তফসিল পরিবর্তন ও সমঝোতা অসম্ভব নয়
১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এবং পশ্চিমা বিশ্বের দীর্ঘদিনের আহ্বান ও দাবিকে অগ্রাহ্য করে কোনো রকম সংলাপ-সমঝোতা ছাড়াই ১৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্য দিয়ে প্রতীয়মান হয়, সরকার এবং নির্বাচন কমিশন আরেকটি একতরফা নির্বাচনের পথেই পা বাড়াল। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের জন্য সরকার ও বিরোধীদলগুলোর মধ্যে একটি রাজনৈতিক সংলাপ-সমঝোতার আহ্বান জানিয়ে আসছিল। তফসিল ঘোষণার একদিন আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র একটি চিঠি প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। মূলত শর্তহীন সংলাপের আহ্বানই ছিল সেই চিঠির প্রতিপাদ্য। অনেকেই প্রত্যাশা করেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ তাগিদে এবার সম্ভবত সরকার ও বিএনপি’র মধ্যে একটি শর্তহীন সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবং তফসিলের তারিখও পিছাচ্ছে, যদিও সংলাপের ফলাফল নিয়ে দেশের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বরাবরই সন্ধিহান। সবাইকে বিস্মিত করে সরকারি দলের পক্ষ থেকে সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার সাথে সাথেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করল। ঘোষিত তফসিল অনুসারে, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মনোনয়ন পত্র জমা এবং সব আনুষ্ঠানিকতার পর ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ভোট গ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিএনপি, জামায়াত, ইসলামি আন্দোলন, সিপিবিসহ দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ঘোষিত তফসিল তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে নির্বাচন কমিশন অভিমুখে গণমিছিল করেছে ইসলামি আন্দোলন। পুলিশি বাধার মুখে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও কর্মসূচি পালনে সেখানে যাওয়া সম্ভব না হলেও একতরফা নির্বাচনের তফসিল সম্পর্কে দলটির অবস্থান পরিষ্কার। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনী তফসিলের প্রতিবাদে সিপিবিসহ একাধিক রাজনৈতিক দল সারাদেশে অর্ধদিবস হরতাল পালন করেছে। একতরফা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি আরোও কঠোর কর্মসূচির আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছিল বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি’র মহাসমাবেশ ভন্ডুলের মধ্য দিয়ে দেশকে একটি অনিবার্য সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। সেই থেকে একদিনের হরতাল এবং ধারাবাহিকভাবে ৫ দফায় দুইদিন করে অবরোধ কর্মসূচির কারণে রাজধানী ঢাকা কার্যত দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি এবং উৎপাদন ব্যবস্থার উপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এমনিতেই দেশের অর্থনীতি নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এহেন বাস্তবতায় একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে দেশি-বিদেশি সব পক্ষের আহ্বান, চাপ ও দাবি উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের বেপরোয়া মনোভাবেরই প্রকাশ। এর মধ্য দিয়ে দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎকে একটি অনিবার্য সংঘাত-সহিংসতার দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে। দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচন দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এ কারণেই পশ্চিমা উন্নয়ন সহযোগীদের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সংলাপ-সমঝোতার মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনের জন্য বরাবরই চাপ ছিল। দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে সেই চাপ এবং তৎপরতা আরো জোরদার হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এ চাপ এখন ভিসানীতি, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মতো কঠোর পদক্ষেপের হুমকির মধ্যে রয়েছে। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানবাধিকারের মতো মৌলিক ইস্যুগুলো দেশের সব মানুষের অধিকার ও প্রত্যাশার সাথে সম্পর্কযুক্ত। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ইউপিআর রিপোর্টে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বের শতাধিক দেশ উদ্বেগ প্রকাশ ও সুপারিশমালা পেশ করেছে। এসব অধিকারের প্রশ্নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এক ধরনের ঐকমত্য লক্ষ করা যায়। আরেকটি একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বেড়ে যাওয়া রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং প্রাতিষ্ঠানিক আস্থাহীনতার সংকট থেকে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের ধকল সামলানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। রাজনৈতিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও তা পরিবর্তন ও বাতিলের উদাহরণ আছে। দেশকে পুলিশি শক্তি ব্যবহার করে জনগণের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশাকে দাবিয়ে রেখে একতরফা নির্বাচনের ফলাফল কখনো শুভ হয় না। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতার দম্ভ, একগুয়েমি ও বেপরোয়া কর্মকা-ের কারণে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে আগামী প্রজন্ম ক্ষমা করবে না। সরকার ও বিরোধীদল চাইলে রাজনৈতিক সমঝোতা এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সুযোগ এখনো আছে। একতরফা নির্বাচন এবং রাজনৈতিক সহিংসতা কারো জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট সকলের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
লিসান্দ্রো মার্তিনেজকে বিশ্বকাপ বাছাইয়ে পাচ্ছেনা আর্জেন্টিনা
খালাস পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাবেক এপিএস অপু
পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক তল্লাশি
আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ কমে ১৮.৪৬ বিলিয়ন ডলার
অফিস-আদালতসহ সর্বত্রই দুঃশাসনের চিহ্ন রাখা উচিত নয় : রিজভী
পার্লামেন্টে ক্ষমা
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিরাপত্তায় নতুন প্রহরী: রোবট কুকুর!
লুকিয়ে প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করায় মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা থেকে বহিস্কার
মাকে হত্যা করে লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখা ছেলে গ্রেফতার
সীমান্তে ৪ বাংলাদেশী নারী আটক
গুলি বর্ষণকারী ৭৪৭ পুলিশ শনাক্ত গ্রেফতারের উদ্যোগ নেই
সিলেটে মতবিনিময় সভা করলো নেজামে ইসলাম পার্টির
স্বামী স্ত্রীকে শর্ত লাগিয়ে তালাক দেওয়ার পর শর্ত উঠিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে।
আন্তঃনগর ট্রেনের সময় পরিবর্তন করুন
জনপ্রশাসনে মেধাশূন্যতা : কারণ ও প্রতিকার
ভারতীয় হেজিমনি ও আওয়ামী লীগের আত্মঘাতী রাজনীতি
বিতর্ক পরিহার করতে হবে
ইসরাইলি বাহিনী হিজবুল্লাহর সঙ্গে অস্ত্রবিরতিতে যাবে না
নির্বাচনে হারার পর প্রথমবার জনসমক্ষে বাইডেন ও কমলা