সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানই পারবেন
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গত রোববার ফেনীর পরশুরামের কালিকাপুর এলাকায় ভাঙন কবলিত বল্লামুখা বাঁধ পরিদর্শন শেষে কিছু কথা বলছেন। শুরু করেছেন এভাবে : ‘পানি বণ্টন নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে নিরব ও নিষ্ক্রিয় থাকার দিন শেষ হয়ে গেছে।’ গত দেড় দশকে এধরনের কথা দেশের মানুষ সরকারের কোনো মন্ত্রী বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তির মুখে শুনতে পায়নি। পানি নিয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধ-সমস্যা দীর্ঘদিনের। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত অভিন্ন নদীর সংখ্যা ৫৪টি। ভারত উজান ও বাংলাদেশ ভাটিতে হওয়ায় এই নদীগুলোর পানি একতরফাভাবে টেনে নেয়ার বা ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছে ভারত। এ সুযোগ সে ষোলআনা কাজে লাগাচ্ছে। ফলে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বাংলাদেশ বঞ্চিত হচ্ছে। ভারত অধিকাংশ অভিন্ন নদীতে বাঁধ, প্রতিবন্ধক ইত্যাদি নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। শুকনো মওসুমে পানির অভাবে বাংলাদেশে মরু ও লবণাক্ততার বিস্তার ঘটছে। অন্যদিকে বর্ষা মওসুমে ভারতের বাঁধ খুলে একযোগে পানি ঠেলে দেয়ায় বাংলাদেশ ভয়াবহ বন্যার শিকারে পরিণত হচ্ছে। সম্প্রতি বৃহত্তর নোয়াখালী, সিলেট, কুমিল্লায় যে বন্যা হয়ে গেলো, তার প্রধান কারণ ভারতের বাঁধখোলা পানি। এই বন্যায় ২০-২৫ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ভারতের পানি রাজনীতি বা পানি আগ্রাসনে প্রতিবছরই বাংলাদেশের সম্পদ-সম্পত্তি, স্থাপনা ও ফসলাদির ক্ষতি হচ্ছে। এইসঙ্গে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের বিনাশ সাধিত হচ্ছে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নদীর পানি কেবল রাজনীতি নয়, সেই সঙ্গে কূটনীতি এবং অর্থনীতিও। বলাবাহুল্য, এনিয়ে বিগত স্বৈরাচার এতটুকু উচ্চবাচ্য করেনি, সম্পূর্ণ নিরব থেকেছে। ইতোপূর্বে গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে, তাতে পানির অধিকার সম্পূর্ণটা ভারতকে দিয়ে দেয়া হয়েছে। তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হয়নি। ভারত মূলা ঝুলিয়ে বছরের পর বছর পার করে দিয়েছে। তিস্তার পানি সংকট নিরসনে চীন অনুরুদ্ধ হয়ে এক মহা পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। সবকিছু দিয়ে তা বাস্তবায়নের আগ্রহও দেখিয়েছে। অথচ, বিতাড়িত ভারতের বান্ধব সরকার তা নাকচ করে দিয়েছে। ওই সরকার পানির ব্যাপারে ভারতের স্বার্থকেই সর্বোচ্চ স্থান দিয়েছে, দেশের স্বার্থকে নয়। এখন সময় এসেছে সরকারের তরফে কথা বলার, পানির দাবি জোরদার করার এবং প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সংস্থায় যাওয়ার। গঙ্গাসহ সকল নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশের প্রাপ্য। তা সে ছেড়ে দিতে পারে না। একই সঙ্গে তাকে পানি সংকট মোচনে বিকল্প পন্থাও অবলম্বন করতে হবে। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের এখনই উপযুক্ত সময়। গঙ্গা বাঁধের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। দেশের মানুষ আশা করে, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ ব্যাপারে একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে অবিলম্বে কাজ শুরু করবেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের ওপর দেশের মানুষের অগাধ আস্থা রয়েছে, তিনি একজন খ্যাতিমান আইনবিদ। পরিবেশবিদ হিসাবেও তার বিখ্যাতি রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশ এনভাইরনমেন্টাল লইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশেন (বেলা)’র চিফ এক্সিকিউটিভের দায়িত্ব ছাড়াও শ্রম অধিকার ও কর্মপরিবেশ নিয়ে কাজ করছেন। আরডিআরএস-এর চেয়ারপারসন এবং ব্র্যাক, গণস্বাস্থ্য ইত্যাদির বোর্ড মেম্বারও ছিলেন তিনি। তিনি অত্যন্ত যোগ্য ও জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে তাকে মনোনীত করা খুবই বিচক্ষণতার পরিচায়ক হয়েছে। যে দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তার ওপর অর্পণ করা হয়েছে, সে ক্ষেত্রেও দূরদৃষ্টির পরিচয় লক্ষ করা গেছে। বন, পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, নদী, পানি ইত্যাদি নিয়েই তিনি কাজ করেছেন। এসব ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতা প্রচুর। অভিজ্ঞতার সঙ্গে উদ্যম ও স্পৃহাও তার রয়েছে। পরিবেশের বিষয়ে তিনি বরাবরই সোচ্চার। তিনি ইতোমধ্যে পলিথিন ব্যাগ বন্ধের পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছেন। নদী দূষণ নিরোধের কথা বলেছেন, অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে দেয়ার কথা বলেছেন। তার এসব কথা ও নির্দেশনা বিভিন্ন মহলে অভিনন্দিত হয়েছে। উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না, পলিথিন ও প্লাস্টিকপণ্য পরিবেশের সবচেয়ে বড় ঘাতকে পরিণত হয়েছে। শুধু আমাদের দেশে নয়, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই। সারা বিশ্বেই পলিথিন ও প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমিয়ে বিকল্পের ব্যবহার বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। আমাদেরও সেটা অনুসরণ করতে হবে। জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে আসার পর সচিবালয়ে প্লাস্টিক বোতল ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা শুরু এবং অত্যন্ত ইতিবাচক। পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা পরিবেশের জন্য অপরিহার্য ও জরুরি। পরিবেশ দূষণের অন্যতম বড় কারণ নদীদূষণ ও দখল। নদীদূষণ মানে নদীর পানি দূষণ। পানি দূষণ অন্যান্য দূষণ ও রোগব্যাধি বিস্তারের জন্য বিশেষভাবে দায়ী। সেই সঙ্গে মাছ ও জলজ প্রাণবৈচিত্র্যের ঘাতক। ইটভাটা বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। দেশে বৈধ ও পরিবেশসম্মত ইটাভাটার পাশাপাশি শত শত অবৈধ ও পরিবেশনাশক ইটভাটা রয়েছে। এগুলো বন্ধ করার বিকল্প নেই। বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট রয়েছে। এটা পরিবেশ দূষণের অনিবার্য ফল। জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট থেকে মুক্ত হতে হলে কাম্য পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া উপায় নেই।
পরিবেশ উন্নয়ন, সর্বপ্রকার দূষণ প্রতিরোধ, জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, বৃক্ষায়ন ও বনায়ন বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমাদের দেশে কথা যত বলা হয়েছে, কাজ তত হয়নি। এখন কথা কম ও কাজ বেশি হওয়া দরকার। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের মতো একজন সুযোগ্য উপদেষ্টা দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়াতে এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা একজন কিংবদন্তি। বিশ্বে তার জনপ্রিয়তা, মর্যাদা ও সম্মান অতুল্য। তার সরকারের উপদেষ্টারা ব্যতিক্রম বাদে স্বনামধন্য, দক্ষ, অভিজ্ঞ ও যোগ্য। এরকম একটি টিম বাংলাদেশের সরকারে ইতোপূর্বে কমই এসেছে। সঙ্গতকারণেই ইউনূস সরকারের প্রতি বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের, বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের অনুকূল ও ইতিবাচক দৃষ্টি রয়েছে। জাতিসংঘসহ সব পরাশক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ দেশ বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিতে রাজি হয়েছে। এটা যে বিশেষভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। দেশ গঠন এবং জাতীয় উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠার একটা বিরল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এটা কাজে লাগাতে হবে। সংস্কার ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে, এককথায় তাকে অভূতপূর্ব বলা যায়। পরিবেশ উন্নয়নেও ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। জার্মানি এ ব্যাপারে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। অন্যান্য দেশ ও সংস্থাও এগিয়ে আসবে, আমাদের তাতে সন্দেহ নেই। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দেশেই নন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তার কাজের জন্য সুপরিচিত। দেশের মানুষ সঙ্গতকারণেই আশা করে, তিনি তার দায়িত্ব সূচাররূপে সফলতার সঙ্গে পালন করতে পারবেন। সবাই চায়, তিনি এখনই কাজে হাত দেবেন। দেড় মাস হয়ে গেছে দায়িত্ব গ্রহণের। আর বিলম্ব করার অবকাশ নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে সা'দ পন্থিদের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে: হাটহাজারীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বক্তারা
ভারত বাধা পেরিয়ে শিরোপা জিততে মরিয়া বাংলাদেশ
দোয়ারাবাজারে ভ্যানের ধাক্কায় শিশু নিহত
গারো পাহাড়ের পানি হাতায় ঘুরতে এসে ভোগা নদীতে ডুবে ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু
সিলেট-তামাবিল চার লেন উন্নতিকরণে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ
১০ বছর আগে উধাও মালয়েশিয়া বিমানের নতুন করে খোঁজ শুরু
৯/১১-র ধাঁচে রাশিয়ায় ড্রোন হামলা ইউক্রেনের, বন্ধ বিমানবন্দর
আজ ঐতিহ্যবাদী লেখক হোসেন মাহমুদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী
দ. আফ্রিকাকে প্রথমবার হোয়াইটওয়াশের অভিযানে পাকিস্তান
পাকিস্তানে তল্লাশিচৌকিতে সশস্ত্র হামলা, নিহত ১৬ সেনা
বড়দিনের ধর্মীয় ইতিহাস ও তাৎপর্য
ঝিকরগাছায় মোটরসাইকেল আরোহীকে বাঁচাতে গিয়ে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কায় নিহত ১, আহত ১৫
হিলিতে বিএনপির উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ
গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের খসড়া তালিকা প্রকাশ
বদলগাছীতে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
পুঁজিবাজারে অস্থিরতার পেছনে প্লেয়ার ও রেগুলেটরদের দায় আছে: অর্থ উপদেষ্টা
সা'দ অনুসারী কতৃক হত্যা-তান্ডবের বিচার দাবীতে কটিয়াদীতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল
এক সময় কোরআন ও হাদিসের আলোকে কথা বলা দুরহ ছিল: অতিরিক্ত আইজিপি খোন্দকার রফিকুল
নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিপাত, বৃষ্টি ও শীতে জনজীবনে চরম ভোগান্তি
মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের দখলে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি