ঢাকা   বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪ | ২৯ কার্তিক ১৪৩১

মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি উদ্বেগজনক

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক্যাল রিপোর্টে বাংলাদেশে মানবাধিরের অবনতি এবং মানবাধিকার রক্ষায় সরকার যথেষ্ট পদক্ষেপ না নেয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের এ সংক্রান্ত বিশেষ অধিবেশনে এই মতামত গৃহীত হয়। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশে সরকারি বাহিনী কর্তৃক সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপর দমন-পীড়ন ও গণগ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। বিগত দুটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারা গুম-খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সভা-সমাবেশের উপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা এবং নিবর্তনমূলক ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির উদাহরণ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে বিশ্বের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানো, এলিটফোর্স র‌্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের উপর মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার মতো ধারাবাহিক তৎপরতার পরও দেশে গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক সমঝোতা, মানবাধিকার ইস্যু ও বিচারিক হয়রানির মতো অভিযোগগুলোর স্বচ্ছ সমাধানের কোনো রাজনৈতিক উদ্যোগ দেখা যায়নি। মাসের পর মাস ধরে দেশে টান টান উত্তেজনা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কা ক্রমশ ঘনীভূত হলেও সরকারের বেপরোয়া নীতির কারণে এখন তা একটি সংঘাতময় অবস্থার দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে। একটি অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিতে প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল এবং পশ্চিমাবিশ্বের আহ্বান ও চাপ উপেক্ষা করে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে আবারো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র পাঠানো এক চিঠিতে সরকার, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রতি নির্বাচন বিষয়ে নিঃশর্ত সংলাপে বসার আহ্বান জানানো হয়েছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা উন্নয়ন সহযোগী, বাণিজ্য অংশীদার এবং জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংলাপ-সমঝোতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধ এবং সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি বিভিন্ন সময়ে আহ্বান জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের দ্বাদশ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে পশ্চিমাদের অবস্থানের বিষয়টি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রায় প্রতিদিনই উঠে আসতে দেখা যাচ্ছে। স্টেট ডিপার্টমেন্টের সেই প্রত্যাশা বাস্তবায়নে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ ও রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি-হাস নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। পর পর দুটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি। মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারেনি। এর মধ্যে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ ও সচেতন নাগরিকদের সংক্ষুব্ধ হওয়ার সংগত কারণ রয়েছে। বিরোধী দলের সাম্প্রতিক মহাসমাবেশ এবং হরতাল-অবরোধের চলমান কর্মসূচিগুলোতে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলন এবং পশ্চিমা বিশ্বের অব্যাহত চাপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক ভিত্তিক ভিসানীতির পরও দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি এবং আরেকটি একতরফা নির্বাচনের প্রয়াস জাতিকে চরম রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে।

এমনিতেই দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের সংকটে পড়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনর বলেছেন, তিনি তার ৩৬ বছরের কর্মজীবনে জাতীয় অর্থনীতির এমন সংকট আর কখনো দেখেননি। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবি এবং বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের উপর দমন-পীড়ন বন্ধের দাবিতে বছরব্যাপী শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এখন সরকারের পদত্যাগের একদফার আন্দোলন চলছে। গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড করতে পুলিশ ও সরকারিদলের ক্যাডারদের বিতর্কিত ভূমিকার কথা ইতোমধ্যে বিরোধীদল এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর রিপোর্টে বেরিয়ে এসেছে। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগে বিরোধীদলের উপর ক্র্যাক-ডাউন, গণগ্রেফতারের ঘটনায় মানবাধিকার ও অবাধ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনে সরকারের সদিচ্ছাকে আবারো প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। একই সময়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের ইউপিআর রিপোর্টে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির পর্যালোচনায় যে সব বিষয় উঠে এসেছে তা আমাদের সরকার এবং নাগরিক সমাজের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ফোর্স-ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স বা গুমের ঘটনাগুলো বেড়ে যাওয়ার সাথে বিরোধীদলের উপর চরম দমন-পীড়ন এবং বিচারব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থার যে চিত্র ইউপিআর রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিনিয়োগ, বাণিজ্য, রেমিটেন্সসহ বহুমাত্রিক উন্নয়ন সহযোগী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমা বিশ্বের প্রতিনিধিরা একযোগে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতার প্রশ্নে সরকারের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে দেশের তৈরি পোশাক খাত নিয়ে এক ধরনের অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তা ভর করেছে। ক্রয়াদেশ আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে। শত শত কারখানা বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ডলারের অভাবে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে পারছে না। মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। এহেন বাস্তবতায় মানবাধিকার লঙ্ঘন, গণগ্রেফতার, দমন-পীড়ন, ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আরেকটা একতরফা নির্বাচনের ধকল সরকার সামলাতে পারবে না। দেশের মানুষও তা মেনে নেবে না। মানবাধিকার, আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে যা যা করণীয় সরকার এবং বিরোধীদলগুলোকে তাই করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন
জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার
ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি
বিতর্ক পরিহার করতে হবে
কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত
আরও

আরও পড়ুন

লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা

লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা

খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু

খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু

পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি

পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি

আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার

আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার

অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী

অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী

পার্লামেন্টে ক্ষমা

পার্লামেন্টে ক্ষমা

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!

লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার

লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার

মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার

মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার

সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক

সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক

গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই

গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই

সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির

সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির

স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।

স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।

আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন

আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন

জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার

জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার

ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি

ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি

বিতর্ক পরিহার করতে হবে

বিতর্ক পরিহার করতে হবে

ইসরাইলি বাহিনী হিজবুল্লাহর সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতে যাবে না

ইসরাইলি বাহিনী হিজবুল্লাহর সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতে যাবে না

নির্বাচনে হারার পর প্রথমবার জনসমক্ষে বাইডেন ও কমলা

নির্বাচনে হারার পর প্রথমবার জনসমক্ষে বাইডেন ও কমলা