আবার সবকিছু উলোট-পালট করে দেয়। এ যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য ও জ্বালানি সংকট, মূল্যস্ফীতি ইত্যাদি বাড়িয়ে দিয়েছে। আমরাও এর প্রভাবের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছি। আমাদের অন্যতম বড় সমস্যা বেকারত্ব। কোটি কোটি কর্মসক্ষম বেকার এখানে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী বেকারের সংখ্যাই সরকারি হিসাবে ৮ লাখ। অশিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত ও সদ্য বেকারের সংখ্যা কত হতে হবে, সেটা সহজেই অনুমেয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো শ্রমশক্তি জরিপ করে একটা সংখ্যা উল্লেখ করেছে বটে, তবে বিশেষজ্ঞদের ওই পরিসংখ্যানের ওপর খুব একটা আস্থা নেই। শ্রমশক্তি জরিপে দেখানো হয়েছে গত এক বছরে বেকারত্বের হার কমেছে। ২০২২ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৬.১০ লাখ। ২০২৩ সালের একই সময়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪.৩০ লাখ। বলা বাহুল্য, বেকারের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। কারণ, প্রতি বছর শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে যত মানুষ, তাদের সবার কর্মসংস্থান হচ্ছে না। অধিকাংশই বেকার থাকছে। এটাই যেখানে সাধারণ বাস্তবতা, সেখানে কীভাবে বেকারের সংখ্যা কমতে পারে? অর্থনীতিবিদরা এনিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। বিশ্বব্যাংকের ঢাকাস্থ সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হুসাইনের মতে, অর্থনীতির প্রায় সব প্রধানসূচক যখন নিম্নমুখী তখন বেকারতের হার কমবে অথবা কর্মসংস্থান বাড়বে কেমন করে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কোনো পরিসংখ্যানই নির্ভরযোগ্য নয় বলে একটা দুর্নাম আছে। এক্ষেত্রেও সেটা লক্ষ করা গেলো।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় বললেও কম বলা হয়। ডলার সংকট, রিজার্ভ ঘাটতি, আমদানি হ্রাস, রফতানি আয়ের কমতি, রেমিটেন্স কমে যাওয়া, বিনিয়োগে খরা ইত্যাদি বিপর্যয়কর পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ অবস্থায় দেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে কিংবা ভবিষ্যতে বাড়বে, সেটা কল্পনাও করা যায় না। উচ্চমূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধি দেশের অধিকাংশ মানুষকে বিপন্ন করে তুলেছে। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া এর প্রধান কারণ। উপযুক্ত কর্মসংস্থান ও পর্যাপ্ত আয়-রোজগার থাকলে এ অবস্থা হওয়ার কথা নয়। সরকারের কর্মব্যক্তিরা ‘উন্নয়নচিত্র’ তুলে ধরে আত্মপ্রসাদ লাভ করছেন। মানুষের অভাব-অভিযোগ, দুঃখ-কষ্ট মোচনে কার্যকর উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেয়ার গরজ দেখাচ্ছেন না। কীভাবে ক্ষমতায় থাকায় যায়, কীভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করা যায়, এই ফিকিরে এখন ব্যস্ত সরকারি মহল। ইতোমধ্যে রাজনীতি ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি যে দিকে মোড় নিয়েছে তা ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। নাজুক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রবেশ ঘটলে দেশ ও জনগণের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা সহজেই অনুমেয়। চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে শ্রমিক অসন্তোষ ও তাদের আন্দোলনের যেমন দ্রুত অবসান প্রয়োজন, তেমনি রাজনৈতিক সংকটেরও শান্তিপূর্ণ সমাধান কাম্য।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শম্ভুর ধরা পড়ায় এলাকায় আনন্দের বন্যা
রাজবাড়ীতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা
খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু
পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি
আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার
অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী
পার্লামেন্টে ক্ষমা
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!
লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার
মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার
সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক
গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই
সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির
স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।
আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন
জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার
ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি
বিতর্ক পরিহার করতে হবে