অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে
২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
আড়াই মাস ধরে ফিলিস্তিনে বর্বরতম হামলা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। কোনো ধরনের যুদ্ধনীতির তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে হামলা চালিয়ে হত্যা করছে ফিলিস্তিনিদের। এ পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসলাইলি বাহিনী। এদের মধ্যে ৮ হাজারের বেশি শিশু ও ৬ হাজারের বেশি নারী রয়েছে। গত দুই দিনেই বোমা হামলা চালিয়ে চারশ’র বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। নজিরবিহীন এই হত্যাযজ্ঞ বন্ধে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর কোনো উদ্যোগ নেই। যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে ইসরাইলকে সমর্থন দিয়ে আসছে। এমনকি এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে যুদ্ধ বন্ধ হয়নি। ইসরাইল প্রশ্রয় পেয়ে আরও নৃশংস হয়ে উঠেছে। তার লক্ষ্য হয়ে উঠেছে, ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করা। নির্বিচার হামলা চালিয়ে লাখ লাখ ফিলিস্তিনির বসতভিটা ধ্বংস করে উদ্বাস্তু করে দিয়েছে। গাজায় ২৪ লাখ ফিলিস্তিনির মধ্যে ১৯ লাখই বসতভিটা হারিয়ে এখন উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছে। শতকরা ৬০ ভাগ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ইসরাইল এখন ফিলিস্তিনিদের হত্যার পাশাপাশি খাদ্যাভাবে মারতে চাচ্ছে। ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। গাজায় ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে বাধা দিচ্ছে। এতে গাজায় তীব্র খাদ্য, জ্বালানি, পানি, বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে। এক অমানবিক পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে তারা। খাদ্যাভাবে সেখানের নারী ও শিশুরা মৃত্যুমুখে পড়েছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা সেখানে দুর্ভিক্ষ হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। অন্যদিকে, ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করতে থাকা শিশুরা নানাভাবে খাবার যোগাড় করার চেষ্টা করছে। মিশরের যুবকরা গাজা ও মিশরের মধ্যকার সীমানা প্রাচীর ফুটো করে যেভাবে পারছে খাবার দিচ্ছে। এই অতিমানবিক দৃশ্য মানবিক মানুষদের নাড়া দিলেও ক্ষমতাধর রাষ্ট্রনেতাদের টনক নড়াতে পারছে না। ইসরাইল ক্ষুধার্ত মানুষদেরই এখন বোমা ও গুলি ছুঁড়ে হত্যা করছে। বিশ্বে এমন বর্বরতার নজির দ্বিতীয়টি নেই। এই বর্বরতার লক্ষ্য হচ্ছে, গাজাকে ফিলিস্তিনিশূন্য এবং জাতিগতভাবে নির্মূল করা। তবে ইতিহাস বলে এভাবে যুদ্ধ ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে কোনো জাতিকে নির্মূল করা যায় না। সাম্প্রতিক ইতিহাসেও এর প্রমাণ আছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নির্মূল করতে এহেন বর্বরতা-নৃশংসতা নেই, যা করেনি। কিন্তু রোহিঙ্গাদের শেষ করা যায়নি। ইসরাইলও যে ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করতে পারবে না, তা একপ্রকার নিশ্চিত। ইতিহাস থেকে ইসরাইলকে শিক্ষা নিতে হবে। ফিলিস্তিনিদের উপর যে বর্বরতা চালানো হচ্ছে, তার বড় সহযোগী যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি মুসলমান নিধনে ইসরাইলকে দিয়ে গাজায় প্রক্সিযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এ যুদ্ধ প্রলম্বিত হতে পারে, তবে ফিলিস্তিনিদের ধ্বংস করা যাবে না। গাজায় ফিলিস্তিনিরা খাদ্য সংকটে যে মরনাপন্ন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে, সেখানে নিরাপদে খাদ্য ও ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ গত শুক্রবার একটি রেজুলেশন গ্রহণ করেছে। এতে যুক্তরাষ্ট্র ভোট দানে বিরত থেকেছে। দেরিতে হলেও এ রেজুলেশন গ্রহণ সাধুবাদযোগ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাবের যে ঈষৎ পরিবর্তন হয়েছে, সেটা প্রতীয়মান হয়। অবশ্য রেজুলেশনে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতির কথা উল্লেখ থাকলেও দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের আহ্বানের কথা বলা হয়নি।
যুদ্ধ-বিগ্রহ কখনই মঙ্গল বয়ে আনে না। বিশ্বের এক অঞ্চলে যুদ্ধ ও অশান্তি শুরু হলে তার প্রতিক্রিয়া সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্য, জ্বালানিসহ পণ্যসরবরাহে ব্যাঘাত সৃষ্টি হওয়ায় উন্নত বিশ্ব থেকে শুরু করে সারাবিশ্বে সংকট দেখা দেয়। পণ্যমূল্যবৃদ্ধিসহ খাদ্যসংকট সৃষ্টি হয়। ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলের হামলাকে কেন্দ্র করে যুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বের দাবি জানিয়ে ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি গোষ্ঠী লোহিত সাগরে মিসাইল ছুঁড়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, লোহিত সাগর বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পানিপথ। এ পথ বন্ধ হয়ে গেলে কিংবা অনিরাপদ হলে উন্নত বিশ্বসহ সব দেশেই সংকট সৃষ্টি হবে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশটি দেশ এ পানিপথে বিশ্ববাণিজ্য নিরাপদ করতে জোটবদ্ধ হয়েছে। তবে ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলের বর্বরতা এখন যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ, বিড়ম্বনা আরও বাড়বে। পাশাপাশি যুদ্ধ বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, যুদ্ধে ইরাইলের বিজয় অর্জন অসম্ভব। এতদিনের যুদ্ধেও ইসরাইলের লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। হামাস নির্মূল হয়নি, জিম্মিও মুক্ত হয়নি। এমতাবস্থায় ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ বন্ধ করার বিকল্প নেই। সেটা যত তাড়াতাড়ি হয়, ততই তাদের জন্য মঙ্গল।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাজবাড়ীতে নিখোঁজের ২দিন পর ধান ক্ষেত থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার
ইরানের পরিষেবা রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশ
দিনাজপুর সীমান্তে থেকে বিজিবির হাতে বিএসএফ জওয়ান আটক
তিন কোটির ক্যাশ চেক দিয়ে ডিসির পদায়ন: তদন্ত কমিটি গঠন
স্তব্ধ গদর, বন্ধ সিপিইসি! পাকিস্তানে বিক্ষোভে উদ্বিগ্ন চীন
আমিরাতে প্রবাসীদের সহজ সেবায় বাংলাদেশি 'মুনির ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম'-এর উদ্বোধন
অধীরের বদলে কেন শুভঙ্কর, পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের হাল ফিরবে?
নতুন সুড়ঙ্গ দিয়ে যুক্ত হচ্ছে ডেনমার্ক ও জার্মানি
গায়েবী মামলার ক্ষেত্রে দায়ীদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠনে হাইকোর্টে রিট
ডিএমপিতে ট্রাফিক আইনে একদিনে ৭৭৬ মামলা, জরিমানা ৩৫ লাখ ৬ জাজার
যশোরের জামায়াত নেতাসহ নিহত ২
ভারতে হানা মাঙ্কিপক্সের সেই ভয়ানক ভ্যারিয়েন্টের
ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আবু সাঈদের শরীরে গুলির চিহ্ন-মাথায় গর্ত
সেনা কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় জামায়াতের উদ্বেগ
ঠাকুরগাঁওয়ে সীমান্তে বিএসএফ জওয়ানকে আটক করেছে বিজিবি
সড়ক দুর্ঘটনায় সালথা উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতিসহ দুজন নিহত
নোবিপ্রবি উপাচার্যের সাথে নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির নতুন কমিটির সাক্ষাৎ ও মতবিনিময়
চাঁদপুরে বেড়েছে ইলিশের দাম
হবিগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত অর্ধশতাধিক
ঝিনাইদহে সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত